বোরকা পরায় ছাত্রীকে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল, ক্ষমা চাইলেন শিক্ষক

লালমনিরহাট প্রতিনিধি
Thumbnail image

লালমনিরহাট সদর উপজেলার পূর্ব সাপটানা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে বোরকা পরায় অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করার অভিযোগ উঠেছে ওই স্কুলের আইসিটি শিক্ষক ফেরদৌস আলীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন এলাকাবাসী। আজ সোমবার এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীরা স্কুলে এসে প্রতিবাদ জানালে জরুরি মিটিং ডেকে স্কুল ছুটি দেয় প্রতিষ্ঠান প্রধান ও সভাপতি। আজ সোমবার দুপুরে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা লালমনিরহাট সদর থানায় এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তবে অভিযুক্ত শিক্ষক ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন।  

স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ১ জুন স্কুলের মধ্যাহ্ন বিরতির পরে আইসিটি শিক্ষক ফেরদৌস আলী দশম শ্রেণিতে ক্লাস নিতে যান। এ সময় ওই ছাত্রীকে বোরকা পরে আসায় গালিগালাজ করেন। ওই শিক্ষার্থী তার প্রতিবাদ করলে অশ্লীল ভাষায় ওই ছাত্রীকে গালি দেন শিক্ষক। 

পরে ওই শিক্ষার্থী স্কুলের প্রধান শিক্ষক গোলাম সরওয়ার ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শফিকুল ইসলামকে মৌখিকভাবে বিষয়টি জানান। কিন্তু তারা কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় অসহায় মেয়েটি বাধ্য হয়ে বাড়ি চলে গিয়ে তাঁর পরিবারকে জানায়।

মেয়েটির বাবা পরিবারের অন্য লোকজন নিয়ে সভাপতির কাছে আবারও বিচার চাইতে গেলে তিনি উলটো তার মেয়ের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বলে অভিযোগ মেয়ের পরিবারের।

পরে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে স্কুলের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য সালিস বৈঠক করেন এবং মেয়ের পরিবারকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধমকি দেওয়া হয়।

বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন। এরই অংশ হিসেবে আজ সোমবার স্কুলে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়। মানববন্ধনে এলাকাবাসী উপস্থিত হতে শুরু করলে সভাপতির লোকজন এলাকাবাসীর ওপর চড়াও হন এবং কর্মসূচি পালনে বাধা দেন। পরে বাধ্য হয়ে মেয়েটির পরিবার মেয়েকে নিয়ে বাসায় চলে যায়। 

একপর্যায়ে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হলে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক মিটিং ডেকে স্কুল ছুটি ঘোষণা করেন। এর আগেও আইসিটির ওই শিক্ষক অন্য ছাত্রীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করলে সে সময় তিনি সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে পার পান। 

এলাকাবাসী ফারুক মিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এর আগেও আইসিটি শিক্ষক ফেরদৌস আলী ছাত্রীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। প্রভাব খাটিয়ে সেবারও মাফ চেয়ে পার পান। তিনি আবারও একই ঘটনা ঘটিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া না হলে আমরা কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবো।’

দশম শ্রেণির ওই ছাত্রীর সহপাঠীরা জানায়, ‘স্কুলের টিফিনের পরে আমাদের বান্ধবী ক্লাসে ছিল। সে বোরকা পড়ে আসায় আইসিটি স্যার তাকে গালি দিয়ে খারাপ ভাষা উচ্চারণ করেন। আমরা এর বিচার চাই।’

মেয়েটির চাচা বলেন, ‘আমি সভাপতির কাছে বিচার দিয়েছিলাম। তিনি এ বিষয়ে কাউকে বলতে নিষেধ করেছেন।’

এ বিষয়ে জানতে আইসিটি শিক্ষক ফেরদৌস আলীর মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। স্কুলে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। খুদে বার্তা দিলেও সারা মেলেনি। 

পূর্ব সাপটানা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম সরওয়ার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আইসিটি শিক্ষক এক ছাত্রীকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেছে। মেয়েটি অভিযোগ করায় ওই শিক্ষক তার বাড়িতে গিয়ে মাফ চেয়ে আসে। আজ সোমবার এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে আমরা জরুরি মিটিং ডেকেছি। মিটিংয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওই স্যার তো ক্ষমা চেয়েছে। এখানে আর কি করা লাগবে। আমরা প্রতিষ্ঠানিকভাবে এর ব্যবস্থা নেব।’
 
এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল বারী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে ওই শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। এটি তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
 
লালমনিরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এরশাদুল আলম বলেন,‘অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। খোঁজ নিয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত