মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা
কৃষি খাত দেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তবে উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা রয়ে গেছে। প্রধান সমস্যা হলো কৃষিপণ্য সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের সীমাবদ্ধতা, যে কারণে প্রতিবছর প্রায় ৩০ শতাংশ পণ্য অপচয় হয়। এটি শুধু কৃষকদের ক্ষতি নয়, পুরো অর্থনীতির জন্যও ক্ষতিকর। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, যদি প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো প্রতিষ্ঠা করা যায়, তাহলে কৃষকেরা তাঁদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাবেন এবং কৃষি খাতের সম্ভাবনাকে সর্বোচ্চ মাত্রায় কাজে লাগানো সম্ভব হবে। সরকারের উচিত এই খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো এবং কার্যকর পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাতকরণের দক্ষতা উন্নত করা। এতে রপ্তানি আয় উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে এবং কৃষি খাত আরও শক্তিশালী হবে।
কৃষি খাত দেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তবে উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা রয়ে গেছে। প্রধান সমস্যা হলো কৃষিপণ্য সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের সীমাবদ্ধতা, যে কারণে প্রতিবছর প্রায় ৩০ শতাংশ পণ্য অপচয় হয়। এটি শুধু কৃষকদের ক্ষতি নয়, পুরো অর্থনীতির জন্যও ক্ষতিকর। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, যদি প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো প্রতিষ্ঠা করা যায়, তাহলে কৃষকেরা তাঁদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাবেন এবং কৃষি খাতের সম্ভাবনাকে সর্বোচ্চ মাত্রায় কাজে লাগানো সম্ভব হবে। সরকারের উচিত এই খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো এবং কার্যকর পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাতকরণের দক্ষতা উন্নত করা। এতে রপ্তানি আয় উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে এবং কৃষি খাত আরও শক্তিশালী হবে।
জাতিসংঘের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের জনসংখ্যা বর্তমানে ৮২০ কোটি এবং তা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এই ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কারণে বিশ্বজুড়ে খাদ্যপণ্যের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বৈশ্বিক কৃষিপণ্যের বাজারের আকার এরই মধ্যে ৪ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। অথচ এই বিশাল বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান এখনো অত্যন্ত ক্ষুদ্র। বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষিপণ্য রপ্তানি থেকে বছরে মাত্র ১ বিলিয়ন ডলার আয় করছে, যা বৈশ্বিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলারের বাজারের তুলনায় নগণ্য। তবে বাংলাদেশের কৃষি খাতে বিপুল সম্ভাবনা লুকিয়ে রয়েছে; যা কাজে লাগালে রপ্তানি আয় ৩ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা সম্ভব।
কীভাবে এই অর্জন সম্ভব জানতে চাইলে দেশে কৃষিপণ্যের অন্যতম প্রক্রিয়াজাতকারী শিল্প প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য বাংলাদেশে সহজলভ্য কাঁচামাল ও সস্তা শ্রম একটি বড় সুবিধা, যা রপ্তানি পণ্যের খরচ কমায়। তিনি মনে করেন, বিশ্বব্যাপী কৃষিপণ্যের বাড়তি চাহিদার সুযোগ নিতে সরকার যদি যথাযথ উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার এবং বিনিয়োগ বাড়াতে নীতিগত সহায়তা দেয়, তবে বাংলাদেশ বৈশ্বিক বাজারে আরও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠতে পারে। এর ফলে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হবে এবং গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নত হবে।
বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো; যেমন থাইল্যান্ড কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে। সেখানে এই খাত দেশের মোট জিডিপির ২৩ শতাংশ অবদান রাখে এবং তারা প্রতিবছর ৩৬ বিলিয়ন ডলার কৃষিপণ্য রপ্তানি করে। অন্যদিকে ভিয়েতনামের ৫ শতাংশ, চীনের ৩৮, ফিলিপাইনের ৩১, আমেরিকার ৭০, থাইল্যান্ডের ৮১ ও মালয়েশিয়ার ৮৪ শতাংশ কৃষি প্রক্রিয়াজাতের সঙ্গে জড়িত। এর বিপরীতে বাংলাদেশে কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্য খাতের অবদান জিডিপিতে মাত্র ১ দশমিক ৭ শতাংশ, যা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। আর এখানেই সম্ভাবনা দেখছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
এ বিষয়ে সরকার কী করছে জানতে চাইলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, কৃষি খাতের সম্ভাবনাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই রপ্তানি বাড়ানোর জন্য একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করছি, যা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে।
কৃষিসচিব আরও ব্যাখ্যা করে বলেন, বিশ্ববাজারকে দুই ভাগে বিভক্ত করা যেতে পারে—একটি হলো প্রবাসী বাংলাদেশিদের বাজার, যাঁরা বিভিন্ন দেশে বসবাস করেন এবং কর্মরত; অন্যটি হলো বিদেশিদের মূল বাজার। এই দুই ধরনের ভোক্তাদের চাহিদা নির্ধারণের জন্য মন্ত্রণালয় কান্ট্রি-ওয়াইজ গবেষণা পরিচালনা করছে। গবেষণার ফলাফলের ভিত্তিতে একটি নীতিমালা তৈরি করা হবে, যা অনুসরণ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশি কৃষিপণ্যের রপ্তানি কার্যক্রম আরও সুসংগঠিত ও কার্যকর করা সম্ভব হবে বলেও জানান তিনি।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, পোশাক খাত থেকে বাংলাদেশ বছরে ৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করলেও কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত পণ্যের রপ্তানি আয় এখনো ১ বিলিয়ন ডলারের নিচে। ভেরিফাইড মার্কেট রিসার্চের তথ্য অনুসারে, ২০২০ সালে বিশ্বে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের বাজার ছিল ১৪৩ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলার, যা ৬ দশমিক ৬ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধিতে ২০২৮ সাল নাগাদ ২৩৫ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। রপ্তানিকারকেরা জানিয়েছেন, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যে বেভারেজ, ডেইরি, মিট ও পোলট্রি, বেকারি, স্ন্যাকস এবং কনফেকশনারি পণ্য অন্তর্ভুক্ত, যেখানে সবচেয়ে বড় ক্রেতা যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের দেশগুলো এই বাজারের প্রায় ৪০ শতাংশ দখল করে আছে। এর থেকে আয়তনে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক ছোট নেদারল্যান্ডস কৃষিপণ্য রপ্তানি থেকে বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার আয় করছে। বাংলাদেশকেও এই বাজারে সাফল্য পেতে হলে সঠিক পরিকল্পনা ও কৌশল নিয়ে এগোতে হবে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এ বিষয়ে বলেন, বাংলাদেশ এখনো বিশ্ববাজারে সঠিকভাবে প্রবেশ করতে পারেনি। প্রবাসীদের মধ্যে সুগন্ধি চাল, মসলা, ড্রিংকস ও স্ন্যাকস বিক্রিতেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া কিংবা এশিয়ার দেশগুলোর স্থানীয় মানুষের কাছে এসব পণ্য পৌঁছায় না। এর প্রধান কারণ হলো বিদেশিরা শুধু নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত খাদ্য গ্রহণ করে। তারা জানতে চায়, উৎপাদনের সময় জমিতে জৈব সার বা কোন ধরনের সার ব্যবহার করা হয়েছে। এই শর্ত পূরণ না হওয়ায় বিদেশি বাজারে প্রবেশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি পরামর্শ দেন ফল, সবজি, চাল ও ডাল উৎপাদনে তাদের মানদণ্ড মেনে রপ্তানির উদ্যোগ নিতে। এতে কৃষি খাত সম্প্রসারিত হবে এবং কর্মসংস্থানসহ অর্থনীতিতে কৃষির অবদান উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে।
রুখবে অপচয় রোধ
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৪০ শতাংশ মানুষ কৃষি খাতে কাজ করলেও জিডিপিতে এ খাতের অবদান মাত্র ১২ শতাংশ এবং কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্য খাতের অবদান ১ দশমিক ৭ শতাংশ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রক্রিয়াকরণ ও সংরক্ষণের অভাবে দেশে প্রতিবছর মোট উৎপাদনের ৩০ শতাংশ ফসল নষ্ট হয়।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের হিসাবে, এই অপচয়ের আর্থিক ক্ষতি বছরে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা, যা গত ৫০ বছরে দুই থেকে আড়াই লাখ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। এটি দেশের চলমান জিডিপির সর্বোচ্চ ৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবু নোমান ফারুক আহম্মেদ বলেন, বিশ্বের অধিকাংশ দেশে ফসলের ক্ষতি ৫ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ, অথচ বাংলাদেশে তা ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। তিনি মনে করেন, কৃষিপণ্যের প্রক্রিয়াজাতকরণ বাড়ালে এই অপচয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনা সম্ভব। এ হার অন্তত ১০ শতাংশে নামানোর ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, রপ্তানি সহজ করতে পণ্যগুলোর জন্য ওয়ান-স্টপ সার্ভিস চালু এবং গ্লোবাল গ্যাপ সার্টিফিকেট দেওয়ার উদ্যোগ নিতে হবে। ফলে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রপ্তানির সম্ভাবনাও বহুগুণে বাড়বে।
প্রয়োজন নীতি সহায়তা
২০২৬ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হতে হলে রপ্তানি আয় বৃদ্ধির বিকল্প নেই। তাই রপ্তানি বাড়াতে তৈরি পোশাক খাতের মতো সরকারকে কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য রপ্তানির জন্য বিশেষ নগদ প্রণোদনা দেওয়ার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন রপ্তানিকারকেরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র্যাপিড) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক আজকের পত্রিকাকে বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হলে সব সেক্টরেই প্রণোদনা কমে যাবে। তাই বিকল্প হিসেবে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ার জন্য আলোচনা শুরু করতে হবে। এ ছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য লাইসেন্স পেতে প্রতিবন্ধকতা কমানো, চুক্তির নবায়ন সহজ করা, খাদ্যপণ্যের কারখানা বাড়ানোর জন্য নীতি সহায়তা ও ব্যাংকঋণ সহজ করা প্রয়োজন। রপ্তানি বাণিজ্য বাড়াতে দেশের দূতাবাসগুলোকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি রপ্তানি সম্ভাবনাময় দেশগুলোতে কান্ট্রি ব্র্যান্ডিংয়ে গুরুত্ব দেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
কৃষিপণ্য রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাপার সভাপতি ইকতাদুল হক জানান, পোশাক খাতের মতো রপ্তানিমুখী কৃষি প্রক্রিয়াজাত শিল্পে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস-সংযোগ দিতে হবে। পণ্য রপ্তানিতে বন্দরগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে হবে। বন্দরে সহজে পণ্য আনা-নেওয়া এবং খালাসে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। কৃষকদের জন্য স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা, কারখানার প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্ক শূন্য করা, পণ্য পরিবহনের জন্য পরিবহন ক্রয়ে শুল্ক না রাখা এবং পণ্য পরিবহন ভাড়ায় বিশেষ ভর্তুকির ব্যবস্থা নেওয়াও জরুরি।
বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের অবস্থান
বাংলাদেশের কৃষি ও কৃষিজাত পণ্যের রপ্তানি আয় ২০২০-২১ সালে ১০২ কোটি ৮০ লাখ ডলার থেকে বেড়ে ২০২১-২২ সালে ১১৬ কোটি ২২ লাখ ডলারে পৌঁছেছিল। তবে ২০২২-২৩ সালে ২৭% কমে আয় ৮৩ কোটি ডলারে নেমেছে।
রপ্তানির একই তথ্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকও। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত পণ্যের রপ্তানি আয় ৯৬৫ দশমিক ২০ মিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ১৫ দশমিক ৯% বেশি। শুকনা খাদ্য থেকে ২১৭ মিলিয়ন, সবজি ১১৩ মিলিয়ন, তামাক ১৮২ মিলিয়ন, ফুল ও ফল ২৯ মিলিয়ন, মসলা ৫৭ মিলিয়ন এবং অন্যান্য পণ্য থেকে ৩৬৭ মিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ ১৪৫টি দেশে প্রায় ৬৩ ধরনের মৌলিক কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি করছে। এই পণ্যের মধ্যে রয়েছে কাঁচা মরিচ, লাউ, কুমড়া, বেগুন, শিম, টমেটো, জুস ও ড্রিংকস, স্ন্যাকস, বিস্কুট, ক্যালিনারি, কনফেকশনারি, ফ্রোজেন ফুডসসহ প্রায় ৭০০ ধরনের কৃষিপণ্য।
দেশে প্রক্রিয়াজাত শিল্পের চালচিত্র
বাংলাদেশে প্রায় এক হাজার প্রতিষ্ঠান প্রক্রিয়াজাত খাদ্য উৎপাদনে জড়িত। এগুলোর মধ্যে ২৫০টি রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত। কৃষি খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প বাংলাদেশের মোট উৎপাদন খাতে ৮ শতাংশ অবদান রাখে, যা আরও বাড়ানো সম্ভব। ২০২৩-২৪ সালে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় একত্রে ৩৫টি এশীয় দেশে থেকে এসেছে ৭৩%; ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ায় রপ্তানি আয় যথাক্রমে ১১%, ৭%, ৫% ও ৩%। শীর্ষ রপ্তানি গন্তব্যগুলোর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, ভারত, যুক্তরাজ্য ও মালয়েশিয়া রয়েছে। স্কয়ার ফুডের সিনিয়র ব্র্যান্ড ম্যানেজার এস এম রিশাত তানভীর জানিয়েছেন, তাঁরা রপ্তানি আয় ১৫ থেকে ২০ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার পরিকল্পনা করেছে।
রপ্তানিতে কার অবদান কেমন
বাংলাদেশে রপ্তানি হওয়া পণ্যের ৬০% আয় এসেছে প্রাণ-আরএফএলের পণ্য থেকে, অর্থাৎ ১০০ কোটি ডলারের মধ্যে ৬০ কোটি ডলার এসেছে প্রাণ গ্রুপের পণ্য থেকে। রপ্তানিতে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে হবিগঞ্জ অ্যাগ্রো এবং তৃতীয় স্থানে স্কয়ার ফুড। অন্যান্য শীর্ষ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে কৃষাণ স্ন্যাকস, বাংলা মিলারস, ময়মনসিংহ অ্যাগ্রো এবং হিসমা ফুডস। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বড় ও ছোট কারখানাগুলো দেশীয় গবেষণা এবং ইনোভেশনের মাধ্যমে নতুন পণ্য রপ্তানি করলে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন বাড়বে এবং কৃষকেরা লাভবান হবেন।
দূর করতে হবে যত বাধা
কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি বাড়াতে ৫টি বাধা রয়েছে বলে দাবি বাপার। প্রথমত, সুগন্ধি চাল রপ্তানি বন্ধ, দ্বিতীয়ত, চুক্তিভিত্তিক উৎপাদিত পণ্য রপ্তানির জন্য নগদ সহায়তা-প্রণোদনা, তৃতীয়ত, সহায়তার হার কমে যাওয়া, চতুর্থত, কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি এবং পঞ্চমত, হালাল পণ্য রপ্তানির জন্য সনদ প্রদানের কর্তৃপক্ষের অভাব। বিএমইটির তথ্যমতে, বিশ্বে ১ কোটি ২৫ লাখ ২৪ হাজার ২৯৮ জন প্রবাসী আছেন এবং ২০০৪ থেকে আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত তাঁরা ২৬ হাজার ৯০৮ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এই প্রবাসীরা এবং বাকি ৮০০ কোটি মানুষের বাজারে প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য সরবরাহ চেইন বজায় রাখার স্বার্থে এসব বাধা দূর করা জরুরি।
নতুন যেসব পণ্যের রপ্তানি সম্ভাবনা
বাংলাদেশ কৃষিপণ্যের মূল্য সংযোজনের মাধ্যমে এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকায় নতুন পণ্য রপ্তানি করতে পারে; যেমন ক্যানিং সবজি, রেডি মিক্স সবজি, ফলের জ্যাম ও জেলি, ফ্রোজেন ফ্রুটস, পাউডার এবং বিভিন্ন শুকনা খাবার ও স্ন্যাকস। মাছ, দুগ্ধজাত পণ্য এবং ফ্রোজেন আইটেমও রপ্তানি করা সম্ভব। বোম্বে সুইটস অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড স্ন্যাকস রপ্তানির ৪০% অংশ দখল করেছে। প্রতিষ্ঠানটির জেনারেল ম্যানেজার (ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস অ্যান্ড করপোরেট অ্যাফেয়ার্স) খুরশীদ আহমেদ জানান, বিদেশে বাজার বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে এবং সরকারের সহায়তা পেলে রপ্তানি আয় দ্রুত বাড়বে।
কৃষি খাত দেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তবে উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা রয়ে গেছে। প্রধান সমস্যা হলো কৃষিপণ্য সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের সীমাবদ্ধতা, যে কারণে প্রতিবছর প্রায় ৩০ শতাংশ পণ্য অপচয় হয়। এটি শুধু কৃষকদের ক্ষতি নয়, পুরো অর্থনীতির জন্যও ক্ষতিকর। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, যদি প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো প্রতিষ্ঠা করা যায়, তাহলে কৃষকেরা তাঁদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাবেন এবং কৃষি খাতের সম্ভাবনাকে সর্বোচ্চ মাত্রায় কাজে লাগানো সম্ভব হবে। সরকারের উচিত এই খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো এবং কার্যকর পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাতকরণের দক্ষতা উন্নত করা। এতে রপ্তানি আয় উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে এবং কৃষি খাত আরও শক্তিশালী হবে।
কৃষি খাত দেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তবে উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা রয়ে গেছে। প্রধান সমস্যা হলো কৃষিপণ্য সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের সীমাবদ্ধতা, যে কারণে প্রতিবছর প্রায় ৩০ শতাংশ পণ্য অপচয় হয়। এটি শুধু কৃষকদের ক্ষতি নয়, পুরো অর্থনীতির জন্যও ক্ষতিকর। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, যদি প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো প্রতিষ্ঠা করা যায়, তাহলে কৃষকেরা তাঁদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাবেন এবং কৃষি খাতের সম্ভাবনাকে সর্বোচ্চ মাত্রায় কাজে লাগানো সম্ভব হবে। সরকারের উচিত এই খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো এবং কার্যকর পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাতকরণের দক্ষতা উন্নত করা। এতে রপ্তানি আয় উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে এবং কৃষি খাত আরও শক্তিশালী হবে।
জাতিসংঘের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের জনসংখ্যা বর্তমানে ৮২০ কোটি এবং তা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এই ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কারণে বিশ্বজুড়ে খাদ্যপণ্যের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বৈশ্বিক কৃষিপণ্যের বাজারের আকার এরই মধ্যে ৪ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। অথচ এই বিশাল বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান এখনো অত্যন্ত ক্ষুদ্র। বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষিপণ্য রপ্তানি থেকে বছরে মাত্র ১ বিলিয়ন ডলার আয় করছে, যা বৈশ্বিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলারের বাজারের তুলনায় নগণ্য। তবে বাংলাদেশের কৃষি খাতে বিপুল সম্ভাবনা লুকিয়ে রয়েছে; যা কাজে লাগালে রপ্তানি আয় ৩ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা সম্ভব।
কীভাবে এই অর্জন সম্ভব জানতে চাইলে দেশে কৃষিপণ্যের অন্যতম প্রক্রিয়াজাতকারী শিল্প প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য বাংলাদেশে সহজলভ্য কাঁচামাল ও সস্তা শ্রম একটি বড় সুবিধা, যা রপ্তানি পণ্যের খরচ কমায়। তিনি মনে করেন, বিশ্বব্যাপী কৃষিপণ্যের বাড়তি চাহিদার সুযোগ নিতে সরকার যদি যথাযথ উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার এবং বিনিয়োগ বাড়াতে নীতিগত সহায়তা দেয়, তবে বাংলাদেশ বৈশ্বিক বাজারে আরও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠতে পারে। এর ফলে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হবে এবং গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নত হবে।
বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো; যেমন থাইল্যান্ড কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে। সেখানে এই খাত দেশের মোট জিডিপির ২৩ শতাংশ অবদান রাখে এবং তারা প্রতিবছর ৩৬ বিলিয়ন ডলার কৃষিপণ্য রপ্তানি করে। অন্যদিকে ভিয়েতনামের ৫ শতাংশ, চীনের ৩৮, ফিলিপাইনের ৩১, আমেরিকার ৭০, থাইল্যান্ডের ৮১ ও মালয়েশিয়ার ৮৪ শতাংশ কৃষি প্রক্রিয়াজাতের সঙ্গে জড়িত। এর বিপরীতে বাংলাদেশে কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্য খাতের অবদান জিডিপিতে মাত্র ১ দশমিক ৭ শতাংশ, যা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। আর এখানেই সম্ভাবনা দেখছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
এ বিষয়ে সরকার কী করছে জানতে চাইলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, কৃষি খাতের সম্ভাবনাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই রপ্তানি বাড়ানোর জন্য একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করছি, যা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে।
কৃষিসচিব আরও ব্যাখ্যা করে বলেন, বিশ্ববাজারকে দুই ভাগে বিভক্ত করা যেতে পারে—একটি হলো প্রবাসী বাংলাদেশিদের বাজার, যাঁরা বিভিন্ন দেশে বসবাস করেন এবং কর্মরত; অন্যটি হলো বিদেশিদের মূল বাজার। এই দুই ধরনের ভোক্তাদের চাহিদা নির্ধারণের জন্য মন্ত্রণালয় কান্ট্রি-ওয়াইজ গবেষণা পরিচালনা করছে। গবেষণার ফলাফলের ভিত্তিতে একটি নীতিমালা তৈরি করা হবে, যা অনুসরণ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশি কৃষিপণ্যের রপ্তানি কার্যক্রম আরও সুসংগঠিত ও কার্যকর করা সম্ভব হবে বলেও জানান তিনি।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, পোশাক খাত থেকে বাংলাদেশ বছরে ৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করলেও কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত পণ্যের রপ্তানি আয় এখনো ১ বিলিয়ন ডলারের নিচে। ভেরিফাইড মার্কেট রিসার্চের তথ্য অনুসারে, ২০২০ সালে বিশ্বে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের বাজার ছিল ১৪৩ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলার, যা ৬ দশমিক ৬ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধিতে ২০২৮ সাল নাগাদ ২৩৫ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। রপ্তানিকারকেরা জানিয়েছেন, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যে বেভারেজ, ডেইরি, মিট ও পোলট্রি, বেকারি, স্ন্যাকস এবং কনফেকশনারি পণ্য অন্তর্ভুক্ত, যেখানে সবচেয়ে বড় ক্রেতা যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের দেশগুলো এই বাজারের প্রায় ৪০ শতাংশ দখল করে আছে। এর থেকে আয়তনে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক ছোট নেদারল্যান্ডস কৃষিপণ্য রপ্তানি থেকে বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার আয় করছে। বাংলাদেশকেও এই বাজারে সাফল্য পেতে হলে সঠিক পরিকল্পনা ও কৌশল নিয়ে এগোতে হবে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এ বিষয়ে বলেন, বাংলাদেশ এখনো বিশ্ববাজারে সঠিকভাবে প্রবেশ করতে পারেনি। প্রবাসীদের মধ্যে সুগন্ধি চাল, মসলা, ড্রিংকস ও স্ন্যাকস বিক্রিতেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া কিংবা এশিয়ার দেশগুলোর স্থানীয় মানুষের কাছে এসব পণ্য পৌঁছায় না। এর প্রধান কারণ হলো বিদেশিরা শুধু নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত খাদ্য গ্রহণ করে। তারা জানতে চায়, উৎপাদনের সময় জমিতে জৈব সার বা কোন ধরনের সার ব্যবহার করা হয়েছে। এই শর্ত পূরণ না হওয়ায় বিদেশি বাজারে প্রবেশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি পরামর্শ দেন ফল, সবজি, চাল ও ডাল উৎপাদনে তাদের মানদণ্ড মেনে রপ্তানির উদ্যোগ নিতে। এতে কৃষি খাত সম্প্রসারিত হবে এবং কর্মসংস্থানসহ অর্থনীতিতে কৃষির অবদান উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে।
রুখবে অপচয় রোধ
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৪০ শতাংশ মানুষ কৃষি খাতে কাজ করলেও জিডিপিতে এ খাতের অবদান মাত্র ১২ শতাংশ এবং কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্য খাতের অবদান ১ দশমিক ৭ শতাংশ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রক্রিয়াকরণ ও সংরক্ষণের অভাবে দেশে প্রতিবছর মোট উৎপাদনের ৩০ শতাংশ ফসল নষ্ট হয়।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের হিসাবে, এই অপচয়ের আর্থিক ক্ষতি বছরে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা, যা গত ৫০ বছরে দুই থেকে আড়াই লাখ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। এটি দেশের চলমান জিডিপির সর্বোচ্চ ৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবু নোমান ফারুক আহম্মেদ বলেন, বিশ্বের অধিকাংশ দেশে ফসলের ক্ষতি ৫ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ, অথচ বাংলাদেশে তা ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। তিনি মনে করেন, কৃষিপণ্যের প্রক্রিয়াজাতকরণ বাড়ালে এই অপচয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনা সম্ভব। এ হার অন্তত ১০ শতাংশে নামানোর ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, রপ্তানি সহজ করতে পণ্যগুলোর জন্য ওয়ান-স্টপ সার্ভিস চালু এবং গ্লোবাল গ্যাপ সার্টিফিকেট দেওয়ার উদ্যোগ নিতে হবে। ফলে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রপ্তানির সম্ভাবনাও বহুগুণে বাড়বে।
প্রয়োজন নীতি সহায়তা
২০২৬ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হতে হলে রপ্তানি আয় বৃদ্ধির বিকল্প নেই। তাই রপ্তানি বাড়াতে তৈরি পোশাক খাতের মতো সরকারকে কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য রপ্তানির জন্য বিশেষ নগদ প্রণোদনা দেওয়ার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন রপ্তানিকারকেরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র্যাপিড) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক আজকের পত্রিকাকে বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হলে সব সেক্টরেই প্রণোদনা কমে যাবে। তাই বিকল্প হিসেবে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ার জন্য আলোচনা শুরু করতে হবে। এ ছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য লাইসেন্স পেতে প্রতিবন্ধকতা কমানো, চুক্তির নবায়ন সহজ করা, খাদ্যপণ্যের কারখানা বাড়ানোর জন্য নীতি সহায়তা ও ব্যাংকঋণ সহজ করা প্রয়োজন। রপ্তানি বাণিজ্য বাড়াতে দেশের দূতাবাসগুলোকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি রপ্তানি সম্ভাবনাময় দেশগুলোতে কান্ট্রি ব্র্যান্ডিংয়ে গুরুত্ব দেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
কৃষিপণ্য রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাপার সভাপতি ইকতাদুল হক জানান, পোশাক খাতের মতো রপ্তানিমুখী কৃষি প্রক্রিয়াজাত শিল্পে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস-সংযোগ দিতে হবে। পণ্য রপ্তানিতে বন্দরগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে হবে। বন্দরে সহজে পণ্য আনা-নেওয়া এবং খালাসে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। কৃষকদের জন্য স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা, কারখানার প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্ক শূন্য করা, পণ্য পরিবহনের জন্য পরিবহন ক্রয়ে শুল্ক না রাখা এবং পণ্য পরিবহন ভাড়ায় বিশেষ ভর্তুকির ব্যবস্থা নেওয়াও জরুরি।
বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের অবস্থান
বাংলাদেশের কৃষি ও কৃষিজাত পণ্যের রপ্তানি আয় ২০২০-২১ সালে ১০২ কোটি ৮০ লাখ ডলার থেকে বেড়ে ২০২১-২২ সালে ১১৬ কোটি ২২ লাখ ডলারে পৌঁছেছিল। তবে ২০২২-২৩ সালে ২৭% কমে আয় ৮৩ কোটি ডলারে নেমেছে।
রপ্তানির একই তথ্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকও। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত পণ্যের রপ্তানি আয় ৯৬৫ দশমিক ২০ মিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ১৫ দশমিক ৯% বেশি। শুকনা খাদ্য থেকে ২১৭ মিলিয়ন, সবজি ১১৩ মিলিয়ন, তামাক ১৮২ মিলিয়ন, ফুল ও ফল ২৯ মিলিয়ন, মসলা ৫৭ মিলিয়ন এবং অন্যান্য পণ্য থেকে ৩৬৭ মিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ ১৪৫টি দেশে প্রায় ৬৩ ধরনের মৌলিক কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি করছে। এই পণ্যের মধ্যে রয়েছে কাঁচা মরিচ, লাউ, কুমড়া, বেগুন, শিম, টমেটো, জুস ও ড্রিংকস, স্ন্যাকস, বিস্কুট, ক্যালিনারি, কনফেকশনারি, ফ্রোজেন ফুডসসহ প্রায় ৭০০ ধরনের কৃষিপণ্য।
দেশে প্রক্রিয়াজাত শিল্পের চালচিত্র
বাংলাদেশে প্রায় এক হাজার প্রতিষ্ঠান প্রক্রিয়াজাত খাদ্য উৎপাদনে জড়িত। এগুলোর মধ্যে ২৫০টি রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত। কৃষি খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প বাংলাদেশের মোট উৎপাদন খাতে ৮ শতাংশ অবদান রাখে, যা আরও বাড়ানো সম্ভব। ২০২৩-২৪ সালে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় একত্রে ৩৫টি এশীয় দেশে থেকে এসেছে ৭৩%; ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ায় রপ্তানি আয় যথাক্রমে ১১%, ৭%, ৫% ও ৩%। শীর্ষ রপ্তানি গন্তব্যগুলোর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, ভারত, যুক্তরাজ্য ও মালয়েশিয়া রয়েছে। স্কয়ার ফুডের সিনিয়র ব্র্যান্ড ম্যানেজার এস এম রিশাত তানভীর জানিয়েছেন, তাঁরা রপ্তানি আয় ১৫ থেকে ২০ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার পরিকল্পনা করেছে।
রপ্তানিতে কার অবদান কেমন
বাংলাদেশে রপ্তানি হওয়া পণ্যের ৬০% আয় এসেছে প্রাণ-আরএফএলের পণ্য থেকে, অর্থাৎ ১০০ কোটি ডলারের মধ্যে ৬০ কোটি ডলার এসেছে প্রাণ গ্রুপের পণ্য থেকে। রপ্তানিতে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে হবিগঞ্জ অ্যাগ্রো এবং তৃতীয় স্থানে স্কয়ার ফুড। অন্যান্য শীর্ষ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে কৃষাণ স্ন্যাকস, বাংলা মিলারস, ময়মনসিংহ অ্যাগ্রো এবং হিসমা ফুডস। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বড় ও ছোট কারখানাগুলো দেশীয় গবেষণা এবং ইনোভেশনের মাধ্যমে নতুন পণ্য রপ্তানি করলে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন বাড়বে এবং কৃষকেরা লাভবান হবেন।
দূর করতে হবে যত বাধা
কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি বাড়াতে ৫টি বাধা রয়েছে বলে দাবি বাপার। প্রথমত, সুগন্ধি চাল রপ্তানি বন্ধ, দ্বিতীয়ত, চুক্তিভিত্তিক উৎপাদিত পণ্য রপ্তানির জন্য নগদ সহায়তা-প্রণোদনা, তৃতীয়ত, সহায়তার হার কমে যাওয়া, চতুর্থত, কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি এবং পঞ্চমত, হালাল পণ্য রপ্তানির জন্য সনদ প্রদানের কর্তৃপক্ষের অভাব। বিএমইটির তথ্যমতে, বিশ্বে ১ কোটি ২৫ লাখ ২৪ হাজার ২৯৮ জন প্রবাসী আছেন এবং ২০০৪ থেকে আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত তাঁরা ২৬ হাজার ৯০৮ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এই প্রবাসীরা এবং বাকি ৮০০ কোটি মানুষের বাজারে প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য সরবরাহ চেইন বজায় রাখার স্বার্থে এসব বাধা দূর করা জরুরি।
নতুন যেসব পণ্যের রপ্তানি সম্ভাবনা
বাংলাদেশ কৃষিপণ্যের মূল্য সংযোজনের মাধ্যমে এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকায় নতুন পণ্য রপ্তানি করতে পারে; যেমন ক্যানিং সবজি, রেডি মিক্স সবজি, ফলের জ্যাম ও জেলি, ফ্রোজেন ফ্রুটস, পাউডার এবং বিভিন্ন শুকনা খাবার ও স্ন্যাকস। মাছ, দুগ্ধজাত পণ্য এবং ফ্রোজেন আইটেমও রপ্তানি করা সম্ভব। বোম্বে সুইটস অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড স্ন্যাকস রপ্তানির ৪০% অংশ দখল করেছে। প্রতিষ্ঠানটির জেনারেল ম্যানেজার (ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস অ্যান্ড করপোরেট অ্যাফেয়ার্স) খুরশীদ আহমেদ জানান, বিদেশে বাজার বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে এবং সরকারের সহায়তা পেলে রপ্তানি আয় দ্রুত বাড়বে।
জয়িতাদের ঋণ বরাদ্দ বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। আজ রোববার বাংলাদেশ শিশু একাডেমির সম্মেলন কক্ষে জয়িতা ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নরসের ২৪ তম সভায় তিনি এ কথা জানান।
৩ ঘণ্টা আগেবিশ্বে সবচেয়ে বেশি মাংস আমদানি করে চীন। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও অস্ট্রেলিয়া থেকে নিয়মিত গরুর মাংস আমদানি করে দেশটি। দেশের অভ্যন্তরেও গরুর মাংস উৎপাদিত হয়। তবে হঠাৎই চীনা বাজারে বেড়ে গেছে গরুর মাংসের সরবরাহ। যার প্রভাবে গত কয়েক বছরের মধ্যে দাম সর্বনিম্নে নেমে গেছে।
৫ ঘণ্টা আগেব্যাংকসহ দেশের আর্থিক খাত গত ৫৩ বছরে অনেক দূর এগিয়েছে। তবে যত দূর প্রত্যাশা ছিল, তত দূর এগোতে পারেনি। আজ রোববার রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সুবর্ণজয়ন্তী-২০২৪ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান
৫ ঘণ্টা আগেদুই দিনের এই আয়োজনে শিশুদের জন্য থাকছে বিশেষ কর্মশালা। ৩ জানুয়ারি সকাল ১১টায় শিশুরা ফিতা কেটে উদ্বোধন করবে এই আয়োজন। বেলা ১২টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চলবে ক্র্যাফট কর্মশালা। এই কর্মশালা পরিচালনা করবে ‘জলছবি ক্রিয়েটিভ স্কুল’।
৯ ঘণ্টা আগে