Ajker Patrika

৩ হাজার ২০০ কোটির কাচের বাজার

রোকন উদ্দীন, ঢাকা
আপডেট : ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬: ২৬
কাচ দিয়ে ঘেরা স্থাপনা। ছবি: সংগৃহীত
কাচ দিয়ে ঘেরা স্থাপনা। ছবি: সংগৃহীত

আয়না মানুষকে তার প্রতিবিম্ব দেখায়, তবে সে শুধু একটি মুখ নয়—প্রতিটি মুহূর্তের বদলে যাওয়া অস্তিত্বের ছায়া ফুটে ওঠে তাতে। তাই আয়না যেন প্রত্যেক নারীজীবনের নিত্যসঙ্গী। কিন্তু আয়নায় নিজেকে খুঁটিয়ে দেখে না, এমন পুরুষও পৃথিবীতে খুব কম। কাচের এক পৃষ্ঠে অ্যালুমিনিয়াম বা রুপার মতো ধাতুর সূক্ষ্ম প্রলেপেই তৈরি হয় এই জাদুকরি বস্তু। মূলত কাচ একটি স্বচ্ছ, নমনীয় এবং অ-স্ফটিক নিরাকার কঠিন পদার্থ।

মানবজীবনে এর ব্যবহার শুরু হয়েছিল আয়নায় মুখ দেখার মাধ্যমে। তবে সময়ের বিবর্তনে প্রযুক্তি আর শিল্পের ছোঁয়ায় এটি পেয়েছে নতুন রূপ। একসময় কাচ নারীর জীবনে ছিল কেবল একটি আসবাব; এখন তা মানুষের দৈনন্দিন জীবনের গভীরে প্রবেশ করে স্থায়ীভাবে জায়গা করে নিয়েছে। কাচের ব্যবহার ঘর-গৃহস্থালির অন্দরসজ্জা থেকে শুরু করে ভবনের কাঠামো পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।

একসময় বাড়ির জানালা-দরজা কাঠ দিয়ে তৈরি হতো, পরে তাতে আধিপত্য বাড়ে কাচের। কিন্তু সেটিও এখন অতীত। নতুন যুগে কাচ ব্যবহৃত হচ্ছে বাড়ির দেয়াল নির্মাণেও। এই দেয়াল কেবল আলো-বাতাস প্রবাহ এবং তাপমাত্রা রক্ষায় নয়, নিরাপত্তা ও সৌন্দর্য বাড়াতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তাই আজ অ্যাপার্টমেন্ট, বাড়ি, বাণিজ্যিক ভবন কিংবা অফিস—সব ক্ষেত্রে জানালা, দরজা, বাইরের দেয়াল এবং বিভাজক হিসেবে কাচ হয়ে উঠেছে এক অনিবার্য অনুষঙ্গ।

তা ছাড়া কাচের বহুমুখী ব্যবহার দৈনন্দিন সেবাতেও স্পষ্ট। গণপরিবহনের সাধারণ যানবাহন থেকে শুরু করে বিলাসবহুল ব্যক্তিগত এবং বাণিজ্যিক গাড়িতে মানানসই, দৃষ্টিনন্দন কাচের গ্লাস বাড়িয়েছে সৌন্দর্য ও কার্যকারিতা।

এ ছাড়া ইলেকট্রনিক পণ্য; যেমন ফ্রিজ, টেলিভিশন এবং গ্যাস স্টোভ, বাটি, ফুলদানি, ফ্রেম, বোতল, জার, পানির গ্লাস কিংবা পেপারওয়েট—কী নেই কাচের তৈরি! কালের পরিক্রমায় কাচ তার প্রয়োজনীয়তার গণ্ডি ছাড়িয়ে আলংকারিক এবং বহুমুখী ব্যবহারের মাধ্যমে বিস্তৃত হয়েছে। আজ এই স্বচ্ছ বস্তু যেন ক্যারিশমা দেখানোর মতো মানুষের জীবনের সঙ্গে একাত্ম হয়ে গেছে। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশে, সব মানুষের যাপিত জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে এই কাচ।

এই ক্রমবর্ধমান ব্যবহারের ছোঁয়ায় দেশের কাচশিল্প আজ এক নতুন দিকে পৌঁছে গেছে। একসময় যে কাচের প্রায় ৯০ শতাংশ আমদানি করতে হতো, এখন সেই চাহিদার প্রায় সমান অংশই দেশে উৎপাদিত হচ্ছে। কাচশিল্পের এই সক্ষমতা শুধু দেশের চাহিদা পূরণেই থেমে নেই, বরং শিল্পের বিস্তারে নতুন নতুন কোম্পানির উত্থানে এর ভিত্তি আরও দৃঢ় হয়েছে।

পিএইচপি ফ্লোট গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমির হোসেন জানান, সরকারি নীতিসহায়তার ফলে কাচশিল্পের উৎপাদন ক্ষমতা বেড়েছে, ফলে রপ্তানি বেড়েছে। দেশের চাহিদা বাড়লেও দেশীয় কারখানাগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা তা পূরণে সক্ষম। বিশেষায়িত কাচও এখন দেশেই তৈরি হচ্ছে এবং কাচশিল্প দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ খাতে পরিণত হয়েছে, যার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।

ভবনে কাচ: আধুনিক নির্মাণের স্বচ্ছ সমাধান

ভবনে কাচের ব্যবহার জনপ্রিয় হওয়ার প্রধান কারণ এর স্বচ্ছতা। এটি ভবনের ভেতরে ধুলা প্রবেশ বন্ধ করার পাশাপাশি প্রাকৃতিক আলো প্রবাহ নিশ্চিত করে। প্রথমে জানালায় ব্যবহৃত হলেও সহজলভ্যতা এবং সাশ্রয়ী মূল্যের কারণে কাচ দ্রুত ভবনের বাইরের অংশের অন্যতম উপাদানে পরিণত হয়েছে।

ইট বা কংক্রিটের নির্মাণে যেখানে একাধিক উপকরণ, প্রচুর অর্থ, সময় ও শ্রমের প্রয়োজন হয়, সেখানে কাচের নির্মাণ তুলনামূলকভাবে অনেক সহজ। ফিনিশিং ম্যাটেরিয়ালের বাড়তি ঝামেলা এড়িয়ে কেবল স্থাপন ও পরিষ্কার করলেই এটি প্রস্তুত। এই সুবিধার জন্য ব্যবসায়িক ভবনের ক্ষেত্রে কাচ বিশেষভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

কাচ কীভাবে তৈরি হয়

কাচ একটি শিল্পজাত পণ্য, যা বালু গলিয়ে তৈরি করা হয়। ইসলামি কাচশিল্পীরা এই প্রক্রিয়া সহজ করেছিলেন। বর্তমানে কাচ তৈরি হয় সিলিকা, সোডা, ডলোমাইট, চুনাপাথর, ফেল্ডস্পার, সোডিয়াম নাইট্রেট ও কয়লার পাউডার মিশিয়ে। বাংলাদেশের বাজারে সাধারণ কাচ ও ক্রিস্টাল গ্লাস পাওয়া যায়, যেখানে সাধারণ কাচে সবুজাভ রং থাকে এবং ক্রিস্টাল গ্লাস একদম পরিষ্কার। গ্লাসের পুরুত্ব সাধারণত ৩ থেকে ১২ মিলিমিটার হয় এবং ভবনের বাইরে ২০ মিলিমিটার পর্যন্ত গ্লাস প্যানেল ব্যবহার করা হয়।

কাচের ধরন ও ব্যবহার

অ্যাপার্টমেন্ট ও বাণিজ্যিক স্থাপনায় সাধারণত রঙিন প্রতিফলনকারী কাচ ব্যবহৃত হয়; যা গোপনীয়তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি পর্যাপ্ত আলো প্রবেশ করায়। এটি অধিক সূর্যালোক থেকে চোখ সুরক্ষা দেয় এবং জানালার পর্দার প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে আনে। অ্যাপার্টমেন্টে ডাবল গ্লেইজড কাচ ব্যবহার করা হয়, তবে তা শুধু তাপ প্রতিরোধ করবে না, বরং এর ঘনত্বের কারণে শব্দদূষণ কমাবে এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সহায়ক হবে। একই সঙ্গে, ভঙ্গুর না হওয়ায় এটি অধিক নিরাপত্তা দেয়। লেমিনেটেড কাচ, খালি চোখে সাধারণ কাচের মতো দেখালেও ভবনের স্থায়িত্ব ও নিরাপত্তা বাড়াতে কার্যকর। সূর্যালোক প্রতিরোধী কাচ ঘরে প্রাকৃতিক আলো প্রবেশ করিয়ে দেয়, কিন্তু সূর্যের তাপ আটকে রাখে, ফলে ঘর ঠান্ডা থাকে। শব্দ প্রতিরোধে প্রয়োজন হলে ব্যবহৃত হয় অ্যাকুস্টিক কাচ, যা পরিবেশকে শান্ত ও আরামদায়ক করে তোলে। আর ঘরকে নান্দনিক রূপ দিতে চাইলে বেছে নিতে হবে নকশাযুক্ত কাচ। এই সব ধরনের কাচ আধুনিক স্থাপত্যে কেবল কার্যকারিতা নয়, শৈল্পিকতার ছোঁয়াও এনে দেয়।

কাচের-ব্যাবহার-ও-বাজার

দেশে উৎপাদন সক্ষমতা

বাংলাদেশ গ্লাস মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতিদিন ৬০০ টন বা ৬ লাখ বর্গফুট কাচের চাহিদা রয়েছে। আর প্রতিদিন উৎপাদিত হচ্ছে ৫০০ টন বা ৫ লাখ বর্গফুট বিভিন্ন ধরনের কাচ। একসময় চট্টগ্রামের কালুরঘাটে ৬টি প্রধান কারখানা—উসমানিয়া গ্লাস শিট, মেসার্স ইলিয়াছ ব্রাদার্স (এমইবি), আকিজ অ্যান্ড বশির গ্রুপ, নাসির গ্লাস, পিএইচপি ফ্লোটিং গ্লাস এবং এবি গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজ কাচ উৎপাদন করত। বর্তমানে উসমানিয়া ও এমইবি কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে গেছে, তবে চাহিদা পূরণের জন্য চারটি কারখানায় উৎপাদিত কাচই যথেষ্ট হচ্ছে। খাতসংশ্লিষ্টদের মতে, দেশীয় কারখানাগুলোর মধ্যে আকিজ ও নাসির গ্রুপ প্রতিদিন ২০০ টন করে মোট ৪০০ টন কাচ উৎপাদন করে। বাকি ১০০ টন উৎপাদিত হয় পিএইচপি ফ্লোটিং গ্লাস ও এবি গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজে।

বাংলাদেশ গ্লাস মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ হোসেইন আলমগীর বলেন, দেশে কাচ বা গ্লাসের চাহিদা প্রতিবছর ১০-১৫ শতাংশ হারে বাড়ছে। এর মধ্যে ৫০ শতাংশ গ্লাস ব্যবহৃত হয় আবাসন এবং ভবন নির্মাণে, ২০ শতাংশ শিল্প খাতের প্যাকেজিং ও আসবাব তৈরিতে, ২০ শতাংশ ফটোফ্রেম এবং অন্যান্য কাজে, আর বাকি ১০ শতাংশ ব্যবহৃত হয় অন্যান্য কাজে।

বাজারের আকার

বাংলাদেশ গ্লাস মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন ও বিক্রেতাদের সরবরাহ করা তথ্যমতে, কাচের দাম মিলিমিটার ও মান অনুযায়ী প্রতি বর্গফুট ৪০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। যদি গড়ে ১০০ টাকা ধরা হয়, তবে দেশে প্রতিদিন উৎপাদিত কাচের মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৫ কোটি টাকা, যা বছরে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার বেশি। এদিকে আমদানি হওয়া কাচের মূল্য প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, ফলে দেশে কাচের বাজারের মোট পরিমাণ ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকার বেশি।

তবু আমদানি

একসময় বাংলাদেশে কাচের পুরো বাজারই ছিল আমদানিনির্ভর। তবে দেশীয় কোম্পানিগুলো উৎপাদন শুরু করার পর থেকে আমদানির পরিমাণ দ্রুত কমতে শুরু করেছে। বর্তমানে দেশের কাচের চাহিদার ১৫-২০ শতাংশই আমদানি হচ্ছে, যেখানে একসময় ৯০ শতাংশ কাচ আমদানি করা হতো। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি কাচ আমদানি হয়। বিশেষত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে, যখন ১ লাখ ২১ হাজার টন কাচ আমদানি হয়েছিল। এরপর থেকেই আমদানির পরিমাণ ধীরে ধীরে কমে আসছে। বর্তমানে দেশে প্রতিবছর ৩৬ হাজার টনের বেশি কাচ আমদানি হয়, যার বাজারমূল্য ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার বেশি।

বর্তমানে শিল্পপ্রতিষ্ঠানই বেশি কাচ আমদানি করছে, বিশেষত ইলেকট্রনিক পণ্য ও গাড়ির জন্য। অধিকাংশ কাচ আসে চীন থেকে এবং কিছুটা আমদানি হয় তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া থেকে। তবে উদ্যোক্তারা আশা করছেন, ভবিষ্যতে এসব কাচের আমদানিনির্ভরতা কমবে।

হচ্ছে রপ্তানিও

বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর প্রায় ৮ মিলিয়ন ডলার সমমূল্যের গ্লাস রপ্তানি হয়, যা ২০০৫ সাল থেকে ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। তবে চলতি বছরের প্রথমার্ধে রপ্তানি ৩৭ শতাংশ কমেছে এবং ডিসেম্বরে এটি প্রায় ৬৪ শতাংশ কমেছে। ২০০৫ সালে পিএইচপি পরিবার রপ্তানি শুরু করে, কিন্তু বর্তমানে নাসির ফ্লোট গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজ শীর্ষে রয়েছে। ২০২৩-২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে ৭ দশমিক ৯৯ মিলিয়ন ডলার সমমূল্যের গ্লাস রপ্তানি হয়েছে, যা ২০২৪-২৫ সালে ৩ দশমিক ১০ মিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। রপ্তানির ৭২ শতাংশ ভারত ও নেপালে যায়। এ ছাড়া শ্রীলঙ্কা, ভুটান ও আফ্রিকার কিছু দেশে; যেমন উগান্ডা, তানজানিয়া ও কেনিয়ায়ও রপ্তানি হচ্ছে। নতুন বাজার হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাতও যুক্ত হয়েছে।

বাড়ছে বিনিয়োগ সম্ভাবনা

দেশে গ্লাস বাজারে প্রবেশের জন্য প্রাণ-আরএফএলসহ আরও বড় কোম্পানিগুলোর আগ্রহ রয়েছে। তারা এরই মধ্যে টেম্পার্ড গ্লাস তৈরি করছে, বিশেষ করে আসবাব ও ইলেকট্রনিক পণ্যের জন্য। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল বলেন, প্রাণ-আরএফএল টেম্পার্ড গ্লাস তৈরি করছে আসবাব ও ইলেকট্রনিক পণ্যের জন্য। ইলেকট্রনিক পণ্যে এর চাহিদা বাড়ছে, তাই আমরা বিনিয়োগ সম্প্রসারণ করতে চাই। এ ছাড়া ফ্লোট গ্লাস তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে আমাদের, যা কিছু কারণে একটু পিছিয়ে গেছে।

আছে চ্যালেঞ্জ

কাচশিল্পে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো ১২-১৫ বছর ধরে উৎপাদন চালু রাখা। যদি কারখানা বন্ধ হয়ে যায়, তবে চুল্লি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং নতুন বিনিয়োগ করতে হবে। এ জন্য কারখানায় তিন থেকে ছয় মাসের কাঁচামাল মজুত রাখতে হয়। দেশে সিলিকা বালু ছাড়া সব কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। এ কারণে উৎপাদন খরচ বেশি। বিনিয়োগ ঝুঁকিও বেশি। তবে চীনে কাঁচামাল সহজলভ্য, তাই তারা কম সময় মজুত রাখে এবং উৎপাদন ব্যয়ও তাদের কম হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সাংবাদিক আনিস আলমগীর ডিবি হেফাজতে, জিজ্ঞাসাবাদ হবে

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: ফয়সালের স্ত্রীসহ আরও তিনজন গ্রেপ্তার

বন্ডাই বিচে হামলাকারীর অস্ত্র কেড়ে নিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন, কে এই পথচারী

বাড্ডায় যাত্রীবাহী বাসে আগুন

বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে জামায়াতের দুই ছাত্রনেতা আশরাফ ও মুঈনুদ্দীনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ইইউ-যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে সম্ভাবনা জাপানে

রোকন উদ্দীন, ঢাকা
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা

ইউরোপ-আমেরিকার ওপর দীর্ঘদিনের নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসার তাগিদ এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। বৈশ্বিক বাণিজ্যে অস্থিরতা বাড়ায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত নতুন বাজার খুঁজছে, আর সেই অপ্রচলিত গন্তব্যগুলোর মধ্যে জাপান সবচেয়ে সম্ভাবনাময় হয়ে উঠছে। অথচ দেশটির ২২ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলারের বিশাল পোশাক আমদানি বাজারে বাংলাদেশের অংশ এখনো মাত্র ১ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ সাড়ে ৫ শতাংশ।

এই অবস্থান আরও স্পষ্ট হয় ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায়। ইউরোপের তৈরি পোশাক আমদানির প্রায় অর্ধেকই আসে বাংলাদেশ থেকে, আর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেও শীর্ষ সরবরাহকারীর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ। তবু জাপানের মতো স্থিতিশীল ও উচ্চমূল্যের বাজারে বাংলাদেশ এখনো ব্যবহৃত সুযোগের তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে। পরিসংখ্যান তা-ই বলে—এখানে এখনো বড় জায়গা খালি রয়েছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যও সেই সম্ভাবনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখায়। ২০২৪ অর্থবছরে দুই দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৩ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলার; যার মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি ১ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ জাপান এখন বাংলাদেশের ১২তম রপ্তানি গন্তব্য।

তবে চলতি অর্থবছরের গত কয়েক মাসের প্রবণতা বাজারের পরিবর্তন আরও স্পষ্ট করে। ইপিবির সর্বশেষ তথ্য বলছে, চলতি বছরের জুলাই-আগস্টে জাপানে রপ্তানি হয়েছে ২২ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার ডলার, যেখানে গত বছর একই সময়ে ছিল ১৯ কোটি ৩৯ লাখ ২০ হাজার ডলার। প্রবৃদ্ধি ১৫ দশমিক ৬০ শতাংশ। অস্ট্রেলিয়া এ সময়ে দ্বিতীয় বৃহৎ অপ্রচলিত বাজার হলেও সেখানে রপ্তানি কমেছে ৬ শতাংশ। ফলে জাপান এখন অপ্রচলিত রপ্তানি বাজারে সবচেয়ে দ্রুত বাড়তে থাকা গন্তব্য হিসেবে সামনে আসছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান হাসান আরিফ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অপ্রচলিত বাজারগুলোর মধ্যে এখন সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ও স্থিতিশীল একটি বাজার হলো জাপান। সরকারের পর্যালোচনায়ও বিষয়টি রয়েছে। এ সম্ভাবনাকে দ্রুত কাজে লাগাতে আগামী জানুয়ারির মধ্যে আমরা দেশটির সঙ্গে অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (ইপিএ) স্বাক্ষর করতে যাচ্ছি, যা সম্পন্ন হলে রপ্তানি আশানুরূপ বাড়ানো সম্ভব হবে।’

জাপানের এই উত্থান কাকতাল নয়। রপ্তানিকারকেরা বলছেন, ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি, সরবরাহ-ঝুঁকি ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বাড়ায় আমদানিকারকেরা নতুন বাজারের দিকে ঝুঁকছেন। আর জাপান এমন একটি বাজার, যেখানে মূল্য-সুবিধার পাশাপাশি গুণগত মান, কঠোর কমপ্লায়েন্স এবং দ্রুত বদলে যাওয়া ফ্যাশন-চাহিদার প্রতি গুরুত্ব বেশি। এসব মানদণ্ড পূরণ করতে পারলে বাজারটি দীর্ঘমেয়াদি ও নিশ্চিত প্রবৃদ্ধির সুযোগ দেয়।

কিন্তু এখানেই চ্যালেঞ্জ স্পষ্ট। জাপানি ক্রেতারা ছোট পরিমাণের অর্ডার দেন, মূল্য নিয়ে আগাম ছাড় পাওয়া সহজ নয়, আর প্রতিটি পণ্যের ক্ষেত্রে শতভাগ কমপ্লায়েন্স অপরিহার্য। এ বিষয়ে দেশের অন্যতম প্রস্তুতকারক টিম গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল্লাহিল নকিব জানান, ‘অর্ডারের কঠোর ইন্সপেকশন বাংলাদেশে জাপানের অর্ডার ধরার সবচেয়ে বড় বাধা। মান নিশ্চিত না হলে তারা একটিও পণ্য নেয় না।’

এই কঠোরতা একদিকে বাধা, আবার অন্যদিকে সুবিধা। কারণ যে প্রতিষ্ঠান একবার জাপানের মান ধরে রাখতে পারে, তাদের জন্য বাজারটি স্থিতিশীল থাকে। জাপানি ব্র্যান্ডগুলো সরবরাহকারী খুব সহজে বদলায় না, ফলে দীর্ঘ মেয়াদে স্থায়ী সম্পর্ক তৈরি হয়।

বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল মনে করেন, বৈশ্বিক উত্তেজনার এই সময়ে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ও উৎপাদনসক্ষমতা বাড়াতে পারলে অপ্রচলিত বাজারগুলোই ভবিষ্যতের বড় নিরাপত্তা হয়ে উঠবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সাংবাদিক আনিস আলমগীর ডিবি হেফাজতে, জিজ্ঞাসাবাদ হবে

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: ফয়সালের স্ত্রীসহ আরও তিনজন গ্রেপ্তার

বন্ডাই বিচে হামলাকারীর অস্ত্র কেড়ে নিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন, কে এই পথচারী

বাড্ডায় যাত্রীবাহী বাসে আগুন

বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে জামায়াতের দুই ছাত্রনেতা আশরাফ ও মুঈনুদ্দীনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

এসএমই মেলায় ১৬ কোটি টাকার অর্ডার পেলেন উদ্যোক্তারা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আট দিনব্যাপী ১২তম জাতীয় এসএমই পণ্য মেলায় ১৫ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করেছেন উদ্যোক্তারা। পণ্য বিক্রির পাশাপাশি ১৬ কোটি টাকার পণ্যের অর্ডার পেয়েছেন।

এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলনকেন্দ্রে অনুষ্ঠিত মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়। আজ রোববার আয়োজিত সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ওবায়দুর রহমান।

এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মো. মুসফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান সায়েমা শাহীন সুলতানা, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নুজহাত ইয়াসমিন ও ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রুমী এ আলী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এর আগে ১১টি জাতীয় এসএমই পণ্য মেলায় প্রায় ৩ হাজার উদ্যোক্তা তাঁদের পণ্য বিক্রি করেছেন। ১১টি পণ্য মেলায় অংশগ্রহণকারী উদ্যোক্তাদের ৫৭ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি এবং প্রায় ৯৩ কোটি টাকার অর্ডার পেয়েছেন।

এবারের মেলায় অংশগ্রহণকারী ১০টি প্রতিষ্ঠানকে শ্রেষ্ঠ স্টলের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এ ছাড়া ছয় উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠানকে ‘জাতীয় এসএমই উদ্যোক্তা পুরস্কার–২০২৫’ বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। বিজয়ীদের প্রত্যেকের হাতে ক্রেস্ট, সনদ ও চেক তুলে দেওয়া হয়।

শতভাগ দেশি পণ্যের সবচেয়ে বড় এই আয়োজন রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলনকেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়। ৭ ডিসেম্বর মেলার উদ্বোধন করেন শিল্প, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।

এবারের মেলায় অংশগ্রহণ করেছে প্রায় সাড়ে তিন শ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান, যাদের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা। এর মধ্যে তৈরি পোশাক খাতের সবচেয়ে বেশি ৭৪টি প্রতিষ্ঠান।

এ ছাড়া হস্ত ও কারুশিল্পের ৫৪টি, পাদুকা ও চামড়াজাত পণ্য খাতের ৪০টি; পাটজাত পণ্যের ৩৫টি; কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ পণ্যের ২৮টি; শতরঞ্জি, বাঁশ, বেত, হোগলা, সুপারিখোল ও কাঠের ১৫টি; খাদ্যপণ্যের ১৪টি; লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের ১৩টি; জুয়েলারি শিল্পের ৯টি; প্রসাধন খাতের সাতটি; তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক সেবা খাতের পাঁচটি; হারবাল–ভেষজশিল্পের পাঁচটি; প্লাস্টিক পণ্যের পাঁচটি; ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস খাতের তিনটি, ফার্নিচার খাতের তিনটি এবং অন্যান্য খাতের ১১টি স্টল।

মেলায় উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি সেবা প্রদানকারী শিল্প মন্ত্রণালয়ের আটটি দপ্তর-সংস্থাসহ সরকারের প্রায় ১৫টি সংস্থা, প্রায় ৩০টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়।

মেলায় এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ অর্থায়ন, পণ্য রপ্তানি বহুমুখীকরণ ও পণ্যের হালাল সনদ প্রাপ্তি, পেটেন্ট, শিল্প নকশা, ট্রেড মার্ক ও জি আই স্বীকৃতি, স্কিলস ইকোসিস্টেম বিষয়ে ছয়টি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সাংবাদিক আনিস আলমগীর ডিবি হেফাজতে, জিজ্ঞাসাবাদ হবে

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: ফয়সালের স্ত্রীসহ আরও তিনজন গ্রেপ্তার

বন্ডাই বিচে হামলাকারীর অস্ত্র কেড়ে নিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন, কে এই পথচারী

বাড্ডায় যাত্রীবাহী বাসে আগুন

বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে জামায়াতের দুই ছাত্রনেতা আশরাফ ও মুঈনুদ্দীনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আপেল, মাল্টা, কমলাসহ তাজা ফলের শুল্ক কমানোর সুপারিশ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আসন্ন রমজান মাস সামনে রেখে তাজা ফলের ওপর শুল্ক কমানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। খেজুরের মতোই এবার আপেল, কমলা, আঙুর, মেস্তারিন, নাশপাতি ইত্যাদি তাজা ফলকে ‘অত্যাবশ্যকীয় পণ্য’ হিসেবে চিহ্নিত করে অতিরিক্ত সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন।

সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) দেওয়া এক চিঠিতে এই সুপারিশ করা হয়। রমজান মাস সামনে রেখে নিত্যপণ্য বিবেচনায় এমন সুপারিশ করা হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, দেশের চাহিদার বড় অংশ আমদানি করা তাজা ফলের মাধ্যমে পূরণ হয়। গত কয়েক বছরে ডলারের মূল্য, শুল্ক বৃদ্ধিসহ নানা কারণে আমদানি করা ফলের দাম বেড়ে যায়। বর্তমানে আপেল, কমলা, মেস্তারিন, আঙুর ও নাশপাতি আমদানিতে মোট শুল্ক রয়েছে ১২১ দশমিক ৭৮ শতাংশ। আনার আমদানিতে মোট শুল্ক-কর রয়েছে ১২৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

চিঠিতে আরও বলা হয়, আপেল, মাল্টা, আনার ইত্যাদি ফলের স্থানীয় উৎপাদন নেই; তাই এই উচ্চহারে শুল্ক-কর রাখার প্রয়োজনীয়তা সীমিত।

অন্যদিকে উচ্চহারে শুল্ক-কর আরোপের ফলে বৈধ পথে আমদানি কমে তা অবৈধ পথে আমদানিকে উৎসাহিত করতে পারে। এ ছাড়া ব্যবসায়ীদের মধ্যে অতিমাত্রায় বিভিন্ন রাসায়নিক ব্যবহারের প্রবণতাও বাড়তে পারে। উচ্চ শুল্ক-করের ফলে তাজা ফলের আমদানি কমার ধারা অব্যাহত থাকলে শুধু ভোক্তাসাধারণের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে না; ভবিষ্যতে রাজস্ব আহরণও কমে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

তাজা ফলকে ‘বিলাস পণ্য’ হিসেবে বিবেচনা করে এর ওপর ৩০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। তবে নিত্যপণ্য আইন, ১৯৫৬ অনুযায়ী খাদ্যপণ্য হিসেবে তাজা ফল ‘অত্যাবশ্যকীয় পণ্য’ বিধায় এর ওপর আরোপিত অতিরিক্ত সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার বা যৌক্তিক করা যেতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সাংবাদিক আনিস আলমগীর ডিবি হেফাজতে, জিজ্ঞাসাবাদ হবে

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: ফয়সালের স্ত্রীসহ আরও তিনজন গ্রেপ্তার

বন্ডাই বিচে হামলাকারীর অস্ত্র কেড়ে নিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন, কে এই পথচারী

বাড্ডায় যাত্রীবাহী বাসে আগুন

বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে জামায়াতের দুই ছাত্রনেতা আশরাফ ও মুঈনুদ্দীনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নির্বাচনে ভোটার ও রাজনীতিবিদের নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে: দেবপ্রিয়

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ২৯
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। ফাইল ছবি
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। ফাইল ছবি

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতিবিদেরা আরও সহিংসতা বা হামলার শিকার হবেন কি না এবং নির্বাচন কমিশন ও বর্তমান সরকার তাঁদের জন্য একটি সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারবে কি না এ নিয়ে বড় প্রশ্ন তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

তিনি বলেন, ‘দেশে শুধু ভোটাররাই নন, রাজনীতিবিদেরাও এখন বিপন্নতার মধ্যে রয়েছেন।’

বাংলাদেশ–চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ রিফর্ম ট্র্যাকার’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা। ছবি: আজকের পত্রিকা।
বাংলাদেশ–চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ রিফর্ম ট্র্যাকার’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা। ছবি: আজকের পত্রিকা।

আজ রোববার রাজধানীর বাংলাদেশ–চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ রিফর্ম ট্র্যাকার’-এর উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্যে এসব কথা বলেন সিপিডির ফেলো।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, ‘বিপন্ন জনগোষ্ঠীর প্রসঙ্গে সাধারণত ধর্মীয় সংখ্যালঘু, আদিবাসী সম্প্রদায় বা ভিন্ন মতাবলম্বীদের কথা উঠে আসে। তবে এর সঙ্গে বড় একটি বিষয় হিসেবে যুক্ত হয়েছে রাজনীতিবিদদের নিরাপত্তা। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতিবিদেরা আরও সহিংসতা বা হামলার শিকার হবেন কি না এবং নির্বাচন কমিশন ও বর্তমান সরকার তাঁদের জন্য একটি সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারবে কি না, এ নিয়ে বড় প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।’

ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর সাম্প্রতিক হামলার প্রসঙ্গে সিপিডির এই ফেলো বলেন, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে সহিংসতার পর এখন নিরাপদ নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিতের বিষয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য জানান, গত দেড় মাসে ‘বাংলাদেশ রিফর্ম ট্র্যাকার’ প্ল্যাটফর্ম দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাক্-নির্বাচনী সংলাপ আয়োজন করেছে। এসব সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আসন্ন নির্বাচন নিয়ে জনগণের প্রত্যাশা জানার চেষ্টা করা হয়েছে। এসব আলোচনার ভিত্তিতে একটি নাগরিক ইশতেহার প্রস্তুত করা হচ্ছে, যা শিগগিরই প্রকাশ করা হবে বলে জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যেসব জায়গায় গিয়েছি, প্রায় সর্বত্রই নিরাপত্তার বিষয়টি খুব জোরালোভাবে উঠে এসেছে। একটি নিরাপদ ও সুরক্ষিত রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করা যাবে কি না, এ বিষয়ে অনেকেই নিশ্চিত নন।’

সংস্কার এজেন্ডা প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অবক্ষয়ের অভিজ্ঞতা থেকেই বর্তমানে সংস্কার-সংক্রান্ত বিতর্কের ভিত তৈরি হয়েছে। তাঁর মতে, রাজনীতিবিদ, আমলা ও বড় ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গড়ে ওঠা একটি এলিট গোষ্ঠী প্রতিযোগিতামূলক রাজনীতিকে দুর্বল করেছে, যার ফলে সৃষ্টি হয়েছে প্রতিযোগিতাহীন অর্থনীতি।

তিনি বলেন, ‘এর মাধ্যমে গড়ে উঠেছে ক্রনি ক্যাপিটালিজম ও একটি অলিগার্কিক ব্যবস্থা, যেখানে নীতিনির্ধারণে স্বাধীনতা হারিয়ে গেছে।’

সংস্কার প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় বলেন, বাংলাদেশে সংস্কার নতুন কোনো বিষয় নয়। তবে বর্তমান উদ্যোগটি আলাদা, কারণ এটি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কমিশন ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার মাধ্যমে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এ সুযোগ তৈরিতে অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকার প্রশংসা করলেও তিনি বলেন, সংস্কার প্রক্রিয়ায় প্রথম দিকে যে গতি তৈরি হয়েছিল, তা ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়েছে।

সিপিডি ফেলো বলেন, ‘আমরা দেখেছি স্বচ্ছতা, সমন্বয় ও যোগাযোগ সব সময় পর্যাপ্ত ছিল না। আর শুধু পরিকল্পনার মাধ্যমে সংস্কার সফল করা সম্ভব নয়; এর জন্য প্রয়োজন নাগরিকদের ধারাবাহিক অংশগ্রহণ।’

তাঁর মতে, সংস্কার শুধু পরিকল্পনা বা উদ্দীপনার বিষয় নয়। সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হলে নাগরিকদের সচেতনভাবে সম্পৃক্ত থাকতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সাংবাদিক আনিস আলমগীর ডিবি হেফাজতে, জিজ্ঞাসাবাদ হবে

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: ফয়সালের স্ত্রীসহ আরও তিনজন গ্রেপ্তার

বন্ডাই বিচে হামলাকারীর অস্ত্র কেড়ে নিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন, কে এই পথচারী

বাড্ডায় যাত্রীবাহী বাসে আগুন

বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে জামায়াতের দুই ছাত্রনেতা আশরাফ ও মুঈনুদ্দীনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত