Ajker Patrika

‘পানি তো গেছেগি, আমরা যাইতাম কোয়াই’

ইয়াহ্ইয়া মারুফ, সিলেট
আপডেট : ২৫ জুন ২০২২, ২৩: ২৯
‘পানি তো গেছেগি, আমরা যাইতাম কোয়াই’

‘পানি তো গেছেগি, আমরা ওখন যাইতাম কোয়াই? ১০ দিন পানির তলে তাইক্কা বাসার সবতা নষ্ট ওই গিছে। মঙ্গলবারে চাউলের বস্তা কিনিয়া আনছি আর বৃহস্পতিবারে বাসায় কোমরপানি। সব শেষ। ইকানো তো দু-একবেলা খাবার পাচ্ছি। বাসায় ফিরে তো তারও নিশ্চয়তা নাই।’

আজ শনিবার দুপুরে এভাবেই আতঙ্ক আর অনিশ্চয়তার কথা বলছিলেন হারাধন নম। ১৬ জুন সিলেট নগরীর মাছুদিঘীরপাড় এলাকায় নিজের বাড়িটি বানের পানিতে তলিয়ে গেলে পরিবার নিয়ে তিনি আশ্রয় নেন মির্জাজাঙ্গাল উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় তলায়।

হারাধনের মতো এই স্কুলে আশ্রয় নিয়েছিল ২২০টি পরিবার। পানি নেমে যাওয়ায় ১৮০টি পরিবার নিজ নিজ বাড়িতে চলে গেছে। যে ৪০টি পরিবার রয়েছে। তাদের সবার মধ্যে সব হারানোর শোক আর ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা। একই রকম আতঙ্কে রয়েছেন সিলেট-সুনামগঞ্জের আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা বানভাসিরাও।

অধিকাংশ আশ্রয়কেন্দ্রে ও বাড়িতে ফেরাদের খাবার জোটে দু-এক বেলা। বিশুদ্ধ পানি, খাবার, পয়োনিষ্কাশনের সংকট তীব্র। বড়রা বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা রান্না করা খাবারের পাশাপাশি শুকনো খাবার খেয়ে বেঁচে থাকলেও শিশুসন্তানদের নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। তাদের দুধ জোগাড় করতে পারছেন না।

আজ বিকেলে নগরীর জল্লারপাড়ের দিসাই মিয়ার কলোনির বাসিন্দা মারজেহা বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আজ সকালে ১২ দিন পর বাসায় আসছি। পারটেক্সের খাটসহ সব নষ্ট হয়ে গেছে। চাল, ডাল কিছুই নাই। আমরা যেমন তেমন আট মাসের ছেলে তাওসিফের জন্য বেশি চিন্তা। বুকের দুধ পায় না। বাজার থেকে কিনে খাওয়াই। এখন তো টাকাপয়সাও নাই।’ 

নগরীর উপশহর আই ব্লকের বাসিন্দা কাউসার হোসেন বলেন, ‘চারদিকে ময়লা-আবর্জনা দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। বাসা পরিষ্কার করছি। এখন হাত-পা চুলকায়। চামড়ায় ফুসকুড়ি পড়ে গেছে।’ যতরপুরের বাসিন্দা কামিরুন নেছা বলেন, ‘১০ দিন পর বাসায় ফিরেছি। পুরো বাসায় পচা দুর্গন্ধ। টেকা যাচ্ছে না। খাবারেরও কিচ্ছু নাই।’ 

খাবার সংকটের কথা জানিয়েছেন আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষও।

সিলেট নগরী ও এর আশপাশের এলাকায় বন্যার পানি অনেকটাই কমেছে। তবে এখন রাস্তাঘাটে জমে থাকা ময়লা পানি থেকে দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করেছে। এদিকে পানি কমতে শুরু করায় অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছে।

দুপুরে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রধান সড়কগুলোর যেসব স্থানে পানি জমে ছিল, সেগুলো প্রায় নেমে গেছে। তবে কিছু সড়কে এখনো পানি রয়েছে। এর মধ্যে সিলেট নগরীর শাহজালাল উপশহর, তালতলা সড়কসহ বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার সড়কগুলোতেও পানি রয়ে গেছে। তবে সব কটি সড়কেই যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে।

নগরীর যতরপুর, মিরাবাজার, শাহজালাল উপশহর, সোবহানীঘাট, মির্জাজাঙ্গাল, তালতলা, জামতলা, শেখঘাট, ঘাসিটুলা, কুয়ারপাড়, লালাদিঘীর পাড় এলাকার পাড়া-মহল্লার পানি ময়লা ও কালো রং ধারণ করেছে। এসব স্থানে জমে থাকা পানি থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। মশা-মাছিও বাড়ছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে জীবাণুনাশক ওষুধ ছিটানোর নির্দেশ দিয়েছি। আমাদের মেডিকেল টিমও কাজ করতেছে। সবাইকে ধৈর্য ধরে সচেতনভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সহযোগিতা করতে হবে। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলা যাবে না। নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে। যেন সিটি করপোরেশনের গাড়ি এগুলো নিতে পারে।’

এদিকে সিলেটের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি কমার খবর পাওয়া গেছে। তবে কুশিয়ারা তীরবর্তী ছয় উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। উপজেলাগুলো হলো—দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ, বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর, বিয়ানীবাজার ও বিশ্বনাথ। এসব উপজেলার পানিবন্দী পরিবারগুলো অর্ধাহারে-অনাহারে দিনাতিপাত করছে। আশ্রয়কেন্দ্রে সরকারি-বেসরকারিভাবে শুকনো খাবার ও কিছু ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হলেও প্রত্যন্ত গ্রামে ত্রাণ নিয়ে কেউ যাচ্ছে না।

বন্যার পানির তোড়ে বালাগঞ্জ-তাজপুর সড়কের কাশিপুর ব্রিজের সংযোগস্থলে সড়কে ফাটল দেখা দিয়েছে। বেশ কিছু অংশ দেবে গেছে। যেকোনো সময় ভয়াবহ ভাঙন শুরু হতে পারে। তবে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে সিলেট সদর, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জৈন্তাপুরসহ সাতটি উপজেলায়। এসব উপজেলার মানুষ ঘরে ফিরলেও দুর্দশা কাটছে না।

আজ ঘরে ফিরেছেন গোয়াইনঘাটের নলজুড়ি এলাকার দিনমজুর রহমত আলী। তাঁর ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মোবাইল ফোনে এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘পানিতে ঘর তছনছ হয়ে গেছে। ঘরের ভেতরে হাঁটুসম কাদা। এই ঘরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকব কী করে! পানির কারণে আয়-রোজগার বন্ধ। ভাত খাওয়ারই পয়সা নাই। ঘর মেরামত করব কী করে?’

সিলেট সদর উপজেলার বাদাঘাট এলাকার কবিরুন বেগম। গতকাল শুক্রবার আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়ি ফিরেছেন। তিনি বলেন, ‘পাঁচ দিন বাদাঘাট উচ্চবিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলাম। বাড়ি ফিরে দেখি পানিতে বাথরুম ভেঙে গেছে। সব আসবাব নষ্ট হয়ে গেছে। এইগুলা এখন মেরামত করাই সবচেয়ে বড় সমস্যা।’

বন্যাদুর্গতদের সহায়তায় স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছেন ব্যাংক কর্মকর্তা আবুল হাসান। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আপাতত শুকনো খাবার বিতরণের চাইতে বন্যার্তদের পুনর্বাসনের জন্য ফান্ড গঠন করা দরকার। মানুষ আপৎকালীন সঞ্চয় আর ত্রাণ দিয়ে বন্যা চলাকালীন সংকট পার করে দিতে পারবে। কিন্তু মূল বিপদ পানি নামার পরেই দেখা দেবে। কারণ, টিনের চাল, ঘরের বেড়া পানিতে তলিয়ে গেছে। ঘরের আসবাব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হাঁস-মুরগি ভেসে গেছে। পানি নামার পর এগুলো মেরামতে বিপদে পড়বেন তাঁরা।’

আবুল হাসানের আশঙ্কা, ‘এই মানুষগুলো ঘর ও আসবাব মেরামতে মহাজন বা বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠান থেকে হয়তো ঋণ নেবেন। তখন তাঁরা আরও বিপদে পড়বেন।’

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) দেবজিৎ সিংহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৬৬ হাজার ৮১৮ জন মানুষ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন। আমরা আপাতত মানুষের নিরাপদ খাদ্য ও নিরাপদ বাসস্থানের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। সব জায়গার পানি নেমে গেলে ঘরবাড়ি নিয়েও পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এরই মধ্যে জেলা-উপজেলা প্রশাসনকে ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পানি নেমে গেলে রিপোর্ট অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি মেরামত ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘সুনামগঞ্জে পানি কমতেছে। তবে এখনো অধিকাংশ এলাকা পানির নিচে রয়েছে। এ জন্য সেখানকার সঠিক চিত্র পাওয়া যাচ্ছে না।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। তবে সিলেট পয়েন্টে বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার নিচে নেমেছে আর সুনামগঞ্জ পয়েন্টেও কমছে। কুশিয়ারার অমলসীদ পয়েন্টে ১৭৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া কুশিয়ারা নদীর শেওলা পয়েন্ট, শেরপুর পয়েন্টেও পানি কমেছে। তবে কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টের পানি গতকাল শুক্রবার থেকে অপরিবর্তিত রয়েছে।

পাউবোর সিলেটের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এসএম শহিদুল ইসলাম জানান, সিলেট-সুনামগঞ্জে বৃষ্টি না হওয়ায় পানি কমতে শুরু করেছে। তবে ধীরগতিতে পানি নামছে। আর বৃষ্টি না হলে দু-এক দিনের মধ্যে পানি আরও কমে যাবে বলে আশা করছেন তিনি। তবে আগামী মাসের শেষ দিকে আবার বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান শহিদুল ইসলাম।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বাজপেয়ির ‘সেই বক্তব্য’ সামনে আনলেন শশী থারুর

সাবেক নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ ও সাবেক মেয়রের বাড়িতে আগুন

ময়মনসিংহে যুবককে পিটিয়ে হত্যা: অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা

ভারতে তেল দিয়ে ফেরার পথে বিধ্বস্ত রুশ জাহাজ—প্রতিশোধের হুমকি পুতিনের

হাদির মৃত্যু ঘিরে নৈরাজ্য নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র: বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিএনপি নেতার ঘরে আগুন লাগানোর অভিযোগ, শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ তিন

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
আগুনে জ্বলছে ঘর। ছবি: আজকের পত্রিকা
আগুনে জ্বলছে ঘর। ছবি: আজকের পত্রিকা

লক্ষ্মীপুরে বেলাল হোসেন নামের এক বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে পেট্রল ঢেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল শুক্রবার রাতে সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জের চরমনসা এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। আগুনে আয়েশা বেগম (৭) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। দগ্ধ হয়েছেন বেলাল হোসেন এবং তাঁর আরও দুই শিশুসন্তান।

বেলাল হোসেন সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক। তাঁকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দগ্ধ দুই শিশু বীথি আক্তার ও স্মৃতি আক্তারের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। দগ্ধ শিশুদের বয়স ১২ থেকে ১৪ বছর।

বিএনপির নেতা-কর্মীরা জানান, ভবানীগঞ্জের চরমনসা এলাকায় নিজের ঘরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন বেলাল হোসেন। গভীর রাতে ঘরের দরজায় তালা লাগিয়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় দৃর্বৃত্তরা। মুহূর্তের মধ্যে আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় ঘুমন্ত শিশু আয়েশা দগ্ধ হয়ে মারা যায়। দগ্ধ হন বেলাল হোসেন এবং তাঁর আরও দুই মেয়ে। পরে স্থানীয় বাসিন্দারা তিনজনকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।

লক্ষ্মীপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার রনজিত কুমার দাস বলেন, এক শিশুকে মৃত এবং অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় তিনজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর।

লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা অরূপ পাল বলেন, বেলাল হোসেনের শরীরের ২০ শতাংশ পুড়ে গেছে। দুই শিশুর শরীর ৭০ থেকে ৮০ শাতংশ পুড়ে গেছে।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওয়াহিদ পারভেজ বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। অগ্নিদগ্ধ হয়ে এক শিশু মারা গেছে। আরও তিনজন অগ্নিদগ্ধ। তবে আগুনের বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। এটি পরিকল্পিতভাবে নাশকতা কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বাজপেয়ির ‘সেই বক্তব্য’ সামনে আনলেন শশী থারুর

সাবেক নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ ও সাবেক মেয়রের বাড়িতে আগুন

ময়মনসিংহে যুবককে পিটিয়ে হত্যা: অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা

ভারতে তেল দিয়ে ফেরার পথে বিধ্বস্ত রুশ জাহাজ—প্রতিশোধের হুমকি পুতিনের

হাদির মৃত্যু ঘিরে নৈরাজ্য নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র: বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সড়কে ঝরল খালা-ভাগনের প্রাণ

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি 
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৫৫
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

পাবনার ঈশ্বরদীতে সিএনজিচালিত অটোরিকশার সঙ্গে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নারীসহ দুজন নিহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার বিকেলে ঈশ্বরদী শহরের স্কুলপাড়ায় ঈশ্বরদী-লালপুর-বাঘা-বানেশ্বর আঞ্চলিক মহাসড়কে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত ব্যক্তিরা হলেন উপজেলার সাড়া ইউনিয়নের ঝাউদিয়া এলাকার মৃত আনোয়ার হোসেনের ছেলে শাকিব হোসেন (২২) এবং শহরের পিয়ারাখালী এলাকার রফিকুল ইসলামের স্ত্রী শিরিনা বেগম (৪৫)। নিহত ব্যক্তিরা সম্পর্কে খালা ও ভাগনে ছিলেন। তাঁরা দুজনই অটোরিকশার যাত্রী ছিলেন।

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানায়, গতকাল বিকেলে লালপুর থেকে যাত্রী নিয়ে একটি অটোরিকশা ঈশ্বরদী শহরে আসছিল। অটোরিকশাটি শহরের স্কুলপাড়ার মহাসড়কে এলে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি মোটরসাইকেলের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে সিএনজি অটোরিকশার দুই যাত্রী গুরুতর আহত হন। স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁদের উদ্ধার করে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোমিনুজ্জামান বলেন, দুর্ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। তবে অটোরিকশার চালক পালিয়েছেন। এ ব্যাপারে মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বাজপেয়ির ‘সেই বক্তব্য’ সামনে আনলেন শশী থারুর

সাবেক নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ ও সাবেক মেয়রের বাড়িতে আগুন

ময়মনসিংহে যুবককে পিটিয়ে হত্যা: অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা

ভারতে তেল দিয়ে ফেরার পথে বিধ্বস্ত রুশ জাহাজ—প্রতিশোধের হুমকি পুতিনের

হাদির মৃত্যু ঘিরে নৈরাজ্য নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র: বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শরীয়তপুরে এনসিপির মশাল মিছিল

শরীয়তপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪৩
শরীয়তপুর জেলা শহরে এনসিপির মশাল মিছিল
শরীয়তপুর জেলা শহরে এনসিপির মশাল মিছিল

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যার প্রতিবাদে শরীয়তপুর জেলা শহরে মশাল মিছিল করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গতকাল শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় শহরের জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ চত্বর থেকে মশাল মিছিলটি শুরু হয়। মিছিলটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে শরীয়তপুর-ঢাকা সড়কের চৌরঙ্গী মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে প্রায় আধা ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন দলটির নেতা-কর্মীরা। এ সময় হাদি হত্যার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন তাঁরা।

এনসিপির শরীয়তপুর জেলার সদস্যসচিব সবুজ তালুকদার বলেন, ‘হাদি হত্যাকাণ্ড কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ভিন্নমত দমন ও রাজনৈতিক কণ্ঠরোধের ধারাবাহিকতারই অংশ এই হত্যাকাণ্ড। দিনদুপুরে খুনিরা গুলি করে কীভাবে পালিয়ে গেল? এক সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও খুনিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আমরা অবিলম্বে এই হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত, প্রকৃত খুনিদের গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। তা না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আমিন মোহাম্মদ জিতু বলেন, ‘এটি শুধু একজন ব্যক্তির হত্যাকাণ্ড নয়, এটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত। এই হত্যার বিচার না হলে তরুণ সমাজ রাজপথে আবারও দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।’

বিক্ষোভে এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বাজপেয়ির ‘সেই বক্তব্য’ সামনে আনলেন শশী থারুর

সাবেক নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ ও সাবেক মেয়রের বাড়িতে আগুন

ময়মনসিংহে যুবককে পিটিয়ে হত্যা: অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা

ভারতে তেল দিয়ে ফেরার পথে বিধ্বস্ত রুশ জাহাজ—প্রতিশোধের হুমকি পুতিনের

হাদির মৃত্যু ঘিরে নৈরাজ্য নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র: বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাণিজ্য থমকে আছে রেললাইনের অভাবে

  • ২০১৩ সালে সম্ভাব্যতা যাচাই করে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দেয় অস্ট্রেলিয়ার কোম্পানি
  • সম্ভাব্যতা ম্যাপে ৯৮ কিলোমিটার রেললাইনে ৮টি স্টেশনের প্রস্তাব রাখা হয়
আবুল কাসেম, সাতক্ষীরা 
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ১২
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সাতক্ষীরার বহুল প্রতীক্ষিত রেললাইনের নির্মাণকাজ এগোচ্ছে কচ্ছপগতিতে। এক যুগ আগে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর গেল মাসে যশোরের নাভারণ থেকে সাতক্ষীরা পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের ডিপিপি প্রণয়ন করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

সাতক্ষীরাবাসী বলছে, শত বছরের প্রতীক্ষিত রেললাইন নির্মিত হলে একদিকে যেমন সুন্দরবনকেন্দ্রিক পর্যটন বিকশিত হবে, অন্যদিকে পণ্য পরিবহনে খরচ কমায় ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন ও অন্যান্য সূত্রে জানা যায়, ১৯১৪ সালে ব্রিটিশ ভাইসরয় সাতক্ষীরাকে রেললাইনে সংযুক্ত করে সুন্দরবন পর্যন্ত সম্প্রসারণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই নির্দেশনা বাস্তবায়িত হয়নি। ১৯৫৮ সালে সাতক্ষীরা-ভেটখালি সড়ক নির্মাণের সময় জমি অধিগ্রহণ করেও নির্মিত হয়নি রেললাইন।

দীর্ঘকাল পরে ২০১০ সালে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে এক জনসভায় তৎকালীন সরকারপ্রধান নাভারণ-সাতক্ষীরা-মুন্সিগঞ্জ রেললাইন নির্মাণের ঘোষণা দেন। ২০১৩ সালে সম্ভাব্যতা যাচাই করে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দেয় অস্ট্রেলিয়ার ক্যানারেইল কোম্পানি লিমিটেড। সম্ভাব্যতা যাচাই করতে খরচ হয় ১১ কোটি টাকা। সম্ভাব্যতা ম্যাপে ৯৮ কিলোমিটার রেললাইনে ৮টি স্টেশনের প্রস্তাব রাখা হয়।

এরপর আবারও থেমে যায় রেললাইন নির্মাণের উদোগ। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর রেললাইন স্থাপনের দাবিতে সাতক্ষীরায় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের ব্যানারে আন্দোলন শুরু হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে নাভারণ-সাতক্ষীরা রেললাইন স্থাপনের উদ্যোগের অংশ হিসেবে যশোর রেলওয়ের পক্ষ থেকে সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়। এরপর গত মাসে যশোরের নাভারণ থেকে সাতক্ষীরা পর্যন্ত ৫টি স্টেশনযুক্ত ৪২ কিলোমিটার রেললাইনের ডিপিপি প্রণয়ন করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র।

সাতক্ষীরার বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শেষ জেলা সাতক্ষীরায় ২২ লাখের বেশি মানুষের বাস। এ জেলা থেকে দেশের অন্যান্য স্থানে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম সড়কপথ। সুন্দরবন, চিংড়ি, আম ও ভোমরা বন্দরের কারণে অর্থনৈতিকভাবে ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠায় সাতক্ষীরায় রেললাইন নির্মাণ এখন সময়ের দাবি।

জেলা চিংড়ি চাষি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডা. আবুল কালাম বাবলা বলেন, নৌপথ ও আকাশপথে যাতায়াতের কোনো সুযোগ নেই জেলাবাসীর। রেললাইন নির্মিত হলে মৎস্য খাতের নতুন দিকের সূচনা হবে।

সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী নূর খান বাবুল বলেন, ‘সাতক্ষীরা থেকে আমরা যে পরিমাণ রাজস্ব সরকারকে দিই, সে ধরনের উন্নয়ন চোখে পড়ে না।’

ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবু মুসা বলেন, কলকাতা থেকে ভোমরা স্থলবন্দরের দূরত্ব মাত্র ৬০ কিলোমিটার। তাই রেললাইন হলে ভোমরায় ব্যবসা-বাণিজ্যের চিত্র পাল্টে যাবে।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক আফরোজা আখতার বলেন, ‘জিআই পণ্য আম, চিংড়ি এবং ভোমরা স্থলবন্দরের পণ্য পরিবহনের জন্য সাতক্ষীরায় রেললাইন নির্মাণ জরুরি। আমি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রেললাইন নির্মাণের জন্য যত প্রচেষ্টা রয়েছে, সেটা করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বাজপেয়ির ‘সেই বক্তব্য’ সামনে আনলেন শশী থারুর

সাবেক নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ ও সাবেক মেয়রের বাড়িতে আগুন

ময়মনসিংহে যুবককে পিটিয়ে হত্যা: অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা

ভারতে তেল দিয়ে ফেরার পথে বিধ্বস্ত রুশ জাহাজ—প্রতিশোধের হুমকি পুতিনের

হাদির মৃত্যু ঘিরে নৈরাজ্য নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র: বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত