পঞ্চগড়ে কাদিয়ানি বিরোধী বিক্ষোভে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ: নিহত ১, বিজিবি মোতায়েন

পঞ্চগড় প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০২৩, ২১: ৪০
আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২৩, ০১: ১০

আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানি) সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলের সময় পুলিশে সঙ্গে সংঘর্ষে আহত একজন মারা গেছেন। নিহত ব্যক্তির নাম আরিফুর রহমান (২৭)।

গুলির আঘাতে মাথায় মারাত্মক জখম হলে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। একজনের মৃত্যুর তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার (এসপি) এসএম সিরাজুল হুদা।

বিক্ষোভকারীরা কাদিয়ানিদের দোকানপাট ও ঘরবাড়িতে আগুন দিয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকাএ প্রতিবেদন লেখার সময় রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে থেমে থেমে সংঘর্ষ চলছিল। ঘটনার সময় আহমদিয়াদের ঘরবাড়ি ও দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। পঞ্চগড় জেলা শহরের করতোয়ার তিরে ট্রাফিক পুলিশের অফিসটিও পুড়িয়ে দেয় বিক্ষুব্ধরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পাশাপাশি র‍্যাব ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে ১৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, আহমদিয়াদের তিন দিনব্যাপী বার্ষিক সালানা জলসা বন্ধসহ তাঁদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পর জেলা শহরের বিভিন্ন মসজিদ থেকে খণ্ড খণ্ড বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। সম্মিলিত খতমে নবুওয়াত সংরক্ষণ পরিষদের ডাকে এই বিক্ষোভ মিছিলটি শহরের তেঁতুলিয়া রোডের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে থেকে বড় পরিসরে চৌরঙ্গী মোড়ের দিকে আসতে থাকে। এ সময় পুলিশ তাঁদের বাধা দিলে শুরু হয় সংঘর্ষ।

বিক্ষোভকারীরা কাদিয়ানিদের দোকানপাট ও ঘরবাড়িতে আগুন দিয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকাবিক্ষোভ মিছিল থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল ছুড়তে থাকেন মুসল্লিরা। এ সময় পুলিশও শত শত রাউন্ড টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এর মধ্যেই বিক্ষোভকারীদের কয়েকটি অংশ জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ শুরু করে। তাঁরা পুলিশ ও বিজিবির গাড়ি ভাঙচুর, ট্রাফিক পুলিশের অফিসে অগ্নিসংযোগ করেন।

এ ছাড়া আরেকটি অংশ পঞ্চগড় বাজারে আহমদিয়াদের চারটি দোকানের মালামাল বের করে আগুন লাগিয়ে দেয়। তাঁদের অন্তত ২০টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকেরা।

সংঘর্ষ চলাকালে গুলির আঘাতে আরিফুর রহমান নামে এক যুবক আহত হন। হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। এতে পুলিশসহ আহত হয়েছেন অন্তত অর্ধশত। দুজন সাংবাদিকও আহত হয়েছেন।

বিক্ষোভকারীরা কাদিয়ানিদের দোকানপাট ও ঘরবাড়িতে আগুন দিয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকাদীর্ঘদিন ধরেই আহমদিয়া সম্প্রদায়কে অমুসলিম ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসছে সম্মিলিত খতমে নবুওয়াত সংরক্ষণ পরিষদসহ বিভিন্ন ইসলামি সংগঠন। এবার পঞ্চগড়ের আহমদনগর এলাকায় ৩ থেকে ৫ মার্চ পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী বার্ষিক সালানা জলসার আয়োজন করেন কাদিয়ানিরা। এই জলসা বন্ধ করতে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধসহ ভাঙচুর ও আহমদিয়াদের বাড়িতে হামলা করে ইসলামি সংগঠনগুলোর কর্মী সমর্থকেরা। আজ সম্মিলিত বিক্ষোভ করেন তাঁরা।

বর্তমানে আহমদনগর এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে পুরো আহমদনগরের চারপাশে অবস্থান নিয়ে দফায় দফায় হামলা করছেন বিক্ষোভকারীরা। এ ছাড়া জেলা শহরের বিভিন্ন সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ করে রেখেছেন তাঁরা। 

আহমদিয়া সালানা জলসার আয়োজক কমিটির মিডিয়া কনভেনর মাহমুদ আহমেদ সুমন আজকের পত্রিকা বলেন, ‘জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের অনুরোধে সালানা জলসা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আমাদের বেশ কয়েকটি বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাটসহ আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।’
 
বিক্ষোভকারীরা কাদিয়ানিদের দোকানপাট ও ঘরবাড়িতে আগুন দিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকাএ বিক্ষোভ থেকে হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে খতমে নবুওয়াত সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ক্বারি মো. আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমরা সংক্ষিপ্ত মিছিল করে চলে গেছি। পরে কে বা কারা অরাজকতা সৃষ্টি করে পরিস্থিতির অবনতি করে তা আমাদের জানা নেই। আমাদের কেউ এ ঘটনায় জড়িত নয়।’ 
 
এ প্রসঙ্গে পঞ্চগড় পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা বলেন, ‘একজনের মারা যাওয়ার খবর আমরা পেয়েছি। তবে কী কারণে মারা গেছে তা এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। ময়নাতদন্তের পরই মারা যাওয়ার কারণ বলা যাবে। শহরের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ, বিজিবি ও র‍্যাব সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত