সুন্দরগঞ্জে কোরবানির হাটে পুলিশের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষ, গ্রেপ্তার আতঙ্কে মানুষ

গাইবান্ধা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৪ জুন ২০২৪, ২২: ০৪

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে একটি কোরবানির পশুর হাট ভেঙে দেওয়াকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও এলাকাবাসীর মধ্যে সংর্ঘষের ঘটনায় ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ৭০-৮০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। ঘটনার পর তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। 

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন সুন্দরগঞ্জ উপজেলার শান্তিরাম এলাকার রুহুল আমিনের ছেলে রুবেল মিয়া (২৯), সতীরজান এলাকার লাল মিয়ার ছেলে মজিবুর রহমান (৫১) ও উত্তর ধর্মপুর এলাকার আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে মামুন অর রশিদ (২৯)। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার ও হয়রানি এড়াতে পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে আশেপাশের কয়েকটি গ্রামের মানুষ। 

গত বুধবার (১২ জুন) সন্ধ্যার দিকে উপজেলার শান্তিরাম ইউনিয়নের মজুমদারহাটে এ ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বিক্ষুব্ধ লোকজনের প্রতিরোধের মুখে পুলিশ মোটরবাইক ফেলে সটকে পড়েন। পরে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও গাইবান্ধার সহকারী পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করেন। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, অন্যান্য বছরের মতো চলতি বছরও মজুমদারহাটটি এক বছরের জন্য ইজারায় ডেকে নেন ইজারাদাররা। সম্প্রতি সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন থেকে তাদের জানানো হয় ওই হাটে পশুরহাট বসানোর কোনো অনুমতি নেই। তারা পশুরহাট বসানোর জন্য আবেদন করেও কোনো ফল না পেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন। গত ১১ জুন হাইকোর্টের আইনজীবী মো. নূরনবী একটি উকিল নোটিশ প্রদান করেন। এ প্রেক্ষিতে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসন ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন তাদের মৌখিকভাবে পশুরহাট চালানোর নির্দেশ দেন বলে তারা দাবি করেন। 

তারা আরও অভিযোগ করেন, সুন্দরগঞ্জ থানা-পুলিশ তাদের কাছে ১ লাখ টাকা উৎকোচ দাবি করে। বারবার থানায় তলব করার পর ইজারাদার কমিটি থানায় গিয়ে কিছু টাকা দিতে রাজি হলেও পুলিশ ৫০ হাজার টাকার নিচে নামবে না বলে জানিয়ে দেয়। এ নিয়ে বারবার দেন দরবার এবং দর-কষাকষির একপর্যায়ে গত বুধবার বিকেলে হাটে পশু কেনা বেচা শুরু হলে আকস্মিকভাবে দুই মোটরসাইকেলে তিনজন পুলিশ এসে হাটের বেচাকেনা বন্ধ করতে বলে। 

এ সময় তারা হাটে আসা ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের ছত্রভঙ্গ করতে তিন রাউন্ড রাবার বুলেট ছোড়ে। এতে লোকজন ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে হাটের মধ্যে ছোটাছুটি শুরু করলে বেশ কয়েকটি গরু-ছাগল হারিয়ে যাওয়ার অভিযোগও আছে। এ ঘটনায় ধাক্কাধাক্কিতে বেশ কয়েকজন আহত হন। হারিয়ে যায় অনেক মালামাল। একপর্যায়ে লোকজন বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে পুলিশ সদস্যরা সটকে পড়েন। পরে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও গাইবান্ধার সহকারী পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন। 

এদিকে ঘটনার পর রাতে কয়েকটি বাড়ি থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এঘটনায় এলাকাটিতে গ্রেপ্তার আতঙ্কে বর্তমানে কয়েকটি গ্রাম পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে। ঈদুল আজহার আর মাত্র কয়েকদিন বাকি থাকলেও ভয়ে বাড়ি ফিরতে পারছেন না গ্রামবাসী। 

শান্তিরাম গ্রামের সত্তরোর্ধ রোকেয়া বেওয়া বলেন, ‘কুরবানীর ঈদ আর কয়েকদিন বাকী। এরমধ্যেই পুলিশের গ্রেপ্তার অভিযান ও হয়রানির ভয়ে পাঁচগাছি শান্তিরাম, খামার ধুবনী, সতীরজান, উত্তরধর্মপুর গ্রাম পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে।’

এবারের ঈদ তাদের জন্য অনেক কষ্টকর হয়ে উঠেছে। ঈদের কোরবানি কেনা, শিশুদের নতুন কাপড় কেনা এবং ঈদের খাদ্য সামগ্রী ক্রয় করা সম্ভব না হওয়ায় চরম দুঃখে রয়েছেন তারা। 

এমনই অভিযোগ করেছেন অমিরন বেগম (৫৫), মুক্তা বেগম (৩৫), হাজেরা বেওয়া (৬৫)। তারা বলেন, এই প্রথম এমন দুঃখের ঈদ আসছে আমাদের জীবনে। পুলিশের অতি বাড়াবাড়ির কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু ফলভোগ করছে নিরীহ এলাকাবাসী। 

এ ব্যাপারে সুন্দরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহবুব আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ৭০ থেকে ৮০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত