প্রতিষ্ঠান ও জান-মালের নিরাপত্তায় সরকারের সহযোগিতা চায় বাজুস

আসন্ন ঈদ সামনে রেখে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে দেশের জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। এমন পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের জান-মালের নিরাপত্তা দিতে সরকারের আরও অধিকতর সহযোগিতা চায় বাজুস। একই সঙ্গে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সদস্যদের বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছে সংগঠনটি।

আজ শুক্রবার এই নিরাপত্তার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাজুস। রাজধানীর মগবাজারে বাজুসের নতুন কার্যালয়ে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন বাজুসের সহসভাপতি মো. রিপনুল হাসান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাজুসের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গুলজার আহমেদ, সহসভাপতি এম এ হাসান আজাদ, সহসভাপতি মাসুদুর রহমান, সহসভাপতি জয়নাল আবেদীন খোকন, সহসভাপতি সমিত ঘোষ অপু প্রমুখ।

রিপনুল হাসান বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও ব্যবসায়ীদের ওপর সরাসরি আক্রমণের ঘটনা বাড়ছে। পাশাপাশি জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের হত্যা, হত্যাচেষ্টা, অপহরণচেষ্টা আমাদের জান-মালের নিরাপত্তাহীনতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এমনকি বাসা-বাড়িতেও জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা পরিবার নিয়ে নিরাপদ বোধ করছেন না। এসব অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সময় হত্যাচেষ্টার ঘটনাও বাড়ছে।

তিনি বলেন, সর্বশেষ গত ২৬ মার্চ ভোর ৫টায় বাজুসের সহসভাপতি ও দেশের স্বনামধন্য জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান অলংকার নিকেতনের কর্ণধার এম এ হাসান আজাদের বাসায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে ও ছদ্মবেশে ২৫ থেকে ৩০ জনের একটি সংঘবদ্ধ ডাকাতদল হামলা চালায়। এ সময় তাঁর বাসায় ভাঙচুর ও লুটপাট করে। এমনকি এম এ হাসান আজাদকে অপহরণের চেষ্টা করে।

চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি বাজুসের কার্যনির্বাহী সদস্য মো. ওয়াহিদুজ্জামান সুজনের ওপর ও তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলার চেষ্টা হয়, যা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হয়।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত প্রায় ২৩টি জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে ১১টি, আশুলিয়ায় একটি, মুন্সিগঞ্জে একটি, খুলনায় চারটি, কুমিল্লায় একটি, পটুয়াখালীতে দুটি, ময়মনসিংহে একটি, সিলেটে একটি ও হবিগঞ্জে একটি প্রতিষ্ঠানে চুরি ও ডাকাতি সংঘটিত হয়।

আশুলিয়ার সাভারে ডাকাতির সময় ডাকাতদের গুলিতে একজন জুয়েলারি ব্যবসায়ী নিহত হন এবং বনশ্রীতে সোনা ছিনতাইয়ের ঘটনায় একজন জুয়েলারি ব্যবসায়ী গুরুতর আহত হন। বিগত এক বছরে এই চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় দেশের ২৩টি জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান প্রায় ৪৪ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে বাজুসের সহসভাপতি রিপনুল হাসান বলেন, এসব ঘটনায় জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিনাতিপাত করছেন। এ জন্য জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরকারের আলাদা দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সশস্ত্র প্রহরার পাশাপাশি রাজধানীসহ দেশের সকল জেলার জুয়েলারি মার্কেটে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদারের দাবি জানাচ্ছি।

এ ছাড়া জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই হওয়া অলংকার উদ্ধার এবং অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় ১৫ এপ্রিলের পর পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবে বাজুস।

এ ছাড়া অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা রোধে জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের মালিকদের প্রতি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা জোরদারের অনুরোধ করছে বাজুস। এক্ষেত্রে করণীয় বিষয়ে সংগঠনটি বলছে, নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন; প্রতিষ্ঠানের ভেতরে ও বাইরে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করা; সিকিউরিটি গার্ড মোতায়েন করা; নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিজ নিজ জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ নিশ্চিত করা; মার্কেটে অবস্থিত জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান সমূহের মালিকগণ মার্কেট কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে নিজ উদ্যোগে পালাক্রমে পাহারা নিশ্চিত করা; এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সোনা পরিবহনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনে পুলিশের সহায়তা গ্রহণ করা এবং অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনার সম্মুখীন হলে পুলিশ প্রশাসন ও বাজুসকে অবহিত করা। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সদস্যদের এসব পরামর্শ দিয়েছে বাজুস।