জাতীয় পার্টির কাছে ভিপি নুর কোনো ফ্যাক্টর না: মোস্তফা

রংপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৪, ২০: ০৮
Thumbnail image
রংপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মোস্তাফিজুর রহমান। ছবি: আজকের পত্রিকা

জাতীয় পার্টির (জাপা) কাছে ভিপি নুর কোনো ফ্যাক্টর না বলে মন্তব্য করেছেন দলটির কো-চেয়ারম্যান ও রংপুর সিটি করপোরেশনের (রসিক) সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। জাপার ঢাকা অফিসে অগ্নিসংযোগ ও গণঅধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীদের সারা দেশে জাতীয় পার্টি অফিসের সামনে আজ শনিবার দুপুরে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণার প্রতিবাদে রংপুরে বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এই মন্তব্য করেন।

রংপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, ‘ভিপি নুর কোনো ফ্যাক্টর না। ভিপি নুরকে যারা পৃষ্ঠপোষকতা করছে, তারা পর্দার আড়াল থেকে তাকে প্রোগ্রাম করতে সহযোগিতা করছে। এরা জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে, জাতীয় পার্টিকে কীভাবে নিশ্চিহ্ন করা যায়। তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, রংপুরে আমাদের রক্ত যতক্ষণ পর্যন্ত ধমনিতে বইছে, ততক্ষণ পর্যন্ত জাতীয় পার্টির বিপক্ষে কোনো চ্যালেঞ্জ আমরা গ্রহণ না করে ছাড়ব না।’

রসিকের সাবেক এই মেয়র বলেন, ‘আমাদের কাছে একটা খবর ছিল, আজকে ভিপি নুরের দল গণঅধিকার পরিষদ ঘোষণা করেছিল, সারা দেশে সমস্ত জাতীয় পার্টির অফিসের সামনে তারা বিক্ষোভ কর্মসূচি করবে। ঢাকার পার্টি অফিসে চোরের মতো যে অগ্নিসংযোগ করেছিল, সেই ধরনের ঘটনা ঘটাবে। তার পরিপ্রেক্ষিতেই আমরা বিক্ষোভ করছি।’

মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, ‘নুরের দলকে আমাদের হিসাব করার সময় নাই। কোথায় কোন চুনোপুঁটি কী করল, এগুলো হিসাব করার সময় জাতীয় পার্টির নাই। তারপরও আমরা তাদের ঘোষণাটাকে হালকাভাবে নিইনি। আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে পার্টি অফিসের সামনে নেতা-কর্মীরা প্রতিদিনই জমায়েত আছি। বিকেল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত থাকি। চোরের মতো কাকরাইল পার্টি অফিসে যে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে, তারই প্রতিবাদে আমরা বিক্ষোভ সমাবেশ করলাম।’

বিগত তিনটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে অংশ নেওয়া জাতীয় পার্টির শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর ছাত্র-জনতার সঙ্গে ক্রমশ দূরত্ব বাড়ছে। রাজনীতির মাঠে গত কয়েক দিন উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের পর ৩১ অক্টোবর জাপার দলীয় কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ছাত্র-জনতার সঙ্গে জাপার যে বিরোধ তার ডালপালা জাপার দুর্গ খ্যাত রংপুর থেকেই ছড়িয়েছে।

তবে অনেকের মতে, জাপার সঙ্গে ছাত্র-জনতার এমন বিরোধের সূত্রপাত গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের বক্তব্যের মাধ্যমে। ১২ আগস্ট বিএনপি-জামায়াত এবং ছোট ছোট রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করলেও ডাক পায়নি জাপা। ১৫ আগস্ট গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক বলেন, ‘জাতীয় পার্টির মতো একটি পরগাছা, পা-চাটা দালালকে জায়গা দেওয়া হবে না। জাতীয় পার্টি বাংলাদেশের রাজনীতির ভাইরাস, এই ভাইরাস কীভাবে বঙ্গভবনে আসে। জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।’

এরপরই দৃশ্যপট বদলে যেতে থাকে। জাতীয় পার্টিকে নিয়ে ৮ অক্টোবর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহ তাঁদের ফেসবুক ওয়ালে জাতীয় পার্টিকে নিয়ে পোস্ট করেন। সারজিস আলম ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘জাতীয় পার্টির মতো মেরুদণ্ডহীন ফ্যাসিস্টের দালালদের প্রধান উপদেষ্টা কীভাবে আলোচনায় ডাকেন?’ হাসনাত লিখেছিলেন, ‘স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টিকে সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হলে আমরা সেই আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ ও কঠোর বিরোধিতা করব।’

এই পোস্টের জেরে ১৪ অক্টোবর রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলমকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান রংপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা। ১৬ অক্টোবর হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলমের প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করে জাতীয় পার্টি। ওই দিন মধ্যরাতে পাল্টা বিক্ষোভ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এরপর কয়েক দফায় উভয় পক্ষের প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও রংপুর শহরে। এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে সাবেক মেয়র মোস্তফার সঙ্গে ছাত্র-জনতার বিরোধ হয়ে ওঠে রংপুরের টক অব দ্য টাউন।

জাতীয় পার্টি অবাঞ্ছিত ঘোষণার পরও ২৬ অক্টোবর রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রংপুর আসেন সারজিস আলম। এর প্রতিবাদে ওই দিনই দলটির হাজারো নেতা-কর্মী লাঠি হাতে বিক্ষোভ করেন। সে দিনও পুলিশ পাহারায় রংপুরে সারজিসের আসার সমালোচনা করে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন মোস্তফা। এর পর থেকে পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতি হতে থাকে।

১৭ অক্টোবর জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সভায় দলের প্রধান জি এম কাদের ঘোষণা দেন, ২ নভেম্বর চলমান বিভিন্ন ইস্যুতে প্রতিবাদ সমাবেশ করবে জাতীয় পার্টি এমন ঘোষণা দিলেও ৩১ অক্টোবর রাতে ঢাকার কাকরাইলের পার্টি অফিসে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। ১ নভেম্বর এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। এ সময় জীবন দিয়ে হলেও শনিবার (২ নভেম্বর) মহাসমাবেশ করবে জাতীয় পার্টি ঘোষণা দিলেও আগের রাতেই সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল স্থগিত করেন। তবে আজ শনিবার দুপুরে রংপুর জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টি বিক্ষোভ মিছিল করে।

এ সময় জাতীয় পার্টি কো-চেয়ারম্যান ও রংপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, ‘একটা নাম না জানা দলের পেছনে পৃষ্ঠপোষকতা করে টিএসসির মোড় থেকে শুরু করে কাকরাইলে এসে গভীর রাতে পার্টি অফিস আগুন দেওয়া, এটা কিন্তু ঢাকা না ভাই, এটা রংপুর। রংপুর জাতীয় পার্টির অস্তিত্ব। সেই অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা সব সময় প্রস্তুত আছি। যেকোনো সময় যেকোনো ঘটনা মোকাবিলা করার সক্ষমতা জাতীয় পার্টি আছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত