মিলেমিশে কেপিএম দখল

আবু বকর ছিদ্দিক, চট্টগ্রাম
Thumbnail image

আওয়ামী লীগ নেতা, বিএনপি নেতা, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য, সিবিএ নেতা ও সরকারি চাকরিজীবীরা মিলেমিশে দখল করছেন দেশের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী কর্ণফুলী পেপার মিল (কেপিএম)। কেপিএমের সরকারি ভবনের বাসাভাড়া বাবদ তাঁদের কাছে পাওনা রয়েছে লাখ লাখ টাকা।

বকেয়া বাসাভাড়া আদায়ের চেষ্টা করলে উল্টো কেপিএমের পরিবেশ অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ। কেপিএম সূত্রে জানা গেছে, কাপ্তাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মফিজুল হকের কাছে গত মে মাস পর্যন্ত বাসাভাড়া বাবদ পাওনা রয়েছে ৬ লাখ ৫৩ হাজার ৫৭৫ টাকা। এই বকেয়া আদায়ের জন্য কেপিএমের পক্ষ থেকে ১০ বার নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি এক পত্রে জানা গেছে, এই টাকা পরিশোধ না করে তিনি বাসা ছেড়ে চলে গেছেন। চিঠিতে কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে এমন কাজ একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির মোটেই সমীচীন হয়নি বলে উল্লেখ করা হয়। ওই চিঠিতে ১০ দিনের মধ্যে বকেয়া টাকা পরিশোধের অনুরোধ করা হয়। ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে বন ভবন-২-এর নিচতলার পূর্ব পাশের বাসাটি তাঁর নামে বরাদ্দ করা হয়।

কাপ্তাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মফিজুল হক বলেন, কেপিএম কর্তৃপক্ষ তাঁদের কাছে ভুতুড়ে বকেয়া বিল দাবি করছে।প্রকৃতপক্ষে তিনি ২০১৬ সালে ঘরভাড়া নিয়েছেন। কেপিএম ভাড়া দাবি করছে ২০১১ সাল থেকে। তবে কেপিএম তাঁর কাছে আড়াই বছরের ঘর ভাড়া পাবে বলে স্বীকার করেছেন। গত মাসেও দুই মাসের বকেয়া বিল পরিশোধ করেছেন বলে জানান তিনি।

কাপ্তাইয়ের চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী বেবীর কাছে গত মে মাস পর্যন্ত বাসাভাড়া বাবদ কেপিএমের পাওনা রয়েছে ৫ লাখ ৭৬ হাজার ৮২৫ টাকা। বন ভবন-৩-এর নিচতলার পশ্চিম পাশের বাসাটি তাঁর নামে বরাদ্দ। সম্প্রতি এক চিঠিতে তাঁকেও ১০ দিনের মধ্যে এই বকেয়া পরিশোধের অনুরোধ করা হয়। এর আগে সাত দফায় বকেয়া পরিশোধের অনুরোধ করা হয়েছিল।

সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী দাবি করেন, কেপিএমের কাছ থেকে তাঁরা পরিত্যক্ত ঘর ভাড়া নিয়েছেন। তাঁদের হয়রানির উদ্দেশ্যে কেপিএম অতিরিক্ত ঘরভাড়া দাবি করছে। এগুলো নিয়ে তাঁদের আপত্তি আছে। কেপিএমের সঙ্গে এ বিষয়ে তাঁরা আলোচনা করছেন।

সাবেক উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেত্রী নুর নাহার বেগমের কাছে মে মাস পর্যন্ত ১০ লাখ ২১ হাজার ২৫ টাকা বকেয়া রয়েছে। পাওনা আদায়ে তাঁকে এ পর্যন্ত ১৯টি নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নুর নাহার বেগম বলেন, কেপিএম ভুতুড়ে বিল পাঠিয়েছে। এগুলোর বিষয়ে তাঁদের আপত্তি আছে। এ বিষয়ে তাঁরা কথা বলবেন।

এভাবে ইউপি সদস্য আবুল হাসনাত খোকনের কাছে বাসাভাড়া বাবদ ২ লাখ ১৮ হাজার ১২৫ টাকা, নারী ইউপি সদস্য পুষকারা বেগমের কাছে দোকানভাড়া বাবদ ১ লাখ ৩ হাজার ৫৫ টাকা, ইউপি সদস্য আলী আরশাদের কাছে দোকানভাড়া বাবদ ৫৯ হাজার ২৯২ টাকা পাওনা রয়েছে। ইউপি সদস্য নয়ন বেগম, মাইনুল ইসলাম মনা ও মো. আজিজুল হক অবৈধভাবে সরকারি বাসা দখলে রেখেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ ছাড়া বেশ কয়েকজন শিক্ষক কেপিএমের বাসা দখল করে বাসাভাড়া পরিশোধ করছেন না। তাঁদের মধ্যে কেআরসি উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রফিকুল আলমের কাছে মে মাস পর্যন্ত ২৮ হাজার ১২৫ টাকা, বারঘোনিয়া মুখ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শামিমা আক্তারের কাছে ২ লাখ ৮ হাজার ৭২৫ টাকা, সিইউএফএল উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. ওমর ফারুকের কাছে ৫০ হাজার ১২৫ টাকা, কেআরসি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মিসেস বৃষ্টি মল্লিকের কাছে ৩৯ হাজার ১২৫ টাকা, ডলুছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বিলকিস সুলতানার কাছে ২ লাখ ৯ হাজার ৬২৫ টাকা, কেআরসি উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কামরুল ইসলামের কাছে ১ লাখ ৭৬ হাজার টাকা ও তালুকদার পাড়া ব্র্যাক স্কুলের সহকারী শিক্ষক নারগিস সুলতানার কাছে ৪২ হাজার টাকা বকেয়া রয়েছে।

সরকারি অন্য বিভাগের মধ্যে জুরাছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জুনিয়র মেকানিক মো. আলমগীর হোসেনের কাছে ১ লাখ ৮৬ হাজার ৭২৫ টাকা, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা সহকারী দেলোয়ার হোসেনের কাছে ৩২ হাজার ৩৭৫ টাকা ও কাউখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস সহকারী জামাল হোসেনের কাছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৫০৫ টাকা পাওনা রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেপিএমের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, বকেয়া বাসাভাড়া আদায়ে অনেকবার নোটিশ দেওয়া হয়েছে।কেপিএম বকেয়া টাকা আদায়ের চেষ্টা করলে এসব প্রভাবশালী উল্টো কারখানার পরিবেশ অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেন। কেপিএমের মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আনোয়ার হোসেন প্রভাবশালী মহলের কাছে বাসা ও দোকানভাড়া বকেয়া থাকার কথা স্বীকার করেন। তবে তিনি এ ছাড়া আর কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত