বন্ধ সীমান্ত হাট চালু না করতে জামায়াত নেতার আবেদন

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩: ০০
আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪: ১৬

কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার বালিয়ামারী এলাকার সীমান্ত হাটটি আবার চালু না করার দাবি জানিয়েছে উপজেলা জামায়াত। গতকাল বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মাধ্যমে জেলা প্রশাসক (ডিসি) বরাবর লিখিত আবেদন জানিয়েছেন চর রাজিবপুর উপজেলা জামায়াতের আমির।

উপজেলা জামায়াতের আমির আবুল বাশার মো. আব্দুল লতিফ নিজেই আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ইউএনওর দপ্তরে আবেদনপত্রটি গ্রহণের একটি প্রাপ্তি স্বীকারপত্রও এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।

সপ্তাহের দুই দিন সোম ও বুধবার বালিয়ামারী সীমান্ত হাটের কার্যক্রম চলত। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালীন গত আগস্ট মাসে হাটের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। সম্প্রতি হাটের কার্যক্রম আবার চালুর উদ্যোগ নেওয়ার গুঞ্জনে এই আবেদন জানায় জামায়াত।

আবেদনপত্রে বলা হয়, বর্তমানে বন্ধ থাকা সীমান্ত হাটের কার্যক্রম পুনরায় চালু হলে তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি হতে পারে। এ ছাড়া এটি চালুর সুযোগ নিয়ে সীমান্তপথে মাদকের প্রসার, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা চালু হতে পারে। হাটটি চালুর মাধ্যমে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যবৈষম্য বাড়বে।

আবেদনপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, রাজিবপুরের বালিয়ামারী ও ভারতের কালাইয়ের চর সীমান্তবর্তী এই সীমান্ত হাট পুনরায় চালুর প্রক্রিয়া শুরুর খবরে রাজিবপুর ও পার্শ্ববর্তী রৌমারী উপজেলার জনগণের মধ্যে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়দের আশঙ্কার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে হাটটি পুনরায় চালু না করার আবেদন জানানো হয়েছে। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, রংপুর বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্টদের আবেদনপত্রের অনুলিপি দেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা জামায়াতের আমির আবুল বাশার মো. আব্দুল লতিফ বলেন, ‘স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মতামত নিয়ে উপজেলা জামায়াতের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে পরামর্শ করে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন দেওয়া হয়েছে। এটি দলীয় ও স্থানীয় বাসিন্দাদের পক্ষ থেকে দিয়েছি।’

আবেদনপত্রে উল্লেখ করা আশঙ্কার বিষয়ে জানতে চাইলে জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘সীমান্ত হাট চালু হলে উপজেলায় মাদকের সরবরাহ বেড়ে যায়। ফলে যুবসমাজ ও তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে স্থানীয় অভিভাবকেরা উদ্বিগ্ন থাকেন। এ ছাড়া ওই হাট চালু হলে সীমান্তপথে অস্ত্র চোরাচালানের মাধ্যমে দেশের বর্তমান স্থিতিশীল অবস্থার অবনতি হতে পারে। তাতে দ্বিতীয় এই স্বাধীনতা নস্যাৎ করার পাঁয়তারা হতে পারে। এ জন্য উপজেলাবাসী চায় সীমান্ত হাটটি বন্ধ থাকুক।’ 

ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যবৈষম্য বাড়ার বিষয়ে উদ্বেগের প্রশ্নে এই জামায়াত নেতা বলেন, ‘ওই হাটে ভারতের ভেন্ডর (বিক্রেতা) ৭৫ জন এবং বাংলাদেশের মাত্র ২৫ জন। এটা একটা বৈষম্য। আর সীমান্ত হাটে ভারতীয় পণ্য উচ্চমূল্যে বিক্রি করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশি পণ্যগুলো তারা অত্যন্ত কম দামে কিনে নেয়। এসব বিবেচনায় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মতামতের ভিত্তিতে সীমান্ত হাটের কার্যক্রম পুনরায় চালু না করতে আবেদন জানানো হয়েছে।’

তবে সীমান্ত হাট চালু না করার বিষয় নিয়ে হাটের বাংলাদেশ অংশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা হয়নি বলে দাবি করেছেন তালিকাভুক্ত বিক্রেতা ও রাজিবপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বাবু মিয়া। তিনি বলেন, ‘জামায়াতের আবেদন নিয়ে আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। জামায়াত নেতা হিংসামূলকভাবে হাট চালুর বিরোধিতা করছেন।’ 

রাজিবপুর উপজেলা বণিক সমিতির সভাপতি আব্দুস সবুর ফারুকী বলেন, ‘এ নিয়ে বণিক সমিতির সঙ্গে জামায়াতের কোনো আলোচনা হয়নি। তাদের আবেদনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’ 

সীমান্ত হাট নিয়ে জামায়াত নেতার আবেদনের বিষয়ে জানতে চর রাজিবপুরের ইউএনও তানভীর আহমেদকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত