Ajker Patrika

বিপুল অবৈধ সম্পদ: হারুনসহ তিন প্রভাবশালীর সম্পদের অনুসন্ধান শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৮ আগস্ট ২০২৪, ২১: ৪৯
বিপুল অবৈধ সম্পদ: হারুনসহ তিন প্রভাবশালীর সম্পদের অনুসন্ধান শুরু

পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সাবেক প্রধান হারুন অর রশীদ, সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ও সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

আজ রোববার দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
 
দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন বলেন, পুলিশের সাবেক দুই কর্মকর্তা ও সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানের আর্থিক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ প্রাথমিকভাবে অনুসন্ধান করছিল দুদক। কমিশনের প্রাথমিক অনুসন্ধানে তাঁদের অবৈধ সম্পদ অর্জনের সত্যতা পাওয়া গেছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে সত্যতা থাকায় কমিশন তাঁদের দুর্নীতির অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 
 
দুদক সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগের সরকারে ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ও সাবেক ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের প্রমাণ পেয়েছে সংস্থাটি। সাবেক এই ডিবির প্রধান কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের হোসেনপুর নিজ গ্রামে ৪০ একর জায়গাজুড়ে গড়ে তুলেছেন ‘প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট’। শতকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই রিসোর্টের মালিক দেখিয়েছেন ছোট ভাই ডা. শাহরিয়ারকে।

সূত্রটি জানায়, হারুনের প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট নির্মাণে হাওরের যে ৪০ একর জায়গা ব্যবহার করা হয়েছে, এর বেশির ভাগই অন্যের জমি দখল করে। জমির মালিকদের নানামুখী চাপে রেখে ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি এসব জায়গা দখল করেন। জমি হারানো ক্ষতিগ্রস্তদের অনেকেই এখনো এসব জমির দলিল করে দেননি। 

এর আগে গত ২৭ জুন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার বিরুদ্ধে ওঠা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের দাবি জানিয়ে দুদকে আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সালাহ উদ্দিন রিগ্যান। 

দুদক চেয়ারম্যান বরাবর সালাহ উদ্দিনের পাঠানো লিখিত আবেদনে বলা হয়েছে, গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা আছাদুজ্জামান মিয়ার নামে থাকা সম্পদের বিষয়ে যথাযথ অনুসন্ধানের উদ্যোগ নিয়ে তা জানানোর অনুরোধ করা হলো। 

দুদকের একটি সূত্র জানায়, সাবেক ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া স্ত্রী–সন্তানদের নামে অবৈধ সম্পদের বিষয়ে একটি দৈনিক পত্রিকা খবর প্রকাশ করে। পরে পত্রিকাটির অনলাইন সংস্করণ ও ই–পেপার থেকে প্রতিবেদনটি সরিয়ে নেওয়া হয়। দুদক তৎকালীন সরকারের চাপের মুখে অনুসন্ধান করতে পারেনি। সম্প্রতি এসব বিষয়ে খোঁজ নিয়ে অনুসন্ধানে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। 

পুলিশের দুই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানের চৌধুরীর অবৈধ সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে সংস্থাটি। গত বছর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) প্রতিবেদনে বলা হয়, লন্ডনে বাংলাদেশের একজন মন্ত্রীর ২৬০টির মতো স্থাবর সম্পত্তি রয়েছ। এরপরই সামনে আসে চট্টগ্রাম–১৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামানের নাম। 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত বছরের ডিসেম্বরে টিআইবি প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। এতে উল্লেখ করা হয়, একজন মন্ত্রী, তাঁর স্ত্রী ও পরিবারের মালিকানাধীন ছয়টি কোম্পানি যুক্তরাজ্যে সক্রিয়ভাবে আবাসন ব্যবসা পরিচালনা করছে। 

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০১০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ছয়টি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন আওয়ামী লীগের ওই মন্ত্রী। এসব কোম্পানির মূলধন ১৬ দশমিক ৬৪ কোটি পাউন্ড। বাংলাদেশি টাকায় যা প্রায় ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকা। কিন্তু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হলফনামায় সাইফুজ্জামান চৌধুরী বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন মাত্র দেড় কোটি টাকা। 

ধারণা করা হয়, এই আর্থিক কেলেঙ্কারির বিষয়টি সামনে আসার কারণেই আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সরকারে আর মন্ত্রিত্ব পাননি সাইফুজ্জামান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত