প্রাইম মেডিকেলের আইসিইউতে ১৪ ঘণ্টায় ১ রোগীকে ১০০ ওষুধ

বদরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ০১ এপ্রিল ২০২৪, ১১: ০৪
Thumbnail image

মৃত্যুর পরও এক প্রসূতির মরদেহ ১৪ ঘণ্টা আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়ার নামে বাড়তি টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে রংপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে। প্রাইম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ মৃত প্রসূতি মুক্তা বানুর (২০) স্বজনদের।

কেবল তা-ই নয়, মৃত ঘোষণার পর ৩ ঘণ্টা লাশ আটকে রেখে দাবি করা বিলের ৬৪ হাজার টাকা আদায় করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। বিল ভাউচারে এক শর বেশি ধরনের ওষুধ ব্যবহারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

মুক্তা বানুর বাড়ি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের মোস্তফাপুর বখশীপাড়া গ্রামে। দরিদ্র এই গৃহবধূর স্বজনেরা শোকের মধ্যে থাকায় গতকাল পর্যন্ত কোথাও লিখিত অভিযোগ দিতে পারেননি। তবে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ তুলে ধরেন।

মুক্তার স্বজনেরা জানান, গত বৃহস্পতিবার রাতে মুক্তার প্রসবব্যথা উঠলে প্রথমে রংপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। উচ্চ রক্তচাপ থাকায় ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অস্ত্রোপচার না করে রাত ২টার দিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্বাভাবিক প্রসবে মৃত ছেলেসন্তান প্রসব করেন মুক্তা। তবে দুপুর ১২টার দিকে মুক্তার শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় এবং একপর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তখন চিকিৎসক তাঁকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউতে) নেওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউতে শয্যা ফাঁকা না থাকায় মুক্তাকে ওই দিন বিকেলে নেওয়া হয় রংপুর প্রাইম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

মুক্তার বাবা মোক্তার হোসেন বলেন, ‘মেয়েকে বাঁচাতে প্রাইম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করাই। সেখানে মেয়েকে অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়। শুক্রবার রাত ১১টার দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলে, আপনার মেয়ের অবস্থা ভালো নয়, বাঁচাতে হলে লাইফ সাপোর্টে রাখতে হবে। এরপর তারা লাইফ সাপোর্টে রাখে।

পরদিন শনিবার দুপুর ১২টার দিকে দেখি, আমার মেয়ে আর বেঁচে নেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বারবার বলছি, আমার মেয়ে বেঁচে নেই। তবু তারা বেশি টাকা আদায়ের লোভে রাত ২টা পর্যন্ত আমার মেয়েকে লাইফ সাপোর্টে রাখে।’

মোক্তার হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ‘রাত ২টার দিকে ৬৪ হাজার টাকার বিল ভাউচার ধরিয়ে দেওয়া হয়। আমি দিনমজুরি করে সংসার চালাই। বাড়িতে কোনো টাকা নাই। রাতেই ধারদেনা করে ৪০ হাজার টাকা ম্যানেজ করে হাসপাতালে নিয়ে আসি। কিন্তু এক টাকা কম হলেও তারা লাশ দেবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়। বাধ্য হয়ে ভোররাতে আবারও গ্রামে গিয়ে আরও ২৪ হাজার টাকা ম্যানেজ করে এনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দিয়ে লাশ নেই। যখন লাশ গ্রহণ করি, তখন দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল।’

মুক্তার চাচা ওবায়দুল হক বলেন, ‘যদি রাত ২টায় আমার ভাতিজি মারা গিয়ে থাকে, তাহলে ভোর হতে না হতেই এত অল্প সময়ে লাশ ফুলবে কেন এবং দুর্গন্ধ ছড়াবে কেন?’

তিনি বলেন, তাঁরা কখনো ওই হাসপাতালের চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলতে পারেননি। চিকিৎসা কে দিয়েছেন, তা-ও বলতে পারেন না। সব সময় নার্সরাই রোগীর কাছে যাওয়া-আসা করছিলেন।

ওবায়দুল হক জানান, শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে শনিবার রাত ২টা পর্যন্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসার নামে শুধু ওষুধের বিল নিয়েছে ১৭ হাজার টাকা। ওষুধ বিলের ভাউচারে দেখা যায়, এক শর বেশি ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে রংপুর প্রাইম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলে আইসিইউ-সংশ্লিষ্ট কেউ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে চাননি। তবে অতিরিক্ত পরিচালক ডা. সুনীল চন্দ্র রায় বলেন, ‘এ রকম তো হওয়ার কথা নয়, আমি বিষয়টি দেখছি।’

রংপুরের সিভিল সার্জন ওয়াজেদ আলী বলেন, ‘ওই ধরনের অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে: সলিমুল্লাহ খান

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে মনঃক্ষুণ্ন বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত