হাসপাতালের দুর্নাম করে রোগী ভাগাচ্ছে দালালেরা

সাজন আহম্মেদ পাপন, কিশোরগঞ্জ 
প্রকাশ : ২৭ নভেম্বর ২০২২, ১২: ৩০

কিশোরগঞ্জে সরকারি হাসপাতালকে কেন্দ্র করে এর আশপাশে গড়ে উঠেছে বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেশির ভাগেরই প্রধান লক্ষ্য সরকারি হাসপাতালের রোগী ভাগানো। এ জন্য সেসব প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সরকারি হাসপাতালে কাজ করে দালাল চক্র। তারা বিভিন্ন অজুহাতে হাসপাতালের রোগীদের ভুল বুঝিয়ে নিয়ে যায় বেসরকারি বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে।

ভুক্তভোগী রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতালে ভালো চিকিৎসা হয় না, পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি অকেজো—ইত্যাদি দুর্নাম ছড়িয়ে রোগী ভাগিয়ে নিচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠান। আবার সেখানে গেলেই প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পরীক্ষার নামে রোগী ও স্বজনদের পকেট কাটছেন একশ্রেণির ‘ক্লিনিক ব্যবসায়ীরা’।

জানা গেছে, কিশোরগঞ্জে বেসরকারি উদ্যোগে প্রায় ১৪৮টি ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক, হাসপাতাল ও ল্যাব রয়েছে। গড়ে ওঠা বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ল্যাবে রয়েছে অব্যবস্থাপনা।

ভুক্তভোগীদের দেওয়া তথ্য ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, নির্ধারিত কমিশনের ভিত্তিতে রোগী ভাগিয়ে নেওয়ার কাজ করে দালাল চক্র।আবার এসব বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসার অভিযোগও রয়েছে। তারপরও নির্বিকার প্রশাসন। নীতিমালা না থাকায় সরকারি হাসপাতালের সামনে ও আধা কিলোমিটারের মধ্যেই গড়ে উঠতে দেখা গেছে অনেক বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান ডায়াগনস্টিক সেন্টার অনুমোদন নিয়ে ক্লিনিকের মতোই পরিচালিত হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, অনেক সময় সরকারি হাসপাতালেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম না থাকায় বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালে যেতে বাধ্য হচ্ছেন রোগীরা। তবে সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তুলনায় বেসরকারি ক্লিনিকের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার খরচ ৮ থেকে ১০ গুণ বেশি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কয়েকজন চিকিৎসক বলেন, কিছু ব্যবসায়ী সরকারি হাসপাতালের মূল ফটক ও কিছুটা অদূরেই গড়ে তুলেছে ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ল্যাব। প্রতিদিন হাজার হাজার রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন সরকারি হাসপাতালগুলোতে। চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীদের কর্মরত কিছু অসাধু চিকিৎসক ও অবস্থানরত দালালেরা বিভিন্ন ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য উৎসাহিত করেন।

সমাজকর্মী খুজিস্থা বেগম জোনাকি বলেন, সরকারি হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়ানো প্রয়োজন। বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার কতটুকু দূরে গড়ে উঠবে তার সুনির্দিষ্ট নীতিমালা দরকার। নীতিমালা না থাকাতেই চিকিৎসাসেবার নীরব সর্বনাশ ঘটছে।

সমাজকর্মী সৈয়দ ইয়াছিন বলেন, বেশির ভাগ ডায়াগনস্টিক সেন্টারেই নেই প্যাথলজিক্যাল স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ। তারপরও এসব প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমোদন পায়। মানহীন এসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সরকারি হাসপাতাল ও গ্রামাঞ্চল থেকে দালালের মাধ্যমে রোগী ধরে এনে চিকিৎসাসেবার নামে প্রতারণা করছে প্রতিনিয়ত।

কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন চিকিৎসক সাইফুল ইসলাম বলেন, সরকারি হাসপাতালের কতটুকু দূরে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠতে পারে তার কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই। স্থানীয়ভাবে নীতিমালা করার কোনো সুযোগ নেই। নীতিমালার বিষয়টা কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত