Ajker Patrika

তত্ত্বাবধায়ক-ঠিকাদার মিলে গাইবান্ধা হাসপাতালে দুর্নীতির মহোৎসব

আনোয়ার হোসেন শামীম, গাইবান্ধা
আপডেট : ০১ মার্চ ২০২৫, ০৯: ১৩
ডা. মাহবুব হোসেন ও মো. সাহাদত হোসেন খন্দকার। ছবি: সংগৃহীত
ডা. মাহবুব হোসেন ও মো. সাহাদত হোসেন খন্দকার। ছবি: সংগৃহীত

গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. মাহবুব হোসেন ও ঠিকাদার মো. সাহাদত হোসেন খন্দকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ঠিকাদার সাহাদত হোসেন গত ১৫ বছরে হাসপাতালের বিভিন্ন দরপত্রে অনিয়ম করে শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের যোগসাজশে এসব অনিয়ম হয়েছে বলে জানা গেছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে প্রতিবছর এমএসআর ও পথ্যসামগ্রীর দরপত্র আহ্বান করা হয়। এমএসআর দরপত্রে ৬টি গ্রুপে (ওষুধ, যন্ত্রপাতি, লিলেন, গজ-ব্যান্ডেজ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা আসবাবপত্র) কেনাকাটা করা হয়। আর পথ্যসামগ্রী দরপত্রের মাধ্যমে রোগীদের খাবার, স্টেশনারি ও ধোপা-ঠিকাদারের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে হাসপাতালের এমএসআর দরপত্রের কাজ পায় ঠিকাদার মো. সাহাদত হোসেন খন্দকারের প্রতিষ্ঠান স্বর্ণা এন্টারপ্রাইজ। এমএসআর কাজের জন্য ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ পান তিনি। পরবর্তী সময়ে স্পেশাল বরাদ্দ হিসেবে স্বাস্থ্যসচিব, স্বাস্থ্য জিডি ও লাইন ডিরেকটরের মাধ্যমে অতিরিক্ত বরাদ্দ দেওয়া হয় আরও সাড়ে ৩ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়। এ ছাড়া পথ্যসামগ্রীতে ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৪ কোটি টাকা। আর এমএসআর কাজের দরপত্র পেতে ঠিকাদার সাহাদত হোসেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. মাহবুব হোসেনকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঠিকাদারের কাছ থেকে ঘুষ হিসেবে ৪০ লাখ টাকা দেন হাসপাতালের দায়িত্বরত তত্ত্বাবধায়ক মো. মাহবুব হোসেন। ২০২৪ সালে ৩০ জুন ঠিকাদার মো. সাহাদত হোসেন তাঁকে ইসলামী ব্যাংকের গাইবান্ধা শাখায় ৪০ লাখ টাকার একটি চেক দেন। মাহবুব হোসেন সেই চেকটি সিরাজগঞ্জের সোহাগপুর শাখায় তাঁর নিজ অ্যাকাউন্টে নেন। ঠিকাদার ও তত্ত্বাবধায়কের মধ্যকার এসব অস্বাভাবিক লেনদেনের সব তথ্য-প্রমাণ দৈনিক আজকের পত্রিকার এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।

জানা গেছে, ঠিকাদার সাহাদত পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার নাতনি, সাবেক হুইপ ও গাইবান্ধা সদর আসনের এমপি মাহবুব আরা গিনির আস্থাভাজন ছিলেন। গিনির ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে দীর্ঘ ১৫ বছর হাসপাতালের ঠিকাদারিতে অনিয়ম ও দুর্নীতি করে তিনি শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন। আওয়ামী লীগ পতনের পর তিনি নতুন করে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সখ্য করার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে ২০২১ সালের ২৮ জুলাই মাহবুব হোসেন যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকেই হাসপাতালের সিন্ডিকেটরা নতুন করে তাঁর সঙ্গে সখ্য করে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি শুরু করেন। বর্তমানে তিনি গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালেই কর্মরত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক কর্মচারী বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক স্যার আর হিসাবরক্ষক হিরু ভাই কোটি কোটি টাকা ঠিকাদারের কাছ থেকে লেনদেন করে আসছেন। দশটা লেনদেন করেছেন, তার মধ্যে একটা লেনদেনে ধরা খাইছে। এর সুবিচার হওয়া দরকার।’

তবে হাসপাতালের প্রধান হিসাবরক্ষক মো. নুর এ ইসলাম হিরুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কিছু বলবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন।

জানতে চাইলে ঠিকাদার মো. সাহাদত বলেন, ‘আমি ৪০ লাখ টাকা ঘুষ কি শুধু হাসপাতালের তত্বাবধায়ককেই দিয়েছি? হাসপাতালে ঠিকাদারি করার ক্ষেত্রে অনেককেই দেওয়া লাগছি। শুধু হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কেরটাই আপনার কাছে আসছে। এ বিষয়ে ধরলে, এত বছর যাঁদের ঘুষ দিয়েছি তাঁদের কাছ থেকে টাকাগুলো ফেরত নিয়ে দিতে পারবেন? আর তত্ত্বাবধায়ককে ঘুষ দেওয়ার বিষয়ে তো আমি আপনার কাছে কোনো অভিযোগ করি নাই। স্যারের সঙ্গে চেকের মাধ্যমে টাকা লেনদেনের এই ডকুমেন্টগুলো কই পাইলেন? সেটা আগে বলতে হবে।’

অভিযোগের বিষয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মাহবুব হোসেন বলেন, ‘যে ঠিকাদার আমাকে টাকা দিয়েছেন তাঁকে গিয়ে বলেন। আমি কি তাঁর কাছ থেকে জোর করে নিয়েছি। কোন দপ্তরে লেনদেন হয় না? সবাইকে আগে ধরেন। লেনদেনের বিষয়ে সব অফিসারের বিচার হলে, তখন আমারও হবে।’

এ বিষয়ে রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক হারুনর রশিদ বলেন, ‘অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। এই প্রথম আপনার কাছ থেকে শোনলাম। ঠিকাদারের কাছ থেকে লেনদেনের সুস্পষ্ট তথ্য পেলেই তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নির্বাচনের আগে জোট নয়, এনসিপির সঙ্গে কাজ করার ইঙ্গিত বিএনপির

জয়পুরে সম্প্রীতির নজির, ঈদগাহে আসা মুসলিমদের ওপর ফুল ছিটালেন হিন্দুরা

বাসা ভাড়ার টাকা নেই, অফিসের টয়লেটেই থাকছেন চীনা তরুণী

ঈদের মোনাজাতে খালেদা জিয়ার নাম না বলায় ইমামকে হেনস্তা, চাকরিচ্যুতির হুমকি

কোম্পানি দেউলিয়া, দেড় কোটি মানুষের ডিএনএ ডেটার এখন কী হবে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত