স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের (আইপিপি) কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনার নীতি থেকে সরে আসতে চায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আইপিপি বেশিরভাগ বিদ্যুৎ সরাসরি গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করবে। এ জন্য নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে।

আজ শনিবার (৩০ নভেম্বর) রাজধানীতে ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানি রূপান্তরে অভ্যন্তরীণ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান একথা জানান।

জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকার সব বিদ্যুৎ কিনবে— এই অবস্থান থেকে বের হয়ে আসব। মার্চেন্ট বিদ্যুৎ নীতি গ্রহণ করা হবে। বিনিয়োগকারী বিদ্যুৎ উৎপাদন করবেন এবং তারাই বিক্রির জন্য গ্রাহক ঠিক করবেন। কারণ সরকার স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের (আইপিপি) কাছ থেকে সরে আসতে চায়। আইপিপির ১০ থেকে ২০ শতাংশ বিদ্যুৎ কিনবে সরকার। কারণ আইপিপিকে সরকার আর টাকা দিতে পারছে না। এই নীতি থেকে সরে আসবে সরকার।’

ব্যয়বহুল জ্বালানি থেকে সরে সাশ্রয়ী নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গুরুত্ব না দেওয়ায় বিগত সরকার, ব্যাংক ও উদ্যোক্তাদের সমালোচনা করে এই উপদেষ্টা বলেন, ‘ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ৩ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির কত? বরং বেশিরভাগই অন্যান্য খাতের। অথচ ব্যাংকগুলো নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে ঋণ দিতে এগোয়নি। এই খাতে ব্যাংকের ঋণ দিতে আগ্রহ নেই বললে চলে। তাই নতুন নীতিতে এই খাতে অর্থায়নের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি সোলার স্থাপনের জায়গা ও সঞ্চালন লাইনে যুক্ত হওয়ার ব্যবস্থা সরকার করে দেবে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আন্তরিকভাবে নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসার চায়নি দাবি করে জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, নবায়নযোগ্য শক্তি ছাড়া দেশকে সামনে এগিয়ে নেয়ার কোনো বিকল্প নেই। নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের জন্য সরকার রেল, সড়কসহ বিভিন্ন খাতের অব্যবহৃত জমি ব্যবহার করবে। এজন্য শিগগিরই একটি নীতিমালা করা হবে।

রাজধানীর পল্টনে অর্থনীতি বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) মিলনায়তনে এ সেমিনার হয়। ইআরএফ, সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড পার্টিসিপেটরি রিসার্চ, কোস্টাল লাইভলিহুড অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল একশন নেটওয়ার্ক ( ক্লিন) ও বিডাব্লিউজিইডি যৌথভাবে এটি আয়োজন করে।

জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য সোলার স্থাপন করা যাবে না, আমাদের জায়গা নেই— এমনটা বলা হতো। এটি ভ্রান্ত ধারণা। বরং জোর করে মানুষের জমি নিয়ে ফেলে রাখা হয়েছে— এটা বন্ধ করতে চাচ্ছি। অব্যবহৃত জমি নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। তবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের ইক্যুইপমেন্ট আমদানির শুল্ক কমানো হবে না। স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প গড়ে তোলার জন্য সরকার এ খাতে শুল্ক রাখবে।’

নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে প্রয়োজনীয় জায়গার অভাব বলে জানান ফাওজুল কবীর খান। তিনি বলেন, ইকোনমিক জোন নির্মাণের নামে সাধারণ মানুষের অনেক জমি অধিগ্রহণ করলেও সেখানে কিছুই করা হয়নি। তাই কোনো কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হয়নি।

এছাড়া অর্থায়ন ও কারিগরি প্রযুক্তির অভাবকেও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের ক্ষেত্রে সমস্যা হিসেবে তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রকৃত সমস্যা কোথায়, সেটি চিহ্নিত করা দরকার। বর্তমান সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে রেল, সড়কসহ বিভিন্ন খাতের অব্যবহৃত জমি ব্যবহার করবে। আর আওয়ামী লীগ সরকার বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রয়োগ করে নতুন নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করার জন্য যেসব সম্মতিপত্র দিয়েছিল। সেগুলো এখন আর প্রযোজ্য হবে না।’

অনুষ্ঠানে সিপিডির গবেষণা পরিলাচক খন্দকার গোলদম মোয়াজ্জেম বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে অর্থায়ন সহজ করতে হবে বিশ্বব্যাপি ১৮ ধরনের ঋণ ইনস্ট্রুমেন্ট অনুসরন করা হয়। বাংলাদেশে শুধু মাত্র নন কনসেশনাল ঋণ দেওয়া হয়। ফাইন্যান্সিয়াল ইনষ্ট্রুমেন্ট বাড়াতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগ আসার পথ সুগম করতে হবে।

অনুষ্ঠানে মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড পার্টিসিপেটরি রিসার্চের চেয়ারপার্সন গৌরাঙ্গ নন্দী। তিনি সহজে অর্থায়নের জন্য একটি বিশেষ তহবিল গঠনের প্রস্তাব করেন। পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত বাড়তি বিদ্যুৎ সরকারের কাছে বিক্রির ব্যবস্থা করার সুপারিশ করেন তিনি।

ইআরএফের সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধার সভাপতিত্বে ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন দ্য সিটি ব্যাংকের চিফ ইকোনমিস্ট ও কান্ট্রি বিজনেস ম্যানেজার মো. আশানুর রহমান, ক্লিন-এর চীফ এক্সিকিউটিভ হাসান মেহেদী।