Ajker Patrika

সব ভ্যাট কমিয়ে দিলে আয় আসবে কোত্থেকে, প্রশ্ন অর্থ উপদেষ্টার

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ­­
মতবিনিময় সভায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। ছবি: পিআইডি
মতবিনিময় সভায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। ছবি: পিআইডি

দেশের রাজস্ব খাত নিয়ে সরকার চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে, বিশেষত ভ্যাট-সংক্রান্ত বিষয়ে। ব্যবসায়ীরা ভ্যাট কমানোর দাবি তুললেও সব ভ্যাট কমিয়ে দিলে সরকারের আয়ের উৎস সংকুচিত হবে। অন্যদিকে, সরকারের ব্যয় বেড়েছে, পাশাপাশি ঋণ নেওয়ার শর্তও পূরণ করতে হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা ভ্যাট কমানোর পক্ষে হলেও বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তার বাজেট কাটছাঁট না করার শর্ত দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য রক্ষা করা কিংবা রাজস্ব বৃদ্ধির নতুন পথ কী হবে, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।

গতকাল রোববার সচিবালয়ে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রেমিট্যান্সের ভূমিকা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এসব কথা বলেন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হকের সঞ্চালনায় এবং সভাপতি ফসিহ উদ্দীন মাহতাবের সভাপতিত্বে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি, কিন্তু সব সংস্কার আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে আমরা একটা পদচিহ্ন রেখে যেতে চাই, যাতে ভবিষ্যৎ সরকারগুলো আমাদের নেওয়া উদ্যোগগুলো এগিয়ে নিতে পারে।’

রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে হুন্ডির বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মানুষের মধ্যে এখন ব্যাংকিং চ্যানেলের প্রতি আস্থা বাড়ছে। তবে এখনো সব টাকা বৈধ পথে দেশে আসে না। অনেকে বিদেশে ডলার রেখে দেন বা হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাঠান, যা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।’

সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সূচক নিয়ে কথা বলতে গিয়ে অর্থ উপদেষ্টা জানান, কিছুদিন আগেও বাংলাদেশের কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ও ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট নেগেটিভ ছিল। রপ্তানি প্রবৃদ্ধিও ছিল নিম্নমুখী। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি কিছুটা ইতিবাচক হয়েছে, সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ফিরতে শুরু করেছে। যদিও তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘এটি পুরোপুরি স্থিতিশীল হয়েছে বলে দাবি করা যাবে না।’

অবৈধ প্রবাসী কর্মীদের বিষয়ে সরকারের পরিকল্পনা প্রসঙ্গে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের অনেক প্রবাসী কর্মী অদক্ষ, ফলে তাঁরা উপযুক্ত বেতন পান না। ভারত ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশের কর্মীরা দক্ষ হয়ে বিদেশে যান, ফলে তাঁদের আয়ও বেশি। আমাদের এখন থেকে দক্ষ কর্মী তৈরি করে পাঠানোর দিকে জোর দিতে হবে।’

এই মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য দেন বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর জনপ্রিয় অ্যাপ ‘ট্যাপট্যাপ সেন্ড’ বাংলাদেশের অ্যাম্বাসেডর ও মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর মাহমুদ মনি। তিনি জানান, ট্যাপট্যাপ সেন্ড অ্যাপ ব্যবহার করে সহজে বিনা মূল্যে বাংলাদেশে টাকা পাঠানো যায়। প্রথম ট্রান্সফারে নির্দিষ্ট প্রোমোকোড ব্যবহার করলে গ্রাহকেরা ২০ £,২০€ বা ২০$ পর্যন্ত ইনস্ট্যান্ট বোনাস পেতে পারেন।

অর্থ উপদেষ্টা সভায় আরও বলেন, ‘আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে, কিন্তু কিছু না হওয়ার ধারণাটি সঠিক নয়। আমরা যে চেষ্টা করছি, তা অস্বীকার করা যাবে না। যদিও আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে এবং বড় ধরনের সংস্কার সম্ভব না-ও হতে পারে। তবে ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক সরকারগুলোর আরও সক্রিয় হতে হবে।’

অর্থ উপদেষ্টা জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশকে একটি কল্যাণভিত্তিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে হবে, যা মূলত রাজনৈতিক সরকারের দায়িত্ব। সরকারের আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য রক্ষা করা, শিক্ষকদের দাবিগুলো পর্যালোচনা করা এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার বিষয়েও তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত