বাজারে সবজির দাম চড়া, ডিম-মুরগির বেঁধে দেওয়া দামের তোয়াক্কা নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৯: ১৯
Thumbnail image

সরকার বদলের পর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহন ও কাঁচাবাজারগুলোতে চাঁদাবাজি অনেকটা কমে এসেছে। ফলে নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে আসবে এমনটা সবাই ভেবেছে। কিন্তু দাম তো কমেনি বরং নানা অজুহাতে কাঁচাবাজারে পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। গত এক সপ্তাহে সবজি, ডিম, মুরগিসহ নিত্যপণ্যের দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে ৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বন্যা ও বৃষ্টির কারণে নিত্যপণ্যের বাজারে প্রভাব পড়ছে। তবে বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বাজার নজরদারি কম থাকায় ফড়িয়ারা ভোক্তার পকেট কাটছে। 

আজ শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, বনশ্রীর মেরাদিয়া বাজারসহ বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে বেশির ভাগ সবজির দাম বেড়েছে। বাজারভেদে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ডিম ও মুরগি। সবজির বাড়তি দামের জন্য বন্যা ও বৃষ্টিকে দুষলেন কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা সোহেল রানা। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বন্যা ও বৃষ্টির কারণে সবজি চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। ফলে দাম কিছুটা বেড়েছে।’ 

সোহেল রানা জানান, পটল ও চিচিঙ্গা কেজিপ্রতি ৫০-৬০ টাকা বিক্রি করছেন, এই দুটি সবজি গত সপ্তাহে বিক্রি করেছেন ৩০ টাকায়। টমেটো ও গাজর বিক্রি করছেন কেজিপ্রতি দেড় শ টাকায়, গত সপ্তাহে বিক্রি করেছেন ১২০ টাকায়। 

আরেক সবজি বিক্রেতা মিনু বেগম জানান, ৫০ টাকার লাউ এখন ৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে, ২০ টাকার কাঁচা কলার হালি এখন ৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ১০ টাকার শাকের আঁটি বেড়ে ১২ থেকে ১৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। তবে রাজধানীর অন্য কাঁচাবাজারগুলোতে আরও চড়া দামে বিক্রি হয় নিত্যপণ্য। 

রাজধানী মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা অমিত বিশ্বাস কাঁচাবাজারের কেনাকাটা সেরেছেন কারওয়ান বাজার থেকে। তিনি জানান, মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারসহ রাজধানীর অন্য কাঁচাবাজারের তুলনায় কারওয়ান বাজারে কিছুটা কমদামে সবজি পাওয়া যায়। প্রতিকেজিতে ৫-১০ টাকা সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য কিনতে পেরেছেন। 

বনশ্রী মেরাদিয়া কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম জানান, মিষ্টি কুমড়োর কেজি ৬০ টাকা বিক্রি করছেন। তবে দুদিন আগেও ৪০-৫০ টাকা দামে বিক্রি করেছেন। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারভেদে কাঁচামরিচ ২০০ আবার কোথাও ২৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে ১৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আলু কেজিপ্রতি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি ১০০ থেকে ১১০ টাকা এবং ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ আগের মতোই ১১০ থেকে ১১৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। তবে দেশি রসুন ২০০ থেকে ২১০ এবং আমদানি করা রসুন ২১০ থেকে ২২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে একই দামে রসুন বিক্রি হয়েছিল। 

এদিকে একদিনের ব্যবধানে রাজধানী কাঁচাবাজারগুলোতে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে ডজনপ্রতি ডিমের দাম বেড়েছে ৫ থেকে ১৫ টাকা। অথচ এই দুই পণ্যের দামই নির্ধারণ করে দিয়েছিল সরকার। যার কোনোটিই বিক্রি হচ্ছে না বেঁধে দেওয়া সেই দামে। 

কারওয়ান বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী মো. মিলন জানান, মুরগির কেনা দামের ওপর ভিত্তি করে বিক্রির দাম নির্ধারণ করেন। ফলে মুরগির দাম কমা-বাড়া পাইকারি ব্যবসায়ীরা ঠিক করেন। এখন ব্রয়লার মুরগি কেজিপ্রতি ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগে বিক্রি হয়েছে ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা দামে। সোনালিকা বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ১৫০ টাকা দামে। আগে কেজিপ্রতি ১০-১৫ টাকা কমে বিক্রি হয়েছিল। 

দিনাজপুর ও ঝিনাইদহ থেকে সবজি এনে ঢাকায় পাইকারি বিক্রি করেন গাউছিয়া ভান্ডার আড়তের মালিক মোস্তফা কামাল। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, এখন পথে পথে পুলিশকে পয়সা দেওয়া লাগে না। আগে গাড়ি আটকাইয়া টাকা নিত। এখনো রাজনৈতিক দলগুলো টেকনিকে টাকা নেয়, তবে আগের মতো না। সবজির দাম বাড়ার পেছনে উৎপাদন ঘাটতিকে দায়ী করে এই ব্যবসায়ী বলেন, সামনে শীতের মৌসুমে সবজির দাম কমে আসবে। 

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বাজার নজরদারি কম থাকায় পণ্য প্রতি দামে ৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। তাছাড়া একেক বাজারে একেক দামে পণ্য বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা যে বৃষ্টি ও বন্যার অজুহাত দিচ্ছে, তা যৌক্তিক না। বাজার নিয়ন্ত্রণে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ সরকারের দায়িত্বশীল এজেন্সিগুলোর তৎপরতা নেই বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত