৮০ কোটি টাকা খরচেও পা‌নি নেই

সাদ্দাম হো‌সেন, ঠাকুরগাঁও
প্রকাশ : ৩১ মে ২০২৪, ০৯: ০৫

ঠাকুরগাঁও‌য়ে ৮০ কোটি টাকা ব‌্যয়ে খনন করা হয় সাত‌টি নদী ও এক‌টি খাল। শুষ্ক মৌসুমে নদীর নাব‌্য বৃ‌দ্ধি, জলাবদ্ধতা দূর করা, ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমা‌নোসহ কৃষিকাজে নদীর পানি ব্যবহারের ল‌ক্ষ্যে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। অথচ এক থেকে দুই বছরেই এসব নদী আবার ফস‌লের মা‌ঠে পরিণত হয়েছে। নদীতে চলছে চাষাবাদ। 
ন‌দীতীরের বা‌সিন্দাদের মতে, নদী খননের আগে যা পা‌নির প্রবাহ ছিল, পরে উল্টো আ‌রও কমেছে। শুধু টাকার অপচয়ই হয়েছে। কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

পা‌নি উন্নয়ন‌ বোর্ড (পাউবো) বল‌ছে, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এ এলাকার নদী ৬০ মিটার উঁচুতে থাকায় পা‌নির প্রবাহ ধ‌রে রাখা যা‌চ্ছে না।

ঠাকুরগাঁও পাউবোর তথ্য অনুযায়ী, জেলায় নদ-নদী আছে ১৪টি; যার দৈর্ঘ্য ২৯৬ কিলোমিটার। ২০১৯ থে‌কে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বি‌ভিন্ন মেয়া‌দে পা‌নি উন্নয়‌ন বোর্ড এক‌টি খালসহ ৭‌টি নদী খনন করে। ২০৪ কি‌লো‌মিটার পথের ৭টি নদী খন‌নে ব‌্যয় হ‌য়ে‌ছে ৮০ কো‌টি ৩ লাখ ৯ হাজার টাকা। খনন করা নদীগু‌লোর ম‌ধ্যে আছে লাচ্ছি, ভুল্লী, সুখ, তীরনই, পাথরাজ, কু‌লিক ও টাঙ্গন নদী এবং যমুনা খাল।

প্রবীণদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলা শহ‌রের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে টাঙ্গন ও শুক নদ। এ নদীর কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠে ঠাকুরগাঁও শহর। যাতায়াতের মাধ্যম ছিল এ নদ। তবে এখন জেলার প্রধান এই নদ দুটিতে চলছে ধান চাষ।

গত মঙ্গলবার এ নদ দু‌টির দুই কিলোমিটার অংশ ঘুরে দেখা গেছে, এতে ভুট্টা ও বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। নদীর অস্তিত্বই বোঝা যায় না।

ফেরসাডাঙ্গী গ্রামের কৃষক সি‌দ্দিকুল বলেন, ‘টাঙ্গন নদের পা‌নি দি‌য়ে জমি আবাদ করতাম। এ আবাদের ফসল দি‌য়ে সংসার চলে। কিন্তু এবার টাঙ্গ‌নে পানি নাই। এই নি‌য়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’

ওই গ্রা‌মের আরেক বা‌সিন্দা জব্বার আলী ব‌লেন, ‘এক বছর হ‌লো নদটি খনন করার। অথচ এখনই শুকনো। পারের মানুষের লাভ না হলেও প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের লাভ হয়ে‌ছে।’

এদিকে সুখ নদ সরেজমিনেও একই অবস্থা দেখা গেছে। সুখ নদের পা‌ড়ের স্থানীয় বাসিন্দা আবু কা‌য়েস হি‌রো অভিযোগ করে বলেন, নদীটি নামে মাত্র খনন করা হয়েছে। খননযন্ত্র দিয়ে দায়সারাভাবে শুধু মাটি তুলে রাখা হয়েছে। খন‌নের আগে যে পানি ছিল, এখন তা-ও নেই।  

নদের তীরের ইসলাম নগর এলাকার বা‌সিন্দা শ‌হিদুল ইসলাম ব‌লেন, ‘৬ কো‌টি টাকায় নদ‌টি খন‌ন হ‌য়ে‌ছে শুন‌ছি। কিন্তু বাস্ত‌বে ২ কো‌টি টাকার কা‌জও হয়তো হয়‌নি।’
আরেক বা‌সিন্দা জয়নব বেগম ব‌লেন, বেশ কয়েক বছর ধরে নদে পানি থাকে না। ফলে গোসলসহ গৃহস্থালি কাজের পানির চরম সংকট হয়।

জেলার প‌রিবেশবাদী সংগঠ‌ন সৃজ‌নের সভাপ‌তি আব্দুল্লা আল মামুন ব‌লেন, খরস্রোতা টাঙ্গ‌নের সেই জৌলুশ এখন আর নেই। নদীর তলদেশ ভরাট হওয়ায় নদীর বুকে এখন ধান চাষসহ বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ করা হচ্ছে। বর্তমানে জেলার বে‌শির ভাগ নদী নাব্যতা হারি‌য়ে দখল ও দূষণে অস্তিত্ব সংকটের মধ্যে রয়েছে। পরিকল্পিতভাবে নদীগুলো খনন করা গেলে এর নাব‌্যতা আবারও ফিরে আসবে।

এ বিষ‌য়ে ঠাকুরগাঁও‌ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. গোলাম যাকা‌রিয়া আজ‌কের প‌ত্রিকা‌কে ব‌লেন, খনন করা নদীতে পানি না থাকার কারণ হচ্ছে, এ জেলায় দিন দিন ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার বাড়ায় পানির স্তর নিচে চলে যাচ্ছে। এ ছাড়া নদীগুলোর স্রোত খাড়া হওয়ায় পা‌নি খুব দ্রুত নি‌চে নে‌মে যা‌য়। জেলার চারটি সম্মিলিত নদীতে পানি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হ‌য়ে‌ছে। অবকাঠা‌মো নির্মা‌ণের কাজ শেষ হ‌লে নদীগু‌লোর পা‌নি ধ‌রে রে‌খে নি‌চে নে‌মে যাওয়া পা‌নির স্তর কিছুটা হ‌লেও ধ‌রে রাখা যা‌বে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত