রংপুরের পীরগাছায় দুর্গাপূজার ডিউটিতে আনসার নিয়োগে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠছে। উপজেলার ৭৯টি পূজামণ্ডপের নিরাপত্তার জন্য জেলা কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে নামেমাত্র যাচাই-বাছাই করে ২৩৭ জন পুরুষ ও মহিলা আনসার বাছাই করা হয়। পরে তিন ইউনিয়ন কমান্ডারের মাধ্যমে উপজেলা ভিডিপি কর্মকর্তা ও প্রশিক্ষক আলী আজম জেলা কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করার কথা বলে ১৪৩ জন আনসার নিয়োগ দেন। এই ১৪৩ জন আনসারের কাছ থেকে ৫ শ থেকে ৭ শ টাকা করে হাতিয়ে নেন উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা ফারজানা সুমি, নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হামিদা বেগম এবং উপজেলা ভিডিপি কর্মকর্তা ও প্রশিক্ষক আলী আজম। বিভিন্ন পূজামণ্ডপে দায়িত্বরত আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে এসব অনিয়মের তথ্য।

জানা গেছে, চলতি দুর্গাপূজার নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের জন্য ৩৮০ জন আনসার ও ভিডিপি সদস্য নিয়োগে গত ২৫ সেপ্টেম্বর নামে মাত্র যাচাই-বাছাই করা হয়। জেলা অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা সার্কেল অ্যাডজুট্যান্ট (সিএ) রাসেল আহম্মেদ ও প্রবীর কুমার রায়ের উপস্থিতিতে ২৩৭ জনকে বাছাই করা হয়। বাকি ১৪৩ জনকে পরদিন ২৬ সেপ্টেম্বর নেওয়ার কথা থাকলেও আর নেওয়া হয়নি। বাকি ওই সংখ্যা পূরণে ইউনিয়ন কমান্ডার বেলাল হোসেন, জয়নাল আবেদীন ও আল আমিনের সহযোগিতায় জনপ্রতি ৫ শ থেকে ৭ শ টাকা করে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেন উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা ফারজানা সুমি, নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হামিদা বেগম ও প্রশিক্ষক আলী আজম।

সাধারণ আনসারদের অভিযোগ, উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা ফারজানা সুমি ছুটিতে থাকলেও যাচাই-বাছাইয়ের দিন অফিসে ছুটে আসেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে এই উপজেলায় কর্মরত। অফিসের কাজ বাড়িতে বসে করছেন তিনি। তাঁর স্বামী জেলা আনসার ও ভিডিপি অফিসে কর্মরত থাকায় তিনি কাউকে তোয়াক্কা করেন না আর প্রশিক্ষক আলী আজমও দীর্ঘদিন ধরে এই উপজেলায় কর্মরত। তিনি একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে পূজা ও ভোট ডিউটির নামে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অঙ্কের টাকা। বারবার পরিচিত ও একই ব্যক্তিরা এই তিন কর্মকর্তার সুনজরে পড়ে ডিউটি পাচ্ছেন বলেও অভিযোগ অনেকের।

বেশ কয়েকটি পূজামণ্ডপে দায়িত্বরত আনসার সদস্যদের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। নাম না প্রকাশের শর্তে একজন বলেন, ‘ভাই আমরা গরিব মানুষ। আমাদের নাম দিলে পড়ে ডিউটির সম্মানী দেবে না। হয়রানি করবে। আমরা ডিউটি নেওয়ার আগেই টাকা দিয়েছি। টাকা ছাড়া ডিউটি দেয় না।’ জেলা কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করতে এই টাকা নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তাঁদের অনেকে। 
এ বিষয়ে প্রশিক্ষক আলী আজম বলেন, ‘ভাই আপনার কাছে কোনো তথ্য থাকলে নিউজ করে দেন। এর বেশি কিছু জানি না।’

উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা ফারজানা সুমি টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আছি। তবে বাছাইয়ের দিন অফিসে গেছি। অন্য কর্মকর্তা দায়িত্বে আছেন। তিনি সব বলতে পারবেন।’

এ ব্যাপারে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হামিদা বেগম বলেন, ‘কোনো অনিয়ম হয়নি। জেলা কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।’ পরদিন লোক নেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘লোক পাওয়া না গেলে কী করব।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে জেলা আনসার ও গ্রামপ্রতিরক্ষা বাহিনীর জেলা কমান্ড্যান্ট হাফিজ আল মোয়াম্মার গাদ্দাফী ও সার্কেল অ্যাডজুট্যান্ট রাসেল আহম্মেদের মোবাইল ফোনে গত শুক্র ও গতকাল সোমবার বেশ কয়েকবার কল দিলেও তাঁরা ধরেননি।