রাঙ্গার ভরাডুবির পেছনে ভূমি দখল-চাঁদাবাজিকে দেখছেন ভোটাররা 

আব্দুর রহিম পায়েল, রংপুর
প্রকাশ : ০৮ জানুয়ারি ২০২৪, ২২: ৪৩

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাবেক প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গার চরম ভরাডুবি হয়েছে। হেভিওয়েট এই প্রার্থী এবারের নির্বাচনে জয়লাভের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। এরপরও ট্রাক প্রতীকে মোট গৃহীত বৈধ ভোটের ২১ দশমিক ৪৯ শতাংশ অর্থাৎ ২৪ হাজার ৩৩২ ভোট পেয়েছেন তিনি। 

নির্বাচনে ভরাডুবির জন্য রাঙ্গার এমপি-মন্ত্রী আমলের ১৫ বছরের কার্যকলাপকেই দায়ী করেছেন গঙ্গাচড়া উপজেলা তথা রংপুর-১ আসনবাসী। 

রাঙ্গার পরাজয়ের পেছনের কারণ জানতে স্থানীয় প্রায় ২০ জন ভোটারের সঙ্গে কথা বলেন আজকের পত্রিকার এই প্রতিনিধি। ভোটাররা জানান, মসিউর রহমান রাঙ্গা প্রথমে এমপি নির্বাচিত হয়েই ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। শুরুতেই তিনি ভূমিদস্যু হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। গঙ্গাচড়া গ্রামের এক অসহায় পরিবারের জমি জবরদখল করে তাতে নিজের বসতবাড়ি নির্মাণ করেছেন। বৈধ জমির মালিকদের কাছ থেকে জোরপূর্বক দলিল নিয়ে সে জমি দান করে তিনি দাতা সেজেছেন। 

এমপি রাঙ্গার সঙ্গে কিংবা তাঁর কর্মীদের সঙ্গে কারও মতবিরোধ হলে তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলা করে হয়রানি করেছেন। ২০১৮ সালে নিজের স্বার্থে নির্বাচনের প্রাক্কালে তিনি রংপুর-১ আসনের অনেক নির্দোষ মানুষকে মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করেছেন। 

এমপি রাঙ্গা ও তার রংপুরে ১ আসনের দলীয় নেতা-কর্মীরা স্বৈরশাসকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। প্রকাশ্য চাঁদাবাজি করে তারা জনমনে অস্বস্তি ও আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিলেন। এমপি রাঙ্গাকে ‘স্যার’ বলে সম্বোধন করতে হতো সাধারণ মানুষদের। 

এমপি রাঙ্গা নিজেও চাঁদাবাজিতে লিপ্ত ছিলেন। সরকারি বরাদ্দের প্রকল্প পেতে শতকরা ৬৫ ভাগ টাকা উৎকোচন নিতেন প্রকাশ্যে তাঁর প্রতিনিধির মাধ্যমে। হলে প্রকল্প চেয়ারম্যানরা কাজ না করেই পুরো অর্থ উত্তোলন করেছেন। এতে উন্নয়ন বঞ্চিত হয়েছে রংপুর-১ আসন। 

এ ছাড়া নিয়োগ-বাণিজ্য ছিল তাঁর খুবই জমজমাট। তাঁর প্রিয়ভাজনদের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি বানিয়ে সেগুলোতে প্রধান, সহকারী প্রধান ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেওয়া হতো মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে। এতে করে প্রতিষ্ঠানগুলোতে রাঙ্গা ভক্ত মেধাহীন ও বিত্তবান শিক্ষক ও কর্মচারীরাই নিয়োগ পেয়েছেন। পক্ষান্তরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বঞ্চিত হয়েছে মেধাবী শিক্ষক ও কর্মচারী থেকে। 

এভাবে কেটেছে রাঙ্গার ১৫ বছরের শাসনকাল। তাই জাতীয় পার্টির দুর্গ থেকে বিমুখ হয়েছে রংপুর-১ আসনের লোকেরা। যে কারণে এবারে লাঙ্গলের প্রার্থী হোসেন মকবুল শাহরিয়ারকে (আসিফ)  চরমভাবে পরাজিত হতে হয়েছে। 

নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আসাদুজ্জামান বাবলু কেটলি প্রতীকে ৭৩ হাজার ৯২৭টি ভোট (৬৫ দশমিক ৩ শতাংশ) পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। এ আসনের ৩ লাখ ৩২ হাজার ২১৯ জন ভোটারের মধ্যে ১ লাখ ১৪ হাজার ৯৩২ জন ভোটার (৩৪ দশমিক ৬ শতাংশ) তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। এর মধ্যে গৃহীত বৈধ ভোটের সংখ্যা ১ লাখ ১৩ হাজার ২০২ টি। 

এ নির্বাচনে অপর প্রার্থীদের মধ্যে জাতীয় পার্টির হোসেন মকবুল শাহরিয়ার (আসিফ) লাঙ্গল প্রতীকে পেয়েছেন ১০ হাজার ৮৯২ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহিনুর আলম ঈগল প্রতীকে পেয়েছেন ২ হাজার ৭৫৪ ভোট, তৃণমূল বিএনপির বদরুদ্দোজা চৌধুরী সোনালী আঁশ প্রতীকে পেয়েছেন ৪০৯ ভোট, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির বখতিয়ার হোসেন হাতুড়ি প্রতীকে পেয়েছেন ৩৫০ ভোট, বাংলাদেশ কংগ্রেসের শ্যামলী রায় ডাব-প্রতীকে পেয়েছেন ২৩০ ভোট, এনপিপির হাবিবুর রহমান আম প্রতীকে পেয়েছেন ১৫৭ ভোট এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মোশারফ হোসেন মোড়া প্রতীকে পেয়েছেন ১৫১ ভোট।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

ভারতের পাল্টা আক্রমণে দিশেহারা অস্ট্রেলিয়া

ঢাকা কলেজে সংঘর্ষকালে বোমা বিস্ফোরণের ছিটকে পড়েন সেনাসদস্য—ভাইরাল ভিডিওটির প্রকৃত ঘটনা

ঐশ্বরিয়ার বিচ্ছেদের খবরে মুখ খুললেন অমিতাভ

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত