হাসিনার ফোনালাপ: ওই সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এখন কোথায়, যা বলছেন স্থানীয় নেতা–কর্মীরা

গাইবান্ধা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ১১: ৪০
শেখ হাসিনা ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শাকিলের নামে একটি ফোনালাপ ভাইরাল হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

ছাত্র–জনতার গণ অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারতের আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। দেশ ছাড়ার পর একবার বিবৃতি দিয়েছেন তিনি। এরপর থেকে আওয়ামী লীগ সভাপতির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে নেতা–কর্মীর সঙ্গে শেখ হাসিনার বেশ কয়েকটি ফোনালাপ সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও এসব ফোনালাপের সত্যতা কোনো স্বাধীন সূত্রে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। 

অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকেও এ নিয়ে কথা বলা হয়েছে। ভারতে বসে শেখ হাসিনা দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে ভারতকে এ ব্যাপারে সতর্কও করা হয়েছে। 

এমনই একটি ৩ মিনিট ১৭ সেকেন্ডের ফোনালাপ দুদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়েছে। নতুন এই ফোনালাপে শেখ হাসিনার মতো কণ্ঠস্বরকে বলতে শোনা যায়, ‘ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তোমাদের বাড়ি ঘরে যারা আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। তাদের বাড়ি ঘর নেই। সব কথা কি বলে দিতে হয়?’

ফোনকলের অন্য প্রান্তের ব্যক্তিকে নিজেকে গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাকিল আলম বুলবুল বলে পরিচয় দিয়েছেন। স্থানীয় নেতা–কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফোনালাপের কণ্ঠস্বরের সঙ্গে শাকিলের কণ্ঠস্বরের মিল রয়েছে। 

শাকিল ৫ আগস্টের পর থেকে আত্মগোপনে। তিনি বর্তমানে কোথায় অবস্থান করছেন সেটি জানার চেষ্টা করেছে আজকের পত্রিকা। 

ফোনালাপে শেখ হাসিনার সদৃশ কণ্ঠ বলেন, ‘যারা এখন বেশি বেশি বাড়াবাড়ি করছে। বেশি ভালো থাকবেন না আপনি। দেখো ডিসেম্বর পর্যন্ত তোদের ওই শক্ররা টেকে কিনা। কাওকে পালাতে দেওয়া হবে না। যে কয়টা নাফরমানি করছে তাদের একটাও অস্ত্র থাকবে না।’ 

এ সময় অন্য প্রান্ত থেকে বলেন, ‘জ্বি নেত্রী, আলহামদুলিল্লাহ। আপনার কথায় আমরা ভরসা রাখছি।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘একদম একদম।’ তখন অপর প্রান্তের ব্যক্তি বলেন, ‘আপনি একটু মাথা ঠান্ডা রেখে, আপনার কৌশলে এগোন নেত্রী। তবে সবাইকে সব কাজ বরাদ্দ রেখে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঠিক আছে, আমি সবাইকে বলছি, তোমরা শুধু দুই মাস অপেক্ষা করো। কিছু বলো না।’ 

স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে শেখ হাসিনা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি বিষোদ্‌গার করে বলেন, ‘ওরা ফেল করবে, আর আমরা যদি কিছু করি, তখন বলবে আমাদের জন্য করতে পারে নাই। সেটা আর বলার মুখ নেই। জাতীয় আন্তর্জাতিক ভাবেও। ওই যে সুদ খোর ইউনূসের গুটি গুটি চেহারা...।’ 

অপর প্রান্তের ব্যক্তি বলেন, ‘জ্বি নেত্রী, অলরেডি বাংলার মানুষ বুঝে গেছে। মানুষ ভয়তেই কেউ মুখ খুলতে পারছে না।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন ভয় পাওয়ার কিছু নেই, এখন ওদের ভয় দিতে হবে।’ 

এ সময় অপর প্রান্তের ব্যক্তি তাঁর ও গোবিন্দগঞ্জের সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ জানান। তখন শেখ হাসিনা বলেন, ‘না আমি একটা কথা আমি বলি, তোমাদের বাড়ি পোড়াই দিছে কে?’ শাকিল বলেন, ‘ওরাই নেত্রী, জামায়াত–বিএনপি সবাই।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাদের ঘর-বাড়ি নেই? সবকিছু কি প্রকাশ্যে করতে হয়! তোমাদের নাই, তাহলে কারও কারও ঘর-বাড়ি থাকবে না।’ 

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শাকিল এরপর গোবিন্দগঞ্জ আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সেক্রেটারির নামে কোনো মামলা না হওয়া ও তাঁদের বাড়িঘর অক্ষত থাকার কথা জানান। তবে শেখ হাসিনা এর ব্যাখ্যা বলেন, ‘শোনো ওরা দেখে যেগুলি পটেনশিয়াল, যে গুলি দেখে একেবারেই শক্ত তাদের ওরা তালিকা করে।’ 

নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মামলা, আমার তো শুধু গোবিন্দগঞ্জ না, আমার তো সারা বাংলাদেশে ২২৭টি মার্ডার কেস। আমি বলছি সবাই তালিকা করো। তোমরাও তালিকা করো। ২২৭ মার্ডার লাইসেন্স পেয়ে গেছি। এক মামলায় যে শাস্তি শোয়া দুইশ মামলায় একই শাস্তি। তাই না। জ্বি ঠিক আছে সেই শাস্তি নিব। তার আগে শোয়া দুইশ হিসাব করে নিব। এটা যেন মাথায় থাকে!’ 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শাকিল আলম বুলবুল সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদের ঘনিষ্ঠ। এমপিই তাঁকে সাপমারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বানিয়েছিলেন। চেয়ারম্যান থাকাকালে শাকিল বিভিন্ন ধর্মীয় কাজের নামে সরকারি বরাদ্দকৃত চাল আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলার আসামি। 

সাঁওতালদের জমি জমা নিয়ে বিরোধে তৎকালীন গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার এসিল্যান্ডকে আবুল কালাম আজাদের নির্দেশে শাকিলই হত্যা করেন অভিযোগ রয়েছে। 

২০১৬ সালের গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাল পল্লিতে হামলা ভাঙচুর লুটপাট ও সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর তিনজনকে হত্যার পেছনেও আবুল কালাম আজাদ, সাবেক উপজেলার চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ প্রধান ও শাকিল আলম বুলবুলের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। 

সাঁওতাল হত্যা মামলার চার্জশিট ভুক্ত ৯০ নম্বর আসামি শাকিল আলম বুলবুল। 

এদিকে ৫ আগস্টের পর থেকেই সাবেক আবুল কালাম আজাদ ও শাকিলের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। কোনো নেতা–কর্মীর সঙ্গেও তাঁরা যোগাযোগ করছেন না। তাঁদের ব্যবহৃত ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার আওয়ামী লীগের এক সহ–সভাপতি বলেন, ‘ফাঁস হওয়া ফোনালাপটি শাকিল আলম বুলবুলের। বুলবুলসহ সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ দুজনই ভারতে পালিয়ে গেছেন। তিনি নিরাপদে থেকে নেত্রীর কাছে উপজেলা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন। তিনি চাচ্ছেন উপজেলায় যেসব আসামি আছে তারাও বিপদে পড়ুক। নিজেরা ক্ষমতায় থাকায় সময় হাজার হাজার কোটি টাকায় কামাই করে নিরাপদ স্থানে পালিয়ে আছেন। তিনি চাচ্ছেন, আওয়ামী লীগের সবাই যেন জনরোষে পড়ে। এসব নেতার কারণেই আজ দেশে আওয়ামী লীগের এমন অবস্থা হয়েছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত