Ajker Patrika

মালয়েশিয়ার হালাল শিরোপা কেড়ে নিতে পারে বৌদ্ধ থাইল্যান্ড

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২০ অক্টোবর ২০২৪, ১৭: ৪১
মালয়েশিয়ার হালাল শিরোপা কেড়ে নিতে পারে বৌদ্ধ থাইল্যান্ড

করোনা মহামারির পর থেকে অর্থনীতির চাকা সচল করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে পর্যটননির্ভর অর্থনীতির দেশ থাইল্যান্ড। মুসলিম পর্যটক টানতে হালাল খাবার ও রেস্তোরাঁর প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটি। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে এশিয়ার ‘হালাল শিরোপা’ ধরে রাখা প্রতিবেশী মুসলিমপ্রধান মালয়েশিয়াকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ছে বৌদ্ধপ্রধান থাইল্যান্ড। হালাল খাবারের বাজার বিকশিত হলে ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতি চাঙা হবে বলে দেশটির আশা। 

তবে মালয়েশিয়াকে টেক্কা দেওয়া অতটা সহজ হবে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলছেন, মুসলিম দেশ ও পর্যটকদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে বিপদ ডেকে আনতে পারে থাইল্যান্ড। কেননা হালাল পণ্য বিক্রির সনদ জালিয়াতি করে বা মান নিয়ন্ত্রণ না করে বাজারে নকল হালাল পণ্য বিক্রি হতে পারে। সেক্ষেত্রে হিতে বিপরীত হতে পারে থাই সরকারের এই উদ্যোগ। তাছাড়া, মুসলিম দেশ হিসেবে মালয়েশিয়ায় প্রাতিষ্ঠানিকভাবে হালাল বাজারের সুদৃঢ় ভিত্তি আছে।      

চলতি বছরের জুলাই মাসে থাই সরকার ‘হালাল শিল্প’ পরিকল্পনা উন্মোচন করেছে, যার লক্ষ্য থাই পণ্যের প্রচার এবং এ শিল্পের মানকে শক্তিশালী করা। চার বছর মেয়াদি এ পরিকল্পনার আওতায় একটি থাই দ্বীপকে ‘হালাল উপত্যকা’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হবে। এটি থাইল্যান্ডের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দক্ষিণের কোনো প্রদেশ হতে পারে। এ পরিকল্পনা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

222আন্তর্জাতিক অর্থনীতির বিশেষজ্ঞ এবং ইন্টেলিজেন্ট রিসার্চ কনসালটেন্সি কোম্পানির উপদেষ্টা আত পিসানওয়ানিচ আল-জাজিরাকে বলেন, খাদ্য, পানীয় ও কৃষি খাতে থাইল্যান্ডের শক্ত ভিত্তি থাকলেও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় হালাল খাদ্যের বাজার হিসেবে ‘শিরোপা’ দীর্ঘদিন ধরে মালয়েশিয়ার দখলে। মুসলিমপ্রধান দেশ হওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যের পর্যটকদের কাছে দেশটির বিশ্বাসযোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি। এমন আস্থা ও স্বীকৃতি পেতে থাইল্যান্ডের বেশ সময় লাগবে। 

ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, থাইল্যান্ডে হালাল সনদধারী প্রায় ১৫ হাজার কোম্পানি ১ লাখ ৬৬ হাজার পণ্য বাজারজাত করে। আর হালাল রেস্তোরাঁ রয়েছে  ৩ হাজার ৫০০টি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে ওআইসিভুক্ত দেশগুলোতে হালাল পণ্য রপ্তানিতে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার পরেই থাইল্যান্ডের অবস্থান। 

সরকারি তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালের প্রথম আট মাসে ওআইসি দেশগুলোর বাজারে চিনি, চাল এবং হিমায়িত মুরগিসহ অন্যান্য হালাল পণ্য রপ্তানি করে প্রায় ৪ দশমিক ১ বিলিয়ন বা ৪১০ কোটি ডলার আয় করেছে থাইল্যান্ড। দেশটির প্রায় ৯৩ শতাংশ মানুষ বৌদ্ধ। হালাল পণ্যের বিকাশমান চাহিদাকে কাজে লাগাতে সংখ্যালঘু মুসলিম দেশগুলোকে অনুসরণ করছে দেশটি। 

হালাল অর্থনীতি বিষয়ে ওআইসির ২০২২ সালের প্রতিবেদন অনুসারে, হালাল পণ্যের বৃহত্তম রপ্তানিকারক ব্রাজিল, চীন, ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ওআইসিবহির্ভূত দেশগুলো। ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর আমদানির মোট ৮০ শতাংশেরও বেশি এসেছে এসব দেশ থেকে। 

333২০৬০ সালের মধ্যে পৃথিবীতে মুসলিমদের সংখ্যা ৩ বিলিয়ন বা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশ হবে বলে ওআইসির প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

থাই মুসলিম ব্যবসায়ীদের সংগঠনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াদ গানসুন আল জাজিরাকে বলেন, থাইল্যান্ড হলো সরবরাহের কেন্দ্র। মালয়েশিয়ার মতো মুসলিম দেশগুলোতে যেসব খাদ্য উৎপাদন করা হয়, প্রতিযোগিতা বাড়াতে এখানেও সেসব হালাল খাদ্য উৎপাদন করা হচ্ছে।

গানসুন বলেছেন, থাইল্যান্ডের এ যাত্রায় সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধক রাস্তার পাশের খাবারের দোকানগুলো। এসব দোকান ভুয়া হালাল সনদ লাগিয়ে থাইল্যান্ডের ওপর মুসলিম পর্যটকদের আস্থা বিনষ্ট করতে পারে। 

মাস্টারকার্ড-ক্রিসেন্ট্রেটিং গ্লোবাল মুসলিম ট্রাভেল ইনডেক্সের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মুসলিমবান্ধব গন্তব্যের মধ্যে নন-ওআইসি ক্যাটাগরিতে থাইল্যান্ড নেতৃস্থানীয়। এছাড়া সামগ্রিকভাবে নন-ওআইসি গন্তব্যের ক্ষেত্রে সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য, তাইওয়ান ও হংকংয়ের পরে মধ্যে পঞ্চম স্থানে রয়েছে দেশটি। 

ওই সূচকের প্রতিবেদনে বলা হয়, বছরের পর বছর ধরে মুসলিম পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য সমন্বিত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে থাইল্যান্ড। হালাল খাদ্য উৎপাদন ও হালাল পণ্য পরিবেশনায় অগ্রণী ভূমিকা নিয়ে দেশটি মুসলিম সম্প্রদায়ের উপকার করেছে। প্রায় সবখানে বিশেষ করে উল্লেখযোগ্য পর্যটন হটস্পটগুলোতে হালাল খাদ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। 

ফুয়াদ গানসুন আরও বলেন, প্রতুনামে (ব্যাংককের পাইকারি বাজার) যদি অপারেটররা হালাল খাবার বিক্রি না করে, তবে তাদের গ্রাহক— যারা বেশির ভাগই পর্যটক— অর্ধেক কমে যেতে পারে। পর্যটকেরা থাইল্যান্ডে ভ্রমণে আস্থা রাখে। বেশির ভাগ মুসলিম পর্যটকেরা রাস্তার খাবারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকেন। তবে কখনো কখনো শপিং মলেও এটি ঘটে।’ 

44তিনি বলেন, জনপ্রিয় ফাস্ট ফুড চেইনসহ কিছু বড় খাদ্য কোম্পানি হালাল পণ্য উৎপাদনে বিনিয়োগ করতে ব্যর্থ হয়েছে। কিছু ফ্রায়েড চিকেনের দোকান দেখে মনে হতে পারে, এটি অপচয়ের বিনিয়োগ। কিন্তু অর্থনৈতিক সুবিধা নিতে চাইলে এমন ধারণা পোষণ ভুল হবে। কারণ, থাইল্যান্ড পর্যটনের শীর্ষ দেশ হতে চাইলে এমন মনোভাব বাধা হয়ে দাঁড়াবে। 

থাইল্যান্ডের প্রধান মুরগি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সাহা ফার্মস। হালাল সনদ অর্জনে যেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রচেষ্টা চালিয়েছে, তাঁদের অন্যতম এটি। সাহা ফার্মস গ্রুপের রপ্তানি ও বিপণনের সভাপতি জারুওয়ান ছোটতাওয়ান বলেন, হালাল মুরগির চাহিদা থেকেই কোম্পানিটি সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যে প্রবেশ করেছে। 

আল জাজিরাকে তিনি বলেন, ‘আমাদের মুরগির খাবার ও ঘাস থাইল্যান্ডের হালাল সনদ পাওয়া। উপরন্তু, মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমাদের নিরীক্ষা করা হয়। এ বছর আমরা হালাল ব্র্যান্ডিং জোরদার করতে চাই, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের বিপণন পদ্ধতির অংশ হিসেবে।’ 

থাইল্যান্ডের সেন্ট্রাল ইসলামিক কাউন্সিলের অফিস পরিচালিত ওয়েবসাইট হালাল ডটকম থাইল্যান্ড। এই সাইটে নিত্যপণ্য থেকে শুরু করে মরিচ বাটা, মাছ ভর্তা, বাদামের দুধ ও বাবল গামসহ হাজার হাজার থাই হালাল পণ্য পাওয়া যায়। 

ব্যাংককের ইসলামিক অ্যাফেয়ার্স কমিটির মতে, হালাল সনদের জন্য ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ১০ হাজার বাথ বা ৩০০ ডলার খরচ করতে হয়। এছাড়াও পর্যায়ক্রমিক সনদ যাচাই, সনদের মেয়াদ বৃদ্ধিসহ কাগজপত্রের জন্য বাড়তি ফি নেওয়া হয়। 

পিসানওয়ানিচ বলেন, ‘হালাল সার্টিফিকেট থাকা যুক্তিযুক্ত। কিন্তু থাইল্যান্ড রাতারাতি ‘হালাল হাব’ হিসেবে মুসলিম পর্যটকদের মধ্যে আস্থা তৈরি করতে পারবে না।’

আল–জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন আবদুল বাছেদ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশকে ভেঙে ফেলার আহ্বান ত্রিপুরার রাজপরিবার প্রধানের

পরিবারের সামনে পুলিশ কর্মকর্তা লাঞ্ছিত, স্বেচ্ছাসেবক দলের ৩ নেতা-কর্মী আটক

গ্রেপ্তার আসামিকে ছিনিয়ে নিতে পুলিশের ওপর হামলা, বিএনপির ১৭ নেতা-কর্মী আটক

তখন অন্য একটা সংগঠন করতাম, এখন বলতে লজ্জা হয়: জামায়াতের আমির

বাংলাদেশে-ভারত সম্পর্কের অবনতিতে দায়ী মোদি সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতা: কংগ্রেস

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত