স্বামী দেবধ্যানানন্দ
কুমারী তো সামান্য, সাধারণ বালিকামাত্র। তাকে আবার পূজার বেদিতে বসিয়ে পূজা করা কেন? আপাতদৃষ্টিতে কুমারী ও কুমারী পূজা সাধারণ-সামান্য মনে হলেও এ বিষয়ে শ্রীরামকৃষ্ণের অসাধারণ উপলব্ধি প্রসূত সহজ, সরল কথাটি আমাদের ভক্ত হৃদয়ে একবার মনন করা যাক। শ্রীরামকৃষ্ণ বলছেন, ‘সব স্ত্রীলোক ভগবতীর এক-একটি বিশেষ রূপ। শুদ্ধসত্ত্ব কুমারীতে ভগবতীর প্রকাশ বেশি। সে জন্য কুমারী পূজা করা হয়।’ প্রেমাস্পদ জগজ্জননীর প্রকাশ বেশি যে সত্তায়, সেটি ভক্তের পূজা ও উপাসনার শ্রেষ্ঠ প্রতিমা, এটা বলাই বাহুল্য। কুমারী পূজার বিশেষত্ব হলো, কাঠ, মাটি বা পাথরের প্রতিমা অথবা কোনো প্রতীকের সাহায্যে উপাসনা নয়। চেতন কুমারীতে চৈতন্যস্বরূপ ঈশ্বরের উপাসনা। অবশ্য, যথার্থ ভক্ত মৃণ্ময় প্রতিমাতেও ঈশ্বরের চিন্ময়স্বরূপ প্রত্যক্ষ করেন। ঈশ্বর বা ঈশ্বরীয় শক্তিকে মাতৃরূপে উপাসনা করা সনাতন অধ্যাত্ম সংস্কৃতির অনন্য বৈশিষ্ট্য।
কুমারী পূজার উৎস ও ক্রমবিকাশ বিষয়ে পুষ্টি ও আস্বাদ পেতে চান যাঁরা, তাঁদের জন্য বেদ-পুরাণ-তন্ত্রের কিছু তথ্য-ব্যঞ্জন নাহয় পরিবেশন করা যাক। বেদের তৈত্তিরীয় আরণ্যকে দেবীকে কুমারী নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে, ‘কাত্যায়নায় বিদ্মহে কন্যাকুমারী ধীমহি তন্নো দুর্গি: প্রচোদয়াৎ।’ বৃহদ্ধর্ম পুরাণ আমাদের জানাচ্ছেন, দেবী অম্বিকা কুমারী কন্যারূপে দেবতাদের সামনে আবির্ভূতা হয়ে বেলগাছে দেবীর বোধন করতে নির্দেশ দেন। কুমারী পূজার মাহাত্ম্য কীর্তন করে তন্ত্র বলছেন, ‘কুমারী পূজা ছাড়া হোম প্রভৃতি কর্ম পরিপূর্ণ ফল দান করে না। কুমারী পূজা দ্বারা হোমাদি কর্মের কোটিগুণ ফল লাভ হয়। কুমারীকে একটি ফুল দান করলে সুমেরু পরিমাণ ফল লাভ হয়। কুমারীকে ভোজন করালে ত্রিলোকবাসী সবাইকে ভোজন করানো হয়।’ যেকোনো প্রসিদ্ধ শক্তিপীঠে দেবীকে কুমারীরূপে পূজা করা ওই সব পীঠস্থানের একটি বৈশিষ্ট্য। ১৯০১ সালে স্বামী বিবেকানন্দ বেলুড় মঠে প্রথম দুর্গাপূজায় অষ্টমী তিথিতে কুমারী পূজা প্রবর্তন করেন।
শাস্ত্রমতে, দুর্গাপূজার অঙ্গানুষ্ঠান হিসেবে সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী বা এর যেকোনো দিন কুমারী পূজা করা যেতে পারে। ১ থেকে ১৬ বছরের বালিকারা ঋতুমতী না হওয়া পর্যন্ত কুমারী পূজার যোগ্য। বয়সভেদে কুমারীর বিভিন্ন নাম, যেমন সন্ধ্যা (১ বছর), সরস্বতী (২ বছর), অম্বা (১৬ বছর)। কুমারীকে বস্ত্রালংকারে সুসজ্জিত করে, বিধিমতো নির্দিষ্ট আসনে বসিয়ে পাদ্য, অর্ঘ্য, ধূপ, দীপ, গন্ধ, পুষ্প, নৈবেদ্য ইত্যাদি ১৬টি উপচারে বাহ্য পূজা করা হয়। আবার হৃদয়ে ধ্যানের মাধ্যমে মানস পূজাও করা হয়। কুমারীর সেই ধ্যান মন্ত্রটি অনুধ্যান করা যাক, ‘যিনি ত্রিনয়নী, চন্দ্রশোভিত যাঁর মস্তক এবং দেহকান্তি তপ্ত কাঞ্চনতুল্য, যিনি নানাবিধ অলংকার বিভূষিতা, রক্তবস্ত্র ও রক্তমাল্য পরিহিতা এবং রক্তচন্দনাদি দ্বারা চর্চিত যাঁর দেহ, যাঁর বাম ও দক্ষিণ হস্তদ্বয় যথাক্রমে বর ও অভয় প্রদানের জন্য প্রসারিত, সেই পদ্মাসীনা কুমারীকে ধ্যান করি।’
ভক্তের বিশ্বাস জগজ্জননী তাঁদের প্রার্থনা মঞ্জুর করেন এবং তাঁদের কাঙ্ক্ষিত ফল প্রদান করেন। তবে কুমারী পূজা তথা ঈশ্বরীয় মাতৃ পূজার শাস্ত্র বর্ণিত বা তন্ত্রোল্লিখিত ফলের ব্যাপারে যথার্থ ভক্তের আগ্রহ নেই। তাঁরা জানেন, ঈশ্বরের মাতৃরূপের পূজার মাধ্যমে রামপ্রসাদ, কমলাকান্ত, শ্রীরামকৃষ্ণ, স্বামী বিবেকানন্দের মতো মহৎ ব্যক্তিত্ব তৈরি হয়েছেন। তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে অনেক উন্নত ও আদর্শ ব্যক্তিত্ব তৈরি হয়েছেন এবং ভবিষ্যতেও হবেন—এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। তাঁদের অসাধারণ ব্যক্তিত্ব ও অমিত আধ্যাত্মিক সম্পদের কাছে শাস্ত্রোল্লিখিত ফল নিতান্তই তুচ্ছ বলে মনে করেন যথার্থ ভক্তরা। পূজা মানে দেনা-পাওনা নয়, ভালোবাসা। যথার্থ ভক্ত তাই কিছু পাওয়ার জন্য নয়, ঈশ্বরকে ভালোবাসেন বলেই পূজা করেন।
সাধক ভক্তরা পূজাকে দিন বা তিথি বিশেষে সীমিত না রেখে এর অন্তর্নিহিত ভাবকে নিত্য মনন, দৈনন্দিন ব্যবহার ও কর্মে তার প্রয়োগের ব্যাপারে যত্নশীল হয়ে থাকেন। তাঁদের কাছে শ্রীশংকরাচার্য বিরচিত ‘সৌন্দর্য লহরী’র সেই শ্লোকটি বেশ আদরণীয়, ‘মা, আমার কথামাত্র তোমার জপ হোক, অঙ্গুলি চালনামাত্রই তোমার পূজার মুদ্রা হোক, আমার চলামাত্র তোমার প্রদক্ষিণ হোক, আমার ভোজনাদি ক্রিয়া তোমার আহুতি হোক, আমার শয়ন হোক তোমাকে ষাষ্টাঙ্গে প্রণাম, আমার নিখিলশক্তি সংযোজিত সুখ আত্মসমর্পণ হোক। আমার কার্যমাত্র হোক তোমার পূজা।’
কুমারী পূজায় আদর্শ ও মূল্যবোধের বিষয়টি কী? ‘কুমারী’ সমগ্র নারী জাতির ও মাতৃভাবের প্রতিভূ। মাতৃভাব মানে কোনো কোমলতা, দুর্বলতা নয়; অন্যের কষ্টকে অনুভব করার শক্তি ও তদনুরূপ ব্যবহার, যিনি মাতৃভাবরূপ আদর্শ অনুশীলন বা লালন করবেন, তিনি সমাজে অন্যের ব্যথায় ব্যথিত হবেন, বিভিন্ন মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও সহানুভূতিশীল হবেন। তাঁর সমন্বয় দৃষ্টি থাকবে এবং সমাজের সবার সঙ্গে তিনি প্রীতিপূর্ণ আচরণ করবেন, যেমনটা পরিবারের মা ভিন্ন ভিন্ন মত-রুচি-প্রকৃতির সন্তানদের সঙ্গে করে থাকেন। শরীরগত মাতৃত্বে নারীরই শুধু অধিকার থাকলেও আধ্যাত্মিক মাতৃত্বে নারী-পুরুষনির্বিশেষে সবার অধিকার রয়েছে। যখন কোনো প্রতিষ্ঠানে বা সমাজে কারও ব্যক্তিত্বে ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবার প্রতি সহানুভূতি ও সমদৃষ্টির মনোভাব ফুটে ওঠে, তিনি মাতৃ ভাবাপন্ন ব্যক্তি বলে সমাদৃত হন। কুমারী পূজা বা কুমারীকে সম্মান জানানো মানে সমগ্র নারী জাতিকে যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা প্রদান এবং উল্লিখিত মাতৃভাবের বিকাশের প্রয়াস। শৈশব থেকে এই পূজার অন্তর্নিহিত মূল্যবোধের চর্চার মাধ্যমে ব্যক্তিজীবনকে যেমন পবিত্র ও উন্নত করা যায়, তেমনি সমাজজীবনে নারী ও শিশুর প্রতি ‘সহিংসতা ও ব্যভিচার’ নামক সামাজিক ব্যাধিও দূর করা যেতে পারে। এর সঙ্গে নারী-পুরুষনির্বিশেষে
সবার জীবনে মাতৃভাব বিকাশ এবং সমাজের সবার সঙ্গে প্রীতিপূর্ণ সহাবস্থানের মাধ্যমে সামাজিক উন্নয়নকেও এগিয়ে নেওয়া যেতে পারে।
লেখক: স্বামী দেবধ্যানানন্দ, রামকৃষ্ণ মঠ, ঢাকা
কুমারী তো সামান্য, সাধারণ বালিকামাত্র। তাকে আবার পূজার বেদিতে বসিয়ে পূজা করা কেন? আপাতদৃষ্টিতে কুমারী ও কুমারী পূজা সাধারণ-সামান্য মনে হলেও এ বিষয়ে শ্রীরামকৃষ্ণের অসাধারণ উপলব্ধি প্রসূত সহজ, সরল কথাটি আমাদের ভক্ত হৃদয়ে একবার মনন করা যাক। শ্রীরামকৃষ্ণ বলছেন, ‘সব স্ত্রীলোক ভগবতীর এক-একটি বিশেষ রূপ। শুদ্ধসত্ত্ব কুমারীতে ভগবতীর প্রকাশ বেশি। সে জন্য কুমারী পূজা করা হয়।’ প্রেমাস্পদ জগজ্জননীর প্রকাশ বেশি যে সত্তায়, সেটি ভক্তের পূজা ও উপাসনার শ্রেষ্ঠ প্রতিমা, এটা বলাই বাহুল্য। কুমারী পূজার বিশেষত্ব হলো, কাঠ, মাটি বা পাথরের প্রতিমা অথবা কোনো প্রতীকের সাহায্যে উপাসনা নয়। চেতন কুমারীতে চৈতন্যস্বরূপ ঈশ্বরের উপাসনা। অবশ্য, যথার্থ ভক্ত মৃণ্ময় প্রতিমাতেও ঈশ্বরের চিন্ময়স্বরূপ প্রত্যক্ষ করেন। ঈশ্বর বা ঈশ্বরীয় শক্তিকে মাতৃরূপে উপাসনা করা সনাতন অধ্যাত্ম সংস্কৃতির অনন্য বৈশিষ্ট্য।
কুমারী পূজার উৎস ও ক্রমবিকাশ বিষয়ে পুষ্টি ও আস্বাদ পেতে চান যাঁরা, তাঁদের জন্য বেদ-পুরাণ-তন্ত্রের কিছু তথ্য-ব্যঞ্জন নাহয় পরিবেশন করা যাক। বেদের তৈত্তিরীয় আরণ্যকে দেবীকে কুমারী নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে, ‘কাত্যায়নায় বিদ্মহে কন্যাকুমারী ধীমহি তন্নো দুর্গি: প্রচোদয়াৎ।’ বৃহদ্ধর্ম পুরাণ আমাদের জানাচ্ছেন, দেবী অম্বিকা কুমারী কন্যারূপে দেবতাদের সামনে আবির্ভূতা হয়ে বেলগাছে দেবীর বোধন করতে নির্দেশ দেন। কুমারী পূজার মাহাত্ম্য কীর্তন করে তন্ত্র বলছেন, ‘কুমারী পূজা ছাড়া হোম প্রভৃতি কর্ম পরিপূর্ণ ফল দান করে না। কুমারী পূজা দ্বারা হোমাদি কর্মের কোটিগুণ ফল লাভ হয়। কুমারীকে একটি ফুল দান করলে সুমেরু পরিমাণ ফল লাভ হয়। কুমারীকে ভোজন করালে ত্রিলোকবাসী সবাইকে ভোজন করানো হয়।’ যেকোনো প্রসিদ্ধ শক্তিপীঠে দেবীকে কুমারীরূপে পূজা করা ওই সব পীঠস্থানের একটি বৈশিষ্ট্য। ১৯০১ সালে স্বামী বিবেকানন্দ বেলুড় মঠে প্রথম দুর্গাপূজায় অষ্টমী তিথিতে কুমারী পূজা প্রবর্তন করেন।
শাস্ত্রমতে, দুর্গাপূজার অঙ্গানুষ্ঠান হিসেবে সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী বা এর যেকোনো দিন কুমারী পূজা করা যেতে পারে। ১ থেকে ১৬ বছরের বালিকারা ঋতুমতী না হওয়া পর্যন্ত কুমারী পূজার যোগ্য। বয়সভেদে কুমারীর বিভিন্ন নাম, যেমন সন্ধ্যা (১ বছর), সরস্বতী (২ বছর), অম্বা (১৬ বছর)। কুমারীকে বস্ত্রালংকারে সুসজ্জিত করে, বিধিমতো নির্দিষ্ট আসনে বসিয়ে পাদ্য, অর্ঘ্য, ধূপ, দীপ, গন্ধ, পুষ্প, নৈবেদ্য ইত্যাদি ১৬টি উপচারে বাহ্য পূজা করা হয়। আবার হৃদয়ে ধ্যানের মাধ্যমে মানস পূজাও করা হয়। কুমারীর সেই ধ্যান মন্ত্রটি অনুধ্যান করা যাক, ‘যিনি ত্রিনয়নী, চন্দ্রশোভিত যাঁর মস্তক এবং দেহকান্তি তপ্ত কাঞ্চনতুল্য, যিনি নানাবিধ অলংকার বিভূষিতা, রক্তবস্ত্র ও রক্তমাল্য পরিহিতা এবং রক্তচন্দনাদি দ্বারা চর্চিত যাঁর দেহ, যাঁর বাম ও দক্ষিণ হস্তদ্বয় যথাক্রমে বর ও অভয় প্রদানের জন্য প্রসারিত, সেই পদ্মাসীনা কুমারীকে ধ্যান করি।’
ভক্তের বিশ্বাস জগজ্জননী তাঁদের প্রার্থনা মঞ্জুর করেন এবং তাঁদের কাঙ্ক্ষিত ফল প্রদান করেন। তবে কুমারী পূজা তথা ঈশ্বরীয় মাতৃ পূজার শাস্ত্র বর্ণিত বা তন্ত্রোল্লিখিত ফলের ব্যাপারে যথার্থ ভক্তের আগ্রহ নেই। তাঁরা জানেন, ঈশ্বরের মাতৃরূপের পূজার মাধ্যমে রামপ্রসাদ, কমলাকান্ত, শ্রীরামকৃষ্ণ, স্বামী বিবেকানন্দের মতো মহৎ ব্যক্তিত্ব তৈরি হয়েছেন। তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে অনেক উন্নত ও আদর্শ ব্যক্তিত্ব তৈরি হয়েছেন এবং ভবিষ্যতেও হবেন—এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। তাঁদের অসাধারণ ব্যক্তিত্ব ও অমিত আধ্যাত্মিক সম্পদের কাছে শাস্ত্রোল্লিখিত ফল নিতান্তই তুচ্ছ বলে মনে করেন যথার্থ ভক্তরা। পূজা মানে দেনা-পাওনা নয়, ভালোবাসা। যথার্থ ভক্ত তাই কিছু পাওয়ার জন্য নয়, ঈশ্বরকে ভালোবাসেন বলেই পূজা করেন।
সাধক ভক্তরা পূজাকে দিন বা তিথি বিশেষে সীমিত না রেখে এর অন্তর্নিহিত ভাবকে নিত্য মনন, দৈনন্দিন ব্যবহার ও কর্মে তার প্রয়োগের ব্যাপারে যত্নশীল হয়ে থাকেন। তাঁদের কাছে শ্রীশংকরাচার্য বিরচিত ‘সৌন্দর্য লহরী’র সেই শ্লোকটি বেশ আদরণীয়, ‘মা, আমার কথামাত্র তোমার জপ হোক, অঙ্গুলি চালনামাত্রই তোমার পূজার মুদ্রা হোক, আমার চলামাত্র তোমার প্রদক্ষিণ হোক, আমার ভোজনাদি ক্রিয়া তোমার আহুতি হোক, আমার শয়ন হোক তোমাকে ষাষ্টাঙ্গে প্রণাম, আমার নিখিলশক্তি সংযোজিত সুখ আত্মসমর্পণ হোক। আমার কার্যমাত্র হোক তোমার পূজা।’
কুমারী পূজায় আদর্শ ও মূল্যবোধের বিষয়টি কী? ‘কুমারী’ সমগ্র নারী জাতির ও মাতৃভাবের প্রতিভূ। মাতৃভাব মানে কোনো কোমলতা, দুর্বলতা নয়; অন্যের কষ্টকে অনুভব করার শক্তি ও তদনুরূপ ব্যবহার, যিনি মাতৃভাবরূপ আদর্শ অনুশীলন বা লালন করবেন, তিনি সমাজে অন্যের ব্যথায় ব্যথিত হবেন, বিভিন্ন মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও সহানুভূতিশীল হবেন। তাঁর সমন্বয় দৃষ্টি থাকবে এবং সমাজের সবার সঙ্গে তিনি প্রীতিপূর্ণ আচরণ করবেন, যেমনটা পরিবারের মা ভিন্ন ভিন্ন মত-রুচি-প্রকৃতির সন্তানদের সঙ্গে করে থাকেন। শরীরগত মাতৃত্বে নারীরই শুধু অধিকার থাকলেও আধ্যাত্মিক মাতৃত্বে নারী-পুরুষনির্বিশেষে সবার অধিকার রয়েছে। যখন কোনো প্রতিষ্ঠানে বা সমাজে কারও ব্যক্তিত্বে ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবার প্রতি সহানুভূতি ও সমদৃষ্টির মনোভাব ফুটে ওঠে, তিনি মাতৃ ভাবাপন্ন ব্যক্তি বলে সমাদৃত হন। কুমারী পূজা বা কুমারীকে সম্মান জানানো মানে সমগ্র নারী জাতিকে যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা প্রদান এবং উল্লিখিত মাতৃভাবের বিকাশের প্রয়াস। শৈশব থেকে এই পূজার অন্তর্নিহিত মূল্যবোধের চর্চার মাধ্যমে ব্যক্তিজীবনকে যেমন পবিত্র ও উন্নত করা যায়, তেমনি সমাজজীবনে নারী ও শিশুর প্রতি ‘সহিংসতা ও ব্যভিচার’ নামক সামাজিক ব্যাধিও দূর করা যেতে পারে। এর সঙ্গে নারী-পুরুষনির্বিশেষে
সবার জীবনে মাতৃভাব বিকাশ এবং সমাজের সবার সঙ্গে প্রীতিপূর্ণ সহাবস্থানের মাধ্যমে সামাজিক উন্নয়নকেও এগিয়ে নেওয়া যেতে পারে।
লেখক: স্বামী দেবধ্যানানন্দ, রামকৃষ্ণ মঠ, ঢাকা
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরলেন। সেদিন অপরাহ্ণে রেসকোর্সে অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণটি আমি শুনেছিলাম—১৭ মিনিটের। ভাষণে একটি জায়গায় তিনি বলেছিলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে,
২৬ মার্চ ২০২৪১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার একটি সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মানে বৈষম্যের অবসান। সমাজতন্ত্র মানে ন্যায্যতা। সমাজতন্ত্র মানে সবার শিক্ষা, চিকিৎসা, মাথাগোঁজার ঠাঁই, কাজের সুযোগ। সমাজতন্ত্র মানে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ, প্রয়োজন অনুয
২৬ মার্চ ২০২৪স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার চালিকা শক্তি হিসেবে চারটি মৌলনীতি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। আজ ৫২ বছর পর দেখছি, এই মৌলনীতিগুলোর প্রতিটির সূচক এত নিচে নেমে গেছে যে, বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতি বলে এখন আর কিছু নেই। জাতীয়তা দুই ভাগে বি
২৬ মার্চ ২০২৪বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা যেতে পারে, রাষ্ট্র হিসেবে নবীন, কিন্তু এর সভ্যতা সুপ্রাচীন। নদীবেষ্টিত গাঙেয় উপত্যকায় পলিবাহিত উর্বর ভূমি যেমন উপচে পড়া শস্যসম্ভারে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি নদীর ভাঙনের খেলায় রাতারাতি বিলুপ্ত হয়েছে বহু জনপদ। এরপরও সভ্যতার নানা চিহ্ন এখানে খুঁজে পাওয়া যায় এবং বাঙালিত্বের বৈশিষ
২৬ মার্চ ২০২৪