যমুনা নদীতে ফের ভাঙন, বিলীন স্কুলভবন

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৯ অক্টোবর ২০২২, ১০: ৩০
আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০২২, ১১: ১৬

সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে যমুনা নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ভাঙনে চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি ভবন পুরোপুরি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আরেকটি ভবন ভাঙনের মুখে রয়েছে। ভবনটির অধিকাংশ নদীর পাড়ে ঝুলে আছে। যেকোনো সময় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে। নদীভাঙনের কারণে বর্তমানে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে ওই স্কুলের প্রায় ২০০ শিক্ষার্থীর পড়াশোনা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। 

এরই মধ্যে স্কুলটি রক্ষায় নদীর তীরে বাঁশের খুঁটি পুঁতে মাটি ও গাছের ডালপালা ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করলেও স্কুলটি রক্ষা করা যায়নি। একই সঙ্গে চারটি গ্রামে ভাঙন বেড়েছে। ভাঙন ঠেকাতে পাউবো যথাসময়ে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। 

জানা গেছে, চলতি সপ্তাহে যমুনা নদীতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চৌহালী উপজেলার সদিয়া চাঁদপুর ইউনিয়নের পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ে নদীভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। যমুনার তীব্র স্রোতের কারণে দেওয়ানতলা, সংকরহাটি, গাবেরপাড়, মাঝগ্রাম সদিয়া ও চাঁদপুর গ্রামে ভাঙন দেখা দেয়। ভাঙনে ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি পাকা ভবন গতকাল মঙ্গলবার ভোরে যমুনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আরেকটি ভবন নদীর পাড়ে ঝুলে আছে। যেকোনো সময় ভবটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে। একাডেমিক ভবন নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে বিদ্যালয়টির প্রায় ২০০ শিক্ষার্থীর পড়াশোনা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। 

এ বিষয়ে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাকির হোসেন ও রেখা খাতুন বলে, ‘আমাদের স্কুলঘর নদীতে চলে গেল। এখন আমরা পড়াশোনা করব কোথায়? আমরা পড়াশোনার জন্য একটা ঘর চাই। আবার আমরা স্কুলে যেতে চাই।’ 

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হাকিম, সহকারী শিক্ষক শরিফুল ইসলাম ও ইকবাল হোসেন জানান, বিদ্যালয় ভবন তাঁদের চোখের সামনে বিলীন হয়ে গেলেও কিছু করার ছিল না। স্কুলটি রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্টদের বারবার বললেও কোনো লাভ হয়নি। যদি আগেই ভাঙন রোধে কাজ করা হতো, তাহলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না বলে জানিয়েছেন তাঁরা। এখন দ্রুত একটি ঘরের ব্যবস্থা না করা হলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন শিক্ষকেরা। 

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সদস্য রমজান আলী শেখ বলেন, ‘চাঁদপুরসহ প্রায় চারটি গ্রামের অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি নদীতে চলে গেছে। স্কুলটিও নদীগর্ভে বিলীন হলো। হুমকিতে রয়েছে আরেকটি হাইস্কুল ও প্রাথমিক বিদ্যালয়। আর কত বাড়িঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নদীর পেটে গেলে স্থায়ী বাঁধের কাজ করা হবে? যদিও এর আগে কিছু অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল, তবে সেটার যথাযথ কাজ না হওয়ায় ভাঙন চলমান রয়েছে। এর জন্য পাউবো কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের লোকজন দায়ী।’ 

সদিয়া চাঁদপুর ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম জাহিদ বলেন, ‘শুনেছি ভাঙন রোধে একটি প্রকল্প অনুমোদন করা হলেও কাজ শুরু না হওয়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ চারটি গ্রামের অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। এতে পাউবো কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চরম গাফিলতি রয়েছে। এখন দ্রুত কাজ শুরুর দাবি জানাচ্ছি।’ 

এ নিয়ে চৌহালী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর ফিরোজ বলেন, ‘কয়েক দিন আগেও যমুনা নদী থেকে স্কুল ভবনটি ২০-২৫ ফুট দূরে ছিল। ওই সময় যমুনার পানিও কমে গিয়েছিল। ধারণা করা হয়, এ বছর আর পানি বাড়বে না। তার পরও আমরা শ্রমিক দিয়ে নদীর তীরে বাঁশের খুঁটি পুঁতে মাটি ও গাছের ডালপালা ফেলে স্কুলটি রক্ষার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু গতকাল সকালে স্কুল ভবনে ধস শুরু হয়। কিছুক্ষণ পরই ভবনটি যমুনা নদীতে হারিয়ে যায়। আরেকটি ভবন ঝুলে আছে, যেকোনো সময় সেটিও হারিয়ে যাবে। আমরা সার্বিক বিষয় দেখে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের জানিয়েছি।’ 

উল্লেখ্য, এর আগে গত ১১ সেপ্টেম্বর নদীতে পানি বাড়ার ফলে চরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। ভাঙনে বসতভিটা ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত