লিচুর মুকুলে হাসি দিনাজপুরের কৃষকের, পরিচর্যায় ব্যস্ততা 

আনিসুল হক জুয়েল, দিনাজপুর
Thumbnail image

দিনাজপুরের চাল ও লিচুর খ্যাতি দেশজুড়ে। এ কারণে জেলার ব্র্যান্ডিংও চাল, লিচু দিয়েই করা হয়েছে। দিনাজপুর জেলার জন্য তৈরি করা প্রশাসনের লোগোর স্লোগান ‘চাল লিচুতে ভরপুর, জেলার নাম দিনাজপুর’। এ বছর গাছে গাছে মুকুলের ব্যাপক সমারোহের কারণে লিচুর চমৎকার ফলনের আশা করছেন দিনাজপুরে কৃষকেরা। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া উপযোগী হওয়ায় স্বস্তিতেও রয়েছেন বাগান মালিক ও লিচু চাষিরা। 

বর্তমানে গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। তাঁরা বলছেন, যে পরিমাণ মুকুল এসেছে তাতে যদি তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকে আর খরার কবলে পরতে না হয় তবে লিচুতে এবার ভালো লাভ হবে চাষির। 

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় লিচুর চাষ হওয়া জমির পরিমাণ প্রায় পাঁচ হাজার ৪৮৯ হেক্টর। জেলায় লিচু বাগানের সংখ্যা চার হাজারের বেশি। ১৩ উপজেলায়ই লিচু চাষ হলেও সদর এবং বিরল উপজেলার লিচুই সেরা। সবচেয়ে বেশি আবাদও হয় বিরল উপজেলায়। শুধুমাত্র বিরল উপজেলাতেই আড়াই হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে লিচুর আবাদ করা হয়। বিরলে ছোট-বড় মিলিয়ে বাগানের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। 

অন্যান্য ফসলের তুলনায় লাভজনক হওয়ায় অনেকে বাণিজ্যিকভাবে লিচু চাষে আগ্রহী হচ্ছেন, ফলে প্রতি বছরই লিচু চাষের জমির পরিমাণ বাড়ছে। শুধু তাই নয় দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো গত বছর দিনাজপুরের লিচু রপ্তানিও করা হয়। অর্থাৎ ফলটি থেকে বৈদেশিক মুদ্রাও আসছে। 

জেলার লিচু চাষি ও বাগান মালিকেরা জানান, গত বছর বিরূপ আবহাওয়ায় লিচুর ফলন ছিল অনেক কম। যে সময়ে লিচুতে রং লাগে সেসময়েই মাত্রাতিরিক্ত তাপ ও পশ্চিমা উষ্ণ বাতাসের কারণে অধিকাংশ লিচু গাছই ঝলসে যায়। গত বছর এভাবে অন্তত ৪০ শতাংশ লিচু ঝলসে গিয়ে বেশ লোকসানে পড়েছিলেন তাঁরা। তবে এবার গাছে মুকুলের সমারোহ সন্তোষজনক। তারা বলছেন, যে হারে মুকুল এসেছে তাতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লিচুতে এবার হাসি থাকবে চাষিদের মুখে। 

সদর উপজেলার মাশিমপুর ও বিরলের মাধববাটি লিচু চাষের জন্য বিখ্যাত। দিনাজপুরে মাদ্রাজি, বোম্বাই, বেদানা, চায়না থ্রি, কাঁঠালি জাতের লিচু আবাদ হয়ে থাকে। তবে বোম্বাই জাতের লিচুর আধিক্য রয়েছে। 

লিচুর বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন দিনাজপুরের লিচু চাষিরা। বিরল উপজেলা থেকে সম্প্রতি তোলাজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এবার বোম্বাই জাতের লিচু ৩ হাজার ২৩৮ হেক্টর, মাদ্রাজি ১ হাজার ৭৮ হেক্টর, চায়না থ্রি ৭০৭ হেক্টর, বেদানা ৩১০ হেক্টর, চায়না টু ১৩২ হেক্টর এবং কাঁঠালী জাতের লিচুর আবাদ হয়েছে ২৪ হেক্টর জমিতে। 

গত কয়েক দিন সদর উপজেলার মাসিমপুর ও বিরলের মাধববাটিসহ বেশ কয়েকটি এলাকার লিচু বাগান ঘুরে দেখা যায়, গাছগুলো হলুদাভ মুকুলে ছেয়ে গেছে। গাছের গোড়া আগাছামুক্ত করে সেচ দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। 

সদরের উলিপুর এলাকার লিচু চাষি মোজাফফর হোসেন জানান, ‘দেড় হাজার গাছের দুটি বাগান লিজ নিয়েছি পাঁচ বছরের জন্য। গত বছর মুকুলের বদলে গাছে সবুজ পাতার আধিক্য ছিল। তার ওপর প্রচণ্ড তাপে লিচু জ্বলে গিয়ে ক্ষতি হয়েছে। তবে এবার যে হারে মুকুল এসেছে তাতে যদি খরা না হয়, ক্ষতি পুষিয়ে যাবে।’ 

মুকুলে মুকুলে ছেয়ে গেছে লিচুর গাছগুলো। ছবি: আজকের পত্রিকাআউলিয়াপুর এলাকার লিচু চাষি আব্দুস সালাম জানান, দুটি বাগান চুক্তিতে নিয়েছেন। এবার বোম্বাই ও মাদ্রাজীতে মুকুল বেশি। বেদানায় কিছুটা কম। গত বছর চার লাখ টাকা লোকসান গুনেছেন। এবার আবহাওয়া এখন পর্যন্ত অনুকূলে। কিছু কিছু গাছে গুটিও এসে গেছে। সপ্তাহ খানিকের মধ্যে সব গাছে গুটি আসবে। তখন ছত্রাকনাশক বিষ প্রয়োগ করা হবে। আশা করা যায় এবার ফলন ভালো হবে। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নুরুজ্জামান জানান, দিনাজপুরের লিচু সুস্বাদু ও রসালো। দেশব্যাপী এর চাহিদাও রয়েছে। গত বছর তাপমাত্রা বৃদ্ধিজনিত কারণে কিছু গাছের ফসল নষ্ট হয়েছিল। তবে এবার সময়মতো এবং বেশি মুকুল এসেছে। আশা করি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। 

তিনি বলেন, সঠিক নিয়মে পানি ও সার ব্যবস্থাপনা লিচুর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মুকুল ধরে রাখা, ছত্রাক মুক্ত রাখা, পরিমাণ মতো অনুখাদ্য, সার প্রয়োগ করতে কৃষককে সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। প্রতিটি ইউনিয়নে মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তারা কাজ করছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত