পাভেল পার্থ
শৈশবে জেনেছিলাম, দুনিয়ার দুর্গতি নাশ করেন বলে তাঁর নাম দুর্গা। তিনি নাকি পরমা প্রকৃতি ও সৃষ্টির আদি কারণ। পরে কত-কী জেনেছি! দুর্গম নামের অসুরকে বধ করার জন্য তিনি নাম পান দুর্গা। ‘দ’ মানে দৈত্য বিনাশকারী, ‘উ-কার’ বিঘ্ননাশকারী, ‘রেফ’ রোগনাশকারী, ‘গ’ পাপনাশকারী এবং ‘অ-কার’ শত্রু নাশকারী। বলা হয়, যিনি দৈত্য, বিঘ্ন, রোগ, পাপ ও শত্রু নাশ করেন, তিনিই দুর্গা।
দুনিয়ার এক মহাপ্রাচীন গ্রন্থ ‘ঋগ্বেদে’র দেবী সূক্ত, দেবীপুরাণ, কালিকাপুরাণ, চণ্ডী, মৎস্যপুরাণ, মার্কণ্ডেয় পুরাণ, মহাভারত ও দেবী ভাগবতে দুর্গার মুদ্রিত আলাপ আছে। তবে মৌখিক বয়ানে দুর্গা বা দুর্গার মতো সহস্র কৃত্য, রূপ ভঙ্গিমা ও আলাপ ছড়িয়ে আছে দুনিয়াময়। মান্দি বা গারোদের সাংসারেক ধর্মবিশ্বাসীদের কাছে বাগবা-বরম্বির চিপাংফাকসা থেকে মাতৃ দুনিয়ার জন্ম। মধুপুর শালবনের স্কুথং (মান্দি দার্শনিক) জনিক নকরেক বলতেন, এই বাগবা মানে মহামায়া মানে দুর্গা। সাঁওতালসহ কিছু ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী জাতি হুদুড় দুর্গা পরবে মূলত মহিষাসুরের কৃত্য পালন করে এবং দাসাই নৃত্যগীত পরিবেশন করে। বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা কি ইন্দোনেশিয়া—দুর্গা ছড়িয়ে আছেন নানারূপে, নানা ভূগোলে।
কোন দুর্গা নিম্নবর্গ আর কোন দুর্গা অধিপতি, কে কার দুর্গার ইতিহাস ছিনতাই করেছে—এমন তর্কও জারি আছে। জাপানের দুর্গা জুনত্যই কান্নন নামে অভিহিত। সুমেরীয় সভ্যতায় সিংহবাহিনী দেবী ইনান্না আছেন। দুর্গাপূজা ধর্মীয় ও সমাজজীবনে একটা প্রভাববলয় তৈরি করলেও এ নিয়ে বাংলাদেশে খুব বেশি বহুপক্ষীয় গবেষণা ও ক্রিটিক্যাল তত্ত্ব চিন্তার আলাপচারিতা নেই।
ষড়্ঋতুর বাংলাদেশ আজ কত ঋতুর দেশ—এটি এক দীর্ঘ তর্কের তল। অঞ্চল, ধর্মীয় গোষ্ঠী ও জাতিভেদে ঋতুভিত্তিক কৃত্য-উৎসবগুলো ভিন্ন ভিন্ন। প্রকৃতি জানান দেয় ঋতুর আবির্ভাব, প্রস্থান ও সন্ধিক্ষণ। প্রকৃতিতে তিতাজাতীয় শাকের উপস্থিতি জানান দেয়, চৈত্র মাস শেষ হয়ে যাচ্ছে, বৈশাখ সমাগত। কোকিলের ডাক বসন্তের নির্দেশনা। তেমনি শরতের প্রতীক কাশফুল। একটা লম্বা সময় ধরে কাশফুল, নীল আকাশে সাদা মেঘ আর ঢাকের আওয়াজ ‘শারদীয় দুর্গাপূজার’ এক প্রায় প্রতিষ্ঠিত ইমেজ তৈরি করেছে। দুর্গার জন্ম হয় না, তিনি আবির্ভূত হন। বাংলা অঞ্চলে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষে শারদীয়া ও চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষে বাসন্তী পরবে তিনি দুইবার আবির্ভূত হন।
‘দুর্গাপূজা’ বলে বাংলাদেশে প্রচলিত পরবটি মূলত শারদীয় উৎসব। আজ প্রকৃতি বিপর্যস্ত, আবহাওয়া বিপন্ন, জলবায়ু রক্তাক্ত। শরতে মেঘের ভেলা কি কাশফুলের আগমন না ঘটলেও দুর্গাপূজার আয়োজন হচ্ছে। জলবায়ু-বিপর্যস্ত এ সময়ে সেই ‘শারদীয়া’ আওয়াজ এখন প্রকৃতিতে বিরল। এমনকি আজ এই নয়া উদারবাদী করপোরেট দুনিয়ায় দুর্গাপূজার প্রকৃতিঘনিষ্ঠ আয়োজন বহু ‘বিশ্বাসী আয়োজক’দের হন্যে করে দেয়। এটি কেবল টাকা দিয়ে আলোক-প্যান্ডেলসজ্জা বা বিস্তর খানাপিনার বিষয় নয়। এখানে বহু শস্য ফসলাদি লাগে, বহু স্থানের মাটি লাগে, প্রবহমান ধারার জল লাগে, পত্র-পুষ্পাদি লাগে। মেদবহুল এই পণ্য সময়ে অর্থ, ক্ষমতা আর বাহাদুরি দিয়ে সব কি কেনা যায়—যদি প্রকৃতিতেই এসব প্রাণসত্তা না থাকে, হারিয়ে যায় বা আমরা যদি এসব বিষয়ে অবগত না থাকি?
দুর্গাপূজার নবপত্রিকা আমার বহুল আগ্রহের জায়গা। অনেকে বলেন, ‘কলাবউ’। দুর্গার ডানে শাড়ি পরানো এই কলাবউ অন্য প্রতিমার জৌলুশে অনেকটাই আড়াল হয়ে যান। নবপত্রিকা কৃত্যের জন্য পত্র-বিটপ-মূলসহ দশটি উদ্ভিদ প্রজাতির দরকার। কলাগাছ, বনকচু, হলুদ, জয়ন্তী, বেল, ডালিম, অশোক, মানকচু, আমন মৌসুমের ধানগাছ ও সাদা অপরাজিতা। পূজার আয়োজনে আমন মৌসুমের ধান, যব, মুগ, মাষকলাই, তিল বা সাদা সরিষা এই পঞ্চ শস্য দরকার হয়। দূর্বা, তুলসী, বেলপাতা, আমপাতা, হরীতকীসহ বহু ফুল প্রয়োজন হয়। জলাভূমি ছিনতাই হওয়া সময়ে ১০৮টি পদ্মফুল জোগাড় করা কি সহজ কথা? এ ছাড়া মধু, ঘি, সরিষার তেল, গোমূত্র, দুধসহ বহু উপচার-উপকরণ দরকার হয়। সব পত্রপুষ্প সংগ্রহের আবার দারুণ সব আচার আছে। ফল ধরেছে এমন গাছ থেকেই আম্রপল্লব সংগ্রহ হয়। এমনকি দুর্গা প্রতিমা গড়তে রাজবাড়ী, চার রাস্তার মোড়, কৃষিজমি, বেশ্যালয়, নদীর তীর ও ইঁদুরের গর্তের মাটি একত্র মেশানো হয়। অনেকে একে এক শ্রেণিগত ঐক্য হিসেবে বিবৃত করলেও, এটি বরং বাস্তুতন্ত্রের বৈচিত্র্য ও ভৌগোলিক প্রতিবেশ ভিন্নতাকে সম্মিলন করে।
মার্কণ্ডেয় পুরাণমতে, দেবতাদের তেজ থেকে আবির্ভূত হন দশভুজা দুর্গা। মহাদেবের তেজে মুখ, যমের তেজে চুল, বিষ্ণুর বাহু, চন্দ্রের স্তন, ইন্দ্রের কটিদেশ, বরুণের জঙ্ঘা ও ঊরু, পৃথিবীর নিতম্ব, ব্রহ্মার পদযুগল, সূর্যের পায়ের আঙুল, বসুগণের তেজে হাতের আঙুল, কুবেরের তেজে নাক, প্রজাপতির তেজে দাঁত, অগ্নির তেজে ত্রিনয়ন, সন্ধ্যার তেজে ভ্রু, বায়ুর তেজে কান। সিংহবাহিনী হলেও দুর্গার বাহন হাতি, পালকি, ঘোড়া, নৌকা। সিংহ নাকি দুর্গার তেজ ও ক্রোধের সমন্বিত রূপ প্রতীক। দেবী দুর্গার মর্ত্যে আগমন ও কৈলাসে ফেরার বাহন নির্ধারিত তিথি ও নক্ষত্র বিচার করে। রবি ও সোমবার আগমনে বাহন হয় হাতি, শনি-মঙ্গলবারে ঘোড়া, বুধে নৌকা এবং বৃহস্পতি ও শুক্রে পালকি। দুর্গাপূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ, ঈশান, বায়ু, অগ্নি, নৈঋত, ঊর্ধ্ব ও অধঃ এই দশ দিক বা প্রহরণ ধারণ করেন। কৈলাস থেকে মর্ত্যে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে দুর্গার এই বাহন
তথ্য মূলত একধরনের পূর্বাভাস পঞ্জিকা। হাতিতে আগমন ও ফেরা সুজলা-সুফলা বসুন্ধরার নির্দেশনা। নৌকায় আগমন মানে শস্য ও ধনসম্পদ নিয়ে আসা, কিন্তু নৌকায় গমন বন্যা ও ক্ষয়ক্ষতি নির্দেশ করে। ঘোড়া ও পালকিতে যাতায়াত মহামারি, ফসলের ক্ষয়ক্ষতি ও যুদ্ধ অস্থিরতার ইঙ্গিত জানান দেয়। আজ জলবায়ু-দুর্গত সময়ে কতভাবে আমরা দুর্যোগের পূর্বাভাস জানতে চাই। বহুভাবে প্রমাণিত হচ্ছে, লোকায়ত পূর্বাভাস পঞ্জিকা ও প্রকৃতির নির্দেশনা দুর্যোগঝুঁকি মোকাবিলা ও সংকট সামালে অধিক উপযোগী।
দুর্গাপূজার নানা কৃত্য ও আচার-সম্পর্কিত সব প্রাণ প্রজাতি, মাটি, জল, শস্য-ফসল, বাহন সহজভাবে প্রাণ-প্রকৃতির এক জটিল সম্পর্ককে উপস্থিত করে। এসব প্রাণ প্রজাতি আজ দুনিয়াব্যাপী বিপন্ন ও বিষণ্ন। এক দুর্গাপূজা আয়োজনের ভেতর দিয়ে বাস্তুতন্ত্রের এই সুরক্ষা আর কত দিন চলবে? যদি না আমরা সোচ্চার হই, প্রাণ-প্রকৃতির আওয়াজ আগলে না দাঁড়াই। কাঠামোগত ধর্মের ময়দান ছেড়ে এই পরিবেশ-ইঙ্গিতের ভাষ্য ও ভাষা আমাদের পাঠ করা জরুরি।
পাভেল পার্থ, গবেষক ও লেখক
শৈশবে জেনেছিলাম, দুনিয়ার দুর্গতি নাশ করেন বলে তাঁর নাম দুর্গা। তিনি নাকি পরমা প্রকৃতি ও সৃষ্টির আদি কারণ। পরে কত-কী জেনেছি! দুর্গম নামের অসুরকে বধ করার জন্য তিনি নাম পান দুর্গা। ‘দ’ মানে দৈত্য বিনাশকারী, ‘উ-কার’ বিঘ্ননাশকারী, ‘রেফ’ রোগনাশকারী, ‘গ’ পাপনাশকারী এবং ‘অ-কার’ শত্রু নাশকারী। বলা হয়, যিনি দৈত্য, বিঘ্ন, রোগ, পাপ ও শত্রু নাশ করেন, তিনিই দুর্গা।
দুনিয়ার এক মহাপ্রাচীন গ্রন্থ ‘ঋগ্বেদে’র দেবী সূক্ত, দেবীপুরাণ, কালিকাপুরাণ, চণ্ডী, মৎস্যপুরাণ, মার্কণ্ডেয় পুরাণ, মহাভারত ও দেবী ভাগবতে দুর্গার মুদ্রিত আলাপ আছে। তবে মৌখিক বয়ানে দুর্গা বা দুর্গার মতো সহস্র কৃত্য, রূপ ভঙ্গিমা ও আলাপ ছড়িয়ে আছে দুনিয়াময়। মান্দি বা গারোদের সাংসারেক ধর্মবিশ্বাসীদের কাছে বাগবা-বরম্বির চিপাংফাকসা থেকে মাতৃ দুনিয়ার জন্ম। মধুপুর শালবনের স্কুথং (মান্দি দার্শনিক) জনিক নকরেক বলতেন, এই বাগবা মানে মহামায়া মানে দুর্গা। সাঁওতালসহ কিছু ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী জাতি হুদুড় দুর্গা পরবে মূলত মহিষাসুরের কৃত্য পালন করে এবং দাসাই নৃত্যগীত পরিবেশন করে। বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা কি ইন্দোনেশিয়া—দুর্গা ছড়িয়ে আছেন নানারূপে, নানা ভূগোলে।
কোন দুর্গা নিম্নবর্গ আর কোন দুর্গা অধিপতি, কে কার দুর্গার ইতিহাস ছিনতাই করেছে—এমন তর্কও জারি আছে। জাপানের দুর্গা জুনত্যই কান্নন নামে অভিহিত। সুমেরীয় সভ্যতায় সিংহবাহিনী দেবী ইনান্না আছেন। দুর্গাপূজা ধর্মীয় ও সমাজজীবনে একটা প্রভাববলয় তৈরি করলেও এ নিয়ে বাংলাদেশে খুব বেশি বহুপক্ষীয় গবেষণা ও ক্রিটিক্যাল তত্ত্ব চিন্তার আলাপচারিতা নেই।
ষড়্ঋতুর বাংলাদেশ আজ কত ঋতুর দেশ—এটি এক দীর্ঘ তর্কের তল। অঞ্চল, ধর্মীয় গোষ্ঠী ও জাতিভেদে ঋতুভিত্তিক কৃত্য-উৎসবগুলো ভিন্ন ভিন্ন। প্রকৃতি জানান দেয় ঋতুর আবির্ভাব, প্রস্থান ও সন্ধিক্ষণ। প্রকৃতিতে তিতাজাতীয় শাকের উপস্থিতি জানান দেয়, চৈত্র মাস শেষ হয়ে যাচ্ছে, বৈশাখ সমাগত। কোকিলের ডাক বসন্তের নির্দেশনা। তেমনি শরতের প্রতীক কাশফুল। একটা লম্বা সময় ধরে কাশফুল, নীল আকাশে সাদা মেঘ আর ঢাকের আওয়াজ ‘শারদীয় দুর্গাপূজার’ এক প্রায় প্রতিষ্ঠিত ইমেজ তৈরি করেছে। দুর্গার জন্ম হয় না, তিনি আবির্ভূত হন। বাংলা অঞ্চলে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষে শারদীয়া ও চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষে বাসন্তী পরবে তিনি দুইবার আবির্ভূত হন।
‘দুর্গাপূজা’ বলে বাংলাদেশে প্রচলিত পরবটি মূলত শারদীয় উৎসব। আজ প্রকৃতি বিপর্যস্ত, আবহাওয়া বিপন্ন, জলবায়ু রক্তাক্ত। শরতে মেঘের ভেলা কি কাশফুলের আগমন না ঘটলেও দুর্গাপূজার আয়োজন হচ্ছে। জলবায়ু-বিপর্যস্ত এ সময়ে সেই ‘শারদীয়া’ আওয়াজ এখন প্রকৃতিতে বিরল। এমনকি আজ এই নয়া উদারবাদী করপোরেট দুনিয়ায় দুর্গাপূজার প্রকৃতিঘনিষ্ঠ আয়োজন বহু ‘বিশ্বাসী আয়োজক’দের হন্যে করে দেয়। এটি কেবল টাকা দিয়ে আলোক-প্যান্ডেলসজ্জা বা বিস্তর খানাপিনার বিষয় নয়। এখানে বহু শস্য ফসলাদি লাগে, বহু স্থানের মাটি লাগে, প্রবহমান ধারার জল লাগে, পত্র-পুষ্পাদি লাগে। মেদবহুল এই পণ্য সময়ে অর্থ, ক্ষমতা আর বাহাদুরি দিয়ে সব কি কেনা যায়—যদি প্রকৃতিতেই এসব প্রাণসত্তা না থাকে, হারিয়ে যায় বা আমরা যদি এসব বিষয়ে অবগত না থাকি?
দুর্গাপূজার নবপত্রিকা আমার বহুল আগ্রহের জায়গা। অনেকে বলেন, ‘কলাবউ’। দুর্গার ডানে শাড়ি পরানো এই কলাবউ অন্য প্রতিমার জৌলুশে অনেকটাই আড়াল হয়ে যান। নবপত্রিকা কৃত্যের জন্য পত্র-বিটপ-মূলসহ দশটি উদ্ভিদ প্রজাতির দরকার। কলাগাছ, বনকচু, হলুদ, জয়ন্তী, বেল, ডালিম, অশোক, মানকচু, আমন মৌসুমের ধানগাছ ও সাদা অপরাজিতা। পূজার আয়োজনে আমন মৌসুমের ধান, যব, মুগ, মাষকলাই, তিল বা সাদা সরিষা এই পঞ্চ শস্য দরকার হয়। দূর্বা, তুলসী, বেলপাতা, আমপাতা, হরীতকীসহ বহু ফুল প্রয়োজন হয়। জলাভূমি ছিনতাই হওয়া সময়ে ১০৮টি পদ্মফুল জোগাড় করা কি সহজ কথা? এ ছাড়া মধু, ঘি, সরিষার তেল, গোমূত্র, দুধসহ বহু উপচার-উপকরণ দরকার হয়। সব পত্রপুষ্প সংগ্রহের আবার দারুণ সব আচার আছে। ফল ধরেছে এমন গাছ থেকেই আম্রপল্লব সংগ্রহ হয়। এমনকি দুর্গা প্রতিমা গড়তে রাজবাড়ী, চার রাস্তার মোড়, কৃষিজমি, বেশ্যালয়, নদীর তীর ও ইঁদুরের গর্তের মাটি একত্র মেশানো হয়। অনেকে একে এক শ্রেণিগত ঐক্য হিসেবে বিবৃত করলেও, এটি বরং বাস্তুতন্ত্রের বৈচিত্র্য ও ভৌগোলিক প্রতিবেশ ভিন্নতাকে সম্মিলন করে।
মার্কণ্ডেয় পুরাণমতে, দেবতাদের তেজ থেকে আবির্ভূত হন দশভুজা দুর্গা। মহাদেবের তেজে মুখ, যমের তেজে চুল, বিষ্ণুর বাহু, চন্দ্রের স্তন, ইন্দ্রের কটিদেশ, বরুণের জঙ্ঘা ও ঊরু, পৃথিবীর নিতম্ব, ব্রহ্মার পদযুগল, সূর্যের পায়ের আঙুল, বসুগণের তেজে হাতের আঙুল, কুবেরের তেজে নাক, প্রজাপতির তেজে দাঁত, অগ্নির তেজে ত্রিনয়ন, সন্ধ্যার তেজে ভ্রু, বায়ুর তেজে কান। সিংহবাহিনী হলেও দুর্গার বাহন হাতি, পালকি, ঘোড়া, নৌকা। সিংহ নাকি দুর্গার তেজ ও ক্রোধের সমন্বিত রূপ প্রতীক। দেবী দুর্গার মর্ত্যে আগমন ও কৈলাসে ফেরার বাহন নির্ধারিত তিথি ও নক্ষত্র বিচার করে। রবি ও সোমবার আগমনে বাহন হয় হাতি, শনি-মঙ্গলবারে ঘোড়া, বুধে নৌকা এবং বৃহস্পতি ও শুক্রে পালকি। দুর্গাপূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ, ঈশান, বায়ু, অগ্নি, নৈঋত, ঊর্ধ্ব ও অধঃ এই দশ দিক বা প্রহরণ ধারণ করেন। কৈলাস থেকে মর্ত্যে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে দুর্গার এই বাহন
তথ্য মূলত একধরনের পূর্বাভাস পঞ্জিকা। হাতিতে আগমন ও ফেরা সুজলা-সুফলা বসুন্ধরার নির্দেশনা। নৌকায় আগমন মানে শস্য ও ধনসম্পদ নিয়ে আসা, কিন্তু নৌকায় গমন বন্যা ও ক্ষয়ক্ষতি নির্দেশ করে। ঘোড়া ও পালকিতে যাতায়াত মহামারি, ফসলের ক্ষয়ক্ষতি ও যুদ্ধ অস্থিরতার ইঙ্গিত জানান দেয়। আজ জলবায়ু-দুর্গত সময়ে কতভাবে আমরা দুর্যোগের পূর্বাভাস জানতে চাই। বহুভাবে প্রমাণিত হচ্ছে, লোকায়ত পূর্বাভাস পঞ্জিকা ও প্রকৃতির নির্দেশনা দুর্যোগঝুঁকি মোকাবিলা ও সংকট সামালে অধিক উপযোগী।
দুর্গাপূজার নানা কৃত্য ও আচার-সম্পর্কিত সব প্রাণ প্রজাতি, মাটি, জল, শস্য-ফসল, বাহন সহজভাবে প্রাণ-প্রকৃতির এক জটিল সম্পর্ককে উপস্থিত করে। এসব প্রাণ প্রজাতি আজ দুনিয়াব্যাপী বিপন্ন ও বিষণ্ন। এক দুর্গাপূজা আয়োজনের ভেতর দিয়ে বাস্তুতন্ত্রের এই সুরক্ষা আর কত দিন চলবে? যদি না আমরা সোচ্চার হই, প্রাণ-প্রকৃতির আওয়াজ আগলে না দাঁড়াই। কাঠামোগত ধর্মের ময়দান ছেড়ে এই পরিবেশ-ইঙ্গিতের ভাষ্য ও ভাষা আমাদের পাঠ করা জরুরি।
পাভেল পার্থ, গবেষক ও লেখক
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরলেন। সেদিন অপরাহ্ণে রেসকোর্সে অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণটি আমি শুনেছিলাম—১৭ মিনিটের। ভাষণে একটি জায়গায় তিনি বলেছিলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে,
২৬ মার্চ ২০২৪১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার একটি সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মানে বৈষম্যের অবসান। সমাজতন্ত্র মানে ন্যায্যতা। সমাজতন্ত্র মানে সবার শিক্ষা, চিকিৎসা, মাথাগোঁজার ঠাঁই, কাজের সুযোগ। সমাজতন্ত্র মানে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ, প্রয়োজন অনুয
২৬ মার্চ ২০২৪স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার চালিকা শক্তি হিসেবে চারটি মৌলনীতি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। আজ ৫২ বছর পর দেখছি, এই মৌলনীতিগুলোর প্রতিটির সূচক এত নিচে নেমে গেছে যে, বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতি বলে এখন আর কিছু নেই। জাতীয়তা দুই ভাগে বি
২৬ মার্চ ২০২৪বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা যেতে পারে, রাষ্ট্র হিসেবে নবীন, কিন্তু এর সভ্যতা সুপ্রাচীন। নদীবেষ্টিত গাঙেয় উপত্যকায় পলিবাহিত উর্বর ভূমি যেমন উপচে পড়া শস্যসম্ভারে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি নদীর ভাঙনের খেলায় রাতারাতি বিলুপ্ত হয়েছে বহু জনপদ। এরপরও সভ্যতার নানা চিহ্ন এখানে খুঁজে পাওয়া যায় এবং বাঙালিত্বের বৈশিষ
২৬ মার্চ ২০২৪