Ajker Patrika

মুদ্রাস্ফীতি ও মন্দায় মাংস খেতে পারছে না আর্জেন্টিনার মানুষ

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৩ জুন ২০২৪, ০৮: ৪৭
Thumbnail image

গবাদিপশুর খামার এবং আসাডো বারবিকিউর জন্য বিখ্যাত আর্জেন্টিনার মানুষ এখন পর্যাপ্ত মাংস খেতে পারছে না। তিন অঙ্কের মুদ্রাস্ফীতি এবং অর্থনৈতিক মন্দার কারণে তাঁরা এমন পরিস্থিতিতে পড়েছেন। 

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে। 

এই বছর দক্ষিণ আমেরিকার দেশটিতে গরুর মাংসের ব্যবহার প্রায় ১৬ শতাংশ কমে গেছে। যেখানে ফুটবল এবং মেট কফির সঙ্গে মাংস খাওয়া সামাজিক রীতি। 

অনেক আর্জেন্টিনার বাড়িতে ভেতরে ‘প্যারিলা’ গ্রিল রয়েছে, যেখানে পরিবারগুলো একত্রিত হয়। বুয়েনস আইরেসের আশেপাশে রাস্তার পাশে স্টেকহাউসগুলো থাকবে। লোকেরা গরুর মাংসের জন্য বারবিকিউর আশেপাশে ভিড় করবে বিক্ষোভের সময়ও। এমনটিই দেশটির স্বাভাবিক চিত্র। তবে অর্থনৈতিক মন্দায় পরিস্থিতি বদলে গেছে। 

কসাইয়ের দোকানে লাইনে দাঁড়ানো অবস্থায় ৬৬ বছর বয়সী ক্লডিয়া সান রয়টার্সকে বলেন, ‘ইতালীয়দের কাছে পাস্তা যেমন, আর্জেন্টিনার খাদ্যের তেমনি একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ গরুর মাংস।’ 

তিনি অন্যান্য কেনাকাটা কমাতে ইচ্ছুক, তবে গরুর মাংস নয়। তিনি আরও বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আর্জেন্টাইনরা এমন কঠিন সময়ে যেকোনো কিছু বাদ দিতে পারে। কিন্তু আমরা মাংস ছাড়তে পারি না। 

তবুও সর্বশেষ তথ্য দেখায়, আর্জেন্টিনারা এই বছরে গড়ে প্রায় ৪৪ কিলোগ্রাম (৯৭ পাউন্ড) করে গরুর মাংস খাচ্ছেন, যা গত বছর ৫২ কেজি ছিল। আর ১৯৫০ এর দশকে এটি বছরে ১০০ কেজির মতো ছিল। 

গরুর মাংস খাওয়া কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো আর্জেন্টাইনদের মধ্যে অন্যান্য মাংস খাওয়ার চল শুরু হয়েছে। যেমন শুয়োরের মাংস এবং মুরগির সঙ্গে পাস্তার মতো সস্তা খাবারে অভ্যস্ততা। কিন্তু এই বছরে ৩০০ শতাংশ মূল্যস্ফীতি এবং স্থবির অর্থনীতির সঙ্গে উদারপন্থী প্রেসিডেন্ট জাভিয়ের মিলির কঠোর শাসনের ফলে মাংস খাওয়ার হার আগের চেয়ে অনেক বেশি হ্রাস পেয়ছে। 

দেশটিতে দারিদ্র্য বেড়েছে। প্রধান শহরগুলোতে আরও বেশি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে, স্যুপের দোকানে লাইন বেড়েছে। অনেক পরিবার প্রধান খাবারের ব্যবহার কমিয়েছে। মাংস, দুধ এবং সবজির বিকল্প খাচ্ছেন। তারা বলছেন, তাঁরা এখনো মাসিক মুদ্রাস্ফীতি কমানোর সুবিধা বুঝতে পারছেন না। 

স্থানীয় মাংস চেম্বার সিআইসিসিআরএর সভাপতি মিগুয়েল শিয়ারিটি বলেন, ‘এই মুহূর্তে পরিস্থিতি সংকটজনক। ভোক্তারা শুধু তাদের মানিব্যাগের কথা চিন্তা করেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা প্রতি মাসে কমে যাচ্ছে।’ 

মাংস কম, পাস্তা বেশি
বুয়েনস আইরেস প্রদেশের কৃষিভূমিতে ও পশুপালকেরা এর প্রভাব টের পাচ্ছেন। কৃষি প্রকৌশলী ও তিন প্রজন্ম ধরে শস্য এবং পশুসম্পদ উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত লুইস মার্চি বলেছেন, ‘সম্প্রতি গরুর মাংসের ব্যবহার বেশ তীব্রভাবে কমেছে। এভাবে ভোক্তা হ্রাস উদ্বেগজনক।’ 

মুদ্রাস্ফীতি এবং অর্থনৈতিক মন্দাকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘ভোক্তারা গরুর মাংসের পরিবর্তে অন্য ধরনের মাংস বা পাস্তা খাওয়ার চেষ্টা করছে।’ 

মাংস কিনতে দামাদামি 
বুয়েনস আইরেসে ৪০ বছর ধরে কসাইয়ের দোকানে কাজ করেছেন ৬১ বছর বয়সী জেরার্ডো টমসিন। তিনি বলেছেন, ‘লোকেরা এখনো গরুর মাংস কিনতে আসছে, কিন্তু কমদামে কেনার জন্য অনেক দামাদামি করছেন। মানুষ আসছেন, কিন্তু খুবই কম। কেউ কেউ বিকল্প পণ্যের দিকে ঝুঁকছেন।’ 

আরেক কসাই দারিও ব্যারান্দেগুই (৭৬) বলেন, লোকেরা সবচেয়ে কম দামে গরুর মাংস বা অন্যান্য কমদামি মাংস কিনছেন। সম্প্রতি মুরগি ও শূকরের মাংসের ব্যবহার অনেক বেড়েছে।

উদারপন্থী প্রেসিডেন্ট জাভিয়ের মিলি মুক্তবাজার অর্থনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত। নিজেকে তিনি অরাজ-পুঁজিবাদী বলেও দাবি করেন। তিনি গরুর মাংসের ওপর পূর্ববর্তী পেরোনিস্ট সরকারের নির্ধারিত দাম বাতিল করেছেন। এরপর থেকেই বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে। 

৪১ বছর বয়সী শিক্ষক ফ্যাকুন্ডো রেইনাল বলেন, ‘জিনিসগুলো খুব ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। এত ব্যয়বহুল যে, যখন মানুষ আর সেই পণ্য কিনতে পারে না। অর্থাৎ মানুষের মধ্যে আর আগের মতো মেলামেশা নেই, আড্ডা নেই। সামাজিকীকরণে সময় দিতে পারছেন মানুষ।’

শিক্ষক ফ্যাকুন্ডো রেইনাল আরও বলেন, ‘আমরা সামগ্রিকভাবে লোকেদের কম বারবিকিউ করতে দেখছি, যা আর্জেন্টিনার সংস্কৃতির মূল অংশ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নারী সহকর্মীর সঙ্গে রাতযাপন: হাইটেক পার্কের ডিডি আতিক বরখাস্ত

বাংলাদেশসহ ৩ দেশে উন্নয়ন সহায়তা বন্ধের সিদ্ধান্ত সুইজারল্যান্ডের

বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের পদত্যাগ

পদ্মা সেতু ও ড. ইউনূসকে নিয়ে ভারত থেকে শেখ হাসিনার ভাষণ! ভাইরাল ভিডিওর পেছনের ঘটনা জানুন

২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ফেসবুক প্রোফাইল পিকচার পরিবর্তন কর্মসূচি শুরু

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত