কনস্টেবল স্বামীর কাছে নির্যাতনের শিকার স্ত্রী, ডিআইজিকে অভিযোগ 

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট
প্রকাশ : ১২ জুলাই ২০২৩, ২৩: ২৬

সিলেটে পুলিশ কনস্টেবল (সদস্য) এক স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীকে যৌতুকের দাবিতে একাধিকবার নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে সিলেটের উপমহাপরিদর্শকসহ (ডিআইজি) ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন নির্যাতনের শিকার দুই সন্তানের মা। এ ছাড়া তিনি আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।

পুলিশ সদস্যের অত্যাচারে মেয়ের এমন অবস্থায় ওই নারীর অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। স্বামীর অত্যাচার নির্যাতনের পরেও ওই নারী সংসার রক্ষায় দুই সন্তানকে নিয়ে এখন দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।

তবে, কনস্টেবল মীর মনির হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘স্ত্রীকে তালাক দিয়েছি। যৌতুক দাবি করলে তো তালাক দিতাম না। আমি তাঁকে তিনটি নোটিশ পেয়েছি।’ 

জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১৭ জুন সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার হারিছনগরের মৃত মীর মোয়াজ্জেম হোসেনের ছেলে পুলিশ কনস্টেবল মীর মনির হোসেনের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বাগেরহাটের বারইখালির (বর্তমানে বটেশ্বর, সিলেট সদর) অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য রফিকুল ইসলামের মেয়ে তাওহীদা ইসলাম সাথীর সঙ্গে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় সাথীর বাবা স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা, ফার্নিচার, ইলেকট্রনিকস মালামালসহ বিপুল পরিমাণের মালামাল দেন। বিয়ের পর কিছুদিন ভালোভাবে সংসার চললেও একসময় যৌতুকের জন্যে সাথীর ওপর শারীরিক নির্যাতন শুরু করে মনির। তাদের মধ্যে দেখা দেয় কলহ। এরই মধ্যে সাথী দুই মেয়ে সন্তানও জন্ম দেন। 

অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ২০২২ সালের ১৫ আগস্ট স্বামীর বিরুদ্ধে সিলেটের আদালতে মামলা দায়ের করেন সাথী। ওই সময়ে সিলেটের পুলিশ সুপারের কাছে একটি অভিযোগও দেওয়া হয়। সেই সময় মনির ফেঞ্চুগঞ্জ থানায় কর্মরত ছিলেন। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে মনিরের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয় এবং তিনি ১৫ দিন কারাগারে ছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সাময়িক বরখাস্ত করে। পুলিশের তদন্তে স্ত্রীকে নির্যাতনের সত্যতা পাওয়া যায় মনিরের বিরুদ্ধে। ওই সময় মনিরকে কারাগার থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসতে ও চাকরি রক্ষার জন্যে মনিরের পরিবার-পরিজন অঙ্গীকার নামার মাধ্যমে স্ত্রী সাথীর সঙ্গে আপস করেন বলে অভিযোগ থেকে জানা গেছে। 

মীর মনির স্ত্রী সাথীকে কোনোরূপ শারীরিক মানসিক নির্যাতন করবে না, তালাকের হুমকি দেবে না, শান্তিপূর্ণভাবে সন্তানাদিসহ ঘরসংসার করার অঙ্গীকারনামা ও আপসনামায় উল্লেখ করেন। যদি এর কোনো ব্যাঘাত হয় তাহলে সাথী তাঁর ভাশুর সেনাসদস্য মীর মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন বলে অঙ্গীকারনামায় উল্লেখ করা হয়। এরপর মীর মনির কারাগার থেকে মুক্তি পান। স্ত্রী সাথীকে নিয়ে সিনিয়র কর্মকর্তাদের সামনে নিয়ে যান, যাতে কর্মকর্তারা বুঝতে পারেন মীর মনির স্ত্রীর সঙ্গে ভালো সম্পর্কে তৈরি করেছেন। 

সাময়িক বরখাস্ত প্রত্যাহারের পরই বদলে যান মনির। এবার নতুন করে ৫ লাখ টাকা যৌতুকের দাবি করে বসেন। বিষয়টি নিয়ে মনিরের সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাথী দেখা করে প্রতিকার চান। এর পরিপ্রেক্ষিতে সিনিয়র এক কর্মকর্তা মনিরকে ডেকে পাঠান। ওই কর্মকর্তার কাছে মনির জানান, স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন। কিন্তু তালাকের কোনো নোটিশ সাথী বা তাঁর পরিবারের কারও কাছে এখনো আসেনি। এই ঘটনার পর পুনরায় সাথী তাঁর স্বামী মীর মনির ও ভাশুর মীর মোশাররফের বিরুদ্ধে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আদালতে আরেকটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় দুই আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। কিন্তু রহস্যজনক কারণে পুলিশ মনির কিংবা মোশাররফ কাউকে গ্রেপ্তার করেনি। 

অভিযোগ থেকে জানা গেছে, কোতোয়ালি থানার ওয়ারেন্ট অফিসার উপপরিদর্শক (এসআই) অজয় শংকর চৌধুরীর কাছে বারবার ধরনা দিলেও কোনো ফলাফল মেলেনি। ইতিমধ্যে মীর মনির জামিন নিলেও মোশাররফ রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। বাধ্য হয়ে নির্যাতনের শিকার নারী গতকাল মঙ্গলবার সিলেটের ডিআইজির কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এতে তিনি ন্যায় বিচার পেতে কনস্টেবল মীর মনিরের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

কনস্টেবল মনির ইতিপূর্বে কমলগঞ্জ থানায় কর্মরত থাকার সময় রাতের বেলায় এক নারী কনস্টেবলের রুমে ঢুকে পড়েন। থানার ওসির কাছে বিষয়টি ধরা পড়লে তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

সিলেট রেঞ্জ ডিআইজি শাহ মিজান শাফিউর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অভিযোগটি সংশ্লিষ্ট জেলার এসপি তদন্তপূর্বক মতামতসহ পাঠানোর জন্য দেওয়া হবে। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত