মাটি ছাড়াই অভিনব পদ্ধতিতে শাক-সবজি চাষ

সাদ্দাম হোসেন, ঠাকুরগাঁও
প্রকাশ : ১৯ এপ্রিল ২০২২, ১১: ৪১
আপডেট : ১৯ এপ্রিল ২০২২, ১২: ৫৬

দ্রুত নগরায়ণের কারণে কমছে কৃষিজমি। ফলে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও অনেকে বাগান কিংবা সবজি চাষ করতে পারেন না। তবে আশার কথা হচ্ছে, ঠাকুরগাঁওয়ে মাটি ছাড়াই অভিনব পদ্ধতিতে বিষমুক্ত লেটুসসহ শাক-সবজি ও ফলের চাষ হচ্ছে। 

গ্রিন হাউসের মতো বিশেষ পদ্ধতিতে উৎপাদিত নিরাপদ ও বিষমুক্ত এসব শাক-সবজি সরবরাহ করা হচ্ছে রাজধানী ঢাকার নামীদামি রেস্টুরেন্টগুলোতে। তবে সরকারি সহায়তা পেলে আরও বেশ কয়েকটি খামার গড়তে চান উদ্যোক্তারা। 

সরেজমিন সদর উপজেলার খলিশাখুড়ি গ্রামে সবজির খামারে গিয়ে দেখা যায়, প্লাস্টিক পাইপের মাধ্যমে ১৬টি খাদ্য উপাদান মেশানো পানি অটোপাম্পের মাধ্যমে সঞ্চালন করে মাটি ছাড়া চাষাবাদ চলছে। পাইপের ছিদ্র দিয়ে বেড়ে উঠছে গাছ। স্বল্প পরিসরে চাষ করা হচ্ছে শসা, লাউ, মরিচ, ধনেপাতা, টমেটো, ক্যাপসিকাম, স্ট্রবেরি, পেঁয়াজ, রসুন, তরমুজ, করলাসহ আরও কয়েক ধরনের সবজি।

এই চাষাবাদে একটি পানির পাম্প দিয়ে দিনে দুবার মাটির বিভিন্ন উপাদানমিশ্রিত পানি আদান-প্রদান করা হয়। উৎপাদিত এসব শাক-সবজি রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় বাজারজাত করছেন বাগান উদ্যোক্তারা। 
 
সবজি খামারের নিয়মিত কর্মরত শ্রমিকেরা বলেন, ‘অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে খামারে চাষ করছি। এখানে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করা হয়।’

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালে ৬০ শতক জমি নিয়ে পরীক্ষামূলক মাটি ছাড়া এই বিশেষ পদ্ধতিতে ওই গ্রামের ছয় বন্ধু যৌথভাবে লেটুসসহ শাক-সবজি ও ফল চাষ শুরু করেন। অভিনব এই পদ্ধতিতে আবাদ করে সফলও হয়েছেন তাঁরা। ২০১৯ সাল থেকে তাঁদের খামারে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত হচ্ছে বিদেশি সবজি লেটুসসহ দেশীয় ফল ও শাক-সবজি। হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের এ ছয়জন উদ্যোক্তা হলেন জাফর ইবনে হাসান, নাহিদ হোসেন, আল আমীন, সাবাহ্ সাঈদ, আব্দুল্লাহ আল মামুন ও শাহরিয়ার। 

এ বিষয়ে উদ্যোক্তা নাহিদ হোসেন বলেন, ‘হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের কারণে খেতে পোকামাকড়ের আক্রমণ নেই। তা ছাড়া কিছু ডিভাইস ব্যবহারের ফলে বন্যপ্রাণী ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না। এ ছাড়া বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে আমরা সক্ষম। ভবিষ্যতে লেটুসের সঙ্গে টমেটো, শসা, মরিচ, তরমুজ চাষের পরিকল্পনা রয়েছে।’ 

ঠাকুরগাঁওয়ে মাটি ছাড়াই শাক-সবজি চাষহাইড্রোপনিকের আরেক উদ্যোক্তা আল আমিন বলেন, ‘আমরা লেটুসকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি, কারণ এর চাহিদা থাকে সারা বছর। তবে উৎপাদনে সফলতা এলেও খরচের তুলনায় দাম সেই রকম পাওয়া যায় না। পরিকল্পনা রয়েছে দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানি করার। কিন্তু সেই রকম যোগাযোগ পাচ্ছি না। বর্তমানে ঢাকায় বাজারজাত করছি, কিন্তু আশানুরূপ ফল পাচ্ছি না। এই পদ্ধতিতে অল্প জায়গায় বেশি পরিমাণ বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করা সম্ভব। তবে এই পদ্ধতিতে উৎপাদন খরচ বেশি। এ পদ্ধতিতে বীজ রোপণ থেকে লেটুসপাতা উৎপাদন পর্যন্ত সময় লাগে ৩৫-৩৮ দিন।’ 

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ আবু হোসেন জানান, উপজেলার ভূল্লী এলাকায় নিজস্ব উদ্যোগে বৃহৎ আকারে বাণিজ্যিকভাবে হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ শুরু হয়েছে। বর্তমানে দেশে যে হারে আবাদি জমি কমছে, তাতে অনেকে চাইলেই এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে সারা বছর সবজি-ফলমূল উৎপাদন করতে পারবেন। তবে এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। 

এই সম্পর্কিত পড়ুন:

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

শেখ হাসিনাকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে এম সাখাওয়াতের বিস্ফোরক মন্তব্য, কী বলেছেন এই উপদেষ্টা

শিক্ষকের নতুন ২০ হাজার পদ, প্রাথমিকে আসছে বড় পরিবর্তন

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

শ্রীপুরে পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু, আহত ৩

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত