নৃশংসতার শিকার শিশুরা

সোহেল মারমা, চট্টগ্রাম
Thumbnail image

আয়াত, বর্ষা, সুরমা ও ওয়ালিদ কারোই বুঝ হওয়ার মতো বয়স হয়নি। বাবা-মায়ের কোলে হেসে খেলে বড় হচ্ছিল তারা। কিন্তু তারা আজ কেউ বেঁচে নেই। এতটুকু বয়সে তারা সবাই বর্বর হত্যাকাণ্ডের শিকার। কাউকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে, কাউকে ধারালো ছুরি দিয়ে কেটে টুকরো করা হয়েছে।

জানা গেছে, গত ১৫ নভেম্বর বাসা থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয় আলিনা ইসলাম আয়াত। পরে পরিচিত এক তরুণকে গ্রেপ্তারের পর আয়াতের খণ্ডিত লাশের আংশিক অংশ উদ্ধার হয়। গ্রেপ্তার তরুণের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, মুক্তিপণ দাবির জন্য আয়াতকে অপহরণ করা হয়েছিল। পরে পরিকল্পনামতো কাজ না হওয়ায় হত্যা করে ছয় টুকরো করা হয়। ওই ঘটনায় পিবিআই মূল আসামি আবির আলীসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে। মামলাটির তদন্ত চলমান রয়েছে।

গত ২৪ অক্টোবর নগরীর কোতোয়ালি জামালখান এলাকায় মারজানা হক বর্ষা নামে সাত বছরের আরেক কন্যাশিশু নিখোঁজ হয়। ২৭ অক্টোবর স্থানীয় একটি নালায় শিশুটির বস্তাবন্দী লাশ পাওয়া যায়। ওই ঘটনায় লক্ষণ দাশ (২৮) নামে দোকানের এক কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তার ব্যক্তি শিশুটিকে ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ বস্তাবন্দী করে নালায় ফেলে দেয়।

এর আগের মাস সেপ্টেম্বরে বন্দর থানা এলাকায় সরকারি একটি পরিত্যক্ত ঘর থেকে সাত বছর বয়সী সুরমা আক্তারের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আগের দিন থেকে শিশুটি নিখোঁজ ছিল। পুলিশ ১২ অক্টোবর ওসমান হারুন মিন্টু (৪৪) নামে এক রিকশাচালককে গ্রেপ্তার করে। তাঁর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, তিনি শিশুটিকে বিরিয়ানি খাওয়ার লোভ দেখিয়ে ওই পরিত্যক্ত ঘরে নিয়ে ধর্ষণের পর হত্যা করেন।

গত ১৮ জুন হাটহাজারীর শিকারপুর ইউনিয়নে হত্যা করা হয় তিন বছরের আরেক শিশু ওয়ালিদ। শিশুটিকে বাসায় একা রেখে গোসল করতে পুকুরে গিয়েছিলেন তাঁর মা। পরে বাসায় গিয়ে ওয়ালিদের রক্তাক্ত লাশ দেখতে পান। পুলিশ জানায়, শিশুটির শরীরে একাধিকবার ছুরিকাঘাত করা হয়েছিল। মামলাটি বর্তমানে পিবিআই তদন্ত করছে। তবে জড়িতদের এখনো চিহ্নিত করা যায়নি।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত তিন মাসে নগরের পাহাড়তলী, বায়েজিদ, বাকলিয়া ও ইপিজেড থানায় আরও চার শিশু বিভিন্ন সময় অপহরণ ও ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এদের মধ্যে তিন ও দশ মাস বয়সী দুই শিশুও রয়েছে। অপহরণের শিকার শিশুদের পরে উদ্ধার করেছে পুলিশ।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) খন্দকার আরিফুল আলম বলেন, শিশুদের প্রতিরোধ ক্ষমতা ও শক্তি কম, তারা দুর্বল বলে অপরাধীরা তাদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে। অপরাধীরা নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য নিষ্পাপ শিশুদের সহজ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে।

আরিফুল আলম আরও বলেন, এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের বেশি সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। শিশুদের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। সন্তান কোথায় যাচ্ছে, থাকছে, বিপজ্জনক কারও সঙ্গে আছে কি-না; সবকিছু খোঁজখবর নিতে হবে। বিশেষ করে বর্তমান সময়ে শিশুরা যে হারে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে সে ক্ষেত্রে অভিভাবকদের সাবধানতা অবলম্বনের বিকল্প নেই। সমাজের অন্যদেরও সচেতন হতে হবে।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) এ এস এম মাহাতাব উদ্দিন বলেন, শিশুরা মূলত নিকটতম লোকজনদের হাতেই নির্যাতন কিংবা হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছে। এটা সামাজিক ব্যাধি ও অপরাধ। এটা দূর করতে হলে সমাজের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। পুলিশ যথারীতি এসব ঘটনায় মামলার তদন্ত গুরুত্ব সহকারে নিয়ে দ্রুততম সময়ে আসামি গ্রেপ্তার ও অভিযোগপত্র দিয়ে থাকে।

মাহাতাব উদ্দিন আরও বলেন, শিশুদের সবচেয়ে নিকটতম মানুষ হচ্ছে মা-বাবা। কারও হাতে তুলে দিয়ে মা-বাবা দুজনই চাকরিতে চলে যাচ্ছে। যাদের কাজ করছে তারা যদি না থাকে, এই কাজ করে কি লাভ? তাই মা-বাবাকে শিশুদের ওপর সবচেয়ে বেশি যত্নশীল হতে হবে। তাদের ওপর সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখতে হবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত