নাজমুল হাসান সাগর, সিলেট থেকে
ছোট্ট একটি দোকানঘর। শহরের মহল্লাগুলোতে রাস্তা ঘেঁষে যেমনটা থাকে, ঠিক সে রকম। বন্যার পানি থেকে বাঁচতে ধীরগতির রিকশায় দোকানটি অতিক্রম করে যাওয়ার সময় অর্ধেক নামানো শাটারের ফাঁক দিয়ে কিছু একটা দেখে চোখ আটকে গেল। কৌতূহলী মনে রিকশা থামিয়ে পানি টপকে দোকানের সামনে দাঁড়াতেই একটা উৎকট গন্ধ নাকে এল। এই গন্ধটা বন্যার পচা পানির নয়। মাথা নামিয়ে শাটারের নিচ দিয়ে তাকাতেই চোখে পড়ল, দোকানের মেঝেতে সদ্য নেমে যাওয়া বন্যার পানির ছাপ, ময়লা-আবর্জনা। মেঝেতে একটা প্লাস্টিকের টেবিল আর কাঠের চৌকি পাতা। চৌকির চার পায়ার প্রত্যেকটিতে তিনটি করে ইট দিয়ে উঁচু করা। বোঝা গেল, বন্যার শুরুতে পানির উচ্চতা চৌকির উচ্চতার সমান হয়েছিল। চৌকিতে বসা এক বৃদ্ধ। শুধু তোশক জড়ানো বিছানায়, হাঁটু মুড়ে মাথা নিচু করে বসে থাকায় বাইরে কারও উপস্থিতি টের পাননি তিনি। দুবার ডাকার পর মাথা তুলে তাকালেন। কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই তাঁর প্রশ্ন, ‘কিতারে বা, খাওন আনছোয় নি?’ (বাবা, খাবার এনেছ না কি)।
প্রশ্নটা বিব্রতকর ছিল কিন্তু তার থেকেও বিব্রতবোধ হলো, সেই উৎকট গন্ধের কারণ উদ্ঘাটন করতে পেরে ৷ বন্যার শুরু থেকে দোকানঘরেই বন্দী অবস্থায় আছেন শুক্কুর মিয়া নামের এই বৃদ্ধ। ত্রাণ দিতে আসা লোকজন বাদে খুব কম মানুষই তাঁর খোঁজ নিয়েছেন এই কদিন। একা চলাফেরা করতে না পারায় এখানেই তাঁর খাওয়া ও প্রস্রাব-পায়খানা সারতে হয়েছে। তাই বন্যার পচা পানির গন্ধ ছাপিয়ে তাঁর ঘর ও শরীরের গন্ধ নাকে এসে লেগেছে।
ধীর কণ্ঠস্বর আর সিলেটের স্থানীয় ভাষা বুঝতে সমস্যা হওয়ায় আলাপ আগানো যাচ্ছিল না। ইতিমধ্যে সেখানে এসে উপস্থিত হয়েছেন তাঁর দীর্ঘদিনের পরিচিত প্রতিবেশী মজিবর রহমান। তিনি অনেকটা প্রমিত ভাষায় বললেন, তাঁকে (শুক্কুর) দেখার কেউ নেই। বন্যার সময় ত্রাণের খাবার ছাড়া তাঁর পেটে কোনো দানাপানি পড়েছে বলে মনে হয় না। শেষ কবে ভাত-তরকারি খেয়েছেন জিজ্ঞেস করলে বলতে পারবেন না। তার দুইটা ছেলে আছে কিন্তু কোনো দায়িত্ব পালন করে না।
এতক্ষণ চুপচাপ শুনলেও এবার কিছুটা চকিত হয়ে প্রতিবেশী মজিবরকে থামানোর চেষ্টা করলেন শুক্কুর আলী। ছেলেদের ব্যাপারে কিছু বলতে দিতে চান না তিনি। নিচু গলায় শুক্কুর আলী বললেন, ‘কুছতা আর খোইয়ো না, ফরে আমার সমস্যা অইব।’
এরই মাঝে চোখ আটকে গেল প্লাস্টিকের টেবিলের ওপর। সেখানে দুই বোতল পানি আর প্লাস্টিকের বাটিতে সামান্য বিরিয়ানি রাখা। এগুলো সবই ত্রাণ থেকে পাওয়া। বিরিয়ানি এক দিন আগের, তাই সেটা খাওয়ার অবস্থায় নেই। বিরিয়ানি খাননি কেন প্রশ্ন করলে তিনি জানান, অনেক দিন পেট ভরে ভাত খাওয়া হয় না। ভাত-তরকারি হলে তৃপ্তি নিয়ে খেতে পারতেন। ভাত খাওয়ার জন্য তাঁর অন্তর শুকিয়ে আছে।
বিছানার বালিশের পাশে রাখা এক পোঁটলা চিড়া আর এক পোঁটলা মুড়ি। সেগুলো দেখিয়ে বললেন, এগুলো তাঁর ছোট ছেলে রাজ্জাকের। তাই খাওয়া যাবে না।
বন্যা-সম্পর্কিত সবশেষ খবর পেতে - এখানে ক্লিক করুন
রমজান আর রাজ্জাক—দুই ছেলে তাঁর। দিন এনে দিন খান তাঁরা। বন্যা পরিস্থিতিতে কাজ হারিয়ে তাঁদেরও অবস্থা বেগতিক। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বন্যার পানির সঙ্গে জীবন সমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছেন তাঁরাও। তাই বাবার খোঁজ নেওয়ার সময় নেই তাঁদের। এমনটা জানালেন রাহেলা নামে আরেক নারী প্রতিবেশী।
শুক্কুর আলী বলেন, ‘দুই দিন থেকে রিকশাওয়ালাদের বলি, আমাকে এখান থেকে নিয়ে উপশহরের মেইন রোডে নামিয়ে দিয়ে আসার জন্য। কেউ কথা শোনে না। আমার শরীর আর ঘরের গন্ধের কারণে কেউ কাছে আসতে চায় না। অনেকেই বলে, ঘুরে এসে নিয়ে যাব। কিন্তু আর ঘুরে আসে না। সবার মতো রিকশাওয়ালাও ফাঁকি দিয়ে যায়।’
এসব বলে চোখ মুছলেন তিনি। এ পাশে অপেক্ষায় থাকা রিকশাওয়ালা বারবার তাড়া দিচ্ছিলেন। তাঁর ডাকে ফিরতে হলো। কিন্তু পেছনে ঘুরে তাকানোর আর সাহস হলো না। কারণ, তাঁর চোখে শেষ সময়ে সাহায্যের আকুতি ছিল, যা ফাঁকি না দিয়ে উপায় ছিল না।
ছোট্ট একটি দোকানঘর। শহরের মহল্লাগুলোতে রাস্তা ঘেঁষে যেমনটা থাকে, ঠিক সে রকম। বন্যার পানি থেকে বাঁচতে ধীরগতির রিকশায় দোকানটি অতিক্রম করে যাওয়ার সময় অর্ধেক নামানো শাটারের ফাঁক দিয়ে কিছু একটা দেখে চোখ আটকে গেল। কৌতূহলী মনে রিকশা থামিয়ে পানি টপকে দোকানের সামনে দাঁড়াতেই একটা উৎকট গন্ধ নাকে এল। এই গন্ধটা বন্যার পচা পানির নয়। মাথা নামিয়ে শাটারের নিচ দিয়ে তাকাতেই চোখে পড়ল, দোকানের মেঝেতে সদ্য নেমে যাওয়া বন্যার পানির ছাপ, ময়লা-আবর্জনা। মেঝেতে একটা প্লাস্টিকের টেবিল আর কাঠের চৌকি পাতা। চৌকির চার পায়ার প্রত্যেকটিতে তিনটি করে ইট দিয়ে উঁচু করা। বোঝা গেল, বন্যার শুরুতে পানির উচ্চতা চৌকির উচ্চতার সমান হয়েছিল। চৌকিতে বসা এক বৃদ্ধ। শুধু তোশক জড়ানো বিছানায়, হাঁটু মুড়ে মাথা নিচু করে বসে থাকায় বাইরে কারও উপস্থিতি টের পাননি তিনি। দুবার ডাকার পর মাথা তুলে তাকালেন। কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই তাঁর প্রশ্ন, ‘কিতারে বা, খাওন আনছোয় নি?’ (বাবা, খাবার এনেছ না কি)।
প্রশ্নটা বিব্রতকর ছিল কিন্তু তার থেকেও বিব্রতবোধ হলো, সেই উৎকট গন্ধের কারণ উদ্ঘাটন করতে পেরে ৷ বন্যার শুরু থেকে দোকানঘরেই বন্দী অবস্থায় আছেন শুক্কুর মিয়া নামের এই বৃদ্ধ। ত্রাণ দিতে আসা লোকজন বাদে খুব কম মানুষই তাঁর খোঁজ নিয়েছেন এই কদিন। একা চলাফেরা করতে না পারায় এখানেই তাঁর খাওয়া ও প্রস্রাব-পায়খানা সারতে হয়েছে। তাই বন্যার পচা পানির গন্ধ ছাপিয়ে তাঁর ঘর ও শরীরের গন্ধ নাকে এসে লেগেছে।
ধীর কণ্ঠস্বর আর সিলেটের স্থানীয় ভাষা বুঝতে সমস্যা হওয়ায় আলাপ আগানো যাচ্ছিল না। ইতিমধ্যে সেখানে এসে উপস্থিত হয়েছেন তাঁর দীর্ঘদিনের পরিচিত প্রতিবেশী মজিবর রহমান। তিনি অনেকটা প্রমিত ভাষায় বললেন, তাঁকে (শুক্কুর) দেখার কেউ নেই। বন্যার সময় ত্রাণের খাবার ছাড়া তাঁর পেটে কোনো দানাপানি পড়েছে বলে মনে হয় না। শেষ কবে ভাত-তরকারি খেয়েছেন জিজ্ঞেস করলে বলতে পারবেন না। তার দুইটা ছেলে আছে কিন্তু কোনো দায়িত্ব পালন করে না।
এতক্ষণ চুপচাপ শুনলেও এবার কিছুটা চকিত হয়ে প্রতিবেশী মজিবরকে থামানোর চেষ্টা করলেন শুক্কুর আলী। ছেলেদের ব্যাপারে কিছু বলতে দিতে চান না তিনি। নিচু গলায় শুক্কুর আলী বললেন, ‘কুছতা আর খোইয়ো না, ফরে আমার সমস্যা অইব।’
এরই মাঝে চোখ আটকে গেল প্লাস্টিকের টেবিলের ওপর। সেখানে দুই বোতল পানি আর প্লাস্টিকের বাটিতে সামান্য বিরিয়ানি রাখা। এগুলো সবই ত্রাণ থেকে পাওয়া। বিরিয়ানি এক দিন আগের, তাই সেটা খাওয়ার অবস্থায় নেই। বিরিয়ানি খাননি কেন প্রশ্ন করলে তিনি জানান, অনেক দিন পেট ভরে ভাত খাওয়া হয় না। ভাত-তরকারি হলে তৃপ্তি নিয়ে খেতে পারতেন। ভাত খাওয়ার জন্য তাঁর অন্তর শুকিয়ে আছে।
বিছানার বালিশের পাশে রাখা এক পোঁটলা চিড়া আর এক পোঁটলা মুড়ি। সেগুলো দেখিয়ে বললেন, এগুলো তাঁর ছোট ছেলে রাজ্জাকের। তাই খাওয়া যাবে না।
বন্যা-সম্পর্কিত সবশেষ খবর পেতে - এখানে ক্লিক করুন
রমজান আর রাজ্জাক—দুই ছেলে তাঁর। দিন এনে দিন খান তাঁরা। বন্যা পরিস্থিতিতে কাজ হারিয়ে তাঁদেরও অবস্থা বেগতিক। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বন্যার পানির সঙ্গে জীবন সমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছেন তাঁরাও। তাই বাবার খোঁজ নেওয়ার সময় নেই তাঁদের। এমনটা জানালেন রাহেলা নামে আরেক নারী প্রতিবেশী।
শুক্কুর আলী বলেন, ‘দুই দিন থেকে রিকশাওয়ালাদের বলি, আমাকে এখান থেকে নিয়ে উপশহরের মেইন রোডে নামিয়ে দিয়ে আসার জন্য। কেউ কথা শোনে না। আমার শরীর আর ঘরের গন্ধের কারণে কেউ কাছে আসতে চায় না। অনেকেই বলে, ঘুরে এসে নিয়ে যাব। কিন্তু আর ঘুরে আসে না। সবার মতো রিকশাওয়ালাও ফাঁকি দিয়ে যায়।’
এসব বলে চোখ মুছলেন তিনি। এ পাশে অপেক্ষায় থাকা রিকশাওয়ালা বারবার তাড়া দিচ্ছিলেন। তাঁর ডাকে ফিরতে হলো। কিন্তু পেছনে ঘুরে তাকানোর আর সাহস হলো না। কারণ, তাঁর চোখে শেষ সময়ে সাহায্যের আকুতি ছিল, যা ফাঁকি না দিয়ে উপায় ছিল না।
রাজধানী ঢাকায় পুলিশের গুলিভর্তি ম্যাগাজিন চুরি ও এপিসি গাড়িতে হামলা-ভাঙচুরের অভিযোগে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের অজ্ঞাতনামা আট হাজার শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ।
৭ মিনিট আগেসাতক্ষীরায় বিভিন্ন সময় হারানো ৯২টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করে মালিকদের কাছে ফেরত দিয়েছে থানা–পুলিশ। এ ছাড়া ভুলে অন্যের বিকাশ নম্বরে চলে যাওয়া ৭১ হাজার ৫০০ টাকা আদায় করে দেওয়া হয়েছে।
১৮ মিনিট আগেসুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মামলায় সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জামিন পেয়েছেন।
২৮ মিনিট আগেশাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা গুচ্ছ প্রক্রিয়া থেকে বেরিয়ে নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম জানিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, এ দাবি মানা না হলে কঠোর অবস্থানে যাবেন তারা।
২৮ মিনিট আগে