Ajker Patrika

চীনে নিষিদ্ধ ক্যালভিন ক্লেইন ও টমি হিলফিগার, আতঙ্কে মার্কিন ব্যবসায়ীরা

অনলাইন ডেস্ক
ছবি: এএফপি
ছবি: এএফপি

চীনের বিভিন্ন পণ্য ও প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর চীনা পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। চীনও যুক্তরাষ্ট্রের তেল, গ্যাস ও কৃষি সরঞ্জামের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে। কিন্তু মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি পিভিএইচ করপোরেশনকে চীন কালোতালিকাভুক্ত বা নিষিদ্ধ করায় এ পাল্টাপাল্টিতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। কারণ এই কোম্পানির অধীনে বিশ্বের শীর্ষ দুই ফ্যাশন ব্র্যান্ড ক্যালভিন ক্লেইন ও টমি হিলফিগার চীনে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। আর এ ঘটনায় মার্কিন ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে চীন।

ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, জাতীয় নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে প্রথমবারের মতো দুই মার্কিন কোম্পানি—পিভিএইচ করপোরেশন (ক্যালভিন ক্লেইন ও টমি হিলফিগারের মালিক) এবং ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক বায়োটেক প্রতিষ্ঠান ইলুমিনাকে—‘অনির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে চীন। এ সিদ্ধান্তের ফলে এখন থেকে চীনা কর্তৃপক্ষ মার্কিন কোম্পানিগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারবে।

বাণিজ্য বিশ্লেষকদের মতে, এ পদক্ষেপের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে এখন সরাসরি মার্কিন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো চলে এসেছে। বিশ্ববাজার এবং বৈশ্বিক অর্থনীতিতে যা একটি বড় প্রভাব ফেলতে যাচ্ছে।

আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন চায়নার প্রেসিডেন্ট মাইকেল হার্ট বলেন, ‘অন্য কোম্পানিগুলো এখন আমাদের কাছে পরামর্শ চাইছে—তারা জানতে চাচ্ছে, তাদের পরবর্তী লক্ষ্য কী হতে পারে? যদি তাদের চীন থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হয়, তাহলে সেটার তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব কী হতে পারে?’

চীনের এ নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা এমন একসময়ে এল, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনা আমদানির ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। এর প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গুগলের বিরুদ্ধে অ্যান্টি ট্রাস্ট (প্রতিযোগিতাবিরোধী) তদন্ত শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে দেশটি। সেই সঙ্গে শুল্কনীতি পরিবর্তন করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা কয়লা এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর ১৫ শতাংশ এবং অপরিশোধিত তেল, কৃষি যন্ত্রপাতি, পিকআপ ট্রাক ও বড় ইঞ্জিনের গাড়ির ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে চীন। ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে এ সিদ্ধান্তটি কার্যকর হয়।

চীনের অভিযোগ, পিভিএইচ ও ইলুমিনা চীনা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে। তবে চীন এখনো এই অভিযোগের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়নি বা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কী ধরনের নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে, সে সম্পর্কেও কিছু জানায়নি।

চীনে ব্যবসা করা মার্কিন কোম্পানিগুলো আগেই দেশটির কঠোর নিয়মকানুন ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে চাপে ছিল। আমেরিকান চেম্বার অব কমার্সের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, তাদের সদস্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৩০ শতাংশই চীন থেকে ব্যবসার কিছু অংশ সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে বা ইতিমধ্যেই তা শুরু করেছে।

‘অনির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান’ বা নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া চালু করে চীন মূলত যুক্তরাষ্ট্রের ‘এনটিটি লিস্ট’-এর অনুকরণ করেছে। যার মাধ্যমে ওয়াশিংটন মানবাধিকার লঙ্ঘন বা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকির অভিযোগে চীনা কোম্পানিগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

পিভিএইচ করপোরেশন বলেছে, তারা সব আইন মেনে চলেছে। কিন্তু এরপরও চীনের এমন সিদ্ধান্তে ‘অবাক ও হতাশ’। প্রতিষ্ঠানটি চীনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের আশা করছে।

ইলুমিনার সিইও জ্যাকব থাইসেন বলেছেন, তাঁরা চীনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করছেন এবং বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছেন। কোম্পানিটির জন্য চীনের বাজার গুরুত্বপূর্ণ, কারণ দেশটি তাদের মোট বিক্রির প্রায় ৭ শতাংশ সরবরাহ করে।

এদিকে, চীনের স্থানীয় বায়োটেক কোম্পানিগুলো ইলুমিনার বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপকে নিজেদের জন্য সুযোগ হিসেবে দেখছে। ইলুমিনার বিকল্প হিসেবে চীনা প্রতিষ্ঠান জিনমাইন্ড এবং এমজিআই কম দামে যন্ত্রপাতি সরবরাহের প্রস্তাব দিচ্ছে।

জিনমাইন্ডের প্রধান অপারেটিং অফিসার ঝো ঝিলিয়াং বলেছেন, ‘এটি স্থানীয় সিকোয়েন্সিং মেশিন প্রস্তুতকারকদের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ।’

বিশ্লেষকেরা বলছেন, প্রতিশোধমূলক বাণিজ্যনীতির ক্ষেত্রে চীন অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে পারে। যাতে অর্থনীতিতে অতিরিক্ত নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে। কারণ, চীনে পিভিএইচের প্রায় ১ হাজার কর্মী রয়েছে।

টমি হিলফিগারের এক বিক্রয়কর্মী বলেছেন, ‘আমরা আমাদের চাকরি নিয়ে কিছুটা চিন্তিত। আমাদের ভবিষ্যৎ কী, আমরা এখনো কিছুই জানি না।’

আবার চীনের অনেক ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি ইলুমিনার জিন সিকোয়েন্সিং মেশিন ব্যবহার করে। এ নিষেধাজ্ঞার ফলে তাদের ওপরও প্রভাব পড়তে পারে।

একজন ফ্যাশন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, চীন সাধারণত শাস্তির জন্য ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করে। কারণ কোনো বড় প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্যবস্তু করলে কর্মসংস্থানের ওপর প্রভাব পড়তে পারে। তবে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্সের মাইকেল হার্ট বলেন, চীন একদিকে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে চায়; কিন্তু অন্যদিকে এ রকম সিদ্ধান্ত নিয়ে উল্টো নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে।

চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য সংঘাতের এই নতুন অধ্যায় বিশ্বব্যাপী ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ‘অনির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান’ হিসেবে তালিকাভুক্তি কত দূর যাবে এবং এর প্রভাব কতটা গভীর হবে, তা এখনো অনিশ্চিত। তবে এটি স্পষ্ট, বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে উত্তেজনা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর জন্যও ঝুঁকি বাড়ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাসা ভাড়ার টাকা নেই, অফিসের টয়লেটেই থাকছেন চীনা তরুণী

ঈদের মোনাজাতে খালেদা জিয়ার নাম না বলায় ইমামকে হেনস্তা, চাকরিচ্যুতির হুমকি

ঈদগাহে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান: আওয়ামী লীগ-বিএনপি সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধসহ আহত ৫

কোম্পানি দেউলিয়া, দেড় কোটি মানুষের ডিএনএ ডেটার এখন কী হবে

ঈদের নামাজের মধ্যে ইমামকে হত্যাচেষ্টা, চাপাতিসহ যুবক আটক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত