ইসকন ভক্তকে বাংলাদেশ ছাড়তে বাধ্য করার খবর ভারতীয় গণমাধ্যমে, পরিবার বলছে ‘গুজব’

পঞ্চগড় প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২: ৪৩
ভারতীয় মিডিয়ায় ইসকন ভক্ত হওয়া পঞ্চগড়ের কিশোরীর বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হওয়ার খবরটি মিথ্যা এবং গুজব। ছবি: সংগৃহীত

‘ইসকন ভক্ত হওয়ায় অপরাধ! ভিটে ছাড়তে বাধ্য হয় নাবালিকা’ এমন শিরোনামে সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সত্যতা জানতে গতকাল শনিবার দুপুরে পঞ্চগড় সদর উপজেলার পূর্ব জালাসি এলাকায় যাওয়া হয় সেই কিশোরীর বাড়িতে। ওই কিশোরীর অভিভাবকেরাই জানান, তাঁদের মেয়েকে নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর মিথ্যা। সেই খবরে তাঁদের সন্তান একটা কথাও বলেনি, সাংবাদিকেরাই যা বলার বলেছে।

ওই কিশোরীর অভিভাবকেরা বলেন, তাঁরা ফেসবুকে এসব নিউজ দেখে বিস্মিত। মেয়েকে নিয়ে এমন প্রতিবেদন ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে জেলাজুড়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। স্থানীয় হিন্দুরা এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।

সম্প্রতি ভারতের রিপাবলিক বাংলা টিভিসহ কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও প্রতিবেদনে বলা হয়—‘ইসকন ভক্ত হওয়াই অপরাধ! ভিটে ছাড়তে বাধ্য হয় নাবালিকা’। বাংলাদেশের পঞ্চগড় জেলার বাসিন্দা নাবালিকা। বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি ইউনূসপন্থীদের। জলপাইগুড়ির বেলাকোবায় আসছিল নাবালিকা। সীমান্ত পেরোতেই আটক অসহায় নাবালিকা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভিডিওর মেয়েটির নাম প্রিয়ন্তী রায় প্রমি (১৫)। তবে ভারতীয় গণমাধ্যমে মেয়েটির নাম বলা হয়েছে অর্পিতা রায়। প্রিয়ন্তী রায় প্রমি পঞ্চগড় সদর উপজেলার জালাসি এলাকার জয়দেব চন্দ্র রায় ও অনুরাধা রানীর মেয়ে। প্রমি পঞ্চগড় সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। বেশ কয়েক বছর ধরে চোখের সমস্যায় ভুগছে প্রমি। হঠাৎ করে সমস্যা বেড়ে যায়। চলমান পরিস্থিতিতে ভিসা না পাওয়ার কারণে সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে অবস্থানরত পিসির (ফুপু) বাড়িতে যাওয়ার পথে বিএসএফের হাতে আটক হয় প্রমি।

ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে মেয়েটিকে প্রিয়ন্তী রায় প্রমি বলে নিশ্চিত করেছেন তার বাবা জয়দেব চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, ‘বেশ কয়েক বছর ধরে চোখের সমস্যায় ভুগছে প্রমি। হঠাৎ করে সমস্যা বেড়ে যায়। ভিসা না পাওয়ার কারণে সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে পিসির বাড়িতে চিকিৎসার জন্য পাঠাই।’

কিশোরীর পরিবার জানিয়েছে চোখের চিকিৎসার জন্য সে ভারত গিয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
কিশোরীর পরিবার জানিয়েছে চোখের চিকিৎসার জন্য সে ভারত গিয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

অর্পিতা রায়ের (প্রমি) বরাত দিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জয়দেব চন্দ্র বলেন, ‘আমি এবং আমার পরিবার কেউ আতঙ্কে নাই। কেউ আমাদের ওপর অত্যাচার এবং ভয়ভীতি দেখায় নাই। আমি স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করছি। ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত ঘটনার জন্য লজ্জিত।’

প্রমির মা অনুরাধা রানী বলেন, ‘ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত নিউজে আমার সন্তান একটা কথাও বলেনি। সাংবাদিকেরা সব বলতেছে। কেন এইভাবে মিথ্যা, গুজব ছড়াল জানি না। আমাদের পরিবারের সঙ্গে কোনো অন্যায় হয়নি। কেউ ভয় ও দেখায়নি।’

ইসকন ভক্ত হওয়ার কারণে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বলে প্রতিবেদন করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম। এ বিষয়ে শ্রী শ্রী রাধামাধব মন্দির ইসকনের অধ্যক্ষ বিদ্যা নিধীগোর দাসের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘আমাদের কেউ হুমকি ধামকি দেয় না। আমরা শান্তিতে আছি। হিন্দু–মুসলমান একসঙ্গে বসবাস করে থাকতে চাই।’

পঞ্চগড় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘আমরা সরেজমিনে সেই পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। এ রকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। তাঁদের মেয়ে চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়েছে। আমরা সব সময় তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। হিন্দু কমিউনিটির নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইসরায়েলের ‘হৃৎপিণ্ড’ তেল আবিবে হুতিদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

সাগরে নিম্নচাপ, কত দিন বৃষ্টি হতে পারে জানাল আবহাওয়া দপ্তর

শেখ মুজিব ও জিয়াউর রহমান যার যার স্থানে শ্রেষ্ঠ: গয়েশ্বর

র‌্যাব বাতিলের সরকারি সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি: নূর খান লিটন

হাসিনার আমলে রাশিয়ার সঙ্গে ১০০ কোটি ডলারের অস্ত্র চুক্তি, জড়াল টিউলিপের নামও

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত