Ajker Patrika

তেল কিনে ঠকছেন ক্রেতা নিম্নমান, ওজনেও কম

মাসুদ পারভেজ রুবেল  ডিমলা (নীলফামারী) 
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

নীলফামারীর ডিমলা বাবুরহাট বাজারে ১ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল কেনেন সোবাহান মিয়া। বাজারে দাম ১৯৫ টাকা হলেও তিনি নেন ১৮০ টাকায়। বাড়ি যাওয়ার পর বুঝতে পারেন বোতলে প্রায় ৩০০ মিলি তেল কম, মানও খারাপ।

সোবাহান বলেন, ‘একটু কম দামে পাওয়ায় পাইকারি দোকান থেকে তেল কিনেছি। বিক্রেতা বলেছিলেন, তিনি একসঙ্গে অনেক বেশি কিনেছেন, তাই কম দামে দিতে পারছেন। কিন্তু এটা যে কম দামের ফাঁদ, তা কেনার পর বুঝতে পেরেছি।’

শুধু সোবাহান মিয়া নন, এমন তেল কিনে অহরহ ঠকছেন সাধারণ ক্রেতারা। নীলফামারীর বাজারে বিক্রি হচ্ছে ওজনে কম থাকা বাহারি নামের ভোজ্যতেল। চকচকে মোড়ক। আসল না নকল বোঝার উপায় নেই। দাম একটু কম। ফলে লুফে নেন সাধারণ ক্রেতারা। বিএসটিআইয়ের অনুমোদনহীন এসব সয়াবিন ও পাম তেল প্রতি লিটারে ২৫০ থেকে ৩০০ মিলি কম। এতে প্রতারিত হচ্ছেন তাঁরা। অভিযোগ উঠেছে, ভোক্তা-অধিকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকায় অনুমোদনহীন তেলে সয়লাব হাটবাজারগুলো। এসব তেল খেয়ে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে সাধারণ মানুষ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলার ডোমার, ডিমলা উপজেলাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের হাটবাজারে বিক্রি হচ্ছে জান্নাত, তরী, পাইলট, ফাইনসহ বিভিন্ন নামের বোতলজাত সয়াবিন তেল। বাজারের পরিচিত ব্র্যান্ডের তেল প্রতি লিটার ১৯৫ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হলেও এসব তেল ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লিটারে ১০ থেকে ১৫ টাকা কম পাওয়ায় স্বল্প আয়ের ক্রেতারা ক্রয় করছেন। তবে ১ লিটার বলা হলেও বোতলে তেল থাকে ৭০০ মিলিলিটার। আর ৫০০ মিলি বোতলে ৩৪০ মিলি। ওজনে কম দিয়ে অভিনব কায়দায় গ্রাহকদের ঠকানো হচ্ছে।

ক্রেতারা বলছেন, তুলনামূলক কম দামে পাওয়ায় নিম্ন আয়ের অনেকেই এসব তেল কিনছেন। ব্র্যান্ডের পণ্যের মতো হুবহু মোড়ক ও লেবেল লাগানো থাকায় প্রতারণা ধরার উপায় নেই।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, পঞ্চগড়, নীলফামারীসহ আশপাশ এলাকায় এসব অবৈধ তেলের কারখানা গড়ে উঠেছে এবং গোপনে বাজারজাতে জড়িত রয়েছে একাধিক চক্র। চক্রের মূলে রয়েছেন ডিমলা বাবুরহাট বাজারের মুদি ব্যবসায়ী মোতালেব হোসেন, সাইফুল ইসলাম (নুপুর স্টোর), টুনিরহাটের ব্যবসায়ী হামিদুল ইসলাম ও রবিউল ইসলাম এবং ডোমার উপজেলার মঞ্জু নামের ব্যক্তি। তাঁদের মাধ্যমে এসব কম ওজনের নিম্নমানের ভোজ্যতেল ছড়িয়ে পড়ছে জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে।

জানতে চাইলে বাবুরহাট বাজারের ব্যবসায়ী মোতালেব হোসেন বলেন, ‘বাজারে ভোজ্যতেলের সংকট। তাই চাহিদা মেটাতে অনুমোদনহীন এসব তেল বিক্রি করছি।’ তিনি জানান, দাম কিছুটা কম। তবে ওজন কম। একই কথা বলেন সাইফুল, হামিদুল, রবিউল ও মঞ্জু। তাঁদের দাবি, অনেকেই

কম ওজনের এসব তেল বিক্রি করছেন। তাই তাঁরাও করছেন। এসব তেল কোথা থেকে কিনেছেন, কে দিচ্ছে—এ ব্যাপারে কোনো তথ্য দেননি এসব ব্যবসায়ী।

তাঁদের ভাষ্য অনুযায়ী, জান্নাত, তরী, স্টার, পাইলটসহ বিভিন্ন নামে কম ওজনের বোতলজাত তেল বাজারজাত করছেন পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক, ইউসুফ আলীসহ বেশ কয়েকজন। এ ব্যাপারে ক্রেতা সেজে কথা হয় আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে। তিনি জানান, তাঁর বিএসটিআইয়ের অনুমোদন নেই; তবে আবেদন করেছেন।

এ বিষয়ে জেলা জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শামসুল আলম বলেন, বিষয়টি তিনি জানেন এবং দোকানদারকে মৌখিকভাবে নিষেধ করেছেন। তবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা বা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাননি। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়ীরুজ্জামান বলেন, ‘দ্রুত জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করা হবে। যারা এমন কাজে জড়িত, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চূড়ান্ত হচ্ছে সাত কলেজের নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম, শিগগির ঘোষণা

প্রবাসীর স্ত্রীর ঘরে ধরা পড়া সেই নেতাকে বহিষ্কার করল ছাত্রশিবির

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ডিজির অপসারণের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

ফ্রিতে নৌকা না পেয়ে ভূমি অফিস সহকারীকে মারধর এসপির

এশিয়ার ১০টিসহ ৪৩ দেশের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছেন ট্রাম্প

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত