করছাড় কমানোর কোনো বিকল্প নেই: এনবিআর চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮: ৫৪
Thumbnail image
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন এনবিআরের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান । ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশের প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন ক্ষেত্রে করছাড় দেওয়া রয়েছে। তবে রাজস্ব বৃদ্ধি ও করছাড় যৌক্তিকীকরণ করতে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে কিছু করছাড় প্রত্যাহারের চিন্তা করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ইতিমধ্যে কিছু বাস্তবায়নও হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থার চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান।

আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত কার্যালয়ে ভ্যাট দিবস ও সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন এনবিআর চেয়ারম্যান। এ সময় এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বলেন, ‘করছাড় কমানোর কোনো বিকল্প নেই। করছাড় যেটা দিয়েছি, সেটা জনস্বার্থেই দিয়েছি। এর মধ্যে আমরা অতিরিক্ত ছাড়ও দিয়েছি। দেশের প্রয়োজনে, রাষ্ট্রের স্বার্থে দিয়েছি।’

আবদুর রহমান বলেন, ‘যখনই পরিস্থিতির উন্নতি হবে, তখনই আমাদের চেষ্টা করতে হবে এবং আমরা সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি যে কীভাবে করের ছাড়গুলো যৌক্তিকীকরণ করা যায়। আমরা কাজ শুরু করেছি। আপনার দেখতে পাবেন। কয়েকটি এসআরও বাতিল করা হয়েছে, আর কিছু প্রক্রিয়ায় রয়েছে।’

করছাড়ের সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে উল্লেখ করে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘তা না পারলে আমাদের রাজস্ব বাড়ানো সম্ভব নয়। সুতরাং, আমাদের উন্নয়ন সহযোগীরা (আইএমএফ) যা বলছেন, আমাদের ভালোর জন্যই বলছেন। এটা আমরা সময়মতো অবশ্যই করব। শুরু করেছি, এমন নয় যে বসে আছি।’

তিনি বলেন, ‘ভ্যাট প্রদানের ক্ষেত্রে যেহেতু ব্যাপক জনসম্পৃক্ততা আছে, আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা করে সবার সহযোগিতা নিয়ে আমরা সেটা করব।’

ভ্যাট প্রশাসনের প্রত্যেক কর্মকর্তাকে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বলেন, ‘করদাতাগণকে ব্যবসায় সহযোগিতামূলক মনোভাব বজায় রেখে কর আদায় করতে হবে, যাতে আমাদের ব্যবসায়ীগণ কোনোভাবেই মনে না করেন যে তাঁদের ওপর জুলুম করা হচ্ছে।’

তিনি যোগ করেন, ‘আমরা তাঁদের (ব্যবসায়ী) নিশ্চয়তা দিতে চাই, আপনাদের আইনানুগ করটাই দিতে হবে। এর বেশি কিছু না। আপনারা যদি নিয়মিত কর দেন, তাহলেই দেশটা এগোবে। আমরা দেশকে যে জায়গায় নিতে চাই, সেই জায়গায় পৌঁছাতে পারব।’

করছাড়ের জন্য রাজস্ব আদায় কম হয়েছে বলে জানান এনবিআর চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘জনস্বার্থে আমাদের অনেক করছাড় দিতে হয়েছে। বিশেষ করে চিনি, সয়াবিন, চাল, আলু, ডিম—এগুলোতে যে করছাড় দিয়েছি, এর কারণে গত কয়েক মাসে কর আহরণ কম হয়েছে।’

আবদুর রহমান খান বলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রে, যেগুলোতে আমরা তাৎক্ষণিক অ্যাকশন নিতে পারি, সরাসরি তুলে দিতে (করছাড়) পারি, সেগুলো নিয়ে আমাদের কাজ শুরু হয়েছে। নীতি সিদ্ধান্তের অনেক বিষয় আছে, সেগুলো আলাপ-আলোচনার বিষয় আছে।’

করছাড় প্রত্যাহার বা নীতি বাস্তবায়ন জোর করে সম্ভব নয় বলে মনে করেন এনবিআর চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘১৯৫১ সালে ভ্যাট আইন হওয়ার পরে ২০১২ সালে আমরা নতুন আইন করলাম। কিন্তু, সেটা বাস্তবায়ন করা যায়নি। ব্যবসায়ীদের আস্থায় এনেই বাস্তবায়ন করতে হবে। জোর করে চাপিয়ে দেব না। ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করেই ঠিক করব।’

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, সিঙ্গেল রেটে ভ্যাট দিতে পারলে ভালো হয়, এতে লিকেজ (ফাঁকি) অনেক কমে যায়। এটা পরিচালনা করা অনেক সহজ হয়। অবশ্যই চেষ্টা করব। যে জায়গাগুলোতে ছাড় দেওয়া আছে, সেগুলো আমরা ধীরে ধীরে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করব। এখনই নয়, যে মনে হলো আর তুলে নিলাম। যাদের জন্য এটা করা, তাদের সঙ্গে আলোচনা করেই করব।

করছাড় দিয়েও নিত্যপণ্যের দাম কমানো সম্ভব হচ্ছে না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা যেসব পণ্যের করছাড় দিয়েছি, সেগুলো তাৎক্ষণিক প্রচার করেছি। আপনারাই প্রচার করেছেন। জনগণ এটা জানে না, তা ঠিক নয়। আবার যে রকম সুফল আমরা আশা করেছিলাম, সে রকম পাওয়া যায়নি। কিছু কিছু জায়গায় পাওয়া গেছে।’

তিনি বলেন, ‘ডিমের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার পর আমদানি যখন হলো, তখন ১৮০ টাকা ডজনে উঠে যাওয়া দাম সেটা এখন ১৪০ টাকায় নেমেছে। চিনির ক্ষেত্রেও দাম কমেছে। সয়াবিনের ক্ষেত্রে আমরা ব্যাপক ছাড় দিয়েছি, তবে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের কথা হলো—আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে গেছে অনেক, সে কারণে তাঁরা আগের দামে পণ্য সরবরাহ করছেন না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে যে দাম ঠিক করে দেওয়া হয়েছে, সেটা কম বলছেন তাঁরা। এটা নিয়ে কাজ হচ্ছে। অচিরেই দেখতে পাবেন।’

নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার দীর্ঘদিন সমন্বয় না করাকে দায়ী করেছেন এনবিআরের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান। তিনি বলেন, তার যে প্রভাব হঠাৎ করে পড়ল, ৮০ টাকার ডলার ১২০ টাকা হয়ে গেল, যেগুলো আমদানি পণ্য, সেগুলো ব্যাপক ঊর্ধ্বগতি একবারে হয়ে গেছে। আগে থেকেই যদি সমন্বয় করতাম, তাহলে অল্প অল্প করে দাম বাড়ত, জনসাধারণের এত ভোগান্তি হতো না। এই জায়গা বড় একটা ভুল হয়ে গেছে। অতীতের কথা বলে লাভ নেই। ভবিষ্যতে সেই চেষ্টা করা হবে।

নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখতে সবাইকে সচেতন হতে হবে উল্লেখ করে আবদুর রহমান বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় যে সিন্ডিকেট এবং ব্যবসা-বাণিজ্য যে হার্ডল আছে, সেগুলো দূর করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ভোক্তা অধিদপ্তর কাজ করছে। সাংবাদিক বন্ধুরাও কাজ করছে। এমনকি আমাদের জনগণেরও সেখানে আওয়াজ তোলার সময় এসেছে।’

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১০ ডিসেম্বর ভ্যাট দিবস এবং ১০-১৫ ডিসেম্বর ভ্যাট সপ্তাহ উদ্‌যাপন করা হবে। ভ্যাট ব্যবস্থা প্রবর্তনের পর থেকে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এবারের ভ্যাট দিবসের প্রতিপাদ্য ‘ভ্যাট দেব জনে জনে, অংশ নেব উন্নয়নে’।

এনবিআর বলছে, এই স্লোগানে মূলত ভ্যাট প্রদানে জনগণের ব্যাপকভিত্তিক অংশগ্রহণ ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তাঁদের অবদানের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। সর্বস্তরের জনগণের ভ্যাট প্রদান ও দেশের উন্নয়নে অংশগ্রহণ এই স্লোগানের মূল উপজীব্য। স্লোগানের মাধ্যমে এও প্রকাশ পায় যে ভ্যাট একটি ব্যাপকভিত্তিক কর ব্যবস্থা।

এনবিআরের প্রত্যাশা, এসব প্রচারণামূলক কার্যক্রম দেশে কর-সংস্কৃতি নির্মাণে যথেষ্ট সহায়ক হবে, যা উত্তরোত্তর ভ্যাট আদায় বৃদ্ধিতে অবদান রাখবে। এর ধারাবাহিকতায় সম্পন্ন হবে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন। একটি সুখী, সুন্দর সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে বাংলাদেশ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত