Ajker Patrika

৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ ছাড়াই আইপিওতে আবেদনের সুপারিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৯ মার্চ ২০২৫, ১৭: ৩৩
৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ ছাড়াই আইপিওতে আবেদনের সুপারিশ

পুঁজিবাজারে নতুন কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওতে আবেদনের শর্ত হিসেবে সেকেন্ডারি মার্কেটে ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ থাকার বাধ্যবাধকতা প্রত্যাহার হতে যাচ্ছে। পুঁজিবাজার সংস্কারের লক্ষ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) গঠন করা টাস্কফোর্স এই সুপারিশ করেছে। পাশাপাশি আইপিও আবেদনে উচ্চ সম্পদশালীদের জন্য কোটা সংরক্ষণেরও প্রস্তাব করা হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসি ভবনে সংবাদ সম্মেলনে আইপিও সংক্রান্ত এসব সুপারিশ উপস্থাপন করে টাস্কফোর্স। টাস্কফোর্সের সহযোগিতায় গঠিত ফোকাস গ্রুপের সদস্য প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও মো. মনিরুজ্জামান সুপারিশগুলো তুলে ধরেন।

এ সময় টাস্কফোর্সের সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও বেসরকারি ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির (এমআরএ) নির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এ এম মাজেদুর রহমান, নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোম্পানির জ্যেষ্ঠ অংশীদার এ এফ এম নেসারউদ্দীন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিএসই বিভাগের অধ্যাপক মো. মোস্তফা আকবর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল আমিন এবং টাস্কফোর্সের সহযোগিতায় গঠিত ফোকাস গ্রুপের সদস্য মিডওয়ে সিকিউরিটিজের এমডি আশেকুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ শর্ত প্রত্যাহারের যুক্তি হিসেবে মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আইপিওর ক্ষেত্রে সেকেন্ডারি মার্কেটে ৫০ হাজার টাকার বিনিয়োগ থাকতে হবে, এমনটা আগে বাংলাদেশে ছিল না। আমাদের আঞ্চলিক অন্যান্য পুঁজিবাজারেও এটা নেই। একটা সময়ে সেকেন্ডারি বাজারে তারল্য সরবরাহ বাড়াতে (ফান্ড পুশ) এটা যখন করা হয়েছিল। তাৎক্ষণিক কিছু অ্যাকাউন্ট খুলে কিছু অর্থ ঢুকেছিল। কিন্তু, এতে বাজার স্থিতিশীল হয়নি। বাজার স্থিতিশীল না হওয়ার ডজনখানেক কারণ থাকলে এটাও একটা কারণ।’

অধ্যাপক হেলাল যোগ করেন, ‘আমরা চাচ্ছি যে বাজারটা যেন দীর্ঘ মেয়াদে একটু স্থিতিশীল জায়গায় যায়। আমরা দীর্ঘ মেয়াদে স্ট্যান্ডার্ড প্র্যাকটিস দেখে, সেটাও আবার কানাডা বা আমেরিকার নয়, আমাদের আঞ্চলিক জায়গা, যাদের সঙ্গে আমাদের সাংস্কৃতিক মিল রয়েছে, সেগুলো দেখে করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আইপিও এবং সেকেন্ডারি মার্কেটের শেয়ার—পুঁজিবাজারের দুইটা প্রোডাক্ট। দুইটা প্রোডাক্ট হলে আমি কেন একটা মার্কেটের অংশগ্রহণকারীকে জোর করে বাঁধব আরেকটা মার্কেটে যাওয়ার জন্য।’

টাস্কফোর্সের সুপারিশে বলা হয়েছে, হাজার কোটি টাকার বেশি আয় করে এমন বহুজাতিক, সরকারি ও বড় কোম্পানির ক্ষেত্রে সরাসরি তালিকাভুক্তি সুবিধা চালু করা যেতে পারে। তাতে বাজারে ভালো কোম্পানি আসার পথ সহজ হবে। এ ক্ষেত্রে ন্যূনতম ২৫ শতাংশ শেয়ার ছাড়ার যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে, সেটি কমিয়ে ১০ শতাংশ করারও সুপারিশ করা হয়। বর্তমানে সরাসরি তালিকাভুক্তির সুবিধাটি সরকারি নির্দেশনার আলোকে দেওয়া হয়।

আইপিওর ক্ষেত্রে উচ্চ সম্পদশালীদের জন্য ১৫ শতাংশ কোটা সুবিধা চালুরও সুপারিশ করেছে টাস্কফোর্স। তারা বলছে, উচ্চ সম্পদশালী ব্যক্তিরা আইপিওতে দুই লাখ টাকার বেশি আবেদন করতে পারবেন। তাঁদের জন্য ১৫ শতাংশ কোটা থাকবে। আর ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারীরা দুই লাখ টাকার কম আবেদন করতে পারবেন। ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য আইপিওতে ৩০ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত থাকবে।

একদিকে ৫০ হাজার টাকার বিনিয়োগ শর্ত প্রত্যাহার করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য আইপিওর দ্বার উন্মুক্ত করা হচ্ছে, অন্যদিকে ৩০ শতাংশ কোটা নির্ধারণ করে দিয়ে তাঁদের অংশ কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি সাংঘর্ষিক হয়ে গেল কি না?—এমন প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক আল-আমিন বলেন, ‘আমরা একদিকে উন্মুক্ত করে দিচ্ছি, অন্যদিকে সিলিং কমিয়ে নিয়ে আসছি। এর কারণ, প্রাইস নির্ধারণের বিষয়টা এলিজেবল ইনভেস্টরদের হাতে থাকে। এখন তাঁদের অংশ কম থাকে দেখে তাঁরা দায়সারাভাবে দাম নির্ধারণ করেন। এরপর আবার ২০ শতাংশ ডিসকাউন্ট দেওয়া হয়। তার মানে কী? একটা দাম নির্ধারণ করে আবার ডিসকাউন্ট দেওয়ার মানে হলো দামটা যৌক্তিক (ফেয়ার) নয়। সেই পয়েন্ট থেকে এটা করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পারসেনটেজ বাড়ালে তাঁদের (এলিজেবল ইনভেস্টর) স্টেক যখন বাড়বে, আর যখন ৩ মাসের লক দেওয়া হচ্ছে ৫০ শতাংশ শেয়ারে, তখন চাইলেও তাঁরা অ্যাবনরমাল প্রাইসিং করতে পারবে না। কারণ, আপনাকে এক্সিট নিতে হবে। দুইটাকে চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স করার জন্য এটা করা হয়েছে।’

আইপিও অনুমোদনের ক্ষেত্রে স্টক এক্সচেঞ্জের ক্ষমতায়ন সম্পর্কে এ এফ এম নেসারউদ্দীন বলেন, ‘প্রসপেক্টাস অ্যাপ্রুভ করবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। স্টক এক্সচেঞ্জ অনুমোদনের পরেই বিএসইসি চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে। ডিএসই বাতিল করলে বিএসইসি আর এগোবে না। আগে ছিল, টপ ডাউন। এখান (বিএসইসি) থেকে হতো। আমরা বলছি, এখন থেকে আর না।’

পুঁজিবাজারের অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে চায় বলে জানিয়েছে টাস্কফোর্স। এ বিষয়ে এ এফ এম নেসারউদ্দীন বলেন, ‘মার্কেট ইন্টারভেনশন আমরা পুরোপুরি বন্ধ করতে চাই। মার্কেট ইন্টারভেনশন যতবার করা হয়েছে, দীর্ঘ মেয়াদে সেগুলোর কোনো (ইতিবাচক) ইমপ্যাক্ট আসেনি। মার্জিন রুল ছিল, সেটা অনুসরণ করা হয়নি। যখন জিজ্ঞেস করা হয়েছে (কোনো প্রতিষ্ঠানকে), অনুসরণ করেননি কেন? তখন বলেছে, বিএসইসি থেকে মৌখিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। রেগুলেটরের পক্ষ থেকে ইন্টারভেনশন না হয়, সেটাতে আমরা জোর দিয়েছি।’

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত