Ajker Patrika

অস্তিত্বহীন ১৩ নদ-নদীর খোঁজ মিলল মাঠে

  • গত ৫০ বছরে জেলার অন্তত ১৩ নদ-নদী মানচিত্র থেকে মুছে গেছে।
  • পাউবোর সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে নদীগুলোর অস্তিত্বের খোঁজ মেলে।
সাদ্দাম হো‌সেন, ঠাকুরগাঁও 
আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩: ৫৬
নদীর নাম সাইনবোর্ডে থাক‌লেও বাস্তবে নেই। একসময়ের খরস্রোতা ভক্তি এখন শুধুই ফসলের মাঠ। সম্প্রতি ঠাকুরগাঁও সদরের ভেলাজান এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
নদীর নাম সাইনবোর্ডে থাক‌লেও বাস্তবে নেই। একসময়ের খরস্রোতা ভক্তি এখন শুধুই ফসলের মাঠ। সম্প্রতি ঠাকুরগাঁও সদরের ভেলাজান এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

একসময় লঞ্চ, ট্রলার চলাচলে মুখরিত ছিল যে নদী, আজ সেখানে ফসলের মাঠ। ঠাকুরগাঁওয়ের বুক চিরে বয়ে যাওয়া ভক্তি নদের এখন এমনই দশা। শুধু ভক্তি নয়, গত ৫০ বছরে জেলার অন্তত ১৩ নদ-নদী মানচিত্র থেকে মুছে গেছে।

সম্প্রতি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে জেলার নদ-নদীর তালিকা অনুসন্ধানে নামে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। তখনই ১৩টি নদীর অস্তিত্বের খোঁজ মেলে।

ঠাকুরগাঁও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. গোলাম যাকারিয়া জানান, বর্তমানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের চিহ্নিত স্থানীয় নদীর সংখ্যা মাত্র ১৪টি। এর সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হলো আরও ১৩টি। এসব নদীর তথ্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হবে। নতুন করে প্রকল্প পেলে নদীগুলো দখলমুক্ত ও খননের কাজ শুরু হবে।

পাউবো সূত্রে জানা যায়, হারানো নদ-নদীর মধ্যে রয়েছে রশিয়া, হাতুরি, জলই, পুনর্ভবা, মরা গোগরা, চাড়াল বান্দ, নহনা, আমান-ধামান, কাহালাই, বাগমারা, সারডু‌বি, মরাটাঙ্গন ও ভক্তি।

সরেজমিনে দেখা যায়, বেশির ভাগ নদী শুকিয়ে গেছে। সেগুলো এখন ফসলের মাঠ। কোথাও কোথাও ক্ষীণ স্রোতোধারা জানান দিচ্ছে একসময় এখানে নদী ছিল। স্থানীয়রা জানান, একসময় এসব নদীতে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। জেলেরা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এখন নদী শুকিয়ে যাওয়ায় তাঁদের জীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্দশা।

সদর উপজেলার ভেলাজান এলাকার স্কুলশিক্ষক রফিকুল ইসলাম (৬৫) ভক্তি নদের তীরে দাঁড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, ‘ছোটবেলায় বাবার মুখে শুনেছি, এই নদে (ভক্তি) বড় বড় লঞ্চ চলত। জেলেরা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত। এখন শুধু স্মৃতিচিহ্ন হয়ে আছে।’

সদর উপজেলার শুখানপুকুরী ও বালিয়া ইউনিয়নে যার উৎপত্তিস্থল, সেই ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সারডুবি নদ আজ মৃতপ্রায়। পাউবোর সদর উপজেলার কার্য সহকারী শফিউজ্জামান আজকের পত্রিকাকে জানান, সারডুবি নদের ৭০ শতাংশ জমিতে এখন চাষাবাদ হয়, বাকি ৩০ শতাংশ ছোট ছোট খালে পরিণত হয়েছে। নদীপারের বাসিন্দা আয়েশা বেগম (৬০) বলেন, ‘আগে এই নদীর পানি দিয়ে আমরা রান্না করতাম, কাপড় ধুতাম। এখন নদীটিই নেই, সবকিছু কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগে।’

পীরগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত কাহালাই নদ প্রায় পুরোটাই শুকিয়ে গেছে। পাউবোর পীরগঞ্জের কার্য সহকারী শারাফাত হোসেন জানান,

এ নদীর ৭৫ শতাংশেই এখন চাষাবাদ হচ্ছে। কৃষক আব্দুল হামিদ (৫০) বলেন, ‘আগে এই নদীতে নৌকা চলত। মানুষ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেত। এখন সেই দিন আর নেই। আমাদের জমিতে সেচ দিতেও সমস্যা হয়।’

এসব নদীর তথ্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হবে। নতুন করে প্রকল্প পেলে নদীগুলো দখলমুক্ত ও খননের কাজ শুরু হবে।’ মো. গোলাম যাকারিয়া নির্বাহী প্রকৌশলী, পানি উন্নয়ন বোর্ড, ঠাকুরগাঁও

জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার হাজিপুর ইউনিয়নে অবস্থিত জলই নদের চিহ্নও প্রায় মুছে গেছে। স্থানীয় বাসিন্দা জমিলা খাতুন (৬০) বলেন, ‘আগে এই নদীর ধারে অনেক গাছপালা ছিল। ছায়া হতো। এখন নদী শুকিয়ে যাওয়ায় সব গাছপালাও মরে গেছে। খুব গরম লাগে।’

জেলার পরিবেশবাদী সংগঠন সৃজনের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, ভুল নদী শাসন, দখল ও দূষণের কারণে এসব নদী বিলীন হয়েছে। অনুসন্ধান করলে এই সংখ্যা আরও বাড়বে।’

ঠাকুরগাঁওয়ের প্রবীণ শিক্ষক অধ্যাপক মনতোষ কুমার দে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে নাব্যতা হারাতে হারাতে নদীগুলো সমতল ভূমিতে পরিণত হয়েছে। আর এই সুযোগে দখলদারদের কবলে পড়ে মানচিত্র থেকেই বিদায় নিয়েছে অনেক নদী।’

সিএস, এসএ এবং আরএস রেকর্ডে নদীগুলোর অস্তিত্ব থাকলেও সেগুলো উদ্ধার করা কঠিন বলে মনে করেন জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ময়দুল ইসলাম রনি। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে। এতে বেশির ভাগ নদীতে স্থাপনা গড়ে উঠেছে। ফলে নদীগুলো উদ্ধার করা কঠিন হয়ে পড়বে।’

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা জানান, কৃষিনির্ভর অর্থনীতির কথা ভেবে নদীর সৌন্দর্য ও স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে ১৩টি নদ-নদীর বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জয়পুরে সম্প্রীতির নজির, ঈদগাহে আসা মুসলিমদের ওপর ফুল ছিটালেন হিন্দুরা

বাসা ভাড়ার টাকা নেই, অফিসের টয়লেটেই থাকছেন চীনা তরুণী

ঈদের মোনাজাতে খালেদা জিয়ার নাম না বলায় ইমামকে হেনস্তা, চাকরিচ্যুতির হুমকি

কোম্পানি দেউলিয়া, দেড় কোটি মানুষের ডিএনএ ডেটার এখন কী হবে

ঈদগাহে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান: আওয়ামী লীগ-বিএনপি সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধসহ আহত ৫

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত