ইন্টারনেটের গ্রাহক হারাচ্ছে ঠাকুরগাঁও বিটিসিএল

সাদ্দাম হোসেন, ঠাকুরগাঁও
প্রকাশ : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১: ৪০
আপডেট : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১: ৫৩

ইন্টারনেটে ধীরগতি, লোকবলের সংকট, অব্যবস্থাপনাসহ নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত ঠাকুরগাঁওয়ে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস লিমিটেড (বিটিসিএল)। এতে প্রতিনিয়তই গ্রাহক হারাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। সরেজমিনে গ্রাহকদের কাছ থেকে এমনটিই জানা গেছে। 

সম্প্রতি শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে পাশে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটিতে গিয়ে দেখা যায়, প্রবেশপথে জীর্ণশীর্ণ সাইনবোর্ডটিতে ধুলোর আস্তরণ জমে আছে। সেখানে লেখা রয়েছে—বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেড, সহকারী ব্যবস্থাপকের কার্যালয়, বিটিসিএল, ঠাকুরগাঁও। ভেতরে টেলিফোন ভবনে প্রবেশ করতেই দেখা যায়, বিভিন্ন কক্ষের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছে। ওপরে তাকাতেই দেখা যায় ছাদের পলেস্তারা খসে রড বেরিয়ে গেছে। রডে মরিচা পড়ায় পাশের অংশে ফাটল ধরেছে। 

জানা গেল, ছয়জন কর্মকর্তা দিয়ে জেলা অফিসটির কার্যক্রম চলছে। এর মধ্যে সহকারী ব্যবস্থাপক একজন, জুনিয়র সহকারী ব্যবস্থাপক (টেকনিক্যাল) একজন, জুনিয়র সহকারী ব্যবস্থাপক (রাজস্ব) একজন, টেকনিক্যাল সহকারী একজন ও লাইনম্যান রয়েছেন দুজন। অন্যদিকে পাশের জেলায় পঞ্চগড়েও অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন এখানকার সহকারী ব্যবস্থাপক, জুনিয়র সহকারী ব্যবস্থাপক (টেকনিক্যাল) ও জুনিয়র সহকারী ব্যবস্থাপক (রাজস্ব)। 

জেলা বিটিসিএল অফিস সূত্রে জানা যায়, এ জেলায় ইন্টারনেট সংযোগের ধারণক্ষমতা ৩ হাজার ৭৬০ হলেও বর্তমান এর গ্রাহকসংখ্যা মাত্র ১৩৪। আর টেলিফোন গ্রাহক রয়েছেন ১ হাজার ২০ জন। 

সরেজমিনে বিটিসিএলের কয়েকজন গ্রাহকের সঙ্গে কথা হয় আজকের পত্রিকার। তাঁরা তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। 

শহরের পুরোনো বাসস্ট্যান্ড এলাকায় একটি বেসরকারি বিমা কোম্পানির কার্যালয়। সেখানকার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. রোকনুজ্জামান বলেন, ‘বিটিসিএলের ইন্টারনেট সংযোগ নেওয়ার অনেক দিন হলো। তবে প্রতিষ্ঠানটির ইন্টারনেট সেবা খুব একটি ভালো পাইনি। ইন্টারনেট ধীরগতির কারণে প্রায় সময় অফিসের গুরুত্বপূর্ণ ফাইল পাঠাতে পারি না। সংযোগে কোনো সমস্যার বিষয়ে তাদের জানালে তাৎক্ষণিকভাবে ঠিকও হয় না। এ ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের হটস্পটের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করে দাপ্তরিক কাজ করতে ভীষণ অসুবিধা হয়।’ 

বিটিসিএলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে বেসরকারি ব্রডব্যান্ড লাইন ব্যবহার করছেন অনেকেই। সদর উপজেলা প্রশাসনের বিটিসিএলের ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রাজু আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে যে সার্ভিসগুলো দেওয়ার কথা, সেগুলো পুরোপুরি পাচ্ছি না। মাঝে মাঝে লাইনে সমস্যা হলে বারবার ফোন দেওয়া সত্ত্বেও তাদের পাওয়া যায় না। তাই কয়েক বছর আগে বেসরকারি একটি ব্রডব্যান্ড কোম্পানির কাছ থেকে ইন্টারনেট সংযোগ নিয়েছি। এখন কোনো সমস্যা হয় না।’ 

অফিসের বিভিন্ন কক্ষের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকাশহরের তাঁতীপাড়া এলাকার একটি বেসরকারি কোম্পানির প্রতিনিধি সায়মুন ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ভোগান্তির অপর নাম বিটিসিএলের ইন্টারনেট। প্রতি বৃহস্পতিবার ভয়ে থাকি, একবার সংযোগে সমস্যা হলে তা ঠিক করতে রোববার পর্যন্ত লেগে যায়। এ সময় অফিসের গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা হয় না। কিছুদিন আগে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে আরেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ইন্টারনেট সংযোগ নিয়েছি।’ 

এদিকে বিটিসিএলের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের কাছে এর সেবা সম্পর্কে শুনে অনেকেই পিছপা হয়েছেন। নিজেদের প্রতিষ্ঠানের সামনেই সংযোগ পিলার থাকা সত্ত্বেও তাঁরা সেই সংযোগ নেননি। এমনই একজন হলেন সততা প্রেসের কম্পিউটার অপারেটর ইসলাম রুবেল। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিটিসিএলের সংযোগ পিলার দোকানের সামনে থাকা সত্ত্বেও আমরা সেখান থেকে সংযোগ নিইনি। আমাদের মতো অনেকে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানই তাদের ইন্টারনেট সংযোগ নেয়নি। কারণ দিনের অর্ধেক সময় ইন্টারনেট থাকে, অর্ধেক সময় থাকে না। অভিযোগ দিলেও নাকি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয় না।’ 

ইন্টারনেটের প্রতিযোগিতার বাজারে বেসরকারি অপারেটরদের তুলনায় বিটিসিএলের ইন্টারনেট সেবার দাম বেশি। বেসরকারি অপারেটরকে সর্বনিম্ন ৭ এমবিপিএস ইন্টারনেট সংযোগের জন্য মাসে ৫০০ টাকা দিতে হয়। অন্যদিকে বিটিসিএলের সর্বনিম্ন ৫ এমবিপিএস ইন্টারনেটের জন্য দিতে হয় ৫০০ টাকা। 

এ বিষয়ে স্থানীয় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবসায়ী শেখ সাইমুন ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জেলায় প্রায় ১০টা ব্রডব্যান্ডের প্রতিষ্ঠান আছে। এসব প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক প্রায় ১৪ থেকে ১৫ হাজার। এদিক থেকে অনেকটাই পিছিয়ে বিটিসিএল। গ্রাহক বাড়ানোর জন্য তাদের সেবার মানের কোনো উন্নয়ন করতে পারেনি, যার ফলে মানুষের আগ্রহও বাড়েনি প্রতিষ্ঠানটার ওপর।’ 

শহরের আরেকজন বেসরকারি ব্রডব্যান্ড প্রতিষ্ঠানের ইঞ্জিনিয়ার দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘সরকারি গুরুত্বপূর্ণ অফিসগুলোতে চলে তাঁদের ইন্টারনেট সেবার কার্যক্রম। এ ক্ষেত্রে সরকারি প্রতিষ্ঠান হয়েও পিছিয়ে আছে বিটিসিএল। মানুষের ২৪ ঘণ্টা সেবা লাগে। সেই সাপোর্ট সার্ভিস দেওয়ার লোকবল নেই বিটিসিএলের।’ 

জরাজীর্ণ অফিস ও বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে কথা হয় বিটিসিএলের ঠাকুরগাঁও সহকারী ব্যবস্থাপক মো. সুমন রানার সঙ্গে। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় সেবা দিতে কিছু বিলম্বিত হয়। জনবল ও অফিস মেরামতের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। গত ২২ আগস্ট ‘অপটিক্যাল নেটওয়ার্ক-জিপন’ সংযোগ চালু হওয়ায় ইন্টারনেট সংযোগে গ্রাহকের আগ্রহ বাড়তে শুরু করেছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত