সীমানা চিহ্নিত না থাকায় উদ্ধার করা যাচ্ছে না লাউয়াছড়া বনের দখলকৃত জমি

মাহিদুল ইসলাম, কমলগঞ্জ, (মৌলভীবাজার) 
প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২: ৪১
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। ছবি: আজকের পত্রিকা

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের ৭টি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ও ১০টি জাতীয় উদ্যানের অন্যতম। কাগজপত্রে এ সংরক্ষিত বনাঞ্চলটির আয়তন ১ হাজার ২৫০ হেক্টর হলে বাস্তবে কতটুকু আছে তা জানে না বন বিভাগ। ১৯৯৬ সালে এই বনকে ‘জাতীয় উদ্যান’ হিসেবে ঘোষণা করা হলেও এখনো ভূমি জরিপ হয়নি।

সীমানা চিহ্নিত না থাকায় দীর্ঘ ৩ দশক ধরে এই উদ্যানের অনেক জমি বেদখল হয়ে গেছে। ভূমি জরিপ না হওয়ায় উদ্যানের জমি কতটুকু, ও দখল হয়েছে কতটুকু তা নিশ্চিত করতে পারছে না বন বিভাগ।

গত রোববার বন বিভাগের বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ ও থানা-পুলিশ হীড বাংলাদেশের পশ্চিমে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের বেদখল হওয়া প্রায় ৪ একর জমি উদ্ধার করেছে। এর আগে পৃথক অভিযানে বেদখল হওয়া আরও ছয় একর জমি উদ্ধার করা হয়। কিন্তু সীমানা চিহ্নিত না থাকায় উদ্ধারকাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভূমি পরিমাপ করার জন্য ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট সেটেলমেন্ট অফিসে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বনের জায়গা পরিমাপ করে সীমানা নির্ধারণ করা হলে আর কেউ জায়গা দখল করতে পারবে না। একই সঙ্গে দখলকৃত জমি উদ্ধার করতে সহজ হবে।

পরিবেশকর্মী মো. আহাদ মিয়া বলেন, বনের জায়গা অনেকেই দখল করে বিভিন্ন বাগান করেছেন। ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির সঙ্গেও বনের জায়গা দখলে আছে। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের সীমানা নির্ধারণ না থাকায় সহজেই জায়গা দখল হচ্ছে। দ্রুত সময়ে উদ্যানের জায়গা পরিমাপ করে সীমানা নির্ধারণ করা প্রয়োজন।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের শ্রীমঙ্গল রেঞ্জ কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের প্রায় চার একর জমি উদ্ধার করা হয়েছে। এই জমি বদরুল আলম জেনার নামে একজনের দখলে ছিল। আমরা জমি উদ্ধার করে গাছ লাগিয়েছি। এর আগেও আমরা প্রায় ছয় একর জমি উদ্ধার করেছি। জমি নিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে বন বিভাগের মামলাও রয়েছে।

লাউয়াছড়া জঙ্গলের ভেতর দিয়ে যাওয়া রেলপথ। ছবি: আজকের পত্রিকা
লাউয়াছড়া জঙ্গলের ভেতর দিয়ে যাওয়া রেলপথ। ছবি: আজকের পত্রিকা

তিনি আরও বলেন, লাউয়াছড়া বনের পাশে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি থাকায় বনের জমির সীমানা নির্ধারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এটি করা সম্ভব হলে দখল সব জমি উদ্ধার করতে সহজ হবে।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান জরিপ করার জন্য আমরা জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসে চিঠি পাঠিয়েছি। কিছুদিন আগে আবার চিঠির উত্তরের জন্য রিভিউ পাঠিয়েছি। তবে তাদের কাছ থেকে এখনো কোনো উত্তর আসেনি। বনের জায়গা জরিপ করে সীমানা নির্ধারণ করা হলে দখলকৃত জমি উদ্ধার করা সহজ হবে। অনেক সময় উদ্ধার অভিযানে গেলে ব্যক্তি মালিকানার জমি বলে কাগজ ধরিয়ে দেয়। আবার কেউ জায়গা নিয়ে মামলা চলছে বলে জানান।’

তবে সিলেট জোনাল সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা মো. এমরান হোসেন বলেন, ‘লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান পরিমাপের জন্য আমাদের সিলেট অফিসে কোনো চিঠি আসেনি। বন বিভাগ থেকে চিঠি হয়তো ঢাকা অফিসে পাঠানো হয়েছে। স্থানীয় একজন ব্যক্তি লাউয়াছড়া বনের জায়গা জরিপ করার জন্য আমাদের কাছে ২০২৩ সালে একটা চিঠি দিয়েছেন।’

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৬ সালে এই বনকে ‘জাতীয় উদ্যান’ হিসেবে ঘোষণা করে। আয়তনে ছোট হলেও এ বন দুর্লভ উদ্ভিদ এবং প্রাণীর এক জীবন্ত সংগ্রহশালা। লাউয়াছড়ার জাতীয় উদ্যানে ৪৬০ প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৪ প্রজাতির উভচর, ৬ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৪৬ প্রজাতির পাখি এবং ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত