দীর্ঘ এক যুগ পর ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে আজ বুধবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে দিনাজপুরের পার্বতীপুর পৌরসভা নির্বাচন। সীমানা জটিলতা নিয়ে মামলার কারণে ১২ বছর বন্ধ ছিল এ পৌরসভার নির্বাচন কার্যক্রম। তবে, এবারই প্রথম ইভিএমে ভোট হওয়ায় ভোটদানে ধীর গতি লক্ষ্য করা গেছে। আর এতে বিরক্তি প্রকাশ করছেন ভোটারেরা। নির্বাচন কর্মকর্তা বলছে, কেউ যদি ভোট দিতে না পারে, নির্ধারিত সময়ের পরও বিকেল ৪টার মধ্যে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত সকল ভোটারের ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। 

সরেজমিনে পার্বতীপুর আব্দুস শাফী মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ে দেখা যায়, ভোটকেন্দ্রে পুরুষদের পাশাপাশি নারী ভোটারদের উপস্থিতিও অনেক। পৌরসভার থানাপাড়া এলাকার ভোটার আসমিন সুলতানা মনি। বেলা ১১টার দিকে তাঁকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সকাল সাড়ে আটটায় লাইনে দাঁড়িয়েছি এখনো ভোট দিতে পারিনি।’

এ সময় ভোট দিয়ে বের হলেন পার্বতীপুর মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক বজলুর রশীদ মানিক। জানতে চাইলে তিনি আজকের পত্রিকার এ প্রতিনিধিকে বলেন, ‘ভালোভাবেই ভোট দিলাম। কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু ইভিএমে ভোট হওয়ায় সাধারণ মানুষের বুঝতে একটু সমস্যা হচ্ছে। বিশেষ করে বয়স্কদের সমস্যা বেশি। তাই ভোটদানে সময় লাগছে। খুব ধীরে হচ্ছে।’

এদিকে, ইভিএমে ভোট দিতে বিড়ম্বনার কথা জানালেন খোদ সরকারদলীয় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আমজাদ হোসেন। ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি জানান, ইভিএম এ ভোট দিতে তিনি নিজেও অস্বস্তি বোধ করেছেন। ভোট খুব ধীর গতিতে হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, অনেকে দেরির কারণে ভোট না দিয়েই চলে যাচ্ছেন। তারা আবার ভোটকেন্দ্রে আসবে কী না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এ ছাড়া অনেক কেন্দ্রে মেশিন হ্যাং (নষ্ট) হয়ে যাচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি। 

এ বিষয়ে রিটার্নিং অফিসার ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শাহিনুর ইসলাম প্রামাণিক ভোটগ্রহণে ধীর গতির বিষয়টি স্বীকার করে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ভোটারেরা ভোট কীভাবে দিতে হয় এটা বুঝতে না পারার কারণে ধীর গতি হচ্ছে। এ জন্য আমরা আমাদের সকল জনশক্তিকে নির্দেশ দিয়েছি। তারা লাইনে দাঁড়িয়ে ভোটারদের দ্রুত ভোট দেওয়ার বিষয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছেন। আশা করি এটা কাভার হয়ে যাবে। আর যদি কেউ ভোট দিতে না পারে, নির্ধারিত সময়ের পরও বিকেল ৪টার মধ্যে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত সকল ভোটারের ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে।’ 

নির্বচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এদিকে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে প্রতিটি কেন্দ্রে বসানো হয়েছে সিসি টিভি ক্যামেরা। মাঠপর্যায়ে পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য কাজ করছেন। মোতায়েন করা হয়েছে র‍্যাব, বিজিবি, পুলিশসহ আনসার বাহিনীর সদস্যদের। প্রতি কেন্দ্রে নিয়োজিত রয়েছেন একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। 

নির্বাচনে মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলরসহ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৬২ জন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী। এদের মধ্যে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আমজাদ হোসেন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি সাবেক মেয়র এজেডএম মেনহাজুল হক। তিনি খেজুরগাছ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। অন্যদিকে ৯টি ওয়ার্ডে সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১৮ জন ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৪২ জন রয়েছেন।