৫ বছরেও সেতুর কাজ সম্পন্ন হয়নি, ভোগান্তিতে লক্ষাধিক মানুষ

চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৫ আগস্ট ২০২২, ১২: ৫১
আপডেট : ০৫ আগস্ট ২০২২, ১৩: ৫১

দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার কাঁকড়া নদীতে ১৭৫ মিটার একটি সেতুর নির্মাণকাজ পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি। বিভিন্ন অজুহাতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ বন্ধ রাখায় চিরিরবন্দর উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের যাতায়াতকারীদের পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি। তবে শিগগির কাজ শেষ করা হবে বলে জানিয়েছে এলজিইডি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, চিরিরবন্দর উপজেলার দক্ষিণ এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল ভিয়াইল ও পুন্ট্রি ইউনিয়নের সংযোগস্থল আত্রাই নদীতে একটি সেতু নির্মাণের। সেই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধীনে ১৭৫ মিটার আরসিসি গার্ডার সেতুটি নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এমপি। এতে বরাদ্দ দেওয়া হয় ১৩ কোটি ৩৪ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। কাজটি সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে। কাজটি পেয়েছে ঢাকা দোহারের মেসার্স সুরমা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

এলাকাবাসী জানান, চিরিরবন্দর উপজেলা সদরে যাতায়াতে এই নদীই প্রধান সমস্যা। এ ছাড়া ভিয়াইল ও পুন্ট্রি ইউনিয়নের মানুষের প্রয়োজনীয় কাজে, কৃষিপণ্য পরিবহনে এই নদীতে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হয়। এখানে বছরের প্রায় আট মাস পানি থাকে। এ কারণে বর্ষায় নৌকা ও শুষ্ক মৌসুমে হেঁটে চলাচল করতে হয়ে। বিশেষ করে বৃষ্টির সময় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় হাজার হাজার মানুষকে।

দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার কাঁকড়া নদীতে ৫ বছরেও অসমাপ্ত ১৭৫ মিটার সেতুর নির্মাণকাজএ বিষয়ে স্থানীয় রুবেল হোসেন ও ব্যবসায়ী জবেদ আলী বলেন, সেতু নির্মাণে যেমন ঠিকাদারের গাফিলতি রয়েছে, সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের তদারকির চরম অভাব। এ কারণে দীর্ঘ কয়েক বছর চলে গেলেও সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হয়নি।

ওই এলাকার বাসিন্দা বিনু চন্দ্র জানান, নদীর ওপারে ইউনিয়ন পরিষদ। যেকোনো কাজে নদী পার হয়ে ইউনিয়ন পরিষদে যেতেই হয়। যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজে বা সমাবেশে গ্রামের সবাই একসঙ্গে ইউনিয়ন পরিষদে যায়। কিন্তু মাত্র একটি নৌকা ঘাটে থাকায় সময়মতো সবাই একসঙ্গে পরিষদে যেতে পারে না।

নৌকায় নদী পার হওয়ার সময় জেসমিন নামের এক নারী বলেন, ‘নদীর ওই পারত হামার আবাদি জমি। ধান কাটা-মাড়ার সময় হামার খুব কষ্ট হয় ফসল ঘরে আনতে।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া স্থানীয় যুবক ইমরান হাসান বলেন, ‘ঠিকাদারের গাফিলতিতে সেতুটি নির্মাণের প্রায় পাঁচ বছর পেরিয়ে গেছে। এত দেরি হওয়ায় আমরা চিন্তিত, কবে এর কাজ শেষ হবে কেউ বলতে পারছে না।’

হিরা নামে স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘ভিয়াইল ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র। তারা কৃষি ও মৎস্যজীবী। নিয়তই তাদের কাঁকড়া নদী পার হয়ে উপজেলা সদরে যাতায়াত করতে হয়। এ ছাড়া যাতায়াতের বিকল্প যে পথটি রয়েছে, সেটি প্রায় সাত কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়। তা ছাড়া এই সেতু হচ্ছে দুই ইউনিয়নের সংযোগস্থল। তাই হাজার হাজার মানুষের যাতায়াতের সহজ মাধ্যম এই সেতু দ্রুত মানুষের চলাচলের উপযোগী করার দাবি জানাই।’

এ বিষয়ে চিরিরবন্দর উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফারুক হাসান বলেন, ‘ঠিকাদারেরা বিভিন্ন অজুহাতে কাজ বন্ধ রাখায় সেতু নির্মাণে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। তাদের অনেকবার চিঠি দিয়েও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। বর্ষা মৌসুমের পরে তারা পুনরায় কোনো সাড়া না দিলে বাতিল আবেদন চেয়ে বাকি কাজ শুরু করা হবে। তবে সেতুটির পিলারসহ অন্যান্য কাজ মোটামুটি ৬০ ভাগ শেষ হয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুতই সেতুটির নির্মাণকাজ শেষে চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত