৪০ কোটি ডলারের মুদ্রা বিনিময় চুক্তি করল ভারত–মালদ্বীপ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ২১: ০৭
আপডেট : ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১০: ৩৯

দেউলিয়ার দ্বারপ্রান্তে থাকা মালদ্বীপ ভারতের সঙ্গে ৪০ কোটি মার্কিন ডলার বা ৩ হাজার কোটি রুপির একটি মুদ্রা বিনিময় চুক্তি করেছে। মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজ্জুর ভারতে প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরের সময় এই চুক্তিটি ঘোষণা করা হলো। এর মধ্য দিয়ে দেশ দুটির ফাটল ধরা সম্পর্ক আবার জোড়া লাগবে বলে আশা করা হচ্ছে। 

ভারত ও মালদ্বীপ একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিভিন্ন মুদ্রায় ঋণের শর্ত ও সুদ নিয়ে আলোচনা এগিয়ে নিচ্ছে, যাতে মালদ্বীপের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কাটিয়ে উঠতে সহায়ক হয়। এ ছাড়া ভারত মালদ্বীপকে দেওয়া ১০০ মিলিয়ন ডলারের ট্রেজারি বিল পুনর্গঠনে রাজি হয়েছে।

মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা ও ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের প্রভাব কমাতে দিল্লি মুইজ্জুর সঙ্গে এই মুদ্রা বিনিময় চুক্তি করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

ভারতের কাছে এই অর্থনৈতিক সহযোগিতা পাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় মুইজ্জু বলেন, ‘সহযোগিতার জন্য ভারতের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। ৩০ বিলিয়ন রুপি সহযোগিতার পাশাপাশি ৪০০ মিলিয়ন (৪০ কোটি) ডলার সমমানের দ্বিপক্ষীয় মুদ্রা বিনিময় চুক্তি এই মুহূর্তে বৈদেশিক রিজার্ভের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।’

ঘোষিত অন্য দ্বিপক্ষীয় চুক্তিগুলো হলো—মালদ্বীপে ন্যাশনাল পেমেন্ট করপোরেশন অব ইন্ডিয়ার ইস্যুকৃত রু–পে (RuPay) কার্ড চালু করা। এটি ভারতীয় ব্যাংকগুলোর একটি কনসোর্টিয়ামের মালিকানাধীন আর্থিক পরিষেবা। ভারত মালদ্বীপে একটি বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্পেও সহায়তা করবে। 

প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু গতকাল রোববার সন্ধ্যায় দিল্লি পৌঁছান। সেদিনই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর তাঁর সঙ্গে বৈঠক করেন।

এক দিন বিশ্রামের পর আজ সোমবার রাজভবনে প্রেসিডেন্ট দ্রৌপদী মুর্মু এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানান। এরপরে তিনি রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আলোচনা করেন। 

দুই নেতার সাক্ষাতের পর একটি যৌথ বিবৃতিতে নরেন্দ্র মোদি বলেন, দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপের ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ নয়াদিল্লি। একই সঙ্গে তিনি তাঁর সরকারের ‘প্রতিবেশীকে অগ্রাধিকার’ পররাষ্ট্র নীতির ওপর জোর দেন। 

প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, ভারত সব সময় মালদ্বীপের পাশে থেকেছে। অর্থনৈতিক বা চিকিৎসা–সংক্রান্ত যেকোনো প্রয়োজনে সবার আগে সাড়া দিয়েছে, এগিয়ে গেছে। কোভিডের সময় ছয় লাখ জনসাধারণকে প্রতিষেধক সরবরাহ করেছে। ভবিষ্যতেও ভারত এই সহায়তা করে যাবে।

ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিতে মালদ্বীপের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন নরেন্দ্র মোদি।

গত বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন মুইজ্জু। তাঁর নির্বাচনী প্রচারে প্রধান বার্তা ছিল ‘ভারত বিরোধিতা’। তাঁর নির্বাচনী স্লোগানই ছিল ‘আউট ইন্ডিয়া’। চীনপন্থী বলে পরিচিত এই নেতা জয়ের পর রেওয়াজ অনুযায়ী প্রথম বিদেশ সফরে ভারতে না এসে বেছে নিয়েছিলেন তুরস্ক। এরপর যান চীন। 

প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পরই তিনি মালদ্বীপে অবস্থানরত ৯০ ভারতীয় সেনাকে ফেরত যাওয়ার সময়সীমা বেঁধে দেন। ভারত সেই দাবি মেনে সেনা সরিয়ে নেয়। যদিও এর আগে থেকেই সম্পর্ক স্বাভাবিক করে তুলতে মুইজ্জু সচেষ্ট হন। 

গত বছর মালদ্বীপের মন্ত্রিসভার তিন সদস্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্পর্কে সমালোচনামূলক মন্তব্য করলে তাঁদের বহিষ্কার করেন মুইজ্জু।

তবে প্রথম ভারত সফরে এসে ‘ইন্ডিয়া আউট’ অ্যাজেন্ডা অস্বীকার করেছেন মুইজ্জু। আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা সুরক্ষার জন্য তিনি ভারতকে মূল অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ইন্ডিয়া আউট নয়, মালদ্বীপ বিদেশি সৈন্য চায় না, এটুকুই।’ 

সামগ্রিকভাবে, উভয় পক্ষই এই মুইজ্জুর প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরের ফলাফল নিয়ে সন্তুষ্ট বলে মনে হচ্ছে। স্বাক্ষরিত চুক্তি এবং মন্তব্যগুলো কূটনৈতিক দ্বন্দ্বের পরে বন্ধুত্বের দিকে মোড় নিতে পারে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত