Ajker Patrika

বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণে অনিয়ম, কলম ভেঙে ফেলার নির্দেশ

বদরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি
বদরগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন ভবনের কলম ভেঙে ফেলার নির্দেশ। ছবি: আজকের পত্রিকা
বদরগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন ভবনের কলম ভেঙে ফেলার নির্দেশ। ছবি: আজকের পত্রিকা

রংপুরের বদরগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ৪তলা ভবন নির্মাণে কম রড ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। এলাকাবাসীর প্রতিবাদের মুখে গত রোববার একটি কলম ভেঙে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন শিক্ষা অধিদপ্তর রংপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী ইকবাল। পরে তিনি ছয়টি কলম ভেঙে নতুন করে কলম নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন ঠিকাদারকে। আজ মঙ্গলবার সেই কলমগুলো ভাঙা হয়। ওই কলমগুলোতে দেখা যায়, প্রতি কলমে ১০টি করে রডের মাথা বের হয়ে আছে ২ থেকে ৩ ফিট। ভাঙার পর দেখা যায় বের হওয়া রডগুলো ছিল ফলস। ২ থেকে ৩ ইঞ্চি ঢালাইয়ের মধ্যে ছিল ওই রডগুলো। পুরো কলম ভাঙার পর দেখা যায়, ১৬ মিলি রড ৪টি করে এবং ২৪ থেকে ৩০ ইঞ্চি পরপর বাইন্ডিং রড ব্যবহার করা হয় কলমগুলোতে। প্ল্যান অনুযায়ী কলমে ২০ ও ১৬ মিলি রড ১০টি করে এবং ৬ ইঞ্চি পর পর বাইন্ডিং রড থাকার কথা ছিল।

রংপুর শিক্ষা প্রকৌশলী অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষা প্রকৌশলী অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে বদরগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে ২ কোটি ৩৮ লাখ ৭১ হাজার ১৩১ টাকা ব্যয়ে ৪ তলা একাডেমিক ভিত ও ভবন নির্মাণকাজটি পায় ঢাকার মেসার্স রাদিফ ইন্টার প্রাইজ। ওই ভবন নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২২ সালের ২৯ আগস্ট। কাজের সময়সীমা ছিল ১৮ মাস। সেই অনুযায়ী গত বছরের মার্চ মাসে কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে নির্মাণকাজ শেষ করতে পারেননি ঠিকাদার। বর্তমানে ৪তলার নির্মাণকাজ শেষের পথে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক রাজমিস্ত্রি বলেন, ‘আমি ওই ভবন নির্মাণে কাজ করেছি। ঠিকাদারের লোকজন সব সময় ভবনে কম রড ব্যবহারের চেষ্টায় থাকতেন। অফিসের তদারকি কর্মকর্তারা কেউ আসলেই কম রড ব্যবহার করা হয়। যখন দেখলাম দিন দিন রডের ব্যবহার একেবারেই কম হচ্ছে, তখন বিবেকের তাড়নায় স্থানীয় সাংবাদিকদের বিষয়টি অবগত করি।’

আতাউর রহমান নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘এভাবে কম রড ব্যবহার করে ভবন নির্মাণ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তদারকি কর্মকর্তাসহ অভিযুক্ত ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’

বিদ্যালয়ের তিনজন শিক্ষক নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন, ‘শুধু ৪তলার কলমগুলো ভেঙে ফেলা হলেও ঝুঁকিপূর্ণ থাকবে এ ভবনটি। এ জন্য প্রথম তলা থেকে শুরু করে ৪তলা পর্যন্ত প্রতিটি কলম পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেখতে হবে। তা না হলে ঝুঁকি নিয়েই ক্লাসে করাতে হবে আমাদের।’

স্কুল বন্ধ থাকায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হেলাল হোসেনকে পাওয়া যায়নি। তাঁর মোবাইল ফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে তাঁর বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।

কম রড ব্যবহারের বিষয়ে জানতে আজ বিকেলে মোবাইল ফোনে কয়েকবার যোগাযোগ করা হয় মেসার্স রাদিফ ইন্টার প্রাইজের ঠিকাদার রাদিফ হোসেনের সঙ্গে। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। খুদে বার্তা পাঠানো হয়েও তাঁর কোনো সাড়া মেলেনি।

নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী ইকবাল বলেন, ‘বিধি অনুযায়ী প্রতি কলমে ২০ ও ১৬ মিলি রড ১০টি এবং বাইন্ডিং রড ৬ ইঞ্চি পরপর থাকতে হবে। কিন্তু আমরা সরেজমিন দেখেছি, ওই কলমগুলোতে সেটা করা হয়নি।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ভবন নির্মাণে অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই। ৪তলার ওপরের অংশে ৬টি কলম নির্মাণের সময়ে আমাদের অবগত করা হয়নি। সুযোগ বুঝে ঠিকাদারের মিস্ত্রিরা এমন কাজ করেছিলেন। আমরা সেগুলো ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছি। এ ঘটনায় আরও তদন্ত করে অভিযুক্ত ঠিকাদারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত