হঠাৎ লেনদেন কমেছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা
আপডেট : ২০ জুন ২০২৪, ১০: ৩২
Thumbnail image

প্রযুক্তির ছোঁয়ায় গতানুগতিক ব্যাংকিং ধারার পাশাপাশি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস)। সরকারের নীতি-সহায়তা এবং ক্যাশলেস (নগদবিহীন) লেনদেন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় জনপ্রিয় মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেনে হঠাৎ ভাটা পড়েছে। কয়েক মাস ধরে ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর গত এপ্রিল মাসে মোবাইল ব্যাংকিং মাধ্যমে এক ধাক্কায় লেনদেন কমেছে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। তবে এই পদ্ধতিতে লেনদেন কমলেও হিসাবধারীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ২৫ লাখ। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছিল ১ লাখ ৫৩ হাজার ৭৫৭ কোটি টাকা। কিন্তু শুধু এক মাস পরেই এপ্রিলে এই ব্যাংকিং ধারার মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৯২৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে মার্চ মাসের তুলনায় এপ্রিলে লেনদেন কমেছে ৮ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা।

বিকাশের করপোরেট কমিউনিকেশনের প্রধান শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, ‘সরকারি নীতি-সহায়তার কারণে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহকসংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলেছে। কিন্তু গত এপ্রিলে হঠাৎ কেন এত লেনদেন কমেছে, তা স্পষ্ট নয়। তবে তখন ঈদের পরের মাস হিসেবে প্রভাব পড়তে পারে। অন্যান্য অনলাইন লেনদেনের কারণে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন কমেছে— বিষয়টা তেমন নয়।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, চলতি বছরের মার্চে এমএফএসগুলোতে জমা হয়েছিল ৪৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। পরের মাস এপ্রিলে এমএফএসগুলোতে জমা (ক্যাশ ইন) হয়েছে ৪১ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা। সেই হিসাবে মার্চের তুলনায় এপ্রিলে জমা কম হয়েছে ৪ হাজার ১৮৮ কোটি টাকা। অপরদিকে, মার্চে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে উত্তোলন হয়েছিল ৪৮ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। আর পরের মাস এপ্রিলে এমএফএসের মাধ্যমে উত্তোলন হয়েছে ৪৬ হাজার ৯৮৭ কোটি টাকা। সেই হিসাবে মার্চের তুলনায় এপ্রিলে জমা কম হয়েছে ১ হাজার ১০১ কোটি টাকা। পাশাপাশি চলতি বছরের মার্চে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির হিসাবে লেনদেন হয়েছিল ৪০ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা। পরের মাস এপ্রিলে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির হিসাবে লেনদেন হয়েছে ৩৭ হাজার ৯০৪ কোটি টাকা। সেই হিসাবে মার্চের তুলনায় এপ্রিলে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির হিসাবে লেনদেন কম হয়েছে ২ হাজার ৫১২ কোটি টাকা। একইভাবে চলতি বছরের এপ্রিলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা বাবদ বিতরণ করা হয়েছে ৪ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা। যা মার্চে ছিল ৪ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া এপ্রিলে বিভিন্ন পরিষেবার ২ হাজার ৬১৭ কোটি টাকার বিল পরিশোধ হয়, যা মার্চে ছিল ২ হাজার ১২৮ কোটি। এ ছাড়া মার্চে এমএফএসের মাধ্যমে দেশে ৮১৩ কোটি টাকার প্রবাসী আয় এসেছিল। আর পরের মাস এপ্রিলে এসেছে ৮৫৬ কোটি টাকা।

২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালুর মধ্য দিয়ে দেশে মোবাইল ফিন্যানশিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) যাত্রা শুরু হয়। এরপর ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে বিকাশ। বর্তমানে দেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার সিংহভাগই বিকাশের দখলে। এরপর নগদের অবস্থান। লেনদেন ছাড়াও মোবাইল ব্যাংকিংয়ে যুক্ত হচ্ছে অনেক নতুন নতুন সেবাও।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের মার্চে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিবন্ধিত গ্রাহকসংখ্যা ছিল ২২ কোটি ৪০ লাখ ১ হাজার ৪১২টি। আর পরের মাস এপ্রিলে নিবন্ধিত গ্রাহকসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২২ কোটি ৬৫ লাখ ৫ হাজার ৫৫৩টি। সেই এক মাসের ব্যবধানে গ্রাহকসংখ্যা বেড়েছে ২৫ লাখ। বর্তমানে বিকাশ, রকেট, ইউক্যাশ, মাই ক্যাশ, শিওর ক্যাশসহ নানা নামে ১৩টির মতো ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠান এমএফএস সেবা দিচ্ছে।

একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এমএফএসের হিসাব বাড়লেও লেনদেন কমেছে। অনেক ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের লেনদেনে সুযোগ বৃদ্ধির ফলে মোবাইল ব্যাংকিং পদ্ধতিতে লেনদেন কমেছে। তবে হঠাৎ করে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা থেকে নিম্নমুখী হওয়ার প্রকৃত কারণ জানতে আরও অপেক্ষা করা দরকার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে: সলিমুল্লাহ খান

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে মনঃক্ষুণ্ন বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত