বিদেশি ঋণের প্রবাহ: মিলেছে ৩৫৩ কোটি, সুদ পরিশোধে গেছে ১৯৮ কোটি ডলার

  • প্রতিশ্রুতি ও অর্থছাড় দুটিই কমেছে।
  • প্রতিশ্রুতি কমেছে ৪৬৯ কোটি ১২ লাখ ডলার।
  • মিলেছে ৩৫৩ কোটি ডলার।
  • সুদ পরিশোধে গেছে ১৯৮ কোটি ডলার।
মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা
আপডেট : ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০২: ৩৩
Thumbnail image
ফাইল ছবি

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকটের কারণে আগের সরকারের মতো বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও বিদেশি ঋণের দিকে বেশি নজর দিচ্ছে। সরকার উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে সহায়তা চাইছে, তবে তারা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা এখনো পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে দেশের বৈদেশিক ঋণের প্রবাহ কমে গেছে, আর ডলারের অভাবে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে।

এমন পরিস্থিতিতে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে আগের ঋণের অর্থছাড় কমেছে, পাশাপাশি নতুন ঋণের প্রতিশ্রুতি আরও কমেছে। এ ছাড়া আগের নেওয়া ঋণের পরিশোধের চাপ বেড়েছে এবং বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধের চাপও ক্রমেই বাড়ছে। ফলে প্রতিবার সরকার যে ঋণ নিচ্ছে, তার বড় অংশই সুদ ও মূলধন পরিশোধে চলে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. মুস্তফা কে মুজেরী বলেন, প্রকল্পের অর্থছাড় হয়ে থাকে কাজের অগ্রগতির ওপর। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে গত ছয় মাসে প্রকল্পগুলোর কাজের গতি কমেছে, তাই ঋণের অর্থছাড়ও কমে গেছে। তবে কাজের গতি বাড়লে অর্থছাড়ও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।

ইআরডির তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) প্রকল্পগুলোয় ৩৫৩ কোটি ২৪ লাখ ডলার বৈদেশিক ঋণের অর্থছাড় হয়েছে, যার মধ্যে ১৯৮ কোটি ১৭ লাখ ডলার গেছে আগের ঋণ পরিশোধে। অর্থাৎ দেশে আসা ঋণের ৫৬.২৪% পুরোনো ঋণ পরিশোধেই ব্যবহৃত হয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে সরকার ঋণ পরিশোধ করেছে ১৯৮ কোটি ১৭ লাখ ডলার, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ের ১৫৬ কোটি ৭৮ লাখ ডলার থেকে ৪১ কোটি ৩৯ লাখ ডলার বেশি।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে সরকার ঋণের বিপরীতে সুদ পরিশোধ করেছে ৭৪ কোটি ৭৫ লাখ ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের ৬৪ কোটি ১৬ লাখ ডলার থেকে ১০ কোটি ৫৯ লাখ ডলার বেশি।

ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, গত ৬ মাসে সরকার ঋণের আসল পরিশোধ করেছে ১২৩ কোটি ডলার, যা দেশীয় মুদ্রায় ১৪ হাজার ৭৩৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৯২ কোটি ৬১ লাখ ডলার বা ১০ হাজার ১৮৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। বাকি ১১ হাজার ৬০১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা সুদ হিসেবে পরিশোধ করা হয়েছে।

সুদ-আসলসহ ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়লেও কমেছে অর্থছাড়। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে বিদেশি ঋণের অর্থছাড় হয়েছে ৩৫৩ কোটি ২৪ লাখ ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৪০৬ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে ৫৩ কোটি ১৩ লাখ ডলার বা ১৩ শতাংশ কমেছে অর্থছাড়। দেশে ঋণ সংকটের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ ছাড় করেছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি), ১০৫ কোটি ডলার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অর্থ ছাড় করেছে বিশ্বব্যাংক, ৮০ কোটি ডলার। এ সময় রাশিয়া দিয়েছে ৫৩ কোটি ১৬ লাখ ডলার, জাপান ৪৪ কোটি, চীন ২৬ কোটি ৭৮ লাখ, ভারত ৭ কোটি ২১ লাখ ডলার এবং অন্যান্য দাতা সংস্থা দিয়েছে সাড়ে ৩৫ কোটি ডলার।

অর্থছাড় কমার পাশাপাশি উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণের প্রতিশ্রুতিতেও অনিহা দেখা গেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে ঋণের প্রতিশ্রুতি ছিল ২২৯ কোটি ৮৬ লাখ ডলার, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৬৯৮ কোটি ৯৮ লাখ ডলার। অর্থাৎ ঋণের প্রতিশ্রুতি কমেছে ৪৬৯ কোটি ১২ লাখ ডলার।

চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে সবচেয়ে বেশি ঋণ প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (আইডিএ) থেকে, যার পরিমাণ ৯১ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। এডিবি থেকে ৭০ কোটি, জাপান থেকে ২৫ কোটি ২১ লাখ, এআইআইবি থেকে ১৬ কোটি এবং অন্যান্য সংস্থা থেকে ২৭ কোটি ২০ লাখ ডলার প্রতিশ্রুতি এসেছে। তবে রাশিয়া, চীন ও ভারতের কাছ থেকে কোনো ঋণ প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাসনাত আবদুল্লাহকে দেখে তেড়ে এলেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা

স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশন: চিকিৎসক নিবন্ধনে পরীক্ষা

দিল্লিকে বাংলাদেশি-রোহিঙ্গা মুক্ত করবে বিজেপি: অমিত শাহ

কঙ্গনার ‘ইমার্জেন্সি’তে শেখ মুজিবুর রহমানের সংলাপ নিয়ে বিতর্ক

নীলক্ষেতে ৭ কলেজ ও ঢাবি শিক্ষার্থীরা মুখোমুখি, পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত