Ajker Patrika

‘প্রয়োজনে আত্মহত্যা করব, তবু পদত্যাগ করব না’

আরিফুল ইসলাম রিগান, কুড়িগ্রাম
আপডেট : ২৫ আগস্ট ২০২৪, ১৬: ৩৯
‘প্রয়োজনে আত্মহত্যা করব, তবু পদত্যাগ করব না’

কুড়িগ্রাম সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুখসানা পারভীনের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়মের নানা অভিযোগ তুলে তাঁকে দায়িত্ব থেকে অপসারণ ও চাকরিচ্যুতির দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে স্কুলটির বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। তবে শিক্ষার্থীদের এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন এই প্রধান শিক্ষক।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক রুখসানা পারভীন বলেছেন, ‘আমি পদত্যাগ করব না। যদি সুইসাইড (আত্মহত্যা) করতে হয় তা-ও আমি পদত্যাগ করব না।’

‘কোনো স্টুডেন্ট পদত্যাগ করাতে পারে না। একটা আইন আছে, সরকারি স্কুলের একটা প্রসিডিউর আছে। তবে আমি কুড়িগ্রামে এক সেকেন্ডও থাকতে চাই না। কিন্তু আমি জীবন থাকতে সাইন করব না।’ যোগ করেন এই প্রধান শিক্ষক।

স্কুল সূত্রে জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক রুখসানা পারভীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালে কুড়িগ্রাম সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে যোগদান করেন। তার পৈতৃক নিবাস গোপালগঞ্জ জেলায়। স্বামীর বাড়ি লালমনিরহাট জেলা সদরে।

লালমনিরহাট থেকে প্রাইভেট কারে করে স্বামী রেজাউল করিমসহ নিয়মিত স্কুলে যাতায়াত করেন। যোগদানের পর থেকেই তিনি স্কুলটিকে অনিয়ম আর স্বেচ্ছাচারিতার আঁতুড়ঘরে পরিণত করেন বলে অভিযোগ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের। এমনকি স্কুলের বিজ্ঞানাগারে নিজ স্বামীর বিশ্রামের জন্য তৈরি করেছেন বিশ্রামাগার।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো কুড়িগ্রাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠান প্রধানের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়মের নানা অভিযোগ তুলে তাঁকে অপসারণের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে। স্কুলের প্রশাসনিক ভবনসহ বিভিন্ন কক্ষে তালা লাগিয়ে সব ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বকালীন গত ১৫ বছরে স্কুলের আয়-ব্যয়ের হিসাব দেওয়ার দাবি জানিয়েছে তারা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আঁচ করতে পেরে গা ঢাকা দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। কয়েক দিন ধরে তিনি স্কুলে অনুপস্থিত।

রুখসানা পারভীনের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
স্কুলটির শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা বলছেন, ‘স্কুলটি যেন প্রধান শিক্ষকের প্রমোদখানা! কোনো নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে স্কুলে একরকম ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করেছেন প্রধান শিক্ষক। তিনি বেপরোয়াভাবে স্কুল পরিচালনা করছেন। গোপালগঞ্জে বাড়ি হওয়ায় তিনি সবসময় শিক্ষকদের হুমকির ওপর রাখতেন। শিফট পরিবর্তনসহ বদলির ভয় দেখাতেন। ফলে ভয়ে কেউ মুখ খুলতেন না।’

অর্থ আত্মসাৎ 
শিক্ষক ও অন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ‘স্কুলটিতে দুই শিফটে প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী অধ্যায়নরত। গত ১৫ বছরে প্রধান শিক্ষক স্কুল ফান্ডের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। বিভিন্ন প্রকার খাত দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে বাৎসরিক ও মাসিক যে টাকা আদায় করা হতো তার কোনো আয়ব্যয়ের হিসাব তিনি দেননি। প্রতিমাসে কর্মচারীদের পারিশ্রমিক বাবদ শিক্ষার্থী প্রতি ২০ টাকা করে প্রায় ৪০ হাজার টাকা আদায় করা হয়। কিন্তু ব্যয় হয় সামান্য। স্কুলে শিক্ষার্থীদের কোনো কমনরুম না থাকলেও কমনরুম ফি আদায় করা হয়। আরো বেশ কয়েকটি খাতের লাখ লাখ টাকার কোনও হিসাব তিনি দিচ্ছেন না।’ 

ভর্তি ও শিফট পরিবর্তনে বাণিজ্য 
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের দাবি, যোগদানের কয়েক বছরের পর থেকেই প্রধান শিক্ষক রুখসানা পারভীন স্কুলে ভর্তি বাণিজ্য শুরু করেন। এ ছাড়াও টাকার বিনিময়ে তিনি মর্নিং শিফটের শিক্ষার্থীকে ডে শিফটে এবং ডে শিফটের শিক্ষার্থীদের মর্নিং শিফটে দিতেন। এসব কাজে কুড়িগ্রামের কয়েকজন সাংবাদিক নেতা, একজন সাবেক তথ্য কর্মকর্তা ও প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ মিলে একটি সিন্ডিকেট কাজ করত। অপেক্ষমান তালিকার ক্রম ভঙ করে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হত। এ ছাড়াও লটারিতে টেকেটি এমন শিক্ষার্থীও ভর্তির অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের তদন্তের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকরা। 

রুখসানার ভয়ে তটস্থ থাকতেন শিক্ষকেরা 
চোখের সামনে নানা অনিয়ম ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড চললেও রুখসানার ভয়ে মুখ খুলতে পারতেন না সাধারণ শিক্ষকরা। জেলার বিভিন্ন পেশার প্রভাবশালীদের সঙ্গে সখ্য থাকায় রুখসানা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। কোনো শিক্ষক মুখ খোলার চেষ্টা করলেই তাদেরকে বদলির হুমকি দিতেন। এমনকি শিক্ষকদেরকে নিরাপত্তা নিয়েও ভয় দেখাতেন। ফলে ভয়ে সাধারণ শিক্ষকেরা কিছু বলতে পারতেন না। তবে স্কুল শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর শিক্ষকেরা সাহস ফিরে পেয়েছেন। তারা শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন।

স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক (প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্বে নিয়োজিত) তুষার কুমার রক্ষিত বলেন, ‘আমাদের সবার মুখ এতোদিন বন্ধ ছিল। আমাদের কিছু বলার ক্ষমতা ছিল না। কথা বললেই বদলির হুমকি, মর্নিং থেকে দিবা, দিবা থেকে মর্নিং শিফটে দেওয়া সহ নানা ধরণের হয়রানির হুমকি আমাদের দমিয়ে রেখেছিল। এখন আমরা শিক্ষার্থীদের দাবি ও আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছি। বিষয়টি আমরা জেলা প্রশাসক ও উপপরিচালককে লিখিত আকারে জানিয়েছি।’

অভিযোগ অস্বীকার প্রধান শিক্ষকের
তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রুখসানা পারভীন। আগে সকল শিক্ষক-কর্মচারী তাঁর পাশে থাকলেও এখন বিপক্ষে গিয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে এসব অভিযোগ করছেন বলে দাবি তাঁর।

তিনি বলেন, ‘গার্লস স্কুলে কী হয় তা সকলেই জানে। আমি স্কুলটিকে কীভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছি। কেউ যদি প্রমাণ দিতে পারে আমি ভর্তি-বাণিজ্য করে কারও কাছে পাঁচ হাজার টাকা নিয়েছি, আমি তার জন্য সই দিতে রাজি আছি।’

গত ১৫ বছরের হিসাব প্রসঙ্গে এই প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘আমার কর্তৃপক্ষ চাইলে আমি সকল হিসাব দিতে প্রস্তুত। অভিযোগের সত্যতা পেলে কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত নেবে তা মাথা পেতে নেব।’

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কক্সবাজারে দুই যুবদল কর্মী গুলিবিদ্ধ: পর্যটক সেজে লামায় লুকিয়ে ছিলেন ৫ আসামি

কক্সবাজার প্রতিনিধি
পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

কক্সবাজার শহরে স্থানীয় দুই যুবদল কর্মীকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার রাতে বান্দরবানের লামা উপজেলার মিরজিরি এলাকায় মাতামুহুরী রিভার ভিউ রিসোর্টে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছমি উদ্দিন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন কামরুল হাসান বাবু (২৬), ইমরান উদ্দিন খোকা ওরফে আরিয়ান খোকা (২৫), আব্দুল কাইয়ুম (৩৩), মো. সাকিব (২০) এবং আরেকজন ১৭ বছর বয়সী কিশোর। তাঁদের বাড়ি সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে।

ওসি ছমি উদ্দিন বলেন, ৯ ডিসেম্বর রাতে কক্সবাজার শহরের কলাতলী বাইপাস সড়কে বাস টার্মিনাল-সংলগ্ন উত্তরণ আবাসিক এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন সাইফুল ইসলাম ও মোহাম্মদ ফারুক নামের দুই যুবদল কর্মী। এই ঘটনার পর থেকে পাঁচ আসামি পর্যটকের ছদ্মবেশে বান্দরবানের লামায় আত্মগোপনে ছিলেন। গোপন সংবাদ পেয়ে লামায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

৯ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ১০টার দিকে শহরের বাইপাস সড়কের উত্তরণ আবাসিক এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন দুই যুবদল কর্মী সাইফুল ইসলাম (৩৫) ও মোহাম্মদ ফারুক (৩৪)। তাঁরা শহরের বাইপাস সড়কের চারপাড়া এলাকার বাসিন্দা। বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন তাঁরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভোলায় মৎস্যজীবী লীগের নেতা আটক

ভোলা প্রতিনিধি
কোস্ট গার্ডের অভিযানে আটক মো. মোশারফ হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
কোস্ট গার্ডের অভিযানে আটক মো. মোশারফ হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ভোলায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ মৎস্যজীবী লীগের এক নেতাকে আটক করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাতে ভোলার কোস্ট গার্ডের সদস্যরা সদর উপজেলার ব্যাংকের হাট-সংলগ্ন এলাকা থেকে তাঁকে আটক করেন।

আটক ব্যক্তির নাম মো. মোশারফ হোসেন (৬০)। তিনি মৎস্যজীবী লীগের টাস্কফোর্স প্রতিনিধি বলে জানিয়েছে কোস্ট গার্ড।

কোস্ট গার্ড জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল দিবাগত রাত ১টায় ভোলার কোস্ট গার্ড বিশেষ অভিযান চালিয়ে মোশারফ হোসেনকে আটক করে।

কোস্ট গার্ড ভোলা দক্ষিণ জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক বলেন, আটক ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ভোলা সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সূর্যের দেখা নেই, কনকনে ঠান্ডায় কাবু জনজীবন

সাদ্দাম হোসেন, ঠাকুরগাঁও 
সকালে সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে যাচ্ছে একটি বাস। ছবি: আজকের পত্রিকা
সকালে সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে যাচ্ছে একটি বাস। ছবি: আজকের পত্রিকা

আকাশে সূর্যের কোনো দেখা নেই। ঘন কুয়াশায় মোড়া ঠাকুরগাঁও শহর। সড়কে যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে। কনকনে ঠান্ডা থেকে রেহাই পেতে সড়কের পাশে আগুন জ্বালিয়ে উষ্ণতা খুঁজছে শীতার্ত লোকজন। আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে ঠাকুরগাঁও বাসস্ট্যান্ড চৌরাস্তা ঘুরে এই দৃশ্য চোখে পড়ে।

গত কয়েক দিনের তুলনায় আজ জেলায় শীতের তীব্রতা আরও বেড়েছে। যদিও ঠাকুরগাঁওয়ে কোনো আবহাওয়া অফিস নেই, তবে জেলার ইক্ষু গবেষণা কেন্দ্রের তথ্যমতে, সকাল ৭টার দিকে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল ১০টায় তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। তবে বাতাসের কারণে অনুভূত তাপমাত্রা ছিল প্রায় ১০ ডিগ্রির মতো।

আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঠাকুরগাঁও বাসস্ট্যান্ড চৌরাস্তা এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ দোকানপাট তখন বন্ধ। পশ্চিম দিক থেকে আসা হিমেল বাতাস শীতের অনুভূতি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। অন্য দিনের তুলনায় সড়কে যানবাহনের সংখ্যাও কম। জীবিকার তাগিদে শ্রমজীবী মানুষ বাধ্য হয়ে ঘর থেকে বের হলেও পড়ছেন চরম দুর্ভোগে। পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র না থাকায় ফুটপাতে আশ্রয় নেওয়া দরিদ্র লোকজন আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে।

হঠাৎ তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে হতদরিদ্র মানুষ। তাদের অনেকেরই গরম কাপড় নেই। তাই ঠান্ডা থেকে বাঁচতে কাগজ, পলিথিন ও ছেঁড়া কাপড় জ্বালিয়ে রাত ও সকাল পার করছে তারা।

সকালে সদর উপজেলার পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় কথা হয় রিকশাচালক হাসান রাব্বির সঙ্গে। সড়কের পাশে কাগজ ও পলিথিন জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে পোহাতে তিনি বলেন, ‘আগে সকাল ৭টায় রিকশা নিয়ে বের হতাম। কিন্তু এখন ঠান্ডা এত বেড়েছে যে আজ ১০টার আগে বের হতে পারিনি। কুয়াশা একটু কমার অপেক্ষা করছি।’ শীতের কারণে ভ্যান নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেও কষ্ট হচ্ছে বলে জানান শহরের কালীবাড়ি এলাকার কলা বিক্রেতা ভূষণ রায়। তিনি বলেন, ‘সোয়েটার, টুপি, মাফলার পরেও শরীর বাঁচে না। শীত কিছুতেই মানছে না।’

এদিকে শীত মোকাবিলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রস্তুতির কথা জানানো হয়েছে। ঠাকুরগাঁও জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান বলেন, ‘জেলার পাঁচটি উপজেলায় ৬ লাখ টাকা করে মোট ৩০ লাখ টাকায় ৮ হাজার ৫০০ কম্বল কেনা হয়েছে।’

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা বলেন, এ বছর ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়ে কম্বল কেনা হয়েছে। এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে সাড়ে ৭ হাজার কম্বল এবং বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান থেকে আরও দেড় হাজার কম্বল পাওয়া গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

জাবি প্রতিনিধি 
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ৪০
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখার সেক্রেটারি মোস্তাফিজুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখার সেক্রেটারি মোস্তাফিজুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

‘আগামীকাল বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে। তাহলেই বাংলাদেশের প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন হবে’ এমন মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখার সেক্রেটারি মোস্তাফিজুর রহমান।

গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে শোক ও প্রতিবাদ মিছিল করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। প্রতিবাদ মিছিল শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন জাকসু, শাখা ছাত্রশিবির, শাখা ছাত্রশক্তি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) নেতা-কর্মীরা। সমাবেশে ‘আগামীকালকে (শুক্রবার) বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে’ বলে মন্তব্য করেন মোস্তাফিজুর রহমান।

সমাবেশে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক লড়াই করে বাংলাদেশের প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব নয়। আমাদের লড়াই শুরু হবে শহীদ ওসমান হাদির ইনকিলাব মঞ্চের সাংস্কৃতিক লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে। আগামীকালকে বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে। তাহলেই বাংলাদেশের প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিগত ১৫ বছর ধরে আমরা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। এই খুনি হাসিনার দল হাজার হাজার নিষ্পাপ বাংলাদেশের দামাল ছেলেদেরকে হত্যা করেও ওর রক্ত পিপাসা মেটেনি। বিদেশে বসে এখনো বিপ্লবীদের হত্যা করার ছক করছে। আমরা আজ এই বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে স্পষ্ট করে বলতে চাই শহীদ ওসমান হাদির রক্তের ওপর দিয়ে, শহীদের রক্তের ওপর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আর কোনো সম্পর্ক থাকবে না। যে সমস্ত ভারতীয়রা বাংলাদেশে বৈধভাবে অবৈধভাবে বাংলাদেশে চাকরি করছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের ভারতে পুশব্যাক করতে হবে। ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত না হাসিনাকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করে, যতক্ষণ পর্যন্ত না ওরা ওসমান হাদির খুনিকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করবে ততক্ষণ পর্যন্ত ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণের কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে না।’

মোস্তাফিজুর রহমানের দেওয়া বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় সমালোচনা।

এরপর আজ শুক্রবার দুপুরেও মোস্তাফিজুর রহমান তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুকে অ্যাকাউন্টে একই ধরনের বক্তব্য লিখে পোস্ট করেন। পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলেছি, শুধু রাজনৈতিক লড়াইয়ে প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জিত হয় না। শহীদ ওসমান হাদি ভাই ইনকিলাব মঞ্চের মাধ্যমে ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও আওয়ামী প্রক্সি উদীচী, ছায়ানটের কালচারাল হেজেমনির বিরুদ্ধে যে লড়াই শুরু করেছিল, সেই লড়াই জারি রাখতে হবে। তাদের সকল আধিপত্যবাদী বয়ানকে তছনছ করে দিতে হবে। ইট, পাথরের দেয়াল ভেঙে আধিপত্যবাদকে মোকাবিলা করা যায় না, সেটা হাদি আমাদের শিখিয়েছে।’

অন্য আরেকটি ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘গতকাল শহীদ শরিফ ওসমান হাদি ভাইয়ের মৃত্যু-পরবর্তী প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশে প্রদত্ত আমার বক্তব্যের কিছু শব্দ নিয়ে এই স্পষ্টীকরণ প্রদান করছি। বক্তব্যে ব্যবহৃত “তছনছ” শব্দটির মাধ্যমে ভাঙচুরকে বোঝানো হয়নি। বরং এর অর্থ ছিল শহীদ হাদির যে স্বপ্ন নিয়মতান্ত্রিক ও প্রাতিষ্ঠানিক উপায়ে বিকল্প কাঠামো গড়ে তুলে, সর্বদা সচেতন থেকে ফ্যাসিবাদী বয়ানকে মোকাবিলা করা।’

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘এ প্রসঙ্গে আরও যুক্ত করা প্রয়োজন যে, উদীচীসহ উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানসমূহ বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের তল্পিবাহক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ভূমিকা রেখে আসছে। তারা বাংলাদেশের শত্রু, জনগণের শত্রু। তবে ফ্যাসিবাদের আদর্শিক ভিত্তিকে আমরা প্রাতিষ্ঠানিক ও নিয়মতান্ত্রিকভাবেই মোকাবিলা করব, ইনশা আল্লাহ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত