Ajker Patrika

গ্রামীণ সড়ক উন্নয়নে সুকুক বন্ডে তোলা হবে ৩ হাজার কোটি টাকা

  • ৭ বছর মেয়াদি বন্ডের বার্ষিক ভাড়ার হার ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ।
  • বিনিয়োগকারীদের ১০ হাজার ৯২৫ কোটি টাকার বিড দাখিল।
  • শরিয়াহভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ও বিমা কোম্পানির জন্য বরাদ্দ ৭০ শতাংশ।
  • কনভেনশনাল ব্যাংকের ইসলামিক শাখার জন্য ১০ শতাংশ।
  • ব্যক্তিপর্যায়ের বিনিয়োগকারী ও স্কিমের বরাদ্দ ২০ শতাংশ।
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
গ্রামীণ সড়ক উন্নয়নে সুকুক বন্ডে তোলা হবে ৩ হাজার কোটি টাকা

গ্রামীণ সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন এবং গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণের জন্য সরকার ৩ হাজার কোটি টাকা তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে, যা সম্পন্ন করা হচ্ছে ইসলামি শরিয়াহভিত্তিক আর্থিক ইনস্ট্রুমেন্ট ‘সুকুক বন্ড’-এর মাধ্যমে। এই উদ্যোগের আওতায় ৫ম বাংলাদেশ সরকার বিনিয়োগ সুকুক ইস্যুর নিলাম সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সুকুক হলো ইসলামি শরিয়াহভিত্তিক বন্ড, যা সুদমুক্ত বিনিয়োগের একটি মাধ্যম। এই বন্ডের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করে সরকার দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। বাংলাদেশে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বিনিয়োগের বিকল্প ক্ষেত্র তৈরি করাই সুকুক ইস্যুর অন্যতম উদ্দেশ্য।

বাংলাদেশ ব্যাংকের শরিয়াহ অ্যাডভাইজরি কমিটির অনুমোদনের পর সুকুক বন্ড ইস্যুর প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ৭ বছর মেয়াদি এ বন্ডের বার্ষিক ভাড়ার হার নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক, প্রচলিত ব্যাংকের ইসলামিক শাখা ও ব্যক্তিপর্যায়ের বিনিয়োগকারীরা মোট ১০ হাজার ৯২৫ কোটি টাকার বিড দাখিল করেছে, যা ইস্যুর তুলনায় ৩ দশমিক ৬৪ গুণ বেশি। এতে বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেছে এবং অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে আনুপাতিক হারে সুকুক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

সুকুক বন্ড: বিনিয়োগের নতুন সম্ভাবনা

বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যে চারটি সুকুক বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে মোট ১৯ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। এই অর্থ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যবহার করা হয়েছে। ইসলামি ব্যাংকিং ও শরিয়াহভিত্তিক অর্থনীতির প্রসারে সুকুক একটি কার্যকর মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

সুকুকের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের সুবিধা হলো এটি ইসলামি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উদ্বৃত্ত তারল্যকে উৎপাদনশীল খাতে ব্যবহার করার সুযোগ দেয়। পাশাপাশি ব্যক্তিপর্যায়ের বিনিয়োগকারীদের জন্যও শরিয়াহভিত্তিক বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করে। বিশেষত, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হিসেবে বাংলাদেশে শরিয়াহভিত্তিক বিনিয়োগ পদ্ধতি জনপ্রিয় হচ্ছে, যা এ ধরনের বন্ডের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়িয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ-বিষয়ক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সুকুকের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, কৃষি ও অকৃষি পণ্য পরিবহন সহজতর করা, পরিবহন ব্যয় হ্রাস এবং স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মসংস্থান সৃষ্টি—এসব লক্ষ্য অর্জনে ব্যবহার করা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অনেক মানুষ তাঁদের ধর্মীয় মূল্যবোধকে গুরুত্ব দেন। ইসলামি সুকুক বন্ডের মাধ্যমে তাঁদের জন্য একটি নিরাপদ ও গ্রহণযোগ্য বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এই নতুন ভেঞ্চার বিনিয়োগের পরিসর আরও বিস্তৃত করবে এবং অর্থায়নের নতুন দ্বার উন্মোচন করবে। বিশেষ করে, ইসলামি বিনিয়োগের ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হওয়ায় দীর্ঘ মেয়াদে নতুন বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ও অংশগ্রহণ বাড়বে।’

সুকুক বিনিয়োগের কাঠামো ও বরাদ্দ

সুকুক বন্ডে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বিনিয়োগ বরাদ্দের নতুন কাঠামো নির্ধারণ করেছে সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষণা অনুযায়ী, শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বিমা কোম্পানির জন্য মোট বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৭০ শতাংশ। এ ছাড়া, কনভেনশনাল ব্যাংকের ইসলামিক শাখা ও উইন্ডোজের জন্য ১০ শতাংশ এবং ব্যক্তিপর্যায়ের বিনিয়োগকারী, প্রভিডেন্ট ফান্ড ও ডিপোজিট ইনস্যুরেন্স স্কিমের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২০ শতাংশ। তবে নির্ধারিত তিনটি শ্রেণিতে প্রয়োজনীয় বিড পাওয়া না গেলে অবশিষ্ট সুকুক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আনুপাতিক হারে বরাদ্দ দেওয়া হবে

বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য সুযোগ

সুকুক বন্ডে বিদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানও বিনিয়োগ করতে পারবে। অনিবাসী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে কার্যরত যেকোনো ব্যাংকে তাঁদের অনিবাসী বৈদেশিক মুদ্রা হিসাব (এনএফসিডি) বা অনিবাসী টাকা হিসাবের (এনআইটিএ) মাধ্যমে বিনিয়োগ করতে পারবেন। পাশাপাশি মুনাফা, বিক্রয়লব্ধ অর্থ ও মেয়াদপূর্তিতে মূলধন পুনরুদ্ধার বৈদেশিক মুদ্রায় প্রযোজ্য কর ও ফি কেটে পাঠানো যাবে।

গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব

গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে বাংলাদেশের ৮ বিভাগের ৫৮টি উপজেলায় ৮২টি সেতু নির্মাণ চলছে, যার মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ১৭ হাজার ৬৯৭ মিটার। সড়ক ও সেতু নির্মাণের এই প্রকল্প কৃষিপণ্য পরিবহন সহজতর করবে, ব্যয় কমাবে এবং কৃষকদের লাভ বাড়াবে। সুকুক বন্ডের মাধ্যমে সংগৃহীত ৩ হাজার কোটি টাকা এ খাতে ব্যয় করা হবে, যা অর্থনীতিতে দীর্ঘ মেয়াদে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, এই প্রকল্প গ্রামীণ যোগাযোগব্যবস্থায় নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে। সরকার বিকল্প অর্থায়নের উৎস খুঁজছে এবং সুকুক বন্ড শরিয়াহভিত্তিক বিনিয়োগের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত