Ajker Patrika

বেপজায় রিং শাইনের জমির ইজারা বাতিল

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
বেপজায় রিং শাইনের জমির ইজারা বাতিল

রিং শাইন টেক্সটাইলস লিমিটেডের জন্য বর্তমানে একটি গভীর সংকটের মুহূর্ত চলছে। পাওনা পরিশোধের জন্য যথেষ্ট মনোযোগ না দেওয়ায় বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেপজা) কোম্পানির বরাদ্দ করা পাঁচটি প্লটের জমির ইজারাচুক্তি বাতিল করেছে।

বেপজা কর্তৃপক্ষ গত ২২ ফেব্রুয়ারি রিং শাইনকে চিঠি দিয়ে জানায়, তাদের পাঁচটি প্লটের লিজ বাতিল করা হয়েছে এবং সাত দিনের মধ্যে জমি খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি, বেপজা তাদের হুঁশিয়ারি দেয় যে, প্লটগুলো খালি না করলে তা দখলে নেওয়া হবে।

রিং শাইনের কাছে বেপজার প্রায় ১২ দশমিক ৮ মিলিয়ন ডলার পাওনা রয়েছে, যা প্রায় ১৫৪ কোটি ৮০ লাখ টাকার সমান। এই বিপুল পরিমাণ টাকা বকেয়া থাকায় কোম্পানি কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে।

বেপজা জানিয়েছে, রিং শাইন দীর্ঘদিন ধরে এই টাকা পরিশোধ করেনি, যদিও তারা একাধিকবার টাকা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছে এবং বকেয়া পরিশোধের সুযোগও দিয়েছে। তবে, রিং শাইন দাবি করেছে যে, তারা বারবার আবেদন করেছে এবং তাদের সমস্যার সমাধান চেয়েছে, কিন্তু বেপজা কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে।

এদিকে, রিং শাইন এখন এই পরিস্থিতির মধ্যে ব্যবসার জন্য সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। কোম্পানির শেয়ারহোল্ডাররা ২৭ তম বার্ষিক সাধারণ সভায় এ বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁরা অব্যবহৃত আইপিও তহবিল থেকে ১০ লাখ মার্কিন ডলার বেপজার পাওনা পরিশোধের জন্য ব্যবহার করার অনুমোদন দিয়েছেন। তবে, এই প্রস্তাব এখনো বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বিবেচনায় রয়েছে।

কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তারা আশ্বস্ত করেছেন যে, তাঁরা এই সমস্যার সমাধানে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং শেয়ারহোল্ডারদের অযথা আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁরা বলেন, বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি না করাই ভালো, কারণ কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট এই সংকটের সমাধান করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

অন্যদিকে, রিং শাইনের চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে দেখা গেছে, কোম্পানির ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে এবং নগদ প্রবাহে সংকট সৃষ্টি হয়েছে। অক্টোবর-ডিসেম্বর ২০২৪ প্রান্তিকে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি ক্ষতি হয়েছে ৭১ পয়সা, যা গত বছর একই সময় ছিল ৫৫ পয়সা। এই পরিমাণ ক্ষতি ২৯ শতাংশ বেড়েছে। জুলাই-ডিসেম্বর ২০২৪ সময়ে শেয়ারপ্রতি ক্ষতি দাঁড়িয়েছে ১ টাকা ৫০ পয়সা, যা গত বছরের একই সময় ছিল ১ টাকা ৪১ পয়সা। অর্থাৎ ক্ষতি বেড়েছে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ।

এই সময়কালে, কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট অপারেটিং নগদ প্রবাহ (এনওসিএফপিএস) ঋণাত্মক ৯০ পয়সায় পৌঁছেছে, যা গত বছরের একই সময় ছিল ৩৬ পয়সা। অর্থাৎ, এই সময়ে কোম্পানির নগদ প্রবাহের অবনতি হয়েছে ১৫০ শতাংশ। ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত, কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভি) ঋণাত্মক ৯ টাকা ৫০ পয়সা ছিল, যা ৩০ জুন ২০২৪-এ ছিল ঋণাত্মক ৮ টাকা ০৩ পয়সা। এর থেকে স্পষ্ট হয় যে, কোম্পানির দায়বদ্ধতা তার সম্পদের তুলনায় বেশি, যা তাদের আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য উদ্বেগজনক।

২০১৯ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর রিং শাইন ১৫০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছিল। কিন্তু তালিকাভুক্তির এক বছর পরই ২০২০ সালে কোম্পানির মধ্যে সংকট শুরু হয়, যার ফলে মালিকপক্ষ উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। এর পর থেকে কোম্পানির দেনা ক্রমাগত বাড়তে থাকে। বিএসইসির নিরীক্ষায় জানা গেছে, কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকেরা বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন। এমনকি যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানির আড়ালেও অর্থ পাচার করা হয়েছে। এই চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি থেকে বোঝা যায়, রিং শাইনের সামনে বেশ কয়েকটি বড় সংকট অপেক্ষা করছে, যেগুলো তাদের ব্যবসা এবং আর্থিক পরিস্থিতির জন্য কঠিন পরীক্ষা হতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নবরাত্রির জন্য বছরজুড়ে অপেক্ষা, পিরিয়ডের কারণে পালন করতে না পেরে আত্মহত্যা

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে আরাকান আর্মির আপত্তি ও শর্ত

আ.লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ, খই-মুড়ির মতো বোমা ফুটছে জাজিরায়

অটোতে ফেলে যাওয়া ১৮ ভরি স্বর্ণালংকার ফিরিয়ে দিলেন কলেজছাত্র

পরকীয়া নিয়ে ঝগড়া, স্ত্রীর কাঠের আঘাতে স্বামী নিহত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত