শাহরিয়ার হাসান, ঢাকা
করোনা অতিমারিতে এক বছর পরে শুরু হয়েছে ইউরো কাপ। ২৪ দলের লড়াইয়ে কোন দল শেষ হাসি হাসবে, সে উত্তর পাওয়া যাবে ১১ জুলাই। তবে ফুটবলপ্রেমীদের এই উত্তেজনাকে ঘিরে সক্রিয় হয়ে উঠেছে মানব পাচার চক্র। ইউরোপের প্রবেশদ্বার হিসেবে তারা বেছে নিয়েছে রাশিয়াকে। আন্তর্জাতিক চক্র এ জন্য ইউটিউব, ফেসবুকে প্রচারণাও চালাচ্ছে।
বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) ও অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কর্মকর্তারা বলছেন, ইউরো ফুটবল প্রতিযোগিতাকে ঘিরে রাশিয়ান ও ইউরোপীয় দালালদের সঙ্গে বাংলাদেশি দালালেরা একজোট হয়েছে। এই জোট ইতিমধ্যে অর্ধশতাধিক যুবককে রাশিয়া ও ইংল্যান্ডে পাঠিয়েছে। পাচারের সময় ঢাকার বিমানবন্দর থেকে অনেককে আটকও করা হয়েছে। পুলিশ যাঁদের আটক করেছে, তাঁদের বেশির ভাগই নিজেদের বেকার জীবনের অবসান ঘটনাতে এই পথ বেছে নিয়েছেন।
বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার হওয়া এইসব ব্যক্তির বয়স ৩০-৫০ বছরের মধ্যে। এরা হলেন নাইমুল আলম ও ফারুক দিদার (নোয়াখালী), আশরাফুর রহমান পিয়াস (ফেনী), রব জলিল (লক্ষ্মীপুর) আজিজুর রহমান, নুসরাত জাহান রাকা, তাসলিম উদ দৌলা, মোস্তফা রনি, ফারুক, নজরুল ইসলাম, অপু পাটোয়ারি, মানিক মিয়া, তারেক আজিজ ও ইউসুফ (ঢাকা), শরিফ হোসাইন (নারায়ণগঞ্জ), আনোয়ার মাদবর (শরীয়তপুর), জাকির হোসেন প্রাধানিয়া (চাঁদপুর) ও জসিম (কক্সবাজার)।
এ প্রসঙ্গে পুলিশের বিশেষ শাখার ডিআইজি (ইমিগ্রেশন) মনিরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, গত ১১ জুন রাশিয়া যাওয়ার সময় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ১৮ জনের যাত্রা স্থগিত করে পুলিশ। এরা দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছিলেন। তাঁদের অনেকেরই পরিষ্কার ধারণা নেই, তাঁরা কীভাবে, কোথায় ও কেন যাচ্ছেন। কাতার এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে ‘ফ্যান আইডি’ দিয়ে তাঁরা ইউরো ২০২০ চ্যাম্পিয়নশিপ খেলা দেখার জন্য বিদেশে যাচ্ছিলেন। কথাবার্তায় সন্দেহ হওয়ায় সবাইকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় দালাল আবদুল আওয়ালের বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানায় মানব পাচারের মামলা হয়েছে।
মনিরুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ভুক্তভোগীরা বলেছেন, এই দালাল চক্র তাঁদের রাশিয়ায় পৌঁছে দেবে। এ জন্য তাঁরা জনপ্রতি নেবে ৬-৮ লাখ টাকা। এই মধ্যে আছে ‘ফ্যান আইডি’ তৈরি করা, বিমান ভাড়া, হোটেল, বিমা খরচ।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রাজধানীর মগবাজারে মিজান টাওয়ারে ফিউচার ওয়ার্ল্ড নামের একটি ট্রাভেল এজেন্সি ফ্যান আইডিসহ যাবতীয় কাজ করে দিচ্ছে। ইউটিউব, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের বিজ্ঞাপনও আছে।
একজন আগ্রহী হিসেবে গত সোমবার দুপুরে এই প্রতিনিধি সেখানে গেলে প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার আশিকুর রহমান জানান, রাশিয়ায় যেতে চাইলে ফ্যান আইডি তৈরি, ফুটবল ম্যাচের টিকিট, বিমানবন্দর ম্যানেজসহ সবকিছু মিলে ১০ লাখ টাকা দিতে হবে। সব কাগজ তৈরি হলে টাকা নেওয়া হবে। যাঁরা যাবেন তাঁদের কেউ চাইলে বৈধভাবে রাশিয়াতে থেকেও যেতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে বিমানবন্দর ‘ম্যানেজ’–এর জন্য একটু বেশি খরচ পড়বে। প্রতিষ্ঠানটির অন্য এক কর্মকর্তা স্বীকার করেন, রাশিয়ায় যাওয়ার জন্য ইতিমধ্যে পাঁচ শতাধিক যুবক তাঁদের কাছে আবেদন করেছেন।
বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের মাইগ্রেশন বিভাগের প্রধান শরিফুল হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, শুধুই ইউরো কাপ নয়, ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপের সময়ও এ ধরনের প্রবণতা ছিল। তখন সিলেট থেকে বেশ কিছু যুবক রাশিয়া, বেলারুশ ও ইউক্রেনের পথে যাত্রা করেছিলেন। এই যাত্রাকে স্বপ্নযাত্রা বললেও এটা আসলে মরণফাঁদ।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অভিবাসন কর্মকর্তারা বলছেন, ইউরো কাপ উপলক্ষে অনেকে ফিফার ‘ফ্যান আইডি’ নিয়ে বাংলাদেশ থেকে রাশিয়ায় যাচ্ছেন। ইমিগ্রেশনে সব যাত্রীর নাম-পরিচয় আলাদা করে তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, পাচারের শিকার ভুক্তভোগীরা বলছেন, ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের যেকোনো ম্যাচ স্টেডিয়ামে গিয়ে দেখতে টিকিটের পাশাপাশি ফ্যান আইডি থাকতে হবে। এই ফ্যান আইডি দিয়ে রাশিয়াতে ভিসা ছাড়াই প্রবেশ করা যাবে। যা দিয়ে প্রায় এক মাস পর্যন্ত রাশিয়ায় বৈধভাবে অবস্থান করা যাবে। এই সুযোগটা কাজে লাগাচ্ছে মানব পাচারকারীরা।
সিআইডির প্রধান মাহবুব রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মানব পাচারকারী চক্রের জাল এতটাই বিস্তৃত যে, তাদের গোড়া পর্যন্ত পৌঁছানো সম্ভব হয় না। তবু আমরা পাচারকারী চক্র ও দালালদের তালিকা করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাচারকারী চক্রের একজন সদস্য আজকের পত্রিকাকে বলেন, খেলা দেখার নামে কেউ যদি রাশিয়া গিয়ে আর ফিরতে না চান, তাহলে কিছু খরচ বেশি করতে হয়। এসব সে ক্ষেত্রে বিমানবন্দরে আলাদা চুক্তি করতে হয়। তাতে ৬০ থেকে ৮০ হাজার বেশি লাগে।
পাচারকারীদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার এই খবর ইমিগ্রেশন পুলিশ যে জানে না, তা নয়। বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, ভিজিট, টুরিস্ট ভিসায় বিদেশ গমনেচ্ছু যাত্রীদের এয়ারপোর্ট কন্ট্রাক্টের নামে অতি মুনাফালোভী টিকিট বিক্রেতা বা দালালেরা অতিরিক্ত মূল্য আদায় করছে–এমন অভিযোগ তাঁদের কাছেও আছে।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিআইজি মনিরুল ইসলাম বলেন, যাঁরা টিকিট বিক্রি করে বা দালালি করে, তারাই ইমিগ্রেশনের নাম ভাঙিয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে থাকে। ইমিগ্রেশন পুলিশ এসবের সঙ্গে জড়িত নয়।
দেশ থেকে কত মানুষ পাচার হচ্ছে, আর এর বিপরীতে কত দালাল আছে, তার সুনির্দিষ্ট কোনো হিসাব কারও কাছে নেই। তবে সিআইডি বলছে, ২০০৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১২ হাজার ৩২৪ জন পাচার হয়েছে। এই পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল ২৭ হাজার ৩৬৩ জনের বিরুদ্ধে। তাদের মধ্যে ১২ হাজার ২৮২ জনকে বিভিন্ন সময় আইনের আওতায় আনা হয়েছে।
সিআইডির মানব পাচার শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার মুহাম্মাদ সাইদুর রহমান খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, রাশিয়া ছাড়াও ভারত, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, ইরাক, ইরানসহ লিবিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে মানব পাচার হচ্ছে। সব সময় যে জোর করে পাচার হয়, এমনও না। অনেকে স্বেচ্ছায় যাচ্ছেন।
সিআইডি বলছে, দুই ধরনের ভুক্তভোগী দেশ থেকে পাচার হচ্ছেন। এর একটি হলো গৃহকর্মী হিসেবে নিম্নবিত্ত পরিবারের নারীরা যাচ্ছেন। আর অন্যটি যুবকদের এক দেশের কথা বলে অন্য দেশে নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। পাচারকারীদের এই চক্রের সঙ্গে জনপ্রতিনিধি, সরকারি–বেসরকারি কর্মকর্তা, ট্রাভেল এজেন্সি, দালাল–সবাই জড়িত।
যোগাযোগ করা হলে অভিবাসন ও শরণার্থীবিষয়ক বিশ্লেষক এবং আইওএমের সাবেক কর্মকর্তা আসিফ মুনীর আজকের পত্রিকাকে বলেন, অবৈধভাবে বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। আর্থিক সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে মরিয়া হয়ে অনেকে এই অবৈধ সুযোগটা কাজে লাগাচ্ছেন। আসলে এই দায় শুধু সরকারি-বেসরকারি একটা বা দুইটা প্রতিষ্ঠানের নয়। এই অবহেলা সরকারি ঊর্ধ্বতন থেকে শুরু করে সকল পর্যায়ের।
করোনা অতিমারিতে এক বছর পরে শুরু হয়েছে ইউরো কাপ। ২৪ দলের লড়াইয়ে কোন দল শেষ হাসি হাসবে, সে উত্তর পাওয়া যাবে ১১ জুলাই। তবে ফুটবলপ্রেমীদের এই উত্তেজনাকে ঘিরে সক্রিয় হয়ে উঠেছে মানব পাচার চক্র। ইউরোপের প্রবেশদ্বার হিসেবে তারা বেছে নিয়েছে রাশিয়াকে। আন্তর্জাতিক চক্র এ জন্য ইউটিউব, ফেসবুকে প্রচারণাও চালাচ্ছে।
বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) ও অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কর্মকর্তারা বলছেন, ইউরো ফুটবল প্রতিযোগিতাকে ঘিরে রাশিয়ান ও ইউরোপীয় দালালদের সঙ্গে বাংলাদেশি দালালেরা একজোট হয়েছে। এই জোট ইতিমধ্যে অর্ধশতাধিক যুবককে রাশিয়া ও ইংল্যান্ডে পাঠিয়েছে। পাচারের সময় ঢাকার বিমানবন্দর থেকে অনেককে আটকও করা হয়েছে। পুলিশ যাঁদের আটক করেছে, তাঁদের বেশির ভাগই নিজেদের বেকার জীবনের অবসান ঘটনাতে এই পথ বেছে নিয়েছেন।
বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার হওয়া এইসব ব্যক্তির বয়স ৩০-৫০ বছরের মধ্যে। এরা হলেন নাইমুল আলম ও ফারুক দিদার (নোয়াখালী), আশরাফুর রহমান পিয়াস (ফেনী), রব জলিল (লক্ষ্মীপুর) আজিজুর রহমান, নুসরাত জাহান রাকা, তাসলিম উদ দৌলা, মোস্তফা রনি, ফারুক, নজরুল ইসলাম, অপু পাটোয়ারি, মানিক মিয়া, তারেক আজিজ ও ইউসুফ (ঢাকা), শরিফ হোসাইন (নারায়ণগঞ্জ), আনোয়ার মাদবর (শরীয়তপুর), জাকির হোসেন প্রাধানিয়া (চাঁদপুর) ও জসিম (কক্সবাজার)।
এ প্রসঙ্গে পুলিশের বিশেষ শাখার ডিআইজি (ইমিগ্রেশন) মনিরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, গত ১১ জুন রাশিয়া যাওয়ার সময় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ১৮ জনের যাত্রা স্থগিত করে পুলিশ। এরা দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছিলেন। তাঁদের অনেকেরই পরিষ্কার ধারণা নেই, তাঁরা কীভাবে, কোথায় ও কেন যাচ্ছেন। কাতার এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে ‘ফ্যান আইডি’ দিয়ে তাঁরা ইউরো ২০২০ চ্যাম্পিয়নশিপ খেলা দেখার জন্য বিদেশে যাচ্ছিলেন। কথাবার্তায় সন্দেহ হওয়ায় সবাইকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় দালাল আবদুল আওয়ালের বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানায় মানব পাচারের মামলা হয়েছে।
মনিরুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ভুক্তভোগীরা বলেছেন, এই দালাল চক্র তাঁদের রাশিয়ায় পৌঁছে দেবে। এ জন্য তাঁরা জনপ্রতি নেবে ৬-৮ লাখ টাকা। এই মধ্যে আছে ‘ফ্যান আইডি’ তৈরি করা, বিমান ভাড়া, হোটেল, বিমা খরচ।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রাজধানীর মগবাজারে মিজান টাওয়ারে ফিউচার ওয়ার্ল্ড নামের একটি ট্রাভেল এজেন্সি ফ্যান আইডিসহ যাবতীয় কাজ করে দিচ্ছে। ইউটিউব, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের বিজ্ঞাপনও আছে।
একজন আগ্রহী হিসেবে গত সোমবার দুপুরে এই প্রতিনিধি সেখানে গেলে প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার আশিকুর রহমান জানান, রাশিয়ায় যেতে চাইলে ফ্যান আইডি তৈরি, ফুটবল ম্যাচের টিকিট, বিমানবন্দর ম্যানেজসহ সবকিছু মিলে ১০ লাখ টাকা দিতে হবে। সব কাগজ তৈরি হলে টাকা নেওয়া হবে। যাঁরা যাবেন তাঁদের কেউ চাইলে বৈধভাবে রাশিয়াতে থেকেও যেতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে বিমানবন্দর ‘ম্যানেজ’–এর জন্য একটু বেশি খরচ পড়বে। প্রতিষ্ঠানটির অন্য এক কর্মকর্তা স্বীকার করেন, রাশিয়ায় যাওয়ার জন্য ইতিমধ্যে পাঁচ শতাধিক যুবক তাঁদের কাছে আবেদন করেছেন।
বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের মাইগ্রেশন বিভাগের প্রধান শরিফুল হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, শুধুই ইউরো কাপ নয়, ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপের সময়ও এ ধরনের প্রবণতা ছিল। তখন সিলেট থেকে বেশ কিছু যুবক রাশিয়া, বেলারুশ ও ইউক্রেনের পথে যাত্রা করেছিলেন। এই যাত্রাকে স্বপ্নযাত্রা বললেও এটা আসলে মরণফাঁদ।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অভিবাসন কর্মকর্তারা বলছেন, ইউরো কাপ উপলক্ষে অনেকে ফিফার ‘ফ্যান আইডি’ নিয়ে বাংলাদেশ থেকে রাশিয়ায় যাচ্ছেন। ইমিগ্রেশনে সব যাত্রীর নাম-পরিচয় আলাদা করে তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, পাচারের শিকার ভুক্তভোগীরা বলছেন, ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের যেকোনো ম্যাচ স্টেডিয়ামে গিয়ে দেখতে টিকিটের পাশাপাশি ফ্যান আইডি থাকতে হবে। এই ফ্যান আইডি দিয়ে রাশিয়াতে ভিসা ছাড়াই প্রবেশ করা যাবে। যা দিয়ে প্রায় এক মাস পর্যন্ত রাশিয়ায় বৈধভাবে অবস্থান করা যাবে। এই সুযোগটা কাজে লাগাচ্ছে মানব পাচারকারীরা।
সিআইডির প্রধান মাহবুব রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মানব পাচারকারী চক্রের জাল এতটাই বিস্তৃত যে, তাদের গোড়া পর্যন্ত পৌঁছানো সম্ভব হয় না। তবু আমরা পাচারকারী চক্র ও দালালদের তালিকা করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাচারকারী চক্রের একজন সদস্য আজকের পত্রিকাকে বলেন, খেলা দেখার নামে কেউ যদি রাশিয়া গিয়ে আর ফিরতে না চান, তাহলে কিছু খরচ বেশি করতে হয়। এসব সে ক্ষেত্রে বিমানবন্দরে আলাদা চুক্তি করতে হয়। তাতে ৬০ থেকে ৮০ হাজার বেশি লাগে।
পাচারকারীদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার এই খবর ইমিগ্রেশন পুলিশ যে জানে না, তা নয়। বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, ভিজিট, টুরিস্ট ভিসায় বিদেশ গমনেচ্ছু যাত্রীদের এয়ারপোর্ট কন্ট্রাক্টের নামে অতি মুনাফালোভী টিকিট বিক্রেতা বা দালালেরা অতিরিক্ত মূল্য আদায় করছে–এমন অভিযোগ তাঁদের কাছেও আছে।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিআইজি মনিরুল ইসলাম বলেন, যাঁরা টিকিট বিক্রি করে বা দালালি করে, তারাই ইমিগ্রেশনের নাম ভাঙিয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে থাকে। ইমিগ্রেশন পুলিশ এসবের সঙ্গে জড়িত নয়।
দেশ থেকে কত মানুষ পাচার হচ্ছে, আর এর বিপরীতে কত দালাল আছে, তার সুনির্দিষ্ট কোনো হিসাব কারও কাছে নেই। তবে সিআইডি বলছে, ২০০৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১২ হাজার ৩২৪ জন পাচার হয়েছে। এই পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল ২৭ হাজার ৩৬৩ জনের বিরুদ্ধে। তাদের মধ্যে ১২ হাজার ২৮২ জনকে বিভিন্ন সময় আইনের আওতায় আনা হয়েছে।
সিআইডির মানব পাচার শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার মুহাম্মাদ সাইদুর রহমান খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, রাশিয়া ছাড়াও ভারত, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, ইরাক, ইরানসহ লিবিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে মানব পাচার হচ্ছে। সব সময় যে জোর করে পাচার হয়, এমনও না। অনেকে স্বেচ্ছায় যাচ্ছেন।
সিআইডি বলছে, দুই ধরনের ভুক্তভোগী দেশ থেকে পাচার হচ্ছেন। এর একটি হলো গৃহকর্মী হিসেবে নিম্নবিত্ত পরিবারের নারীরা যাচ্ছেন। আর অন্যটি যুবকদের এক দেশের কথা বলে অন্য দেশে নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। পাচারকারীদের এই চক্রের সঙ্গে জনপ্রতিনিধি, সরকারি–বেসরকারি কর্মকর্তা, ট্রাভেল এজেন্সি, দালাল–সবাই জড়িত।
যোগাযোগ করা হলে অভিবাসন ও শরণার্থীবিষয়ক বিশ্লেষক এবং আইওএমের সাবেক কর্মকর্তা আসিফ মুনীর আজকের পত্রিকাকে বলেন, অবৈধভাবে বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। আর্থিক সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে মরিয়া হয়ে অনেকে এই অবৈধ সুযোগটা কাজে লাগাচ্ছেন। আসলে এই দায় শুধু সরকারি-বেসরকারি একটা বা দুইটা প্রতিষ্ঠানের নয়। এই অবহেলা সরকারি ঊর্ধ্বতন থেকে শুরু করে সকল পর্যায়ের।
রাজধানীর বিমানবন্দরে শরীরে বিশেষ কৌশলে গাঁজা নিয়ে এসে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে তিনজন কিশোর। তাঁরা বর্তমানে কিশোর সংশোধনাগারের রয়েছে।
১৫ দিন আগেপরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফেরাতে সিঙ্গাপুরে যান দুই ভাই উজ্জ্বল মিয়া ও মো. ঝন্টু। সেখানে থাকা অবস্থায় মুঠোফোনে ভাবির সঙ্গে পরকীয়ায় জড়ান ছোট ভাই মো. ঝন্টু। পরে দেশে ফিরে ভাবিকে বিয়ে করার জন্য আপন বড় ভাই উজ্জ্বল মিয়াকে খুন করে ছোট ভাই।
১৫ দিন আগেরাজধানীর গেণ্ডারিয়ায় গত দুই মাসে দুই অটোরিকশা চালককে হত্যা করে রিকশা ছিনিয়ে নেওয়া ঘটনা ঘটেছে। পৃথক এই দুই ঘটনায় তদন্তে নেমে বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
১৫ দিন আগেপাবনার পদ্মা নদী থেকে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ১২ বছরের এক কিশোর এবং ২২ বছরের এক তরুণীর অর্ধগলিত দুইটি মরদেহ উদ্ধার করেছে নাজিরগঞ্জ নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি। উদ্ধারের দুইদিনেও কোনো পরিচয় পাওয়া যায়নি। রোববার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নাজিরগঞ্জ নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সাইদুর রহমান।
১৯ দিন আগে