মাসুদ পারভেজ রুবেল, ডিমলা (নীলফামারী)
বাংলাদেশ অংশে তিস্তা নদী শুকিয়ে অনেকটা মরা খালে পরিণত হয়েছে। পর্যাপ্ত পানি না থাকায় সংকটে পড়েছে দেশের বৃহত্তম তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্প। সেচের লক্ষ্যমাত্রার ৫০ শতাংশও পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। মোটা অঙ্কের টাকার এই প্রকল্প থেকে সেচ সুবিধা বঞ্চিত নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার লাখো কৃষক। দ্বিগুণ খরচে দিতে হচ্ছে বিকল্প সেচ ব্যবস্থা।
পাউবো সূত্র বলছে, তিস্তা ব্যারাজের উজানে ১০০০-১৫০০ কিউসেক পানি পাওয়া যাচ্ছে। তবে ব্যারাজের ভাটিতে প্রায় ১১০ কিলোমিটার তিস্তায় ১০০ কিউসেক পানিও সরবরাহ নেই।
তিস্তা ব্যারাজ থেকে শুরু হয়ে সেচ প্রকল্পের খাল নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার ১২ উপজেলায় বিস্তৃত। এর দৈর্ঘ্য ৭৬৬ কিলোমিটার। মূল খাল থেকে টারশিয়ারি ও সেকেন্ডারি নালার মাধ্যমে পানি পৌঁছায় কৃষকের জমি পর্যন্ত। কিন্তু পানি না পাওয়া ও দেরিতে পাওয়ার অভিযোগ করেছেন প্রকল্প এলাকার অনেক কৃষক। একই এলাকার অনেক কৃষককে দ্বিগুণ খরচে বিকল্প উপায়ে সেচ দিতে হচ্ছে।
সুবিধাভোগীরা বলছেন, নদীতে পানি না থাকায় তাঁরা আবাদ নিয়ে বেকায়দায় আছেন। পানির প্রবাহ নিশ্চিত না করায় বেশির ভাগ সেচনালা কোনো কাজেই আসছে না।
প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯৭৯ সালে দেশের শস্যভান্ডার খ্যাত উত্তর জনপদের ৮ জেলায় ৫ লাখ ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে ১৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে তিস্তা সেচ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। কিন্তু ব্যারাজের উজানে ভারত বাঁধ নির্মাণ করে পানি প্রত্যাহার করায় প্রকল্প বাধাগ্রস্ত হয়।
পরে নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুরের ১ লাখ ১১ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ১৯৯৩ সালে তিস্তা সেচ প্রকল্পের অপারেশনাল কার্যক্রম চালু করা হলেও কখনোই তা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি। এর মূল কারণ শুষ্ক মৌসুমে তিস্তায় পানি না থাকা। ফলে চড়া দামে ডিজেল কিংবা বিদ্যুৎ-চালিত সেচযন্ত্রের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে কৃষকদের।
পাউবো সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে ১০ হাজার, ২০১৭ সালে ৮ হাজার, ২০১৮ সালে ৩৫ হাজার, ২০১৯ সালে ৪০ হাজার, ২০২০ সালে ৪১ হাজার এবং ২০২১ ও ২০২২ সালে ৫৩ হাজার, ২০২৩ সালে ৪৫ হাজার হেক্টর এবং চলতি মৌসুমে ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া হচ্ছে। তবে প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, লক্ষ্যমাত্রা শুধু কাগজে কলমে, বাস্তবে অর্ধেক জমিতেও সেচ দিতে পারছে না পাউবো।
সূত্র জানায়, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিস্তা নদীতে ৬০-৬৫ হাজার কিউসেক পানিপ্রবাহ থাকে। অক্টোবর থেকে পানি কমতে শুরু করে। ডিসেম্বরে তিস্তা শুকিয়ে যায়। জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত তিস্তায় ৭০০-১৫০০ কিউসেক পানি থাকে। সে সময় সেচের জন্য তিস্তায় কমপক্ষে ৫ হাজার কিউসেক পানি থাকা দরকার।
সরেজমিনে দেখা গেছে, তিস্তা ব্যারাজের উজানে সামান্য কিছু পানি থাকলেও ভাটিতে কোনো পানিই নেই। নদীর বুকে জেগে উঠেছে মাইলের পর মাইল বালুচর। সেচ প্রকল্পের আওতাভুক্ত নীলফামারীর বিভিন্ন গ্রামের ফসলি জমি ঘুরে দেখা গেছে, যেসব এলাকার কৃষকেরা আগে সেচের পানি পেতেন, তাঁরা ডিজেলচালিত শ্যালো পাম্প বসিয়ে জমিতে সেচ দিচ্ছেন। অথচ এসব এলাকার কৃষকেরা আগে নামমাত্র খরচে সেচ প্রকল্পের পানি দিয়ে চাষাবাদ করতেন।
কৃষকেরা বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে পুরো মৌসুমের জন্য সেচ প্রকল্প থেকে পানি নেওয়া হলে খরচ পড়ে ২০০ টাকার মতো। কিন্তু বিদ্যুৎচালিত সেচপাম্প থেকে পানি নিতে ব্যয় দ্বিগুণেরও বেশি। ডিজেলচালিত শ্যালো মেশিনের পানির খরচ আরও বেশি।
ডিমলার সোনাখুলি গ্রামের কৃষক সাফিন, আফতাবসহ কয়েকজন বলেন, দুর্বল ব্যবস্থাপনা, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিকল্পনার অভাবে পাঁচ-ছয় বছর ধরে সেচ খাল থেকে পানি পাচ্ছেন না তাঁরা। নালার পানি আসতে আসতে আবাদ শেষ। বাধ্য হয়ে যন্ত্রের মাধ্যমে সেচ দিতে হচ্ছে কৃষকদের। তাতে প্রতি বিঘায় ৩-৪ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। সেচযন্ত্র বসাতে গিয়েও খরচ হয় ৮-১০ হাজার টাকা। পানির খরচ কমাতে প্রকল্প এলাকার বেশির ভাগ কৃষক তাঁদের বোরো ধানের জমিতে ভুট্টা লাগিয়েছেন।
ওই এলাকার পানি ব্যবস্থাপনা সমিতির সভাপতি আতোয়ার হোসেন বলেন, সেচ প্রকল্প এলাকার ৬০-৭০ ভাগ কৃষক পাম্প বা শ্যালো মেশিনে সেচ দিয়ে ভুট্টা আবাদ করছেন।
উত্তর সোনাখুলি চরের কৃষক নুরুজ্জামান বলেন, ‘তিস্তার বুকে ফসল চাষাবাদ করছি, অথচ সেচের পানি পেতে হচ্ছে শ্যালো মেশিনের সাহায্যে।’
নীলফামারীর ইটাখোলার ডাঙ্গাপাড়া এলাকার বাসিন্দা আব্দুল গফুর বলেন, বোরো রোপণের সময় ক্যানেলে পানিই থাকে না। আবার পানি আসে অসময়ে। ফলে ফসল ডুবে নষ্ট হয়। তার দুই একর জমিতে সেচ দিতে হয় শ্যালো মেশিন দিয়ে। একই কথা বলেন জেলার বিভিন্ন সেচ প্রকল্প এলাকার অন্তত ২০ জন কৃষক। তাঁদের দাবি, তিস্তা নদী খনন করে নির্দিষ্ট একটি চ্যানেলে পানি প্রবাহিত করা হলে উপকৃত হবেন তিস্তাপাড়ের মানুষ। তাতে সারা বছরই নদী ও সেচ ক্যানেলে পানির প্রবাহ থাকবে।
এদিকে পানি কতটুকু প্রবাহিত হবে, সে অনিশ্চয়তার মধ্যেই প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার করা হচ্ছে তিস্তা সেচ প্রকল্পের খাল। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসাফউদদৌলা বলেন, প্রকল্প এলাকা বাড়াতে সেচ খাল সংস্কার ও সম্প্রসারণের কাজ চলছে। কাজ শেষ হলে ১ লাখ হেক্টর কৃষিজমিতে সেচ দেওয়া সম্ভব হবে।
তবে কৃষক ও নদী সংশ্লিষ্টরা বলছেন ভিন্ন কথা। তিস্তায় স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ ৫ হাজার কিউসেক থাকার কথা থাকলেও উজানে একতরফা পানি প্রত্যাহারের ফলে শুকনো মৌসুমে তা ১০০০ কিউসেকের নিচে নেমে আসে। প্রয়োজনের তুলনায় সিকিভাগ পানিও না মেলে না তখন।
তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্য সোহেল হাসান বলেন, যেখানে তিস্তার পানিই অনিশ্চিত, সেখানে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করে সেচ খাল সংস্কার করলেও তা কাজে আসবে না। তিনি আরও বলেন, ‘উজানের পানি ব্যারেজের জলকপাট বন্ধ করে আটকে সেচ কাজে লাগানোর জন্য ভাটিতে নদী মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। আমরা শুনে আসছি তিস্তা মহাপরিকল্পনার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত এর কোনো বাস্তব উদ্যোগ দেখা যায়নি।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড রংপুর বিভাগের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবর রহমান বলেন, ‘প্রকল্প এলাকার কৃষকেরা ফেব্রুয়ারি মাসে বোরো রোপণ করে। এ সময় নদীতে পানি থাকে না। আবার ভুট্টা লাগানো হয় অক্টোবর-নভেম্বর মাসে। তখন পর্যাপ্ত পানি থাকে। কিন্তু মাঠে রবিশস্য (ভুট্টা, সরিষা, পেঁয়াজ, আলু) ফসল ও পাকা আমন ধান থাকে। ফলে ক্যানেলে পানি ছাড়া সম্ভব হয় না। এ জন্য সব ফসল একসঙ্গে কাটা ও লাগানোর সময় এগিয়ে নিয়ে একটি নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে আনতে আমরা কৃষি বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করছি। আর তিস্তা নদী খনন ও ভারতের সঙ্গে পানি চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়টি সরকারের উচ্চমহলের ব্যাপার।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা বহিরাঙ্গন কর্মকর্তা কৃষিবিদ সেকেন্দার আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, বর্তমানে কৃষকেরা ‘বিকল্প ভেজানো ও শুকানো’ (এডব্লিউডি) পদ্ধতিতে চাষাবাদ করছে। এ পদ্ধতিতে কম সেচে ফসল আবাদ হয়। কিন্তু সেচ প্রকল্পের পানি বণ্টন পদ্ধতিতে এভাবে চাষাবাদ সম্ভব হয় না। এ কারণে সেচ ক্যানেলের পানি কাজে আসছে না বেশির ভাগ কৃষকের। সব ফসল একসঙ্গে কাটা ও লাগানোর বিষয়ে তিনি বলেন, এখন একই জমিতে বছরে তিন-চারবার ফসল হয়। তাই মৌসুম অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়েই ফসল রোপণ করতে হয়।
বাংলাদেশ অংশে তিস্তা নদী শুকিয়ে অনেকটা মরা খালে পরিণত হয়েছে। পর্যাপ্ত পানি না থাকায় সংকটে পড়েছে দেশের বৃহত্তম তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্প। সেচের লক্ষ্যমাত্রার ৫০ শতাংশও পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। মোটা অঙ্কের টাকার এই প্রকল্প থেকে সেচ সুবিধা বঞ্চিত নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার লাখো কৃষক। দ্বিগুণ খরচে দিতে হচ্ছে বিকল্প সেচ ব্যবস্থা।
পাউবো সূত্র বলছে, তিস্তা ব্যারাজের উজানে ১০০০-১৫০০ কিউসেক পানি পাওয়া যাচ্ছে। তবে ব্যারাজের ভাটিতে প্রায় ১১০ কিলোমিটার তিস্তায় ১০০ কিউসেক পানিও সরবরাহ নেই।
তিস্তা ব্যারাজ থেকে শুরু হয়ে সেচ প্রকল্পের খাল নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার ১২ উপজেলায় বিস্তৃত। এর দৈর্ঘ্য ৭৬৬ কিলোমিটার। মূল খাল থেকে টারশিয়ারি ও সেকেন্ডারি নালার মাধ্যমে পানি পৌঁছায় কৃষকের জমি পর্যন্ত। কিন্তু পানি না পাওয়া ও দেরিতে পাওয়ার অভিযোগ করেছেন প্রকল্প এলাকার অনেক কৃষক। একই এলাকার অনেক কৃষককে দ্বিগুণ খরচে বিকল্প উপায়ে সেচ দিতে হচ্ছে।
সুবিধাভোগীরা বলছেন, নদীতে পানি না থাকায় তাঁরা আবাদ নিয়ে বেকায়দায় আছেন। পানির প্রবাহ নিশ্চিত না করায় বেশির ভাগ সেচনালা কোনো কাজেই আসছে না।
প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯৭৯ সালে দেশের শস্যভান্ডার খ্যাত উত্তর জনপদের ৮ জেলায় ৫ লাখ ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে ১৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে তিস্তা সেচ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। কিন্তু ব্যারাজের উজানে ভারত বাঁধ নির্মাণ করে পানি প্রত্যাহার করায় প্রকল্প বাধাগ্রস্ত হয়।
পরে নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুরের ১ লাখ ১১ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ১৯৯৩ সালে তিস্তা সেচ প্রকল্পের অপারেশনাল কার্যক্রম চালু করা হলেও কখনোই তা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি। এর মূল কারণ শুষ্ক মৌসুমে তিস্তায় পানি না থাকা। ফলে চড়া দামে ডিজেল কিংবা বিদ্যুৎ-চালিত সেচযন্ত্রের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে কৃষকদের।
পাউবো সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে ১০ হাজার, ২০১৭ সালে ৮ হাজার, ২০১৮ সালে ৩৫ হাজার, ২০১৯ সালে ৪০ হাজার, ২০২০ সালে ৪১ হাজার এবং ২০২১ ও ২০২২ সালে ৫৩ হাজার, ২০২৩ সালে ৪৫ হাজার হেক্টর এবং চলতি মৌসুমে ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া হচ্ছে। তবে প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, লক্ষ্যমাত্রা শুধু কাগজে কলমে, বাস্তবে অর্ধেক জমিতেও সেচ দিতে পারছে না পাউবো।
সূত্র জানায়, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিস্তা নদীতে ৬০-৬৫ হাজার কিউসেক পানিপ্রবাহ থাকে। অক্টোবর থেকে পানি কমতে শুরু করে। ডিসেম্বরে তিস্তা শুকিয়ে যায়। জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত তিস্তায় ৭০০-১৫০০ কিউসেক পানি থাকে। সে সময় সেচের জন্য তিস্তায় কমপক্ষে ৫ হাজার কিউসেক পানি থাকা দরকার।
সরেজমিনে দেখা গেছে, তিস্তা ব্যারাজের উজানে সামান্য কিছু পানি থাকলেও ভাটিতে কোনো পানিই নেই। নদীর বুকে জেগে উঠেছে মাইলের পর মাইল বালুচর। সেচ প্রকল্পের আওতাভুক্ত নীলফামারীর বিভিন্ন গ্রামের ফসলি জমি ঘুরে দেখা গেছে, যেসব এলাকার কৃষকেরা আগে সেচের পানি পেতেন, তাঁরা ডিজেলচালিত শ্যালো পাম্প বসিয়ে জমিতে সেচ দিচ্ছেন। অথচ এসব এলাকার কৃষকেরা আগে নামমাত্র খরচে সেচ প্রকল্পের পানি দিয়ে চাষাবাদ করতেন।
কৃষকেরা বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে পুরো মৌসুমের জন্য সেচ প্রকল্প থেকে পানি নেওয়া হলে খরচ পড়ে ২০০ টাকার মতো। কিন্তু বিদ্যুৎচালিত সেচপাম্প থেকে পানি নিতে ব্যয় দ্বিগুণেরও বেশি। ডিজেলচালিত শ্যালো মেশিনের পানির খরচ আরও বেশি।
ডিমলার সোনাখুলি গ্রামের কৃষক সাফিন, আফতাবসহ কয়েকজন বলেন, দুর্বল ব্যবস্থাপনা, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিকল্পনার অভাবে পাঁচ-ছয় বছর ধরে সেচ খাল থেকে পানি পাচ্ছেন না তাঁরা। নালার পানি আসতে আসতে আবাদ শেষ। বাধ্য হয়ে যন্ত্রের মাধ্যমে সেচ দিতে হচ্ছে কৃষকদের। তাতে প্রতি বিঘায় ৩-৪ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। সেচযন্ত্র বসাতে গিয়েও খরচ হয় ৮-১০ হাজার টাকা। পানির খরচ কমাতে প্রকল্প এলাকার বেশির ভাগ কৃষক তাঁদের বোরো ধানের জমিতে ভুট্টা লাগিয়েছেন।
ওই এলাকার পানি ব্যবস্থাপনা সমিতির সভাপতি আতোয়ার হোসেন বলেন, সেচ প্রকল্প এলাকার ৬০-৭০ ভাগ কৃষক পাম্প বা শ্যালো মেশিনে সেচ দিয়ে ভুট্টা আবাদ করছেন।
উত্তর সোনাখুলি চরের কৃষক নুরুজ্জামান বলেন, ‘তিস্তার বুকে ফসল চাষাবাদ করছি, অথচ সেচের পানি পেতে হচ্ছে শ্যালো মেশিনের সাহায্যে।’
নীলফামারীর ইটাখোলার ডাঙ্গাপাড়া এলাকার বাসিন্দা আব্দুল গফুর বলেন, বোরো রোপণের সময় ক্যানেলে পানিই থাকে না। আবার পানি আসে অসময়ে। ফলে ফসল ডুবে নষ্ট হয়। তার দুই একর জমিতে সেচ দিতে হয় শ্যালো মেশিন দিয়ে। একই কথা বলেন জেলার বিভিন্ন সেচ প্রকল্প এলাকার অন্তত ২০ জন কৃষক। তাঁদের দাবি, তিস্তা নদী খনন করে নির্দিষ্ট একটি চ্যানেলে পানি প্রবাহিত করা হলে উপকৃত হবেন তিস্তাপাড়ের মানুষ। তাতে সারা বছরই নদী ও সেচ ক্যানেলে পানির প্রবাহ থাকবে।
এদিকে পানি কতটুকু প্রবাহিত হবে, সে অনিশ্চয়তার মধ্যেই প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার করা হচ্ছে তিস্তা সেচ প্রকল্পের খাল। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসাফউদদৌলা বলেন, প্রকল্প এলাকা বাড়াতে সেচ খাল সংস্কার ও সম্প্রসারণের কাজ চলছে। কাজ শেষ হলে ১ লাখ হেক্টর কৃষিজমিতে সেচ দেওয়া সম্ভব হবে।
তবে কৃষক ও নদী সংশ্লিষ্টরা বলছেন ভিন্ন কথা। তিস্তায় স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ ৫ হাজার কিউসেক থাকার কথা থাকলেও উজানে একতরফা পানি প্রত্যাহারের ফলে শুকনো মৌসুমে তা ১০০০ কিউসেকের নিচে নেমে আসে। প্রয়োজনের তুলনায় সিকিভাগ পানিও না মেলে না তখন।
তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্য সোহেল হাসান বলেন, যেখানে তিস্তার পানিই অনিশ্চিত, সেখানে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করে সেচ খাল সংস্কার করলেও তা কাজে আসবে না। তিনি আরও বলেন, ‘উজানের পানি ব্যারেজের জলকপাট বন্ধ করে আটকে সেচ কাজে লাগানোর জন্য ভাটিতে নদী মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। আমরা শুনে আসছি তিস্তা মহাপরিকল্পনার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত এর কোনো বাস্তব উদ্যোগ দেখা যায়নি।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড রংপুর বিভাগের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবর রহমান বলেন, ‘প্রকল্প এলাকার কৃষকেরা ফেব্রুয়ারি মাসে বোরো রোপণ করে। এ সময় নদীতে পানি থাকে না। আবার ভুট্টা লাগানো হয় অক্টোবর-নভেম্বর মাসে। তখন পর্যাপ্ত পানি থাকে। কিন্তু মাঠে রবিশস্য (ভুট্টা, সরিষা, পেঁয়াজ, আলু) ফসল ও পাকা আমন ধান থাকে। ফলে ক্যানেলে পানি ছাড়া সম্ভব হয় না। এ জন্য সব ফসল একসঙ্গে কাটা ও লাগানোর সময় এগিয়ে নিয়ে একটি নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে আনতে আমরা কৃষি বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করছি। আর তিস্তা নদী খনন ও ভারতের সঙ্গে পানি চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়টি সরকারের উচ্চমহলের ব্যাপার।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা বহিরাঙ্গন কর্মকর্তা কৃষিবিদ সেকেন্দার আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, বর্তমানে কৃষকেরা ‘বিকল্প ভেজানো ও শুকানো’ (এডব্লিউডি) পদ্ধতিতে চাষাবাদ করছে। এ পদ্ধতিতে কম সেচে ফসল আবাদ হয়। কিন্তু সেচ প্রকল্পের পানি বণ্টন পদ্ধতিতে এভাবে চাষাবাদ সম্ভব হয় না। এ কারণে সেচ ক্যানেলের পানি কাজে আসছে না বেশির ভাগ কৃষকের। সব ফসল একসঙ্গে কাটা ও লাগানোর বিষয়ে তিনি বলেন, এখন একই জমিতে বছরে তিন-চারবার ফসল হয়। তাই মৌসুম অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়েই ফসল রোপণ করতে হয়।
নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় প্রতিপক্ষের হামলায় হারুন মিয়া (২৬) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার বিকেলে উপজেলার মাসকা ইউনিয়নের কান্দাপাড়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটেছে। নিহত হারুন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য রইছউদ্দিনের ছেলে।
৫ মিনিট আগেপদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-খুলনা রেলপথে পরীক্ষামূলক ট্রেনের ট্রায়েল শেষ হয়েছে। আজ রোববার ট্রেনটি ঢাকা থেকে ছেড়ে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতিতে খুলনা পৌঁছায় বেলা ১টা ১০ মিনিটে। পরীক্ষামূলক ট্রেনটির এটি তৃতীয় ট্রায়েল।
১৬ মিনিট আগেবগুড়ায় আন্দোলনে নিহত রিপন ফকিরের মরদেহ আদালতের নির্দেশে তিন মাস ২০ দিন পর কবর থেকে উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্ত শেষে মরদেহ পুনরায় দাফন করা হবে।
২৪ মিনিট আগে১৭ দিন কারা ভোগের পর পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে ৭.৬৫ এমএম পিস্তল–গুলিসহ গ্রেপ্তার বিএনপি নেতা মো. জাহাঙ্গীর আলম ফরাজীকে জামিন দিয়েছেন আদালত। আজ রোববার পটুয়াখালীর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. কামরুল হাসান এই জামিন মঞ্জুর করেন।
১ ঘণ্টা আগে